অ্যারেঞ্জ_ম্যারেজ #অবন্তিকা_তৃপ্তি #পর্ব_৮

0
751

#অ্যারেঞ্জ_ম্যারেজ
#অবন্তিকা_তৃপ্তি
#পর্ব_৮

তুলি কদিন হলো ক্লাস, ওয়ার্ড, পড়াশোনায় ভীষণ ব্যস্ত দিন পাড় করছে। আকদের পর শুভ্রও ব্যস্ত। দুজনের কথা-টথা তেমন একটা হয়না। তবে আজ ওয়ার্ড এ ক্লাস নিবে শুভ্র। তুলি অন্যদিন মুখে পানি ছিটিয়েই এপ্রোন গায়ে দৌড়ায় ওয়ার্ডে। তবে আজ তুলি কেন যেন খুব সময় নিয়ে ফেইসওয়াস করলো, মুখে ক্রিম দিলো, ঠোঁটে টিন্টেড লিপবাম দিলো। ওয়ার্ডে সাজগোজ তুলি তেমন করেনা। তবে শুভ্র আসছে আজ। তুলি চায়না, তাকে দেখতে কোনো গোবরস্থান উঠে আসা দেহ মনে হোক।

শুভ্র ক্লাস নিচ্ছে। ফর্মাল গেটআপে শুভ্রকে বেশ সুন্দর দেখাচ্ছে তুলির কাছে। তুলি বারবার চোখ দিচ্ছে শুভ্রর দিকে। অথচ শুভ্র এখন অব্দি তুলির দিকে একটিবারও তাকায় নি। তুলি বিরক্ত হলো। ভাব দেখানো হচ্ছে তাকে? তুলি তারপর রেগে গিয়ে নিজেও আর একবারও শুভ্রর দিকে তাকালো না।

শুভ্র একটা বেডের পাশে দাঁড়িয়ে রোগী দেখছে। রোগীর চোখ দেখতে দেখতে সে স্টুডেন্টদের প্রশ্ন করলো,

‘হিস্ট্রি নেওয়া হয়েছে পেশেন্টের?’

সবাই উত্তর দেওয়ার আগে একটা মেয়ে ভিড় ঠেলে এগিয়ে এসে ঠিক শুভ্রর কাছে এসে দাঁড়াল। তারপর এলিয়ে-এলিয়ে বললো,

‘হ্যাঁ স্যার।’

শুভ্রর এতকিছু খেয়াল নেই। সে রোগী দেখতে ব্যস্ত। রোগীর দিকেই সকল মনোযোগ তাক করে সে প্রশ্ন করলো,

‘হিস্ট্রি বলে যাও একটা একটা করে।’

একটা ছেলে বললো,

‘স্যার দিস প্যারেন্ট হ্যাস ড্রাউজিনস, ফ্যাটিগ, নেইল ব্যাড ডিপ পেলোর অ্যান্ড এ কেইস অফ ওয়ান টাইম আনকনশিওয়াসনেস।’

শুভ্র এবার জিহ্বা দেখলো রোগীর। মেয়েটা এবার আগ বাড়িয়ে বললো,

‘স্যার আমি উনাকে ফলফাক্কর খেতে বলেছি। আই থিঙ্ক অ্যানিমিক প্যাশেন্ট।’

শুভ্র এবার সোজা হয়ে দাঁড়ালো। তুলি মেয়েটার এত বেলেল্লাপনা দেখে যারপরনাই বিরক্ত। আঙুলের ডগায় কলমটা পিষে ধরল। রাগ মেটানোর জন্যে নিজেই নিজের দাঁত দিয়ে জিহ্বা কামড়ে ধরলো। শুভ্র এতসব লক্ষ করেনি। তার মাইন্ড আপাতত ডাইবার্ট। শুভ্র মেয়েটাকে বললো,

‘এসব আই থিঙ্ক, ইউ থিঙ্ক দিয়ে প্যাশেন্ট চিকিৎসা করবে? এভাবে প্যাশেন্টকে তার রোগ ডেসক্রাইব করলে পেটাবে ধরে। সিউর হয়ে বলতে পারলে রোগের চিকিৎসা করবে নাহলে না। এভরিওয়ান গট ইট?’

সবাই মাথা নাড়লো। শুভ্র প্যাসেন্টের দিকে তাকালো এবার। সুন্দর করে মিষ্টি হেসে প্যাশেন্টকে বললো,

‘চাচা, আপনার শরীরে রক্তশূন্যতা আছে। ব্লাড ট্রান্সফিউশন লাগাতে পারে। আমি সিস্টারকে বলে যাচ্ছি। সে কয়েকটা পরীক্ষা করে আমাকে জানাবে।’

গ্রামের এই বৃদ্ধ লোক ভয় পেয়ে গেলেন। বললেন,

‘আমি কী মইরা যাইবার পারি?’

শুভ্র মাথায় হাত বুলালো। বললো,

‘না, চিন্তা নেই। আপনি একদম সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবেন। এখন রেস্ট নিন। সিস্টার এসে বাকিসব জানাবে আপনাকে।’

মেয়েটা আবারো আগ বাড়িয়ে এলো।তুলি দূর থেকে কোণা চোখে মেয়েটার কাজ দেখছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। কী বেয়াদব মেয়ে! শুভ্রর সঙ্গে লাইন মারছে। তুলির ইচ্ছে করছে, মুখের উপর মেয়েটাকে কয়েকটা কথা বলে দিতে। সাহস কত। তার বরের সঙ্গে ঘেষাঘেষি! তুলি অবাক হলো নিজের ভাবনায়। তুলি কবে থেকে শুভ্রর প্রতি এতটা অধিকারপ্রবণ হয়ে পরল? অবশ্য হবেই না কেন? বরের ভাগ কোন বাঙালি নারীই বা দিয়েছে।

শুভ্র বললো এবার সবাইকে,

‘আজ বাসায় সবাই এনিমিয়া নিয়ে ডিটেলসে পড়বে। ফার্স্ট ইয়ারের পড়া ঝালাপালা করবে আবার। উই উইল ফাইন্ড অ্যা লট অফ প্যাসেন্ট উইথ দিস কেইস। আজকের মতো ওয়ার্ড শেষ। গো এভরিওয়ান।’

শুভ্র ওয়ার্ড ছেড়ে চলে গেলো। তুলি কী মনে করল। সোজা ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেলো ওয়ার্ড থেকে। শুভ্র করিডোর দিয়ে হাঁটছে। হাতে ফোন। কাকে কল লাগাচ্ছে। তুলি এক দৌড়ে শুভ্রর পাশে এসে দাড়ালো। শুভ্র পাশে কাউকে হঠাৎ উপলব্দি করে তাকালো। তুলিকে দেখে শুভ্র অবাক হলো। তারপর হেসে বললো,

‘কী ব্যাপার। তু-‘

সঙ্গেসঙ্গে তুলি শুভ্রর একটু কাছে ঘেঁষে শুভ্রর হাতে একটা চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে আবার এক দৌড়ে সামনে চলে গেলো। শুভ্র হতভম্ব হয়ে চিরকুট হাতে তুলির যাওয়ার দিকে চেয়ে আছে। মেয়েটা এত উরণচণ্ডী। শুধু চঞ্চলতা আর চঞ্চলতা। এলো আর গেলো? মাঝখানে ঝড় বইয়ে গেলো। শুভ্র হাতের চিরকুটের দিকে তাকালো। চিরকুট দেওয়ার কারণ বুঝতে পারলো না শুভ্র। হালকা হেসে চিরকুট খুলে দেখল সেখানে খুবই বিশ্রী হাতের লেখায় লেখা,

‘আপনি বিবাহিত, এরপর ওয়ার্ড ক্লাসে কথাটা মাথায় রাখবেন প্লিজ।’

শুভ্র প্রথম দফায় অবাক হয়ে চিরকুটের দিকে চেয়ে থাকলো। চিরকুট এর অর্থ বুঝতে তার বেশ সময় লাগলো। যখন বুঝতে পারলো, বিস্মিত হলো। বড়বড় চোখে সামনে তাকালো। তুলিকে খুঁজল। তুলি ততক্ষণে পোগার পা। শুভ্র দুই ভ্রুয়ের মাঝখানে আঙুল চেপে শব্দ করে হেসে ফেললো। তুলিও পারে। লক্ষ্য করেছে তবে? বিয়ে হাতে না হতেই মেয়েদের মধ্যে বউ-বউ ভাব চলে আসা কী কোন রিফ্লেক্স এর মধ্যে পড়ে? হয়তো!
__________________
শুভ্র গাড়ী ঘুরালো। তারপর গাড়ি থেকে নেমে সোজা বাসায় উঠে কলিং বেল বাজালো। দরজা খুলে দিলো এসে এক রমণী। রমণী কেউ না, বরং তুলি। শুভ্র তুলিকে এখন বাসায় দেখে যারপরনাই অবাক হলো। মুখে হাসি টেনে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো,

‘তুমি এখানে? আম্মু ডেকেছে?’

শুভ্র ভীষণ ঘেমে আছে। গাড়িতে এসি থাকা সত্ত্বেও সে ঘেমে একাকার। গরম বোধহয় আজকে খুব বেশি পড়েছে। তুলি রান্নাঘর থেকে এক গ্লাস পানি এনে শুভ্রর সামনে ধরলো। শুভ্র পানি হাতে নিয়ে মিষ্টি করে বললো,

‘থ্যাংকস।খুব তেস্টা পেয়েছিল।’

তুলি মৃদু হেসে মাথা নাড়লো,

‘বুঝেছি আমি।’

শুভ্র আরও একবার প্রশ্ন করবে, তার আগেই রুম থেকে বেরিয়ে এলেন আফরোজা। শুভ্রকে দেখে তার পাশে গিয়ে বসলেন। শুভ্র মাকে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করল,

‘আজকেও তুলিকে পড়া বাদ দিয়ে এখানে ডেকে পাঠিয়েছ, আম্মু? ওর সামনে এক্সাম আছে। তুমিও না।’

আফরোজা কিছু বলবেন, তার আগেই তুলি শুধরে দেবার ভঙ্গি করে বললেন,

‘না না। আন্টি ডাকেন নি। আমিই এসেছি। আমার আন্টির সঙ্গে সময় কাটাতে ইচ্ছে হচ্ছিল।’

শুভ্র তুলির দিকে তাকালো। মায়ের প্রতি তুলির এমন মনোভাব শুভ্রকে আকৃষ্ট করলো ভীষণ। শুভ্র উঠে দাঁড়াল। পানির গ্লাস সোফার টেবিলে রেখে বললো,

‘আমি ফ্রেশ হয়ে আসি। আম্মু চা পাঠিয়ে দিয়ো প্লিজ।’
‘যা তুই। আমি পাঠাচ্ছি।’

শুভ্র শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে রুমে চলে গেলো। শুভ্র যেতেই আফরোজা তুলির দিকে তাকালেন। বললেন,

‘তুলি, চা বানাতে পারিস? শুভ্রকে আজ চা তুই দিবি। দৌড়ে যা তো।’

তুলি আফরোজার কথা বলার ধরন দেখে হেসে উঠলো। দুহাতে আফরোজাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আফরোজার গায়ের খানিক উম নিয়ে আদর আদর গলায় বললো,

‘আন্টি, তোমার কথা শুনলেই না আমার খুব আদর আদর লাগে, জানো?’

আফরোজা হাসলেন। বললেন,

‘তাই বুঝি?’

‘হ্যাঁ, একদম তাই।’

তুলি চুমু খেল আফরোজার গালে। আফরোজা চমকপ্রদ গলায় বললেন,

‘তাহলে আজ থেকে তুইও আদর আদর গলায় আমাকে শুভ্রর মতো আম্মু বলে ডাকিস তো? এই আন্টিটা না কেমন নিরামিষ নিরামিষ লাগে। শুনতে মজা লাগে না।’

তুলি হেসে ফেললো। কী চমৎকার আবদার। নেই কোনো জোর জবরদস্তি, শাসানো। শুধু এক বুক নিঃসংকোচ মিষ্টি আবদার। তুলি বললো,

‘ঠিকাছে আম্মু, ডাকব।এখন যাই, তোমার পুত্রের জন্যে চা বানিয়ে নিয়ে যাও। চা না পেলে এখনই ক্লাস নেওয়া শুরু করবে দুজনের।’

আফরোজার মনে পড়ল। তিনি তাড়া লাগিয়ে বললেন,

‘দ্রুত যা, দ্রুত যা।’

তুলি রান্নাঘরের দিকে গেলো। আফরোজাও পেছনে পেছনে চললেন। তুলি চা বসিয়েছে চুলায়। আফরোজা একটা চেয়ারে বসে তুলির চা বানানো দেখছেন। মেয়েটা রান্নায় কী পটু, ইয়াসমিন বলেছে। শুভ্রও তুলির চায়ের প্রশংসা করেছিলো সেদিন। যাক, রান্না নিয়ে আফরোজার চিন্তা গেলো। এখন বউ শাশুড়ি মিলে রান্না করবেন আর সঙ্গে কয়েক কাপ চা। বেশ জমবে!

আফরোজা তুলির দিকে তাকালেন। তুলি ওড়না কোমরে পেঁচিয়ে চা বানাচ্ছে। আফরোজা হঠাৎ কী মনে করে বললেন,

‘এই তুলি, শাড়ি পরবি?’

হঠাৎ প্রশ্নে তুলি ভ্যাবচ্যাকা খেয়ে গেল। তুলির মনে পরলো, এই নিয়ে দুবার সে শাড়ির কুচি বেজে শুভ্রর গায়ের উপর পরেছে। ভাগ্যিস শুভ্র ধরে ফেলেছে দুবারের দুবারই। নাহলে হাত পা ভেঙে কী লজ্জার কান্ড ঘটতো।তুলি নিজেকে সামলে বললো,

‘আমি শাড়ি সামলাতে পারি না আম্মু। বারবার কুচি বেজে পরে যাই।’

আফরোজা শুনলেন না। বরং তুলির হাত ধরে টেনে নিজের ঘরে নিয়ে যেতে যেতে বললেন,

‘কিচ্ছু হবে না। আমি সুন্দর করে শিখিয়ে দিব কিভাবে শাড়ি পরতে হয়। একবার শিখিয়ে দিলে আর কুচি পায়ে লাগবে না।’

তুলি মৃদু হাসলো। আফরোজা শাড়ি আর দু কাপড় আনলেন। তুলি বললো,

‘কিম্তু চা?’
‘কিছু হবে না, বলক আসুক। ততক্ষনে তোর শাড়ি পড়া হয়ে যাবে। শুভ্র কিন্তু শাড়ি খুব পছন্দ করে, জানিস?’

তুলি লজ্জা পেলো। আবার শাড়ি গায়ে শুভ্রর সামনে যাবে! ইশ! লজ্জায় এক্ষুনি তুলির হাত পা সব ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। শুভ্রর সামনে দাড়াবে কি করে?

#চলবে
রোমান্টিক পর্ব আগামীকাল আসবে❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here