সম্পর্ক শেষ পর্ব

0
254

শেষ পর্ব

এমন একটা চাপা কষ্টের জীবনে “খোকা” আসলো বিশেষ আবদার নিয়ে। তার এটা চায়, ওটা চায়। আসমার বড্ড ভালো লাগে। খোকার মা জয়ার বিয়ে হয়েছিলো একদম অল্প বয়সে, বিয়ের পরপরই খোকার জন্ম। যৌথ পরিবারে সংসার সন্তান নিয়ে তেমন ভাবতে হয় নি। কিন্তু এবার একার সংসারে সামলে উঠতে পারে না।

আসমা সেখানে পাশে এসে দাঁড়ায়। খোকার সঙ্গী হয়, জয়ার কথা বলার, সাংসারিক পরামর্শ দেয়ার মানুষ হয়ে দাঁড়ায়। সম্পর্কটা যেন খোকাই তৈরি করে। মাসিমা বলে জড়িয়ে ধরে আত্নিক বন্ধনে আবদ্ধ করে আসমাকে।

বিয়ে বাচ্চার মাঝে পড়াশোনা’টা ধরে রেখেছিলো জয়া। ওর বর সৌরভ এ ব্যাপারে ভীষণ সাপোর্টিভ। এম এ ভর্তি হতে চায় জয়া কিন্তু দুরন্ত খোকা’কে রাখবে কে? কথা প্রসঙ্গে জয়া আসমাকে একথা বলেছিলো। আসমা জয়ার হাতে হাত রাখে, নির্ভরতা দেয়।

– আমি তো সারাদিন ঘরেই থাকি বোন। খোকা থাকুক না আমার কাছে। তুমি পড়ো, অনেক পড়ো যেন খোকা যখন আর খোকা থাকবে না, অনেক বড় হবে বলতে না পারে – তুমি বুঝবে না!

আসমার চোখ ছলছল করে। জয়া ব্যথা টের পায় কিন্তু বেশি কিছু জানতে চায় না। কিছু ব্যথা গোপন থাকাই ভালো, নড়াচড়া করলে আরো ব্যথা বাড়ে।

আসমার ঘর এখন খোকার রাজত্ব। সারাদিন এই রাজত্ব চলে। বিকাল পার করে ক্লাস শেষে জয়া ফেরে। আসমার স্বামী রাশেদও খোকা’কে খুব স্নেহ করে। হাতে করে এটা ওটা নিয়ে আসে খোকার জন্য। খোকা তাকে ডাকে বড় কাকু।

– ও বড় কাকু, আকাশের ঐ তারা এতো মিটমিট করে কেন?

– তারা যে অনেক দূরে থাকে খোকা। ওদের আলো পৌঁছাতে পৌঁছাতে এমন হয়ে যায়।

– কেন ওদের পাওয়ার কমে যায়?

খোকার কথায় হাসতে থাকে রাশেদ। এই বয়সের বাচ্চারা খুব প্রশ্ন করে। উনাদের ছেলে সোহানও এমন প্রশ্ন করতো। এখন হাতে ফোন আছে, গুগল আছে, এখন আর বাবাকে লাগে না।

বছর বিশেক পরের কথা। রাশেদ আর আসমা তাঁদের গ্রামের বাড়িতে থাকেন। রিটায়ার্ড করার পরে রাশেদ নিজের বাপ দাদাদের ভিটেয় এসে উঠেছেন। ছেলে’টা ঢাকায় থাকে, ভালো চাকরি করে, নিজস্ব ফ্লাট আছে। বাবা মা’কে নিজের সাথে থাকতে বলে কিন্তু কবে থেকে যেন মনে মনে একটা দূরত্ব তৈরি হয়ে গিয়েছে। ছেলের বাসাকে ঠিক নিজের বাসা মনে হয় না, কেমন যেন মেহমান লাগে নিজেদের। এজন্য আসমারা সেখানে থাকেন না। বছরে দুই একবার ঘুরে আসেন।

মেয়েটা তো আরো দূরে। কানাডাতে সেটেল্ড হয়েছে। জামাই এর ইচ্ছা বিদেশে সেটেল্ড হওয়া। ভীষণ ব্যস্ত জীবন ওদের। হিসেব করে সময় পার করতে হয়, সপ্তাহে একদিন কল করে কথা বলে। অনেক সময় সেটাও পারে না।

একদিন আসমাদের বাড়ির সামনে বেশ দামি একটা প্রাইভেট কার থামে। লম্বা সুদর্শন একটা ছেলে নেমে আসে। আসমারা ঠিক চিনে উঠতে পারে না।

– কি করছো?

এই প্রশ্নে চমকে উঠেন আসমা। ভালো করে মুখ দেখতে থাকেন।

– এমন করে তাকিয়ে লাভ নেই মাসিমা। বাজার করে এনেছি, তোমার হাতে বিরিয়ানি খাবো আজ। তোমার মতো বিরিয়ানি কেউ রাঁধতে পারে না।

– খোকা!

কাঁদতে কাঁদতে পাঁচ ফুট নয় ইঞ্চির বিশাল দেহটা’কে জড়িয়ে ধরেন আসমা।

– কান্নার বহুত বাকি মাসিমা। বড় কাকু রেডি হও। তোমাদের বউমা আনতে যেতে হবে। এমন জায়গায় এসে লুকিয়ে আছো, খুঁজে হয়রান হয়ে গিয়েছি। মা’কে বলেছি মাসিমা’কে ছাড়া বিয়েই করবো না। মা নিজেই আসতো কিন্তু বাবার হঠাৎ জ্বর এসেছে, ওদিকে আবার আত্নীয় স্বজনে ঘর ভর্তি। মা বললো, তোর মাসিমাকে নিয়ে আয়। এক হাতে আমি সামলাতে পারবো না। তাই কিডন্যাপ করতে এসেছি।
আগে বিরিয়ানি খাবো তারপরে দুইজনকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাবো।

একথা বলে ছোট্ট খোকার মতোই দুষ্টুমির হাসি দেয় খোকা ওরফে অর্জুন রায় চৌধুরী।

#সম্পর্ক

প্রথম পর্বের লিংকঃ

https://www.facebook.com/share/p/xjqRL7hneSn1jknQ/?mibextid=Nif5oz

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here