#ডেস্পারেট_লেখিকা
-Farhina Jannat
অন্তিম পর্বঃ
কয়েক মাস পর:
মারজানের এইচএসসি পরীক্ষা কড়া নাড়ছে দোরগোড়ায়। তাই, পরীক্ষার আগে শেষ রিলাক্সেশন এর জন্য ইজান ওকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছে। বাসায় বলে এসেছে, ফিরতে রাত হবে। ঘুরেফিরে রেস্টুরেন্টে ডিনার করে বাসায় ফিরবে, এমনটাই প্ল্যান। নদীতীরে হাঁটাহাঁটি আর ব্রিজের উপর ফুচকা খাওয়ার পর মাগরিবের আগ দিয়ে একটা মসজিদের কাছে চলে এলো ওরা। এই মসজিদে মেয়েদের নামাজের ব্যবস্থা আছে। নামাজ শেষে বেরিয়ে একটা রিক্সা নিল ইজান।
“এবার কোথায় যাচ্ছি আমরা?” রিক্সাওয়ালাকে কোন জায়গার কথা বলেছে, শুনতে পায়নি মারজান। হাঁটতে গিয়ে একটু পিছিয়ে পড়েছিল ও।
“অভিসারে” মুচকি হেসে বলল ইজান।
“সে তো বিকেল থেকেই চলছে” হেসে উত্তর দিল মারজান।
“উঁহু, এতক্ষণ জাস্ট ডেমো ছিল। এবারে হবে রিয়েল অভিসার।“
“তাই নাকি?” বলতে বলতেই রিক্সা যেখানে এসে থামল, তাতে মারজানের মোটেই চমকপ্রদ কিছু মনে হলো না। ওরা নেমেছে মিটফোর্ড হস্পিটালের পেছনের নৌকাঘাটে। প্রশ্নবোধক দৃষ্টি ইজানের দিকে নিক্ষেপ করতে দেখল সে অলরেডি রিক্সাভাড়া মিটিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা খুঁজছে। খুঁজে পেতেই চোখের দৃষ্টি উজ্জ্বল হয়ে উঠল। এই আধো অন্ধকারেও মারজান সেটা স্পষ্ট দেখল।
“এসো” বলে মারজানের হাত ধরে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে শুরু করল ইজান। ডানদিকে আরও খানিকটা এগিয়ে একটা নৌকার সামনে এসে থামল ও।
“মাম্মা, ভালো আছেন?” উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে মাঝিকে সম্বোধন করল ইজান।
“আরে, ইজান মাম্মা যে। ভগবান যেমন রাখসেন। আপনে কেমন আসেন? আইজকা একলা যে?”
“একলা না, মাম্মা। আপনার মামীরে সাথে আনসি আজকে। আমাদের ঘুরাইতে হবে।“
“বলেন কী? সালামালেকুম মামী, ভালো আছেন?” নির্ভেজাল হাসিতে এগাল ওগাল ভরিয়ে মারজানের দিকে তাকাল লোকটা।
কী করবে না বুঝে শুধু মাথা ঝুঁকাল মারজান। মাঝি যা বোঝার বুঝে নিয়ে ইজানের দিকে তাকাল আবার।
“উইঠা পড়েন তাইলে।“
এতক্ষণে মারজান বুঝেছে ইজান কী করতে চাইছে। ভীষণ খুশি হয়ে উঠল ও। ইজানকে ধরে ঝটপট নৌকায় উঠে পড়ল। নদী পারাপারের বেশ বড় সাইজের ডিঙি নৌকা। দুজনে বসল একেবারে মাঝখানে।
“মাম্মা, কোনদিকে যাইবেন?” দড়ি খুলে লগিতে ঠেলা দিতেই নৌকা ভেসে গেল নদীর দিকে।
“আপনার ইচ্ছা। খালি এসব গ্যাঞ্জাম পার করেন, তাইলেই হবে।“
“ঠিক আসে”
গ্যাঞ্জাম পেরোনোর আগ পর্যন্ত কথা বলল না কেউই। বিকেল থেকে তো আর কম বকবক চলেনি। এখন তাই নীরবতাই কথা বলছে ওদের হয়ে। দুজনে চুপচাপ একে অন্যের হাত ধরে বসে রইল। মারজান তাকাল আকাশের দিকে। নাহ! এই ঢাকা শহরের বুকে নৌকায় ভেসে তারার মেলা দেখবার চেষ্টা করা বৃথা। অমনটা কেবল গল্পের বইতে পড়েই সাধ মেটাতে হয়। হতাশ দৃষ্টি নামিয়ে আনল নদীর বুকে। বরং সেখানেই সে দেখা পেল কাঙ্ক্ষিত দৃশ্যের। দূর পাল্লার লঞ্চ আর স্টিমারগুলো পাড়ি দিচ্ছে নিজস্ব পথ। এগিয়ে গেছে দূরে। সেগুলোতে জ্বলে থাকা বাতিগুলোই বরং নদীর কুচকুচে কালো বুকে তারার মেলা সদৃশ আসর বসিয়েছে।
“যা খুঁজছেন, তা ইন শা আল্লাহ অতি শীঘ্রই পেয়ে যাবেন, লেখিকা ম্যাডাম।“
“মানে?” কিছুটা চমকে উঠল মারজান।
“নদীতে বসে পরিস্কার আকাশে তারার মেলা দেখতে চান তো?”
“তুমি কীভাবে বুঝলে?” বিস্মিত কণ্ঠ মারজানের।
“হুহ! এতদিনে এটুকুও বুঝব না?” কপালের উপরের কয়েকটা চুল বিশেষ কায়দায় মাথার উপরে আর কানের পেছনে হাত দিয়ে সরাল ইজান।
ওর নায়কোচিত ভঙ্গি দেখে হেসে ফেলল মারজান।
“আচ্ছা! কীভাবে পাব?”
ইজান উত্তর দেয়ার আগেই পেছন থেকে বিশাল একটা হর্ন এর শব্দ শোনা গেল। চমকে পেছনে তাকাল ওরা। বিশাল হেডলাইটের আলোয় ওদের ভাসিয়ে দিতে দিতে এগিয়ে আসছে একটা জলযান। নৌকার মাঝি নিজস্ব গতিতে আরও একটু সাইডে টেনে নিল নৌকা। ওদেরকে ইচ্ছেমতো দুলিয়ে পাশ কাটিয়ে নিজের বিশাল বপু নিয়ে এগিয়ে গেল এল.সি.টি. ময়ূরপঙ্খি।
“বাহ বাহ! শয়তানের কথা বলার আগেই শয়তান হাজির! এই যে, এটার কথাই বলতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু তার আগে বলো, তুমি কখনো লঞ্চ ভ্রমণ করেছ?”
“না”
“গ্রেইট” তুড়ি মারল ইজান, “আমিও এমনটাই ভেবেছিলাম। সেজন্যই এই পরিকল্পনা। তুমি আর আমি তোমার এক্সামের পর এই লঞ্চে করে লঞ্চভ্রমণে যাব।“
“সত্যি!” উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলল মারজান। “কিন্তু এই লঞ্চেই কেন?”
“এটা বর্তমানের সবচেয়ে আধুনিক লঞ্চ। এর কেবিনের সুযোগ সুবিধা পুরো থ্রি স্টার হোটেলের মতো। আর লঞ্চের ডেক আর ছাদে বসে বসে নৌভ্রমণ উপভোগ করার মতো জোস জোস সব ফ্যাসিলিটি আছে। আমি তোমাকে ডিটেইলস বলব না, নাইলে তোমার মজা নষ্ট হয়ে যাবে”
“উফফ! আমার তো এখন তরই সইছে না। মনে হচ্ছে কবে পরীক্ষাটা শেষ হবে।“ চকচকে চোখে বলল মারজান।
“ওয়েট ওয়েট! এখন থেকেই নতুন গল্পের আইডিয়া বোনা শুরু কইরেন না ম্যাডাম। স্পেয়ার দিস টাইম ফর মাই সেক!” সিরিয়াস কণ্ঠে বলল ইজান।
“ওকে ওকে” হাসতে হাসতে বলল মারজান।
“ধুর, একটা ভুল হয়ে গেছে। কিছু খাবার কেনা হয়নি। এখন কী সুন্দর টুকটুক করে খাওয়া যেত!” বিরক্ত কণ্ঠে বলল ইজান।
“ভালো হয়েছে! সারাটা ক্ষণ খালি খেলেই চলবে? আমরা না ডিনার করব রেস্টুরেন্টে। হাবিজাবি খেয়ে পেট ভরালে ওখানে গিয়ে কি পানি খাব?”
“প..য়েন্ট! ভেরি গুড পয়েন্ট, মেরি জান”
এরই মাঝে নৌকা পেরিয়ে এসেছে আরও খানিকটা পথ। সদরঘাট আর দেখা যাচ্ছে না। হুট করে মারজানের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল ইজান। এর আগে এই কাজ বহুবার করেছে ইজান, কিন্তু এরকম একটা পরিবেশে, শরীরে অদ্ভুত এক শিহরণ খেলে গেল ওর। নি:শ্বব্দে অনুভূতিটা উপভোগ করল মারজান।
“মারজান, তোমার বই বের করতে ইচ্ছে হয় না?” হঠাৎই প্রশ্ন করল ইজান।
মিনিটের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো কেঁপে উঠল মারজান। হয় না? কোন লেখকের আবার এই ইচ্ছা না হয়? যে জীবনে একটা কবিতা লিখেছে, তারও শখ হয় নিজের একটা কবিতার বই হোক৷ আর সে তো লেখালেখির জন্যই যেন জীবনকে উৎসর্গ করে দিয়েছে!
“কিছু বলছ না যে?” মারজানের সাড়া না পেয়ে বলল ইজান।
“হয় তো। কিন্তু আমার লেখা কি আসলেই ছাপার যোগ্য?” ইতস্তত কণ্ঠে বলল মারজান।
“কী বললা তুমি এটা? কত মানুষ তোমার লেখা পড়ে দেখো না? সেগুলো কি এমনি এমনি?”
হেসে দিল মারজান। “সস্তা, রগরগে লেখার পাঠক এর চেয়েও বেশি হয়। তার মানে কি সেগুলোর মানও ছাপার মতো?”
“আমি সেটা বলিনি। আমি বলছিলাম যে তোমার পাঠক সংখ্যা নেহাতই কম না। আর সবাই যে শুধু তোমাকে তেল মারে, এমনও না। আমি দেখেছি, তুমি যথেষ্ট গঠনমূলক কমেন্ট পাও।“
“হ্যাঁ, আলহামদুলিল্লাহ।“ ইজানের প্রশংসায় খুশি হলো মারজান। “কিন্তু তবু আমার কাছে এগুলোকে নিজের লেখার মানদণ্ড মনে হয় না। মনে হয় না যে আমি খুব দারুণ কিছু, মনের গভীরে ছাপ ফেলার মতো কিছু লিখেছি।“
“কেন?”
“আমার কাছে যেসব প্রকাশকরা এসেছে, তারা শুধুই আমার পাঠক সংখ্যা দেখে এসেছে। তারা জানে এতগুলো পাঠকের একটা বিশাল অংশ বই কিনবে, আমি যা-ই লিখি না কেন। তাদের বইয়ের মান, লেখার মান নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নাই। এমনকি তারা কেউ আমার লেখা নিজে পুরোটা পড়েছে বলেও আমার মনে হয়নি। শুধু পেইজের ফলোয়ার আর পর্বের লাইক কমেন্ট গুনেই লাফাতে লাফাতে চলে এসেছে।“ কিছুটা বিষন্ন কন্ঠে কথাগুলো বলল মারজান।
“কেউই বলেনি তোমার লেখা ভালো?” অবাক কণ্ঠে বলল ইজান।
“আরে, ওইটা তো সবাই বলেছে। কিন্তু তেল মারা কথা তো বোঝা যায়, তাই না?”
“তাহলে তোমার কী ইচ্ছা?”
“যখন আমার মনে হবে, আমার লেখা ছাপানোর যোগ্য হয়েছে, তখন আমি একটা উপন্যাস লিখব। চলনবিলের বুকে নৌকায় ভাসা এক মেয়ের গল্প। যে গল্প আমার মনে মাথায় ভেসে বেড়ায় আজ অনেকগুলো বছর!” কেমন একটা আবেগ নিয়ে কথাগুলো বলল মারজান।
“কোনো সত্যি ঘটনা অবলম্বনে নাকি?”
“কীভাবে বুঝলে?”
“তোমার আবেগ দেখে। পরিচিত কারও ঘটনা?”
“পরিচিত ঠিক বলা যায় না। উনাকে আমি কোনোদিন আর দেখিনি। কিন্তু আমি তখন সবেমাত্র লেখালেখি শুরু করেছি। গল্পটা শুনে আমার ভেতরে এমনভাবে গেঁথে গিয়েছিল যে, আমি তখনই ঠিক করেছিলাম, কোনোদিন বই লিখলে এই ঘটনা নিয়েই লিখব। আমি উনার থেকে অনুমতিও নিয়ে নিয়েছিলাম।“
“ঝেড়ে কাশো তো!” রহস্যের গন্ধ পেয়ে উঠে বসল ইজান।
“আরেহ! এত সিরিয়াস, কিছু না। এই তো কয়েক বছর আগে বর্ষার সময় ট্রেনে করে নানুবাড়ি যাচ্ছিলাম। কপালগুণে সিট পড়েছিল বগির একদম মাঝখানে। আমাদের উলটোদিকে ছিল মাঝবয়েসী এক মহিলা। বর্ষার সময় না চলনবিল হয় দেখার মতো। চারিদিকে পানি আর পানি। মাঝখানে মানুষের বাড়িগুলো ছোটো ছোটো দ্বীপের মতো মনে হয়। আর রেললাইনের দুই পাশেও থই থই করে পানি। মনে হয় যেন পানিতেই চলছি। কী যে দারুণ দৃশ্য, না দেখলে বুঝবে না। তো আমি খুব আনন্দ নিয়ে এগুলো দেখছিলাম। হঠাৎ সামনে তাকিয়ে দেখি ভদ্রমহিলার চোখে জল। রীতিমতো নীরবে কাঁদছেন জানালার দিকে চেয়ে। আকুল নয়নে কী যেন খুঁজে পেতেও চাইছেন। আমি দৃশ্য দেখা বাদ দিয়ে উনার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলাম। উনি খেয়াল করে লজ্জা পেলেন। চলনবিল পার হওয়ার পর উনি চোখ টোখ মুছে স্বাভাবিক হলেন। আমিও কৌতূহল চাপতে না পেরে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম যে উনার কী হয়েছিল। তখন উনি বললেন, এই চলনবিলের মাঝে কোনো এক বাড়িতে তার জন্ম। এখানেই থাকত তার পরিবার। সাতাশি সালের বন্যায় এখানকার সমস্ত বাড়িঘর ডুবে গিয়েছিল। তখনই রিলিফ দিতে আসা একটা দল উনাকে নাকি একটা নৌকায় ভাসমান অবস্থায় পেয়েছিল। দুই-আড়াই বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে ঘুমিয়ে ছিল কাঁথার বিছানায়, নৌকায় আর কেউ ছিল না। আরও অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, উনার সাথে থাকা জিনিসপত্র দেখে মনে হচ্ছিল, পুরো পরিবারই ছিল নৌকায়। কিন্তু তাদেরকে কোনোভাবেই খুঁজে বের করা যায়নি। জিনিসপত্রগুলোর মধ্যে একটা টাকাভর্তি কলসও ছিল। এসবই পরে উনি প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর উনার পালক বাবা-মার থেকে শুনেছেন। তারা ওই রিলিফের দলের সাথে ছিলেন। কপাল গুণে উনার বিয়ে হয়েছে রাজশাহীতে। তাই প্রতিবার যাওয়া আসার পথে উনাকে চলনবিল পার হতে হয়। আর উনি আঁতিপাঁতি করে খুঁজতে থাকেন উনার অতীত। যার পুরোটাই ধোঁয়াশা ঘেরা।“
“কী বললা এগুলা? পুরাই মাথার উপর দিয়ে গেল। নৌকায় একটা বাচ্চা মেয়েকে রেখে তার বাপ-মা কই গেল? আবার গরীব ছিল বলে মনে হইতেসে না, টাকা ভর্তি কলসও ছিল। আমার তো গাঁজাখুরি গল্প মনে হচ্ছে।“
“আমার অবশ্য এর পিছে একটা থিওরি আছে”
“কী থিওরি?”
“উঁ-হু! সেটা তো এখন বলা যাবে না। উপন্যাস লিখলে তখন বলব”
“আমাকেও বলবা না? আমি না তোমার বেটা রিডার?”
“রিডার তো লেখার পর, আমি কি লিখেছি?”
“তাও বলো প্লিজ!”
“আচ্ছা, আজকে না, লেখার আগে আগে বলব ইন শা আল্লাহ। কারণ আমার থিওরি মাঝে মাঝেই চেঞ্জ হয়”
“ঠিক হ্যায়! যো মহারাণী কি মার্জি!”
পরিশিষ্ট:
উড্ডয়নের অপেক্ষায় রানওয়েতে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ বিমানের কক্সবাজারগামী একটি ফ্লাইট। ছোটো আয়তাকার জানালার পাশের সিটে জ্বলজ্বলে চোখ নিয়ে বসে আছে মারজান। ওর ঠিক পাশের সিটেই বসে আছে ইজান, মারজানের বাঁহাত নিজের মুঠোয় পুরে। জাতীয় হানিমুন স্পট কক্সবাজারেই যাচ্ছে ওরা হানিমুনে।
বিগত এক মাসে ওদের জীবনে ঘটেছে অনেক কিছু, যার শুরুটা হয়েছে এক প্রথম শ্রেণীর প্রকাশনা সংস্থার পান্ডুলিপি প্রতিযোগিতায় মারজানের লেখা উপন্যাসের বিজয়ী হওয়া দিয়ে। চুক্তি স্বাক্ষরের সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা শেষ। অবশেষে মারজানের প্রথম বই আসছে! তাও আবার ওর স্বপ্নের যথাযথ মর্যাদা দিয়ে।
ওদের বিয়ে, বউভাতের পাল্টাপাল্টি অনুষ্ঠানও হয়ে গেল গত সপ্তাহে। আর আজ ওদের দু’জনেরই প্রথম বিমান ভ্রমণ। সব মিলিয়ে দুজনের জীবন যেন এখন, এই মুহূর্তে কানায় কানায় পূর্ণ।
মারজানের উদ্দেশ্য তো সফল হয়েছে, সে পেয়ে গেছে লেখিকার তকমা। কিন্তু ইজান? সে কি পেয়েছে তার প্রেয়সীর ভালোবাসা? হ্যাঁ, পেয়েছে। ইজানদের বাসায় ওদের অফিশিয়াল বাসর রাতে মারজান ইজানকে দিয়েছে একটা প্রেমপত্র। এটা সেই চিঠি, যেটার অসমাপ্ত অংশ ইজান চুরি করে রেখে দিয়েছিল নিজের কাছে। তবে আফসোস! দ্য গ্রেট রাইটার চিঠিটা কাটছাঁট করে নামিয়ে এনেছেন মাত্র কয়েক ছত্রে।
চিঠিতে লেখা ছিল:
ডিয়ার (মা)ইজান,
তুমি কি জানো, তুমি কে? তুমি আমার জীবনে আসা আল্লাহ পাকের এক অশেষ নেয়ামত, আব্বু আম্মুর দেয়া শ্রেষ্ঠ উপহার।
তুমি কি জানো, তুমি একটা জাদুকর? তোমার জাদুর মায়ায় আমি আটকে গেছি সেইইই কবে!
তুমি কি জানো, তুমি আমাকে পূর্ণতা দিয়েছ? আমার ইম্ম্যাচিউর, খাপছাড়া জীবনকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছ নিজের বুদ্ধিমত্তা আর ভালোবাসা দিয়ে?
এন্ড দ্য লাস্ট, বাট নট দ্য লিস্ট….. তুমি কি জানো, আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি?
তোমারই,
‘মেরি-জান’
এয়ারহোস্টেসের ঘোষনার শব্দে সম্বিত ফিরল ইজানের। পকেটে হালকা চাপ দিয়ে যেন অনুভব করল মানিব্যাগে রাখা চিঠিটার ফটোকপির অস্তিত্ব। নির্দিষ্ট সময়ে গড়াতে শুরু করল বিমানের চাকা। গতি বাড়তে বাড়তে এক পর্যায়ে পেটের খানিকটা অংশ খালি করে উড়াল দিল আকাশে। সাথে সাথে ইজানের কানে একটা ছোট্ট পটকা ফুটার মতো আওয়াজ হলো। ওর মনে হলো ও ঠশা হয়ে গেছে। ঠিক সেই সময় মারজান ওকে ডেকে কিছু একটা বলল। ওর দুচোখে সহজাত উত্তেজনা। যে উত্তেজনা ইজানের এখন চিনতে আর কোনো অসুবিধা হয় না। মুখে নেকাব পরা মারজানের কথার একটা শব্দ না শুনেও ইজান বুঝল, ও কী বলতে চায়। ‘ডেস্পারেট লেখিকা’ তার নতুন গল্পের প্লট পেয়ে গেছে!