হঠাৎ_বৃষ্টিতে⛈️ #Part_04 #Writer_NOVA

0
275

#হঠাৎ_বৃষ্টিতে⛈️
#Part_04
#Writer_NOVA

— ত্রিবু মেম্বারের পোলা হিমেল আইছে। তোর লগে নাকি তার কথা আছে।

দাদীর মুখে হিমেলের নাম শুনে ত্রিবু চমকে বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তার দাদীর দিকে তাকালো। সারা রাস্তায় সে এই ভয়টা পাচ্ছিলো। চোখ নামিয়ে মাটির দিকে শান্ত নজর দিলো ত্রিবু। বুকের ভেতরটা ঢিপঢিপ করছে। ত্রিবুর রিয়েকশন বদলে যাওয়ায় জোবেদা খাতুন এগিয়ে এসে ত্রিবুর বাহু মৃদু করে ধাক্কা দিয়ে বললো,

— কি রে এমন মূর্তির মতো বইয়া রইলি কেন? কি কইলাম হুনলি (শুনিস) না! মেম্বারের পোলা আমগো(আমাদের) বাড়ি কেন? তোর সাথে তার কিসের কথা?

ত্রিবু শান্ত দৃষ্টিতে তার দাদীর দিকে তাকিয়ে বললো,
— টেবিলে ডিম আর ডাল আছে। সেগুলো নিয়ে দ্রুত রান্না বসাও। অনেক খুদা লাগছে। আমি ভাত খাবো। কলেজ যেতে হবে তো।

— আমি তোরে কি কইলাম(বললাম)হুনছোস?

— তুমি তোমার কাজ করো। আমি দেখছি।

জোবেদা খাতুন কিছু বলার আগে ত্রিবু ধীর পায়ে বের হয়ে গেলো। দ্রুত হিমেলকে বিদায় করতে হবে। পাশের বাসার মহিলারা দেখে ফেললে কুৎসা রটাবে। এমনি ত্রিবুর ভুল ধরার জন্য উৎ-পেতে থাকে। দেরী করলে হিমেলও চেচামেচি শুরু করতে পারে। ধৈর্য্য নামক বস্তুটা ছিটেফোটাও হিমেলের মাঝে নেই। চেচামেচি করলে আরেক ঝামেলা। মানুষ জোরো হয়ে যাবে। তারপর কতশত কাহিনি ঘটবে তা আর ত্রিবু ভাবতে পারলো না।

উঠোনের কোণায় কাঠের চেয়ারে পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে হিমেল। চোখ, মুখ অসম্ভব লাল। চুলগুলো উসকোখুসকো। নাকের ডগাটা লাল হয়ে আছে।হিমেল যে রেগে আছে তার লক্ষ্মণ এটা। ফর্সা গায়ের রংটাও কিরকম কালচিটার মতো লাগছে। ত্রিবু নিঃশব্দে হিমেলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। হিমেলকে ভীষণ ভয় করছে তার। কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলো,

— আপনি এখানে কি মনে করে?

হিমেল দ্রুত অন্য দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ত্রিবুর দিকে তাকিয়ে বললো,

— আমি এখানে কেন তা তুই জানিস না?

ত্রিবু ভয়ার্ত গলায় আমতা আমতা করে বললো,
— না, আমি কি করে জানবো!

হিমেল রেগে চেচিয়ে বললো,
— কোন সাহসে তুই মারিয়াকে সব বলেছিস?

— আমি আমি কিছু বলিনি।

— তুই না বললে ও জানলো কি করে?

— আমি সত্যি বলছি আমি কিচ্ছু জানি না। মারিয়াকে আমি কিছু বলিনি।

ত্রিবু ভয়ে তোতলাতে লাগলো। ত্রিবুর কথাবার্তা শুনে হিমেলের মেজাজটা দপ করে জ্বলে উঠলো। চোখ দুটো রক্তবর্ণ করে বললো,

—তোর সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো তুই গতকাল আমার হলুদের অনুষ্ঠানে যাওয়া। তুই না গেলে আমি তোর সাথে কথাও বলতাম না আর আজ এতকিছু হতো না।

হিমেল জানে ত্রিবু কিছু করেনি। কারণ ত্রিবুর এতো সাহস নেই।তবে তার ভুল একটাই সে কেনো হলুদের অনুষ্ঠানে গিয়েছে। না গেলে তো এতসব কাহিনি হতো না। তার ক্ষোভে হিমেল এগিয়ে এসে ত্রিবুর মুখ শক্ত করে চেপে ধরে বললো,

— খুব বাড়ছিস তুই। তোর কপালে শনি আছে।যত নষ্টের গোড়া তুই। চরিত্রহীন মেয়ে। আপাতত তোকে কিছু করবো না। আগে ঐ মারিয়াকে দেখে নেই। আমাকে রিজেক্ট করার ভয়ানক শাস্তি ওকে দিবো। এমন হাল করবো যাতে কাউকে মুখ না দেখাতে পারে। তারপর তোর ব্যবস্থা করবো। এই গ্রামে কি করে থাকিস তা আমিও দেখবো।

ক্ষিপ্ত গলায় কথাগুলো বলে হিমেল ত্রিবুর মুখ ছেড়ে দিলো।ভেতরে ভেতরে ত্রিবু এখন ভীষণ ভয় পাচ্ছে। সে মিইয়ে গেছে। হিমেল রাগলে হিতাহিত শূন্য হয়ে যায়।হিমেল ত্রিবুর কাঁধে জোরে ধাক্কা দিয়ে হনহন করে বেরিয়ে গেলো। ত্রিবু নিচে পরতে পরতেও নিজেকে সামলে নিলো। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে মাটির দিকে তাকিয়ে কান্না সংবরণ করে নিলো। তবুও চোখ থেকে অবাধ্য দুই ফোঁটা পানি গাল বেয়ে গরিয়ে পরলো। জোবেদা খাতুন শাকপাতা ধুতে পুকুরের ঘাটপাড় গিয়েছিলো।দ্রুত পায়ে ঘাটপাড় থেকে ফিরে এসে নাতনিকে এই অবস্থায় দেখে বললো,

— মেম্বারের পোলা কি কইলো(বললো) তোরে? তুই কান্দস কেন? ঐ এমন তাড়াখাম্বার (বৈদ্যুতিক পিলার) মতো দাঁড়ায় রইছোস কেন? কি হইছে কো (বল) আমারে?

ত্রিবু দ্রুত চোখের পানি মুছে ঘরের দিকে যেতে যেতে শক্ত কন্ঠে তার দাদীকে উদ্দেশ্য করে বললো,

— আমার পোড়াকপালের দোষ সব। আমার আবার কিছু করতে হয় নাকি? ভাগ্যের দোষে আজ আমার এই দশা।তুমি এসব বুঝবা না। যাও গিয়ে নিজের কাজ করো।

☔☔☔

বিকেলবেলা…….

টং দোকেন বেঞ্চে বসে আছে বিপ্লব,মনির। প্রায় দিনই তারা তিন বন্ধু এখানে বসে আড্ডা দেয়। তাদের মধ্যে শ্রাবণ এখনো এসে পৌছায়নি। দুজনেই এক হাতে সিগারেট আরেক হাতে চায়ের কাপ। রাজকীয় ভঙ্গিতে চায়ের কাপে এক চুমুক দিচ্ছে তো আরেকবার সিগারেট ফুঁকছে।শ্রাবণ দৌড়ে ওদের পাশে বসতে বসতে বললো,

— সরি রে দোস্ত আজ অনেক দেরী হয়ে গেলো।

মনির চায়ের কাপ নামিয়ে রেখে চোখ দুটো ছোট ছোট করে বললো,

— এমন করে বললি যেনো প্রতিদিন সঠিক সময়ে আসিস।

শ্রাবণ মুচকি হেসে বিপ্লবের হাত থেকে সিগারেটটা নিয়ে বড় করে একটা টান দিলো। তারপর সেই ধোঁয়া উপরের দিকে উড়িয়ে দিতে দিতে বললো,

— আমার তো আর তোর বাপের মতো বিশাল পাটের কারবার নেই যে আজাইরা ঘুরবো ফিরবো। সকাল থেকে সন্ধ্যা অব্দি হাড় ভাঙা খাটুনি করতে হয়। মাত্র একটা টিউশনি শেষ করে আসলাম।

বিপ্লব ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
— মেম্বারের পোলার নাকি বিয়ে ভেঙে গেছে। শুনছিস নাকি কিছু?

মনির কাপে থাকা চা শেষ করে কাপটা পাশের পানি ভর্তি বালতিতে চুবালো। হাত ঝাড়া দিতে দিতে কপাল কুঁচকে বললো,

— গ্রামের বর্তমান খবর এটা। সকালের তাজা খবর থাকলেও এখন বাসি হয়ে গেছে। তাই কে না জানে বল তো?

শ্রাবণ এদিক সেদিক তাকিয়ে কাউকে খুঁজছিলো। সেটা টের পেয়ে বিপ্লব ওর কাঁধে একটা চাপর মেরে বললো,

— কিরে কি খুঁজিস?

শ্রাবণ মুখটাকে স্বাভাবিক করে বললো,
— এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন যে মেয়েটা টিউশনি করতে যায়। তাকে দুদিন ধরে দেখছি না যে।

মনির একগাল হেসে বললো,
— ওহ ঐ কালো মেয়েটার কথা বলছিস? কি জানি নাম ওর। ও মনে পরেছে। ত্রিবু হ্যাঁ ত্রিবু।

নামের সাথে কালো শব্দটা জুড়ে দেওয়ায় শ্রাবণ বেশ বিরক্ত হলো। একটা মানুষ কালো হতেই পারে। তাই বলে সবসময় কথার আগে গায়ের রং ট্যাগ করতে হবে কেন? বিরক্তি মাখা কন্ঠে বললো,

— দোস্ত একটা মানুষ কালো হতেই পারে। তাই বলে এভাবে বলা উচিত নয়। আল্লাহ সবাইকে এক রকম বানায় না। তোর গায়ের রং অন্যের থেকে ফর্সা বলে তোর থেকে চাপা গায়ের রং-এর মানুষকে তুই অপমান করতে পারিস না।

মনির এসব কথা গায়ে না মেখে মুখ বাঁকিয়ে বললো,
— ইস কালো বলায় তোর গায়ে একেবারে ফোস্কা পরলো মনে হয়।

মনিরের কথায় শ্রাবণের ভীষণ রাগ হলো। কিন্তু মুখে প্রকাশ করলো না। মনিরের জায়গায় অন্য কেউ থাকলে এতখনে নাক ফাটিয়ে ফেলতো। শুধু বন্ধু হওয়ায় বেঁচে গেছে। নিজেকে সংবরণ করে শ্রাবণ বললো,

— হ্যাঁ, মেয়েটার গায়ের রং কালো। কিন্তু ওর চেহারা গঠন কিন্তু মা শা আল্লাহ। চেহেরাটা অসম্ভব মায়া দিয়ে ঘেরা। তাকিয়ে থাকলে একটা পবিত্রতা কাজ করে। আমার কাছে আস্ত একটা কিউটনেসের ডিব্বা মনে হয়।

মনির হো হো করে হেসে উঠলো। মনে হচ্ছে শ্রাবণ কোন জোকস বলেছে। কিন্তু বিপ্লব চোখ কুঁচকে বললো,

— কিরে তুই আবার মেয়েটার প্রেমে পরে গেলি নাকি?

শ্রাবণের মুখে আবারো বিরক্তি প্রকাশ পেলো। তা ঠেলে দিয়ে স্মিত হেসে বললো,

— একটা মানুষকে আমার ভালো লাগতেই পারে স্বাভাবিক। তাই বলে এই নয় আমি তার প্রেমে পরে গেছি। মেয়েটার সাথে কলেজ ক্যাম্পাসে দুইবার কথা বলেছিলাম। কথা বলার ধরণ, আচার-ব্যবহার আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। তাই নিজের মনের ভাব জানালাম। তোরা সেটাকে প্রেমের দিকে ঠেলে দিলি।

মনির ঠাট্টার সুরে বললো,
— শেষ পর্যন্ত তোর একটা কালো মেয়েকে ভালো লাগলো।

শ্রাবণ হাত মুঠ করে নিজের রাগটা নিয়ন্ত্রণ করে নিলো। মনিরের এই একটা বাজে অভ্যাস। কারো কোন খুঁত পেলে তা নিয়ে নাচানাচি করে। সে আবার ভীষণভাবে সুন্দরের পূজারী। তার ধারণামতে সুন্দর মানেই হলো ধবধবে সাদা। নিজের গায়ের রং সাদা বলে অন্যের গায়ের রং নিয়ে হেয় করতে দুইবারও ভাবে না।অথচ সে এটা বুঝে না রূপ চিরদিন কারো থাকে না। শ্রাবণ ঠান্ডা গলায় বললো,

— তুই কিন্তু আবার বাড়াবাড়ি করছিস।

মনির সেই কথার তোয়াক্কা না করে আবারো কালো রং নিয়ে যা তা বলা শুরু করলো। বিপ্লব ওর কথায় সায় না দিলেও মাঝে মাঝে মনিরের সাথে তাল মিলিয়ে হাসছে। এই জায়গায় থাকলে অঘটন ঘটতে পারে। তাই শ্রাবণ কোন কথা না বলে দ্রুত পায়ে উল্টো দিকে রওনা দিলো। মনির, বিপ্লবের হাসির সাথে সে যোগ দিতে পারে না। কারো গায়ের রং নিয়ে কোন ঠাট্টা বিদ্রুপ করার অধিকার কারোর নেই। তাছাড়া এখানে থাকলে ওদের দুজনের সাথে মারামারি লেগে যেতে পারে। তাই দ্রুত সটকে পরলো। পেছন থেকে বিপ্লব এক নাগাড়ে ডেকে চলছে। কিন্তু শ্রাবণ পিছু তাকালো না। আবারো বিপ্লব জোরে চেচিয়ে বললো,

— এই শ্রাবণ কোথায় যাচ্ছিস?

~~উপর দেখে কারো ভেতর বিবেচনা করবেন না🥀।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here