#এক_তুমিতে_আসক্ত
#পার্টঃ২৭
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ
রাই রুমে ঢুকতে ঢুকতে প্রান্তিক কে বললো,
‘কি করছো প্রান্তিক? বিরক্ত করলাম নাতো?
‘আরে রাই কি যে বলোনা তুমি। তোমাতে আমি কখনো বিরক্ত হয়না। আর অফিসের কিছু ডকুমেন্টস রেডি করছিলাম এই আর কি।
‘প্রান্তিক তোমার মনে আছে? যখন তুমি আর আমি কলেজে উঠি তখন অল টিম আমাদেরকে বি এফ জি এফ ভাবতো।
প্রান্তিক অর্ষাকে আঁড়চোখে একবার দেখো নিলো। সে আগের মতোই শাড়ির আচঁলটা মাথায় দিয়ে একটার পর একটা কাপড় গুচাচ্ছে। অর্ষা প্রান্তিকের দিকে তাকাতেই প্রান্তিক রাই’য়ের সাথে হেসে হেসে বললো,
‘সে আর বলতে? মনে থাকবেনা আবার? আসলে আমাদের চলাচলটায় এমন ছিলো রাই।
এইদিকে অর্ষা মনে মনে বলছে,
‘ওরা আজবতো। আড্ডা দিবি ভালো কথা অন্য জায়গায় গিয়ে দে। এই রুমে কেনো? এইখানে কি ওরা দুজন একাই? আমি নেই নাকি। যত্তসব। ( বেশ বিরক্ত নিয়ে কথাগুলো বিড়বিড় করলো অর্ষা)
‘হুম হুম ঠিক। ওহ আমিতো ভুলেই গেছি তোমার ওয়াইফ এই রুমে আছে। এই যে অর্ষা আমাদের দুজনের জন্য ২ কাপ কফি নিয়ে আসবে গো? আসলে মাথাটা বেশ ঘুরছে।
অর্ষা রাই’য়ের দিকে বিরক্ত ফিল করলেও তা প্রকাশ না করে মুচকি হেসে বললো, আপনারা বসুন আপু আমি এক্ষুনি নিয়ে আসছি।
অর্ষা যেই যেতে যাবে হঠাৎ প্রান্তিকের কন্ঠে
‘রাই এই রাই তোমার মাথা পেইন করছে? আসো আমি টিপে দেয়..
এই কথাটা শুনে অর্ষা পিছনে তাকালো। তাকিয়ে দেখছে প্রান্তিক রাই’য়ের মাথা টিপে দিচ্ছে। অর্ষা আর এক মুহুর্তও এইখানে না দাঁড়িয়ে থেকে পা বাড়ালো নিচ তলায়।
আজব মানুষ বউয়ের সামনে অন্য একটা মেয়েকে কেউ এমনভাবে মাথা টিপে দেয়? দুর ওনি যা ইচ্ছে তা করুক আমার কি..এইসব বলতে বলতে অর্ষা রান্নাঘরের দিকে যায়।
১৮০.
‘আইজকা এতো দিন ধইরা অর্ষারে খুঁজতাছিনা পাইতাছি ক্যান। না এইবার এই ঢাকা শহরের সব কলেজ দেহুন লাগনবো..এইসব বলে সোহেল ফুটপাতের সাইড দিয়ে হাঁটতে থাকে।
১৮১.
‘মামনি আর কয়েকটা দিন পরই তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসবো চিন্তা করোনা’
তাইফার কথা শুনে ফোনে শব্দ করে একটু হাসে সাহেরা বেগম। তারপর বলে,
‘এই সংসার ছেড়ে কোথায় যাবোরে মা? তুই এইখানে চলে আয় আমার একা একদম ভালো লাগেনা।
‘আমি একেবারের জন্য ছেড়ে আসার কথা বলিনি মামনি। এইখানে তুমি আসলে পরীক্ষাটা দিয়ে আবার চলে যাবো গ্রামে।
‘ওমা সে কিরে? শহরে ভালো লাগেনা?
‘না মামনি তোমাকে ছাড়া একা লাগে।
“আচ্ছা বাবা যেইসময় নিয়ে যাবি তখন দেখা যাবে।
কল কেটে দিয়ে তাইফা তাড়াতাড়ি তার মা ব্যাগে রাখা গুপ্ত জিনিস গুলো হাতে নিয়ে বের হয়ে গেলো।
১৮১.
‘আজকে রাত বারোটার পর…
‘দেখো মনিশা ভুলেও ওই কথাটদ মুখে আনবেনা।
‘ফরহাদ তুমি আর কতো এইরকম রাগ নিয়ে থাকবে? একটাবার খোঁজার চেষ্টাও করোনি মানুষটাকে।
‘মনিশা….
‘ফরহাদ এতোদিন আমি কিচ্ছু বলিনি। কিছু চায়’ওনি। আজকে চাইছি।
‘কি বলতে চাও মনিশা?
‘একটাবার খুঁজ নিলে হয়না?
ফরহাদ চৌধুরী আর কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে পরে। সবার আড়ালেই চোখের আলতো পানিটুকু মুছে নেন তিনি।
১৮২.
ফরহাদ চৌধুরী মাটিতে পরে থাকা ছবিটা দেখেই চমকে উঠেন। আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে তাড়াতাড়ি ছবিটা নিয়ে পান্জাবীর পকেটে রেখে দেন।
‘এই ছবি! এই ছবি কোথথেকে আসলো। তাও বাগানে? এইসব মনে মনে ভাবতেই ফরহাদ চৌধুরীর চোখে মুখে চিন্তার ছাপ ভেসে উঠে।
১৮৩.
‘হ্যালো মিস্টার চৌধুরী আমি ইন্সপেক্টর অনিমেষ বলছি..।
‘হুম ইন্সপেক্টর বলুন।
‘সোহেল নামক আসামী ধরা পরেছে।
এই কথা শুনতেই বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় প্রান্তিক। তার চোখে মুখে উচ্ছাস। তাড়াতাড়ি পা ফেলে বসার রুমের দিকে।
‘আরে প্রান্তিক কোথায় যাচ্ছো?
১৮৪.
আম্মু… প্রিয়..
‘কি হয়েছে ভাইয়া?
‘আম্মু আব্বুকে ডাক.
‘কি হয়েছে প্রান্তিক?
‘আব্বু.. সোহেল ধরা পরেছে পুলিশের হাতে৷ সে নাকি আরেকটা মেয়েকে ধর্ষন করতে চেয়েছিলো।
‘কতোটা..নিকৃষ্ট হলে মানুষ এমনটা করতে পারে।
‘হুম আব্বু।
‘ওর বাবা মা ভাইও গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে পুলিশের ভয়ে।
‘কি বলো আম্মু!
‘হুমরে। কতো খালামনি কল দিয়ে বললো।
রাই বার বার বলছে তবে কর্ণপাত হয়নি।
অর্ষা রান্না ঘর থেকে বের হতেই সবাই চুপ হয়ে গেলো। অর্ষাকে এইসব বলে আর অতীতে নিয়ে যেতে চায়না সবাই।
‘বাহ আপা তোমার বউমাতো দেখছি কাজও পারে।
রাই’য়ের মায়ের কথা শুনে অর্ষা লজ্জা পেয়ে বললো,
‘আপনি কিছু খাবেন ফুপু মা?
‘না মা আমি কিছু খাবোনা।
অর্ষা রাইয়ের হাতে এক কাও কফি আর প্রান্তিকের হাতে এক কাপ কফি দিতেই প্রিয়ন্তি বললো,
‘টেডি বিয়ার আপিলা ‘ও’ অনেক অনেক ভালো রান্না পারে। ইভেন্ট প্রান্তিক ভাইয়াতো আপিলার হাতে রান্না বলতেই পাগল।
প্রিয়ন্তির কথাটা অর্ষার ভালো না লাগলেও মুখে বললো,
‘বাহ ভালোতো। আপু একদিন রান্না করে খাওয়াবেন কিন্তু..।
‘হুম অর্ষা অবশ্যই।
‘রাই আজকে আমার জন্য একটু গুড়ের পায়ের করিওতো।
‘ঠিক আছে প্রান্তিক আজকেই রাধঁবো।
অর্ষা হাতের মুষ্টি আবদ্ধ করে ভাবছে,
‘আজব আমাকে বললেওতো হতো। আমি কি পারিনা নাকি।
প্রান্তিক আড়ঁচোখে অর্ষার দিকে তাকিয়ে কোনোরকম মুখ টিপে হাসার চেষ্টা করলো।
১৮৫.
দুপুরে খাবার দাবার শেষে সবাই যার যার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো। অর্ষা রুমে ঢুকতেই প্রান্তিক বললো,
‘বউ…আমার মাথাটা একটু টিপে দাওতো।
অর্ষা সাথে সাথেই উত্তর দিলো,
‘রাই আপুকে বলেন।
অর্ষা নিজের মুখ দিয়ে এমন কথা বের করে নিজেই নিজের কথা শুনে বোকা বনে যায়। কি থেকে কি বলে ফেললো সে!
অর্ষার এমন উত্তরে অবাক হয় প্রান্তিক আর বলে,
‘রাই আমার বউ না তুমি আমার বউ?
‘উপর দিয়ে বউ ভেতর দিয়ে কচু পাতা।
‘আজব ধরনের এমন কথা বাড়থা কোথা থেকে পাও ‘বউ?
‘জানিনা।
প্রান্তিক সোফা থেকে উঠে, অর্ষার একদম সামনে গিয়ে অর্ষার কানের কাছে গিয়ে বললো,
‘জেলাস ফিল করছো বউ?
অর্ষা চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। প্রান্তিকের গরম নিশ্বাস তার কানের নিচে কাঁধে বার বার পরছে।
‘সরুন সরুন..অর্ষা তাড়াতাড়ি বলে উঠলো।
‘না সরলে?
‘ওফ সরনতো। অর্ষা আলতো ধাক্কা দিয়ে দূরে ঠেলে দিলো প্রান্তিক কে।
‘বুঝেছি বউ আমার জেলাস ফিল করছে।
‘জেলাস ফিল করতে আমার বয়েই গেছে।
‘এখনো সময় আছে একবার বলো ভালোবাসি’।
‘বলবোনা
‘কেনো বুঝোনা বউ? #এক_তুমিতে_আসক্ত আমি।
‘অর্ষা মনে মনে বললো, ‘হে তার জন্যইতো রাই রাই করেন।
১৮৬.
বিকেলে….
অর্ষা নিচে নামতেই দেখলো প্রিয়ন্তি রান্না ঘরে রাই’য়ের সাথে কথা বলছে। প্রিয়ন্তি অর্ষাকে দেখতেই ডেকে বললো,
‘এই অর্ষা এইখানে আয়।
‘কি করছিস প্রিয়?
‘দেখনা আপিলা কি সুন্দর করে পায়েস রান্না করছে ভাইয়ার জন্য।
অর্ষা আনমনে বললো,
‘ওহ ভালো। আচ্ছা প্রিয় ছাঁদে যাবি?
“নারে আপিলার কাছে থাকবো তুই বরং যা।
অর্ষা রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। মনে মনে ভীষণ রাগ হচ্ছে প্রিয়র প্রতি। রাই আসার পর থেকে প্রিয় যেনো কেমন আচরন করছে তার সাথে। প্রায়োরিটিই দিচ্ছেনা।
১৮৭.
বসার ঘরের সবাইকে পায়েস দিয়ে রাই বললো,
‘আমি যায় প্রান্তিক কে রুমে পায়েস দিয়ে আসি।
এইটা বলে রাই যেতেই অর্ষা হাতে রাখা পায়েসটা নিয়ে সাথে সাথে বললো,
‘ইশ আমারতো মনেই নেই আমার নোট বাকি। আমি যায় নোট করবো আর পায়েস খাবো।
‘এই অর্ষা আগে খেয়ে নে। পরে করিস।
‘না না এখনি করবোরে।
এইটা বলেই অর্ষা ইপর তলায় গেলো। উপরে গিয়ে রুমের দরজাশ দাঁড়িয়ে দেখে প্রান্তিক এক কামচ পায়েস মুখে নিয়ে হাত দিয়ে চমৎকার ভঙ্গি দেখাতে দেখাতে বলে,
‘ওফ রাই জাস্ট অসাধারণ হয়েছে খেতে।
‘আহ.
‘কি হয়েছে রাই?
‘চোখে কি যেনো পরেছে।
‘কই দেখি..
প্রান্তুিক পায়েসের বাটিটা টি-টেবিলের উপর রেখে রাইয়ের চোখ ধরে দেখার চেষ্টা করছে কি ঢুকেছে।
অর্ষা অবস্থা বেগতিক বলে হাতে থাকা পায়েসটা তার পায়ে ফেলে দেয়। সাথে সাথে আহহ করে উঠে।
প্রান্তিক আর রাই দরজার দিকে একবার তাকিয়ে পুনরায় আগের মতো দাঁড়ালো। অর্ষা ভেবেছিলো প্রান্তিক এগিয়ে আসবে। কিন্তু না প্রান্তিক তার ভাবনায় এক বালতি সমবেদনা ঢেলে দিলো।
চলবে…..