#ডেস্পারেট_লেখিকা
–Farhina Jannat
৩.
“আমরা ঘরে যাই? এখানে বেশিক্ষণ থাকলে মশা উড়িয়ে নিয়ে যাবে” বলল মারজান।
মাথা নাড়ল ইজান। ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলল, “তাহলে তুমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিলে কীভাবে?”
“এভাবেই! আমার ঘরে এয়ারটেলের নেটওয়ার্ক খুব ডিস্টার্ব করে, তাই বারান্দায় গিয়ে মশার কামড় খেতে খেতেই কথা বলতে হয়”
ঘরের উজ্জ্বল আলোয় মারজানকে প্রথমবারের মত পরিপূর্ণ দৃষ্টিতে দেখল ইজান। পার্লার থেকে দুজন মেয়েকে আনানো হয়েছিল মারজানকে সাজানোর জন্য। ওর উজ্জ্বল শ্যামলা বর্ণ থেকে শ্যামলা অংশটা তারা সরিয়ে ফেলেছে নিখুঁতভাবেই। দেখতে অপূর্ব লাগছে। তবে ইজানের দেখা সেদিনের সেই মিষ্টি মায়াবী মুখটা মেকাপের ভীড়ে কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। সোনালী লেহেঙ্গার ঘোমটাটা পড়ে আছে ঘাড়ের ওপর। অনেক যত্ন নিয়ে করা খোঁপা কাৎ হয়ে আছে একপাশে। একই দশা হয়েছে টিকলিটারও।
বউয়ের প্রশংসা করার জন্য কত কত লাইন না ভেবে রেখেছিল এতদিন ধরে, কোথায় গেল সেগুলো? ব্রেনের মধ্যে চিরুনী তল্লাশী করেও কেন কিছু পাচ্ছে না ইজান?
হঠাৎ গলার কাছে হাত উঠিয়ে আনল মারজান, চুলকে নিল হালকা করে।
“তোমাকে দেখতে বেশ সুন্দর লাগছে সন্দেহ নেই, কিন্তু তোমার কি এগুলো পরে অস্বস্তি হচ্ছে?” ভাইরে ভাই, শেষমেশ আর লাইন পাইলি না? নিজের ওপর চরম বিরক্ত হল ইজান।
বিরস বদন নিয়ে মাথা নাড়ল মারজান। হচ্ছে মানে? দারুণ অস্বস্তি হচ্ছে। ভারী কোন পোষাকই ও পরতে পারেনা। মনে হয় যেন সারা শরীর চুলকোচ্ছে। তার উপর এই জড়োয়ার সেট, এত এত গহনা, দম আটকে আসছে ওর। বউ সাজার প্রকৃত অভিজ্ঞতা নিতে গিয়ে একেবারে ভালোমতো ফেঁসে গেছে।
“ঠিক আছে, তুমি বরং চেঞ্জ করে নাও”
“থ্যাংকস!” হাঁফ ছেড়ে যেন বাঁচল মারজান, এগোল আলমারির দিকে।
“ওয়েট!”
ঘাড় ঘুরাল মারজান, জিজ্ঞাসু দৃষ্টি চোখজোড়ায়।
এগিয়ে এল ইজান। হাত দুটো এগোতে গিয়েও থেমে গেল। বলল, “মে আই?”
কী হচ্ছে বুঝতে না পারা মারজান মাথা নাড়ল। ইজান খুলে যাওয়া ঘোমটাটা উঠিয়ে দিল মাথায়। টিকলিটাও সোজা করে দিতে যাচ্ছিল, কিন্তু সরছেনা জিনিসটা, আটকে আছে।
“কী করছো?”
“এইটা বাঁকা হয়ে আছে, সোজা করছি”
“এটা তো টিকলি না, মানতাশা। এভাবে বাঁকা করেই পরে” ঈষৎ হাসি দিয়ে বলল মারজান।
“উপস! স্যরি! আই হ্যাড নো আইডিয়া” হাত সরানোর সাথে সাথে ভ্রুজোড়া উঁচিয়ে একটা হাসি দিল ইজান, ভুল করে যেন ভীষণ লজ্জা পেয়েছে।
মারজানের চোখ আটকে গেল সেইদিকে। এই মুহূর্তটার আগে বিশেষ কোনো দৃষ্টিতে ইজানকে দেখেনি মারজান। ওর মাথায় শুধু সেই চিন্তাটাই ঘুরছিল, যার জন্য এই বিয়ে করা।
“আসলে ভাবলাম, আমার জন্য এত সুন্দর করে সেজেছো, এতক্ষণ ধরে কষ্ট পাচ্ছো, একটু দেখে নিই” সলাজ হাসিটা ঠোঁটে ধরে রেখেই বলল ইজান।
মুহূর্ত খানেক আগে হলে এর উত্তরে বিরস কিছু একটা বলে বসত মারজান, কিন্তু এখন তার বদলে মিষ্টি করে হাসল ও। বলল, “তাহলে কি বসব?”
“নাহ! এনাফ! এই যে হাসিটা দিলা, এখানে ক্যাপচার করে ফেলেছি, আর লাগবে না, এবার যেতে পারো” বুকের বাম পাশে হাত দিয়ে ইঙ্গিত করল ইজান।
ইজান এসে বসল বিছানায়। দেখতে লাগল মারজানের পোশাক বের করা, আয়নার সামনে বসে খোঁপা খোলা, চুল আঁচড়ানো। প্রতিটা কাজ খুবই পরিপাটি, ধীরস্থির। খোঁপা খুলতে নাজেহাল হচ্ছে দেখে হেল্প লাগবে কিনা একবার জিজ্ঞেস করেছিল ইজান, মুচকি হেসে না করেছে মারজান। ও নাকি বাঁধার সময়ই ভালো করে দেখে নিয়েছে, সমস্যা হবে না। মারজান বাথরুমে ঢুকে গেলে ইজান নজর দিল ঘরটার দিকে।
আকারে বেশ বড়সড় ঘরটা, জিনিসপত্রগুলো একটু অদ্ভুত। মনে হচ্ছে কারও ঘর না, ভুল করে কোন হস্তশিল্প যাদুঘরে ঢোকা হয়েছে। ঘরের চারদিকে নানা রকম শৈল্পিক জিনিসের মেলা বসেছে যেন। দরজা দিয়ে ঢুকে প্রথমেই চোখ পড়ে সামনের দেয়ালে দুই জানালার মাঝখানে টানানো বড় একটা ক্যালিগ্রাফির ওপর। পাকা হাতের আঁকা নয়, তাও বেশ যত্ন নিয়ে বাঁধাই করা হয়েছে।
ঘরের বাকি তিন দেয়ালেও বেশ কিছু সংখ্যক ছোটবড় ক্যালিগ্রাফি আর হাতের কাজের ওয়ালমেট ঝোলানো। ড্রেসিং টেবিলের ওপর গাঢ় সবুজ জমীনের ওপর হলুদ সুতোর কাজ করা পর্দা একপাশে টেনে রাখা। ঘরের জানালা-দরজার পর্দাগুলোও একই রঙের।
বিছানার ডান দিকের জানালাটার পাশে একটা রিডিং টেবিল। টেবিলের ওপরের তাকগুলোতে মারজানের কলেজের বই। একাউন্টিং! বিজনেস স্টাডিজ এর স্টুডেন্ট তাহলে। নতুন তথ্য জানল ইজান। টেবিলের পাশে চার দরজার একটা আলমারি। ঘরের প্রবেশ দরজার দু’ধারে দেয়াল জুড়ে বানানো হয়েছে বিশাল বুকশেলফ, থরে থরে বই সেখানে রেইনবো প্যাটার্নে সাজিয়ে রাখা। বইয়ের ফাঁকে ফাঁকে তাক বিশেষে শোপিস দেখা যাচ্ছে, মনে হচ্ছে সেগুলোও হস্তশিল্পের অবদান। বুকশেলফ এর পরেই বাথরুমের দরজাটা। পাঁচ পাঁপড়ি বিশিষ্ট ফুল আকৃতির একটা পাপোশ পাতা আছে সামনে। বিছানার দুই পাশে একই ধরনের আরও দুটো পাপোশ, এগুলোর আকৃতি অবশ্য খানিকটা লম্বাটে। এসবের মাঝখানে কাঁচা ফুল দিয়ে সাজানো ডাবল বেডের খাটটা বড্ড বেমানান লাগছে। মনে হচ্ছে ফুলের জায়গায় অন্য কোন হস্তশিল্পের জিনিস থাকলে মানাত, চিন্তাটা মাথায় আসতেই হেসে ফেলল ইজান।
বেশ খানিকক্ষণ পর বাথরুম থেকে বেরিয়ে এল মারজান। ইজান তখন সারা ঘর পরিদর্শন শেষে এসে দাঁড়িয়েছে বুকশেল্ফ এর সামনে। দুহাত পেছনে রেখে গভীর মনযোগ দিয়ে দেখছিল মারজানের বইয়ের কালেকশন। দরজা খোলার শব্দে ইজানের দৃষ্টি বই ছেড়ে উঠে এল মারজানের দিকে।
লেহেঙ্গা ছেড়ে কাঁচা হলুদ রঙের একটা থ্রিপিস পরেছে মারজান। মুখের প্রসাধন উঠানোর চেষ্টা করেছে, তবে পুরোপুরি উঠাতে পারেনি। সেই মিষ্টি মেয়েটা ফিরে এসেছে এবারে আর পুরোপুরি না ওঠা প্রসাধন অদ্ভুত সুন্দর একটা দীপ্তি নিয়ে এসেছে চেহারায়। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল ইজান। পার্লারের মেয়েদের উচিত ওইসব প্রলেপ না দিয়ে এই অসাধারণ লুকটা আনতে শেখা, ভাবল ও।
“বই পড়তে পছন্দ করো তুমি?” বেশ আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করল মারজান।
“উঁহু!” এদিকওদিক মাথা নাড়ল ইজান, “ঘুম আসে। বই আমার ঘুমের ওষুধ, ঘুম না আসলে আমি বই পড়া শুরু করি। ইন ফ্যাক্ট তোমার এই বিশাল বুকশেল্ফ দেখেই আমার হালকা ঘুম পাচ্ছে” কথাটা শেষ করেই হাই তুলল ইজান।
মারজানের চোখমুখে জ্বলে থাকা হাজারটা বাতি যেন একসাথে দপ করে নিভে গেল। সেটা দেখে নিজের পশ্চাৎদেশে কষে একটা লাথি হাঁকাতে ইচ্ছে হল ইজানের। শালা উল্লুক! তুই বুঝতে পারছিস যে মেয়েটা বই পড়তে কতটা পছন্দ করে, সেখানে তুই এমন একটা কথা বলতে পারলি! তুই শালা আস্তা একটা বেকুব!
ব্যাপারটা সামলাতে তাই হো হো করে হেসে উঠল সাথে সাথেই, “জাস্ট জোকিং! বইকে কেউ পছন্দ না করে থাকতে পারে?” নিজের গাধামিতে আজকের এত সুন্দর রাতটা পন্ড করার কোন মানেই হয় না।
মারজানের চেহারার বাতিগুলো ফের জ্বলে উঠল, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল ও।
“আলহামদুলিল্লাহ! গ্রেট! আমার জন্য তো সেটা আরও ভালো হলো” খুশিতে চকচক করছে মারজানের চোখজোড়া, “চলো, আগে নামাজটা পড়ে ফেলি জলদি”
“ওকে, আমি অজু করে আসি তাহলে” সায় দিল ইজান।
নামাজ আর মোনাজাত এর পর এক হাতে ফোন আর আরেক হাতে মারজানের কপালের চুল ধরে দোয়া পড়ছিল ইজান। এসময় মেঘ গুড়গুড় করে উঠল। ইজানের আওয়াজ স্তিমিত হয়ে গেল আর মারজান ফিক করে হেসে দিল। কারণ ওইটা মেঘের আওয়াজ না, পেটের আওয়াজ। ইজান বেচারা বিয়ের উত্তেজনায় ভালোমতো খেতে পারেনি। তার ওপর টেবিলের ওপর থাকা হটপটের ভেতরে কাচ্চি দেখে ক্ষিধে একেবারে চাগাড় দিয়ে উঠেছে।
বিছানার ওপর দস্তরখান বিছিয়ে খাওয়ার ব্যবস্থা করল মারজান। ওকে নিজের পাতেও বেশ অনেকটা কাচ্চি তুলে নিতে দেখে মুচকি হাসল ইজান। হবেই তো! বিয়ে তো আর আমি একা করিনি, মনে মনে বলল ও।
বেশ খানিক্ষন চুপচাপ খেয়ে গেল দুইজন। তারপর মারজান হঠাৎ প্রশ্ন করে বসল, “তোমার প্রিয় লেখক কে?”
“হুমায়ূন আহমেদ” এই একটা লেখকের নামই মাথায় আসল ইজানের। ভাগ্যিস এসেছে! প্রিয় লেখক বাছাই করবার মত বই ওর পড়া হয়নি। তবে মাদ্রাসার হোস্টেলে বেশ কয়েকজন লুকিয়ে লুকিয়ে হুমায়ূন আহমেদ এর বই পড়ত, তখন ওও পড়েছে কয়েকটা।
“তাহলে তোমার ফিকশন ভালো লাগে বেশি, রাইট?”
“হুমম” বইয়ের টপিক চেঞ্জ কর শালা, নাইলে প্রথম রাতেই ইজ্জতের ফালুদা হয়ে যাবে, মনে মনে বলল ইজান।
“আমারও ফিকশন বেশি পছন্দ। নন-ফিকশন পড়ি, কিন্তু ফিকশন এর মত টানে না” আরও এক চামচ কাচ্চি প্লেটে নিতে নিতে বলল মারজান। সেটা দেখেই আইডিয়া পেয়ে গেল ইজান।
“আমি ভাবীর কাছে শুনেছিলাম, মেয়েরা নাকি শশুরবাড়ি যাওয়ার টেনশনে বিয়ের দিন ঠিকমতো খেতে পারে না। তোমার তো সেই প্রব্লেম ছিল না, তাহলে খেতে পারোনি কেন?”
“আমি নিজের হাত আর আম্মুর হাত ছাড়া আর কারও হাতে খেয়ে তৃপ্তি পাই না। আজকে আম্মু বিজি ছিল অনেক, তাই সায়মা খাইয়ে দিয়েছে”
“ও। আচ্ছা, ভালো কথা মনে পড়েছে। সায়মা কী বলছিল ওইসব? আমার কাছে ক্ষমাই বা চাইছিল কেন?”
ঈষৎ হাসি খেলে গেল মারজানের মুখে।
“আসলে বিয়ের আইডিয়াটা ওর। ও মজা করে বলেছিল, আমি সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়েছি, তাই”
“ঠিক বুঝলাম না”
“আচ্ছা, খুলেই বলি। মনে হয়না আব্বু তোমাদেরকে বলেছে যে, আমি ফেসবুকে লেখালেখি করি” ইজানের চেহারা দেখে বুঝল মারজান, ওর ধারণা ঠিক। তাই কথা চালিয়ে গেল। “বেশ ভালোই ফিডব্যাক পেয়েছি এতদিন। কিন্তু রিসেন্টলি আমার রানিং গল্পটা পড়ে অনেক পাঠকই বলছেন রিশাত মানে গল্পের মূল চরিত্রটা ঠিক ফুটছে না। ওর মনের ভেতরের চিন্তাভাবনাগুলো নাকি ঠিকঠাক ফুটিয়ে তুলতে পারছি না। আসলে এর আগে আমি ছেলেদের পার্সপেক্টিভ থেকে লিখিনি। কিন্তু এই স্টোরিটাই এমন, এভাবেই লিখতে হত। সেটা নিয়েই আমি সায়মাকে বলছিলাম যে ছেলেদের মন আমি কীভাবে বুঝব? ছেলে বলতে তো চিনি খালি আব্বু আর ভাইয়াকে। আমার লেখালেখির টপিক নিয়ে আলোচনা করার মত কোন মাহরাম ছেলেই তো নাই আশেপাশে। তখন ও বিয়ে করার এই সুপ্পাব বুদ্ধিটা দেয়”
ইজান যেন ধপাস করে আকাশ থেকে মাটিতে পড়ল। কী বলছে এই মেয়ে! বই হলেও একটা কথা ছিল, ফেসবুকে গল্প লেখতে অসুবিধা হচ্ছে তাই বিয়ে করেছে! অবশ্য আমিও তো সবার মত ভাবছিলাম যে হঠাৎ করে এই সময়ে বিয়ে করতে চাওয়ার কারণ কী। সজীব তো শুনে বলেই ফেলল, দেখ গিয়ে কারো থেকে ছ্যাঁকা খেয়ে তাকে উল্টা ছ্যাঁকা দেয়ার জন্য বিয়ে করতে চেয়েছে। কিন্তু ওর মন মানতে চায়নি সেকথা। তবে সেটা ভাবলে স্বস্তি পাওয়া যাচ্ছে খানিকটা। সেরকম ভয়ংকর কোন কারণের থেকে এই উদ্ভট কারণ হাজার না, লক্ষগুণ ভালো। এসব আকাশপাতাল ভাবতে ভাবতে প্লেটের বাকি কাচ্চি কখন কীভাবে শেষ করল বলতে পারবে না ইজান।
খাওয়া দাওয়ার পর মারজান যখন সবকিছু গুছিয়ে রাখছিল, তখন এক অন্য দৃষ্টিতে ওকে দেখছিল ইজান। “শি ইজ নট জাস্ট এ রেগুলার গার্ল, শি ইজ সামথিং এলস” এমন কিছুই ভাবছিল ওর মন।
“তোমার আইডি নাম কী?” বিছানায় বসে ফোন হাতে নিয়ে উৎসাহী কণ্ঠে জানতে চাইল মারজান।
“হ্যাঁ?” ভাবনার অতল গভীর থেকে যেন বেরিয়ে এল ইজান।
প্রশ্নটা আবারও করল মারজান। এবারে জবাব দিল ইজান।
“রিকোয়েস্ট দিয়েছি, এক্সেপ্ট করো” ছবি দেয়া ছিল, চিনতে অসুবিধা হয়নি মোটেই।
যন্ত্রের ন্যায় ফোন হাতে নিয়ে রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করল ইজান। যে শক খেয়েছে, সেটার আফটার ইফেক্ট এখনো চলছে। এরপর আরেকটা রিকোয়েস্ট আসল পেজ লাইক করার। পেজের নাম “মারজান’স নোটবুক”। ঢুকল ও পেজে। একেবারে ওর কাছে সরে এল মারজান, এত কাছে যে ওর চুলের ঘ্রাণ পেল ইজান। চোখ বন্ধ করে ঘ্রাণটা বুকভরে টেনে নিল ও। সব বিহ্বলতা কেটে গিয়ে মনটা যেন ফুরফুরে হয়ে গেল আবার।
“স্ক্রল করো, এই যে এই যে, এই গল্পটাই” নিজেই স্ক্রল করে একটা পোস্ট ওপেন করে দিল মারজান। “এটা প্রথম পর্ব, এখন পর্যন্ত দশ পর্ব দিয়েছি। তুমি বরং সেগুলো পড়ে ফেলো। আই রিয়েলি হোপ দ্যাট ইউ উইল লাইক মাই রাইটিং স্টাইল। আর আমি এগারো নম্বর পর্বটা আরেকটু বাকি আছে, সেটা লিখে ফেলি। কালকে সকালেই পোস্ট করতে হবে। ওকে?”
একই রাতে তৃতীয়বারের মত বাকহারা ইজানকে বিছানায় রেখে টেবিলের সামনে গেল মারজান, ল্যাপটপ হাতে নিয়ে ফিরে এল। তারপর একটা বালিশ খাড়া করে সেটাতে পিঠ দিয়ে কোলে ল্যাপটপ নিয়ে বসে গেল। খেয়াল করল ইজান এখনো তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
“কী হল? ভালো লাগছে না পড়তে?” করুণ চোখে জানতে চাইল মারজান।
“না না, লাগছে” ফোনের দিকে দৃষ্টি দিল ইজান। লে ব্যাটা ইজান! বাসর রাতে বসে বসে বউয়ের লেখা গল্প পড়। সাত হাত লম্বা কপালে এই ছিল তোর!
অতঃপর প্রথম পর্ব পড়ে শেষ করার আগেই যে বরমশাই ঘুমে তলিয়ে গেল, সেটা বলাই বাহুল্য। সেদিকে তাকিয়ে ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়ল মারজান। তার মানে প্রথমেই ঠিক বলেছিল। কিছু না বলে গায়ে দেয়া চাদরটা ইজানের গায়ে বিছিয়ে দিল ও। থাক, এখন ঘুমিয়ে নেক, কালকে দিনে নাহয় পড়ানো যাবে।
(চলবে)
যারা যে গল্পের নাম ছিলনা পড়ে আমার পেইজে নতুন এসেছেন, তাদের বলছি। এই গল্পটা কিন্তু অন্য ফ্লেভারের। তাই কেমন লাগছে জানাবেন কিন্তু।