মোহ মুক্তি ~ ১০
লেখা : Azyah(সূচনা)
মিটিং চলছে।সবাই লম্বা টেবিলে বসে আলোচনায় মশগুল। পনেরোজন উপস্থিত সেখানে।বাহির থেকে রাসফান একেকজনের মুখের গম্ভিরতা দেখে ভাবছে বেশ সিরিয়াস কোনো আলোচনা ভেতরে। জুনিয়র হওয়াতে তার ভাগ্যে এই গুরুত্বপূর্ণ সমাবেশে অংশগ্রহণ এর সুযোগ হয়নি।ভাবলো পড়ে জেনে নেওয়া যাবে আবিদ আর অরণ্যের কাছ থেকে।কেননা তারাও টেবিলের কোণ ঘেঁষে বসে আছে।
হুট করে এম. ডি সাহেব বললেন,
“চেয়েছিলাম ফ্যামিলি ট্যুর প্ল্যান করবো।সেটা আর হচ্ছে না।আমাদের অফিসে কর্মরত যারা আছেন তাদের দিয়েই সুন্দরবন ট্রিপ হয়ে যাক!তিনমাস পর আরেকটা ট্যুর আছে আমাদের সেখানে আপনাদের ফ্যামিলিও জয়েন করতে পারবে।”
এই আয়োজন আর সিদ্ধান্তে অনেকের অনেক রকম প্রতিক্রিয়া।কেউ চাচ্ছে পরিবার নিয়ে যেতে।কেউ চাচ্ছে না।আবিদ আর অরণ্য একে অপরের মুখের দিকে তাকায়।অথচ দুজনের মনে চলছে দুই রকমের চিন্তা। এম. ডির সিদ্ধান্তই সবাই মেনে নিতে বাধ্য হয়।আবিদ অরণ্য এবং অফিসের আরো একজন সিনিয়রকে সহ্য অ্যারেজমেন্ট এর দায়িত্ব দিয়ে মিটিং শেষ হয়।
সবাই মিটিং রুম থেকে একে একে বেরিয়ে গেলে আবিদ অরণ্যের সামনে এসে দাড়িয়ে বললো,
“ভালোই হয়েছে।অনেকদিন একা ঘুরতে যাই না।আবার ব্যচলর লাইফ এর মতন আমরা আমরা ইনজয় করতে পারবো।কি বলিস?”
“আমাকে ভাবতে দে আমি যাবো কিনা”
“ভাবাভাবির কি আছে?তুই কি বউ নিতে চাস সাথে?”
“সন্ধ্যাকে একা কোথায় রেখে যাবো?”
“বাবার বাড়িতে”
“দেখি”
মেকি হেসে আবিদ পিছু ডাকে অরন্যকে।অরণ্য ফিরে তাকালে বলে উঠে, “তুই পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছিস অরণ্য”
___
এই বাইকের একটা এপার ওপার ব্যবস্থা করতেই হবে। দুদিন ভালো টেকে না।মাঝ রাস্তায় বন্ধ হয়ে যায়। মেকানিকের দোকানে বসে গরম ধোঁয়া ওঠা চা খেতে খেতে এটাই ভাবছে অরণ্য।পায়ে পা তুলে রেখেছে।বাইক সার্ভিসিংয়ে দিয়ে দাতে দাত চেপে বসে আছে।বসে এটাও সিদ্ধান্ত নিলো পাল্টে ফেলবে বাইক।নতুন কিনবে।এভাবে হুটহাট মাঝ পথে বন্ধ হয়ে গেলে পরবর্তীতে আরো বিপাকে পড়তে হবে।এরই মধ্যে একটি ছোট মেয়ে হাতে বেলী ফুলের মালা নিয়ে হাঁটছে।সেদিনও এই রাস্তায় সন্ধ্যা মালা কিনেছিল।সেদিনের মেয়েটি নয় আজ।অন্য আরেকজন।তার সাথে আরো কয়েকজন এসে যোগ দেয়।অরণ্য তাদের কিছুক্ষন পর্যবেক্ষণ করে ভাবলো। সন্ধ্যার জন্য একটা মালা কিনে নিলে কেমন হয়?তারতো বেশ পছন্দের।কিন্তু আমার দেয়া উপহার কি সে গ্রহণ করবে?ভাবনা চিন্তার মাঝে মেয়েটি দূরে চলে গেলে অরণ্য উঠে দাড়ায়।দ্রুত পায়ে উচ্চস্বরে মেয়েটিকে ডেকে এক জোড়া মালা কিনে নিয়েছে।
নিত্যদিনের মতোই বাড়ি ফিরে অরণ্য।যেমনটা ভেবেছিল!মুখের সামনে রেহানা খালা দাড়িয়ে। সন্ধ্যা আবারো তার আড়ালে থাকা মিশন শুরু করেছে! চোয়াল শক্ত করে ধেইধেই করে ঘরে ঢুকে যায়।মেজাজ বিগড়ে থাকলে যেই কাজটা করে?বরাবরের মতই সেই কাজ করলো।ছুঁড়ে ফেললো টাই মাটিতে।ব্যাগ বিছানার উপর। শার্ট খুলতে খুলতে ওয়াশরুমে চলে গেছে।ফ্রেশ হয়ে ঠিক সেই দ্রুতগামী উল্কার বেগে কোনার ঘরটায় ছুটেছে।পায়ের শব্দ এতটাই প্রখর ছিলো যে অরণ্য ঘর অব্দি পৌঁছানোর আগেই সন্ধ্যা দরজার পানে চেয়ে।
রেগেমেগে অস্থির অরণ্য বলে উঠে, “সারাদিন এই ঘরে কি করেন আপনি?”
“সময় কাটাই,বই পড়ি,টুকটাক কাজ থাকে সেগুলো করি”
“নাহ এই ঘরে থাকা যাবে না!”
“আপনি আপনার ঘর থেকে তাড়িয়ে দিলেন। পাশের ঘরটাও তালা দেওয়া।এখন এই ঘরটায়ও কি সমস্যা?”
কথাটি খানিকটা জোরালো সুরে বলেছে সন্ধ্যা।দেখে বোঝা গেলো রোষ নিয়েই বলেছে কথাটি!কি অদ্ভুত? সন্ধ্যার রাগ দেখে বেশ ভালো লাগছে অরন্যের।যাক সে রোবট না!রাগের অনুভূতিটা অন্ততঃ আছে।
“হ্যা সমস্যা।এখন গিয়ে রেডি হন!”
“কেনো?”
“বলেছি রেডি হতে হবেন।এত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো না”
উবার বুক করেছে অরণ্য এই সায়াহ্ন বেলায়।কালো কাচে ঘেরা শীততাপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে বসে যাচ্ছে। কোথায় যাচ্ছে জানা নেই। গন্তব্য শুধু অরন্যই জানে।অথচ সে পাশে বসে ফোনের স্ক্রিনে পুর্ণ মনোযোগ দিয়ে আছে। সন্ধ্যা তাকে কখনোই কোনো বাড়তি প্রশ্ন করে না।আজও করবে না।তাই চুপটি করে বসে রইলো।
গাড়ি এসে থেমেছে শপিং মলের সামনে।এবার আর বুঝতে বাকি নেই এখানেই নিয়ে এসেছে অরণ্য তাকে।কিন্তু কেনো? হাটতে হাটতে অরণ্য বললো,
“সামনে ট্রিপ আছে একটা।ভাবলাম শপিং করে নেই।কি বলেন?”
অরণ্যের গলার আওয়াজ চঞ্চল।একবার চোখ তুলে তাকিয়ে নেয় সন্ধ্যা অরণ্যের দিকে।এমন অরণ্য আগেতো দেখেনি।হাঁটছে না দৌড়াচ্ছে। অঙ্গভঙ্গিতে চঞ্চলতার ছোঁয়া।
ছোট করে “হুম” উত্তর দিয়ে অরণ্যের পায়ে পা মিলিয়ে তার সাথে চলে যায় সন্ধ্যাও।
একের পর এক শপে গিয়ে কাপড় দেখছে অরণ্য।দেখে বোঝা গেলো এসবে বেশ পটু সে।শুধু দেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নাহ।বেশ কয়েকটা কাপড় কিনেছেও।সবই প্রয়োজনীয়।সব কেনাকাটা শেষে অরণ্য বলে,
“এই পাশটায় একটু বসুন।আমি আসছি”
সন্ধ্যা মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়।অরণ্য চলে গেলে সেখানটায় স্থির হয়ে দাঁড়ায় সন্ধ্যা। তাড়াহুড়ো করে ফোন সাথে আনা হয়নি।হারিয়ে গেলে বিপদ!আশপাশটা মাথা ঘুরিয়ে দেখতে লাগলো।দেখলো ঘুরে ফিরে বেড়ানো মানুষগুলোকে। স্মার্ট! উপস্থিত সবাই সেখানে সুন্দর এবং স্মার্ট।তাকে এসব মানুষের মাঝে মানায় না।সামান্য পিছে হটলেই ম্যানিকুইনের সাথে ধাক্কা খায়।সাদা ঝকঝকে স্টনের কাজ করা শাড়ি ম্যানিকুইনের পরনে।বেশ দেখতে!যেনো তারা জ্বলজ্বল করছে।সাহস করে হাত বাড়িয়ে দেখতে লাগলো শাড়িটি।মনে ধরেছে।
“পছন্দ হয়েছে?”
আকস্মিক শব্দে ভরকে উঠে সন্ধ্যা।হাত নামিয়ে পেছনে চাইলে অরন্যকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে।সে হাতে দ্বিগুণ ব্যাগ নিয়ে ফিরেছে। সন্ধ্যাকে চুপ থাকতে দেখে অরণ্য পূনরায় একই প্রশ্ন করলো,
“কি?পছন্দ হয়েছে শাড়িটা?”
“নাহ… মানে হ্যা”
“নিয়ে নিন”
“না আমি নেওয়ার জন্য দেখিনি।”
“এইতো বললেন পছন্দ হয়েছে নিতে কি সমস্যা?আমি প্যাক করে দিতে বলছি।”
“কিন্তু আমি সত্যিই কিন্তু চাচ্ছি না।”
“কেনো?”
“সাদা শাড়ি আমাকে মানাবে না।আরো কালো লাগবে”
পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার পর্যবেক্ষণ করে নিলো সন্ধ্যাকে।চোখের মণি এদিক ওদিক ঘুরিয়ে সোজা ঢুকে গেলো শাড়ির দোকানে। সন্ধ্যা চোখ বড় করে ভেতরে চেয়ে আছে।সে সাথে যায়নি।একজন লোক বেরিয়ে এসে শাড়িটি নিয়ে গেলো।অরণ্য এর কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে এসে সন্ধ্যার হাতে শাড়ির ব্যাগসহ আরো কয়টি ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে আঙ্গুল তুলে বললো,
“চুপ!একদম চুপ।কোনো প্রশ্ন করবেন না।বাসায় যাবো দ্রুত হাঁটেন”
হাঁটতে হাঁটতে অরণ্য একবার ঘড়ি দেখে নেয়।কখন শপিং করতে করতে রাত দশটা বেজে গেছে খেয়াল নেই। তিন ঘণ্টা যাবত কেনাকাটায় মশগুল অরণ্যের মনে পড়লো পেটে কিছু পড়েনি।এসেই ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েছে।পেট ক্ষুদার জানান দিলে সন্ধ্যার দিকে ঘুরে তাকায়।মুখ ছোট করে আছে। তারও ক্ষিদে পেলো নাকি?রাস্তা বদলে অন্যদিকে হাটা শুরু করলো।
সন্ধ্যা প্রশ্ন করে বসে, “আবার উপরে যাচ্ছেন?কিছু বাকি আছে?”
“হ্যাঁ ”
“আচ্ছা”
আলোকসজ্জায় সজ্জিত রেস্টুরেন্ট। সফট মিউজিক চলছে।মোটামুটি মানুষের সমাগম। মনোরম পরিবেশ।অরণ্য ঠিক সন্ধ্যার বরাবর বসে। মুখোমুখি বসে থাকায় অনেকটা অসস্তিবোধ করছে সে।না চাইতেও চোখে চোখ পড়ে যায়।হোক সে তার স্বামী।তারপরও কোনো এভাবে বসে সময় কাটানো হয়নি। অরণ্যকে এড়াতে একপাশে ঘুরে তাকিয়ে আছে সন্ধ্যা।ওয়েটার এসে মেনু দিয়ে গেলে অরণ্য বললো,
“কি খাবেন?”
“আমি কিছু খাবো না”
অরণ্য সন্ধ্যার দিকে তীর্যক দৃষ্টি ফেলে বললো, “ডিনার টাইমে কিছু খাবেন না?”
সন্ধ্যা স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিলো, “আসলেই খাবো না”
“এসব ঢং বাদ দেন।ইভেন!আপনি রাখেন আপনার খাবারও আমিই অর্ডার করছি।”
সন্ধ্যাকে কোনো সুযোগ না দিয়ে নিজেই খাবার অর্ডার করেছে।আগে অপমান করতো,রাগ দেখাতো।কথায় কথায় ধমকে দিত।অযথাই!এখনও ধমকে দিচ্ছে, জোর খাটাচ্ছে।অরণ্যের দৃষ্টির আড়ালে তার দিকে তাকায় সন্ধ্যা।সে মোবাইলের দিকে মনোযোগী।বেশকটা দিন একসাথে আছে।তার দিকে ঠিকমতো তাকানোর ইচ্ছেটুকু জাগেনি।তার বদলে যাওয়া রূপ তাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে বাধ্য করছে। অরণ্য দেখতে বেশ।উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ের রঙের সাথে হালকা কোকড়ানো চুলগুলো মূল আকর্ষণ।কালো চেক শার্টটা গায়ের সাথে আঁটসাঁট হয়ে লেগে আছে। চোখ নামিয়ে নিজের হাতের দিকে চোখ গেল সন্ধ্যার।মন থেকে একটি বাক্য আসে।আসলেই তাকে অরণ্যের সাথে মানায় না। হাত নামিয়ে ওড়না দিয়ে ঢেকে ফেলে।নিজেকে আড়াল করার এক ব্যর্থ চেষ্টা!
___
নিজের চির আস্তানা কোনার ঘরটায় জমিনে বসে আছে সন্ধ্যা।ঘড়ির কাঁটা ঘুরে রাত বারোটায়।মাটিতে ছড়িয়ে আছে কয়েকটা ড্রেস আর সেই শাড়িটি।অরণ্য কেনো তাকে দাড় করিয়ে রেখে গিয়েছিলো সেটা বুঝতে এবার এর সমস্যা হচ্ছে না। তাছারাও এই শাড়িটা।অবশ্যই তার অনেক পছন্দ হয়েছে।তবে অন্যান্য মানুষের মতন পছন্দের জিনিস পেয়ে মুখশ্রীতে আনন্দের ছাপ নেই।উল্টো হতাশা।কে পড়বে এই শাড়ি?কেনো পড়বে? সন্ধ্যার এত দুঃসাহস নেই।শুভ্র রং!মন মস্তিষ্ক প্রশন্তকারি রং।অথচ সন্ধ্যার সমস্ত হৃদ জুড়ে এই রংটি বিষাদের কালো ধোঁয়া ওড়াচ্ছে।মনে পড়ে যায় সেদিনের কথা। দশ বছর বয়সী সন্ধ্যাতারা ঈদের দিন সাদা ফ্রক পড়ে ঘুরে বেড়ানোর সময় পাড়ার একজন তার ছোট্ট মনকে ক্ষতবিক্ষত করেছিলো। রং নিয়ে কটু বাক্য বলে অপমান করেছিলো।এমনকি কাপড় পাল্টে আসার জন্যেও বলা হয়েছিলো তাকে।সেদিন থেকেই সে জানতে পারে পৃথিবীতে দুটো রং।এক সাদা আরেক কালো।সাদা রংটা সবার জন্য হয়না।কারো জন্য হয় শুভ্রতার প্রতীক কারো জন্য অভিশাপ।সেদিন থেকেই শিখেছে পৃথিবীতে দু ধরনের মানুষ হয়। সুন্দর আর কুৎসিত।সে কুৎসিত এর কাতারে পড়ে গেছে দুর্ভাগ্যবশত।এই রঙের মাশুল টানতে হয়েছে সবখানে।এক পর্যায়ে এসে জানতে পায় দেখতে ভালো না হলে নাকি বন্ধুত্বও করা যায় না।আজকাল নাকি বন্ধুত্বের জন্যেও রূপের পরীক্ষা দিতে হয়।থাকা লাগে সৌন্দর্যের সার্টিফিকেট। প্রশংসাপত্র থাকাটাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ!
দ্রুত হাতে মোবাইল তুলে কবি, সাহিত্যিকদের কাছে প্রশ্ন তুলে ধরলো সন্ধ্যা,
“কেনো সব সুন্দরের বিস্তারিত বর্ণনা দেন আপনারা?কেনো কুৎসিতের প্রশংসা করেন না?কেনো কালো রংটা দেখলে ভয় পেয়ে যান?শুভ্রতা শুধু সাদা রঙের মাঝেই?কেনো এই বিশ্রী মানুষগুলোকে নিয়ে কোনো কবিতা,কোনো সাহিত্য নেই?কেনো ঝলমলে আকাশ দেখতে ভালোবাসেন?কালো মেঘে ঢাকা আকাশ দেখলে কেনো চোখ নামিয়ে নেন?”
আজ বড্ড দেরি করে ফেলেছে সন্ধ্যা। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত!রাতের প্রথমাংশের শুরু।এই সময়টায় এতটা ক্ষোভ নিয়ে কোথা থেকে এলো সে?এতো প্রশ্ন জুড়ে দিলো?অনেকটা সময় সাথে থাকার পরও মুখ দেখেতো কিছু বোঝা যায়নি।বিছানা থেকে পা নামিয়ে ওই ঘরটার দিকে পা বাড়ায় অরণ্য। দরজার সামনে বুকে হাত বেধে হেলান দিয়ে দাড়ায়।কাপড়গুলো ছড়িয়ে বসে আছে। হাতে ফোন।কপাল কুঁচকে রেখেছে।
“ঘুমাবেন না?”
হঠাৎই যেনো জ্ঞানটা ফিরে এলো।এত সময় জ্ঞানশূন্য হয়ে ছিলো সন্ধ্যা। মস্তিষ্ক খালি খালি লাগছিল।অরণ্যের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে হাত বাড়ায় কাপড়ের দিকে।সব গোছগাছ করতে করতে বললো,
“হ্যাঁ ঘুমাবো”
“আসেন।এগুলো কাল গুছিয়ে রেখেন”
রাত আড়াইটে,
নির্ঘুম এক রজনী কাটছে।চোখ পলক ফেলা ব্যতীত বন্ধ হতে নারাজ।ঘুম পালিয়ে বেড়াচ্ছে সন্ধ্যার চোখ থেকে আজ।রাত জাগার অভ্যাস নেই তার।তারপরও চোখের নিচে কালি পড়ে থাকে।একবার ডানপাশে ঘুরে অরণ্যের দিকে তাকায়। নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে সে।নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে উল্টোঘুরে শুয়ে পরে সন্ধ্যাও।
কাচা ঘুম।মাত্রই চোখটা বুজে এসেছিল।ঘুম ঘুম ভাব।সেটাও ভেঙ্গে যায়।হাতের উপর ভার অনুভব করায় দম বন্ধ হয়ে আসছে।যেনো কোনো ওজনদায়ক পাথর দিয়ে চেপে রাখা হয়েছে তাকে।এক ঝটকায় চোখ খুলে নেয় সন্ধ্যা।হুট করে ঘুম ভাঙ্গায় ঝিম ধরে গেলো মাথাটা। মস্তিষ্ক সজাগ হতেই বোঝার চেষ্টা করে পরিস্থিতি।হাতের উপর ভারী বস্তুর সাথেসাথে গরম নিঃশ্বাস চুল ভেদ করছে। সন্ধ্যার বুঝতে বাকি রইলো না। ঘুমের ঘোরে তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আছে অরণ্য।ঘুম নিমিষেই উধাও হয়ে গেছে।চোখ জোড়া এই অন্ধকারছন্ন ঘরে রসগোল্লার ন্যায়!দেহের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে অরণ্যের হাত সরিয়েছে।আরেকটু এভাবে থাকলে শ্বাসটা আটকে যেতো। গভীর ঘুমে এমন হাত ঝাড়া খেয়ে একলাফে উঠে বসে অরণ্য।মাথা এদিক সেদিক ঘুরিয়ে লাইট জ্বালিয়ে নেয় হন্তদন্ত হয়ে।পাশেই সন্ধ্যা।সেও বসে আছে।
অস্থির হয়ে প্রশ্ন করলো, “কি হয়েছে?”
“কিছুনা!”
“কিছুনা মানে।আমার মনে হলো আমার হাত কেউ ঝাড়া দিয়ে সরিয়েছে।আপনি?”
“হ্যা”
“কেনো?”
কপালের মধ্যভাগে গাঢ় ভাজ ফেলে সন্ধ্যা বললো, “ঘুমের ঘোরে ভুলবশত আমার গায়ে হাত দিয়ে রেখেছিলেন।”
কি অবলীলায় বলে ফেললো!অরণ্য মাথা নামিয়ে নেয়।লজ্জায় পড়ে যায়। এমনতো হয়নি কখনো। প্রতিদিনই সন্ধ্যা পাশে থাকে। ভুলবশত তার এক হাত কাছাকাছি যাওয়া হয়নি।
এরই মধ্যে হুট করে সন্ধ্যা বলে উঠে, “আমি নিচে ঘুমোবো!”
“দেখেন আমি ইচ্ছে করে কিছু করিনি”
“আমি জানি”
“তারপরও কেনো নিচে ঘুমোবেন?”
“আমার ইচ্ছে হচ্ছে না এখানে ঘুমোতে”
অরণ্যের স্বভাব অদ্ভুত।এই ঠান্ডা এই গরম।হুটহাট রেগে যায়।আবার নরম হয়ে যায় পর মুহুর্তেই।এবারও হলো তাই।নিজেকে সামলাতে না পেরে বলে উঠে,
“মজা করছেন রাত বিরাতে?আপনার কি সমস্যা আমার সাথে বলেনতো?ঠিক মত কথা বলেন না!এড়িয়ে যান। সবসময় ভালো লাগে এসব?মনে হচ্ছে রোবটের সাথে বসবাস করছি আমি।আমি ফ্রি হওয়ার চেষ্ঠা করছি!বুঝতে পারছেন না?নাকি বুঝেও না বোঝার ভান ধরে আছেন?আপনি এমন কেনো?”
চলবে..