হঠাৎ_বৃষ্টিতে⛈️ #Part_12 #Writer_NOVA

0
271

#হঠাৎ_বৃষ্টিতে⛈️
#Part_12
#Writer_NOVA

নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে ত্রিবু ও মারিয়া। দুজনের দৃষ্টি সামনের আকাশের দিকে। নদীর ওপর দিয়ে দুটো গাংচিল পাখা মেলে সূদুর আকাশে মিলে গেল। একটা পানকৌড়ি কিছু সময় পরপর নদীর পানিতে ডুব দিয়ে আবার মাথা উঁচু করে ঝাড়া মারছে। একটা জেলে নৌকা দূর থেকে এসে ওপাড়ে থামলো। দুজনের মাঝে পিনপিনে নীরবতা বিরাজ করছে। মারিয়া গলা খাকরি দিয়ে প্রথম কথা বললো,

— অনেকদিন ধরে ইচ্ছে ছিলো তোমার সাথে দেখা করার। ভাবলাম এখান থেকে যখন চলে যাবো তোমার সাথে দেখা করে যাই। নয়তো আমার মনটা মানবে না।

ত্রিবু শান্তপর্ণে চোখ উঠিয়ে মারিয়ার মুখের দিকে তাকালো। তার চোখে স্পষ্ট প্রশ্ন দেখা যাচ্ছে। তা দেখে মারিয়া হালকা শব্দ করে হেসে উঠলো। কন্ঠ নিচু করে বললো,

— কেনো তোমার সাথে দেখা করার ইচ্ছা আমার তাইতো ভাবছো।

ত্রিবু উপরনিচ মাথা নাড়ালো। সে আসলেই অবাক হচ্ছে। পড়ন্ত বিকেলের রোদের আলো মারিয়ার মুখে পরছে। সেদিকে তাকিয়ে মারিয়া হাত দিয়ে রোদ আড়াল করে কিছুটা পিছিয়ে দাঁড়ালো। এদিক সেদিক তাকিয়ে নদীর পাড়ের সবুজ ঘাসের ওপর গিয়ে বসলো। পাশে হাত দিয়ে দেখিয়ে ত্রিবুকে বললো,

— আমার পাশে বসো ত্রিবু। তোমায় সব খুলে বলছি আমি।

ত্রিবু মারিয়ার পাশে বসলো। ত্রিবু বুঝে উঠতে পারছে না মেয়েটা তার সাথে কেন কথা বলতে চায়। তার সাথে কখনো কথা হয়নি তার।হঠাৎ করে কি এমন হলো যাতে মারিয়া নিজে তার সাথে কথা বলতে চলে এসেছে। টিউশনি থেকে ফেরার সময় মারিয়ার সাথে রাস্তায় দেখা। ওকে দেখেই বললো,”তোমার সাথে আমার কথা আছে ত্রিবু। চলো নদীর পাড়ের দিকে যাই।” ত্রিবু অমত করেনি। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না কি কথা হতে পারে। মারিয়া সামনের দিকে দৃষ্টি দিয়ে বললো,

— হিমেল যে আমায় এসিড মেরেছে তাতো তুমি জানো তাই না ত্রিবু?

ত্রিবু এতখন পর মুখ খুললো,
— হ্যাঁ, পাশের বাড়ির এক চাচীর থেকে জেনেছি।

— দুই সপ্তাহ পর আমার বিয়ে। আমার ভালোবাসার মানুষের সাথে। জানো সে আমায় সত্যি অনেক ভালোবাসে। নয়তো একটা এসিডদগ্ধ মেয়েকে সে কেন বিয়ে করতে রাজী হবে বলো তো?

— অভিনন্দন আপু। সত্যি সবার জীবনে এমন ভালোবাসার মানুষ থাকে না। দোয়া করি আপনি ও ভাইয়া যেনো সুখে থাকতে পারেন।

— আমি তোমার সমবয়সী হবো।তাই দয়া করে আপু বলো না। তুমি করে সম্বোধন করলে খুশি হবো।

— আচ্ছা।

মারিয়া একটু থেমে ফের বললো,
— বিয়েটা ঢাকায় হবে। হিমেল যাতে বিয়েতে কোন সমস্যা করতে না পারে তার জন্য এই ব্যবস্থা। ঘরোয়াভাবেই বিয়ের আয়োজন করা হচ্ছে। বিয়ের পর ঢাকায় থাকা হবে। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া গ্রামে আসা হবে না। এই ধরো দুই -চার বছর পর একবার আসবো। শ্বশুরবাড়ি সবাইকে নিয়ে ঢাকায় চলে যাবো। আম্মু-আব্বুও এদিকের একটা ব্যবস্থা করে ঢাকায় বাসা নিবে। তোমার সাথে দেখা নাও হতে পারে। তাই তোমার সাথে কথা বলতে চলে এলাম।

— কিন্তু কেনো?

— তুমি আর আমি তো হিমেলের কারণে আজ এই অবস্থায়। দুজনের সূত্র কিন্তু একজন। আমরা দুজনেই ওর হয়রানির শিকার হয়েছি।তাছাড়া তুমি না থাকলে আমি বিয়েটা ভাঙতে পারতাম না।

ত্রিবু অবাক হয়ে বললো,
— আমি তো কিছু করিনি।

— তোমার সাথে হিমেল যে কথাগুলো বলেছিলো তা আমি আড়াল থেকে শুনে নিয়েছিলাম। তাই তো বিয়েটা ভাঙতে পেরেছি। তার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ।

— তোমাকেও ধন্যবাদ।

মারিয়া ভ্র জোড়া কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
— আমাকে ধন্যবাদ কেনো?

ত্রিবু মারিয়ার চোখে চোখ রেখে বললো,
— তুমি না থাকলে আমি ওর আসল রূপটা দেখতে পারতাম না। কিংবা এতটা বদলাতে পারতাম না। আর…..

ছেলেটার কথা মনে আসতেই ত্রিবু চুপ হয়ে গেলো। পুরো কথা শেষ করলো না। মারিয়া বিস্ময় মিশ্রিত চোখে ত্রিবুর দিকে তাকিয়ে আন্দাজ করার চেষ্টা করলো সে কি বলতে গিয়ে থেমে গেলো।গম্ভীর কন্ঠে বললো,

— আর কি?

ত্রিবু দম ছেড়ে বললো,
— কিছু না।

— হিমেলকে কোন কঠিন শাস্তি দিতে পারতাম তাহলে মনটা শান্ত হতো। কিন্তু আমি আর কোন ঝামেলা করতে চাইছি না। সামনে বিয়ে যদি কোন ক্ষতি হয় সেই ভয়ে।

— চিন্তা করো না। উপরে আল্লাহ আছে। তিনি ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না। সে নিশ্চয়ই ওর জন্য কঠিন শাস্তি লিখে রেখেছে।

— তাই যেনো হয়।

— হুম।

— আচ্ছা, চলো আজ উঠি।তোমার সাথে কথা বলে ভালো লাগলো।

— আমারও।

— দোয়া করি তোমার জীবনেও যেনো একজন সত্যিকারের প্রেমিক পুরুষের আগমন ঘটে।

ত্রিবু স্মিত হাসলো। তার বলতে ইচ্ছে করছিলো, “দোয়া করো মারিয়া। আমি যাতে সেই মানুষটাকে নিজের করে পাই। যে আমাকে নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে।” কিন্তু মুখে তা বলতে পারলো না। মনের কথা মনে রয়ে গেলো। সত্যি যদি ছেলেটা মৃত হয় তাই। দুজনে চুপচাপ বাসার পথ ধরলো। বাকি পথে তাদের আর কোন কথা হয়নি।

☔☔☔

রাতে……

আদনান এক গ্লাস পানি নিয়ে প্লেটে খাবার বেড়ে নিলো। ধীর পায়ে মায়ের রুমে চলে এলো। আসমা বেগম উল্টো মুখ করে শুয়ে আছে। গায়ে তার পাতলা কাঁথা জোড়ানো। মায়ের পাশে এসে দাঁড়ালো আদনান। তার বাবা দোকান থেকে এখনো আসেনি।ছোট বোন আদিবা পাশের রুমে বসে পড়ছে। সে মায়ের শিউরের পাশে দাড়িয়ে মৃদুস্বরে ডাকলো,

— মা উঠো। খাবার খেয়ে নাও।

অপরপাশ থেকে আসমা বেগমের কোন সাড়াশব্দ এলো না। তার শরীরটা মৃদুমন্দে কেঁপে উঠছে। আদনান বুঝতে পারলো তার মা নীরবে কাঁদছে। মায়ের কান্না কোন সন্তান সহ্য করতে পারে না। আদনানের মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে গেলো। গত কয়েকদিনে তার মায়ের শরীরে কি অবস্থা! হাসিখুশি মানুষটা আচমকা চুপ হয়ে গেলো। সারাক্ষণ আঁচলে মুখ গুঁজে কান্না করে। আদনানের চোখ দুটো পানিতে চিকচিক করে উঠলো। উপরের ফ্যানের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি আটকানোর চেষ্টা করলো। কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,

— মা উঠো খেয়ে নাও। না খেলে তো শরীর খারাপ করবে। আরো অসুস্থ হয়ে যাবে।

আসমা বেগম এবারো ছেলের দিকে তাকালেন না। চোখ দিয়ে অনরবত পানি পরে বালিশ ভিজে যাচ্ছে। তাতেও তার কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। আদনান হাতের গ্লাস,প্লেট খাটের একপাশে রাখলো।মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে নরম গলায় বললো,

— তুমি না খেলে কিন্তু আমিও খাবো না। তুমি যদি চাও তোমার ছেলে না খেয়ে সারারাত থাকুক, তাহলে তোমাকে খেতে হবে না।

কথাটা জাদুর মতো কাজ করলো। আসমা বেগম আঁচলের কোণা দিয়ে চোখ মুছে উঠে বসলেন। নাক টেনে নিচুস্বরে বললো,

— পারিস তো এসবি করতে। এছাড়া আর কোন কাজ নেই। তোরা না খেয়ে থাকলে আমার সারারাত ঘুম হবে না। সেই কথা জেনে ব্লাকমেইল করিস।

আদনান গাল ফুলিয়ে বললো,
— তুমি না খেলে বুঝি আমার ভালো লাগবে। নাও এখন চুপ করে বসো। আমি খাইয়ে দেই।

আসমা বেগম ঘোর আপত্তির সুরে বললো,
— আমি হাত দিয়ে খেতে পারবো।

আদনান শাসন মিশ্রিত কন্ঠে বললো,
— কোন দরকার নেই। আমি জানি তো হাত দিয়ে খেলে তুমি কতটুকু খাবে। প্লেটের অর্ধেক খাবারও শেষ হবে না। আমি চিনি তো তোমায়।

ছেলের শাসনের গলা শুনে আসমা বেগম ফিক করে হেসে উঠলেন। আদনানের মনের মেঘ কেটে গিয়ে এক চিলতে রোদ উঁকি দিলো। তার মা যে হাসছে। মা কে হাসতে দেখলে এমনি এমনি মনটা ভালো হয়ে যায়। মায়ের মন খারাপ, মন ভালোর সাথে সন্তানের মনেরও প্রভাব পরে। আদনান হাত ধুয়ে তার মা কে খাইয়ে দিতে লাগলো।এক লোকমা খাবার তুলে দিতেই আসমা বেগমের গাল বেয়ে দুই ফোঁটা চোখের পানি ঝড়ে পরলো। আদনান বিষন্ন গলায় বললো,

— মা কান্না করো না প্লিজ। তোমার চোখের পানি আমার মনটাকে দুমড়েমুচড়ে দেয়। ভীষণ খারাপ লাগা কাজ করে।

— আল্লাহ কেন এমন করলো? আমার আরেক কলিজাকে আমার থেকে ছিনিয়ে নিলো। আমার কোল খালি করে দিলো।

আসমা বেগম হু হু করে কেঁদে উঠলো। আদনান বিষন্ন মনে প্লেটের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো। জীবনের মোড়টা হুট করে ঘুড়ে গেলো। নিজেকে কিছুটা শক্ত করে বাম হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,

— বেশি বেশি করে দোয়া করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু। এখন দোয়া ছাড়া আর কিছু করার নেই।

— তোকে দেখলেই তো বুকটা ফেটে যায় বাবা। একসাথে দুজনকে আর কখনো……

পুরো কথা শেষ না করে বালিশে হেলান দিয়ে আঁচলে মুখ ঢাকলেন তিনি। আদনান মা কে শান্ত করতে বললো,

— তুমি যে দিনরাত কান্না করো এটা কি ঠিক বলো? এতে তুমি অসুস্থ হয়ে যাবে। তখন আমার, বাবার, আদিবার কি হবে বলো তো?

আসমা বেগম জড়ানো গলায় বললো,
— তোদের জন্য তো বুকে পাথর বেঁধে বেঁচে আছি বাবা। নয়তো কবেই….

আদনান তার মায়ের ঠোঁটে আঙুল রেখে চুপ করিয়ে দিলো। ধরা গলায় বললো,

— খবরদার মৃত্যুর কথা মুখেও আনবে না। একজনকে হারিয়ে কোনরকম বেঁচে আছি। তোমাকে ছাড়া আমরা নিঃস্ব। তাই এসব কথা বলো না।

আসমা বেগম কোন কথা বললো না। চুপচাপ খাবার খেতে লাগলো। আদনান জোর করে সবটুকু খাবার খাইয়ে দিলো। মা কে মুখ মুছিয়ে দিয়ে, পানি খাইয়ে উঠে গেলো। বোনের রুমের সামনে এসে ডাকলো,

— আদিবা!

আদিবার সামনে পরীক্ষা। তাই না চাইতেও তাকে বইয়ে মুখ গুঁজে রাখতে হয়। বইয়ের পৃষ্ঠা থেকে চোখ তুলে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলো।

— জ্বি ভাইয়া।

–মায়ের ঔষধগুলো একটু খাইয়ে দিয়ে আসিস তো।

— আচ্ছা,এখুনি যাবো?

— না, আধা ঘণ্টা পর।

— তুমি কোথায় যাবা?

— বাবাকে নিয়ে আসি। অনেক রাত হলো। এখনো আসছে না। ভেতর থেকে দরজা ভালো করে লাগিয়ে দিস। কেউ এলে খুলবি না। আর মায়ের খেয়াল রাখিস।

— জলদী চলে এসো।

আদনান ঘর থেকে বের হয়ে গেলো। ভাইয়ের যাওয়ার পানে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আদিবা। চোখটা ঝাপসা হয়ে এলো। চোখ মুছে যতখন অব্দি ঘন কালো আঁধারে তার ভাইয়ের অবয়বটা মিলিয়ে না গেলো ততক্ষণ তাকিয়ে রইলো। অন্ধকারে মিলিয়ে যেতেই দরজা আটকে বই নিয়ে মায়ের রুমে চলে গেলো।

☔☔☔

শরীরে থাকা বৃষ্টির ছিটেফোঁটা পানি ঝাড়তে ঝাড়তে হাইস্কুলের সামনের স্টেশনারি দোকানের সামনে এসে দাঁড়ালো ত্রিবু। হুট করে বড় বড় ফোঁটায় বৃষ্টি আরম্ভ হয়ে গেলো। একটু আগেও আকাশ কি পরিষ্কার ছিলো। এর এখুনি বৃষ্টি! একেবার হঠাৎ বৃষ্টি যাকে বলে। আশেপাশে কোন মানুষ নেই। রাস্তা দিয়ে একটা দুটা রিকশা দ্রুত গতিতে চলে যাচ্ছে তাদের গন্তব্যে। কলেজ থেকে হেঁটে ফিরছিলো ত্রিবু। সে সাধারণত বাড়ির ভেতর দিয়ে একটা কাঁচা রাস্তা দিয়ে সবসময় চলাচল করে। আজ কি মনে করে বড় রাস্তা দিয়ে এলো কে জানে! কারণটা নিজেই খুঁজে পেলো না। হঠাৎ হাসির শব্দ পেয়ে চমকে উঠলো। পেছন ঘুরে দোকানের ভেতরে একটা ছেলেকে দেখতে পেলো। নিচু হয়ে মোবাইলে কিছু একটা দেখছে।যার দরুন তার মুখ বোঝা যাচ্ছে না। ছেলেটা মাঝে মাঝে মৃদু শব্দ করে হেসে উঠছে। সেই হাসির শব্দ ত্রিবুর কানে বাজছে। ত্রিবু নিজেকে কিছুটা গুটিয়ে নিলো। একা একটা মেয়ে বৃষ্টিতে এক ছেলের সাথে দোকানে। এমনটাও তো হতে পারে ছেলেটা তাকে একা পেয়ে কোন খারাপ মতলব এঁটে ফেললো।তখন কি হবে?এদিকে বৃষ্টি কমার নামও নিচ্ছে না। বরং বেড়ে যাচ্ছে।

— মিস ত্রিবু!

পরিচিত কন্ঠ পেয়ে ত্রিবু চমকে এদিক সেদিক তাকিয়ে কন্ঠের মালিককে খুঁজতে লাগলো। এটা তো হঠাৎ বৃষ্টিতে দেখা হওয়ার ছেলের কন্ঠ। কিন্তু বসে থাকা সেই ছেলেটা ছাড়া আর কাউকে পেলো না। তারা দুজন ছাড়া আর কেউ নেই এখানে। তাহলে সেই ছেলের কন্ঠ কি করে পেলো? হ্যালুসিয়েশন ভেবে ত্রিবু বিষয়টাকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করলো। বিরবির করে আপনমনে নিজেকে নিজে বকতে বকতে বললো,

— সারাদিন, সারারাত ঐ ছেলের কথা চিন্তা করতে তোর মাথা গেছে ত্রিবু। এখন তুই আশেপাশে ওর গলার স্বরও শুনতে পাস। যে তোকে নাম ধরে ডাকে।তুই আসলেই পাগল হয়ে গেছিস।

নিজে নিজে কথা বলে হেসে উঠলো। তখন আবারো সেই কন্ঠস্বর বলে উঠলো,

— একা একা কি বলছেন মিস ত্রিবু? মানুষ পাগল বলবে তো।

ত্রিবুর চোখ দুটো কোটর থেকে বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম। এক আঙুল কানের ভেতর দিয়ে কিছু সময় ঝাঁকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো সে কি ভুল শুনেছে কিনা। অপরপাশ থেকে মিহি হাসির ঝংকার এলো। ত্রিবু ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো,

— কে কে কথা বলছেন?

— আমাকে চিনেন না?

— প্লিজ সামনে আসুন।

— আমি তো আপনার সামনে আছি।

— কোথায়? আমি আপনাকে দেখতে পাচ্ছি না কেন?

— চোখের বরাবর তাকান, তাহলেই দেখতে পাবেন।

ত্রিবু ভয়ে ভয়ে আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে দেখলো না। দোকানের ভেতরে বসে থাকা ছেলেটাও নেই। এর মধ্যে ছেলেটা গেলো কোথায়? হঠাৎ কেউ তার কানের সামনে “ভাউ” বলে উঠতেই ত্রিবু ভয় পেয়ে ব্যাঙের মতো দুটো লাফ দিয়ে সরে গেলো। আবারো হাসির শব্দ। ত্রিবু বুকে থুথু দিয়ে পেছনে তাকিয়ে জোরে চিৎকার করে উঠলো,

— ভূত!

তার মাথা চক্কর মেরে উঠলো। কাকে দেখছে সে! এটা কি করে সম্ভব! মৃত মানুষ তার সামনে।হঠাৎ বৃষ্টিতে দেখা হওয়া সেই ছেলেটা যে তার সামনে বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে।সে এতখন দোকানের ভেতরে টুলে বসে মোবাইল দেখে হাসছিলো।তার মুখ না দেখায় সে চিনতে পারেনি।এখনো ছেলেটার চোখে, মুখে মিষ্টি হাসি। ত্রিবুর মনে হচ্ছে সে অজ্ঞান হয়ে যাবে। কপাল ধরে মাথা ঘুরিয়ে পরে যাওয়ার আগেই অপর ব্যাক্তিটা তাকে ধরে ফেললো। ত্রিবু কিছুটা ব্যলেন্স রেখে তার থেকে ছিটকে দূরে সরে গেলো। ভয়ার্ত গলায় বললো,

— আপনি!

— জ্বি আমি।

— আপনি সে না, যার সাথে আমার হঠাৎ বৃষ্টিতে দেখা হয়েছে।

— জ্বি আমি সেই।

— আপনি বেঁচে আছেন?

— আমি আবার মরলাম কবে?

— তাহলে নিউজপেপার যে আমি দেখলাম।

ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ছেলেটা একগালে হাসলো। তবে ত্রিবুর কাছে সেটা কষ্ট লুকানোর হাসি মনে হলো। ত্রিবু কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,

— আপনি ভূত তাইনা?

— পৃথিবীতে ভূত বলতে কিছু নেই।

— আমিও জানি। কিন্তু সবকিছু তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। তাহলে পেপারে যার মৃত্যুর সংবাদ দিয়েছে সে কে?

— আমি আদনান। যে মারা গেছে সে আমার জমজ ভাই আফনান।

~~~যে স্বপ্ন কখনো পূরণ করতে পারবেন না তা অন্যকে দেখাবেন না। স্বপ্ন ভেঙে যাওয়াটা অনেক বেশি কষ্টের।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here