মোহ মুক্তি ~ ১৩
লেখা : Azyah(সূচনা)
“আবিদ!আবিদ!”
অরণ্যের চিৎকারে তমাসাছন্ন ভোরে আতকে উঠে আবিদ।তার ঠিক মাথার সামনে দাড়িয়ে বারবার ধাক্কাচ্ছে তাকে। লাইট অন করে দেখতে পেলো অরণ্যের আতঙ্কিত মুখ। ভীষন রকমের উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে তাকে।প্রশ্ন করবে বলে মুখ খুললো।তাকে সুযোগ না দিয়েই অরণ্য বলে উঠে,
“আমার ঢাকা ফিরতে হবে!”
“হ্যাঁ আজ রাতের বাসেইতো ফিরছি”
“আজ রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করার সময় নেই।আমি এখনই বের হবো।সাথে চল আমার”
“অরণ্য বোস তুই!কি হয়েছে?”
আবিদের হাত ঝাড়া দিয়ে সরে যায় অরণ্য। বারংবার বলতে থাকে আমার ঢাকা ফিরতে হবে। পাগলের মতন হাতড়ে ব্যাগ গোছাচ্ছে। গোছানোর চেয়ে এলোমেলো করছে বেশি। ব্যস্ত হয়ে পড়লো ঢাকা ফেরার প্রস্তুতিতে।ফোন হাতে নিয়ে কিছু একটা চেক করছে এক হাতে।অন্যহাতে ব্যাগে একেক কাপড় ভরতে শুরু করলো।আবিদ উঠে গিয়ে তাকে থামায়। কাধে হাত রেখে বসিয়ে বললো,
“রিল্যাক্স অরণ্য।কি সমস্যা তোর?ঢাকা যাওয়ার জন্য উতলা হয়েছিস কেনো?”
“এসব প্রশ্নের উত্তর তোকে আমি রাস্তায় দেবো।আমার সাথে চল প্লিজ!”
“আচ্ছা যাবো।চল দেখি”
“আবিদ! ওয়েদারটা চেক করিস। ঢাকায় বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে আজ অথবা কাল?”
আবিদ অরণ্যের প্রশ্নে অবাক হয়ে বললো, “বৃষ্টি?কিন্তু কেনো?”
হুট করে অরণ্যের হাত থেমে যায়।আবিদের সামনে এসে দাঁড়ায়।চোখ তার এলোমেলো বাক্য বলছে। ঘেমে একাকার। নিচু কণ্ঠে বললো,
“আমি চাই না ওই শহরে কোনোদিন বৃষ্টির সন্ধ্যা আসুক!”
কাউকে কিছু না জানিয়ে বেরিয়ে পড়ে আবিদ আর অরণ্য। বাসে বসে একেকজনকে ফোন করে তাদের চলে যাওয়ার ব্যাপার জানিয়ে দিচ্ছে আবিদ।সবার একই প্রশ্ন।এভাবে চলে যাওয়ার কারণ জানতে চায় সবাই।তবে কোনো উত্তর দিতে পারছে না আবিদ।অরণ্য নির্বিকার। স্থির হয়ে বসে থেকেও যেনো অস্থির।ঘড়ি দেখছে বারবার।সাথে ওয়েদার চেক করছে। ঢাকায় আগামী এক সপ্তাহেও বৃষ্টির কোনো আশঙ্কা নেই।তারপরও তার মন মানছে না। প্রকৃতি কি চলে কারো মন মোতাবেক?
__
আজ সন্ধ্যার মন বিষণ্ণ।ঘোর তন্দ্রায় নিমগ্ন ছিলো এত সময়।কখন দুপুর গড়িয়েছে জানেই না।কয়েকবার মা এসে ডেকে গেছে।কোনো সাড়া না পেয়ে তাকে তার মতই থাকতে দিয়েছেন।ছোটোবেলা থেকেই এই অভ্যাস।একাকিত্ব প্রিয় সন্ধ্যাতারা। চুলগুলো দুহাতে মুঠ করে মাথা নুয়ে নেয় সন্ধ্যা।কিছুই ভালো লাগছে না।নিজের বলা কথাগুলোর অনুশোচনা আর সেই কথাগুলো সত্যি হওয়ার এক অজানা ভয়।হতেও পারে অরণ্য মেনে নিবে এই বিচ্ছেদ।বিচ্ছেদ! শব্দটার মধ্যেই বিষ মেশানো।কোনো বিচ্ছেদই কি সুখ দিতে পারে মানুষকে?হয়তো পারে।যারা জোরজবরদস্তির সম্পর্কে আবদ্ধ। জর্জরিত এই বন্ধনের শোকে।
দুহাতে চুল বেধে উঠে দাঁড়ালো।সাদা শুভ্র পর্দা সরিয়ে জানালার সামনে দাঁড়াতেই আলোদের মেলা।তাকানো দায়।চোখ সরিয়ে নেয় সন্ধ্যা।কিছুক্ষন দাড়িয়ে স্বাভাবিক করে নিজেকে। পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেয় নিজেকে।সেখানে স্থির দাড়িয়ে দোটানায় ভুগছে সন্ধ্যা। সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে গেছে।মন মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ সায় না দিলেও এই সিদ্ধান্তেই অটল থাকবে সে।কিন্তু বাবা মা?তাদের কি জানানো যাবে? কথায় আছে সমস্যা থাকলে তার কোনো না কোনো সমাধান আছে। সমাধানটাও ভেবে নিলো সন্ধ্যা। ভয়ঙ্কর এক সমাধান। হারিয়ে যাওয়ার সমাধান।
“মৃত্যুকে ডেকে আনা যায়?যেটা আত্মহত্যা বলে গণ্য হবে না?”
সন্ধ্যার কথা বোঝা কঠিন।এখন নয় অনেক আগ থেকেই।সায়মা বিচলিত হলো।বললো,
“ফালতু কথা বলিস কেনো?”
“ফালতু কথা বলছি না সায়মা।আমি চাই না কারো উপর বোঝা হয়ে থাকতে।আমি মুক্তি দিতে চাই সবাইকে।নিজেকে মুক্ত করতে চাই”
“দেখ এসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দে বলছি।তুই না অনেক শক্ত একজন মানুষ সন্ধ্যাতারা?তোর মুখে এসব কথা মানায় না”
তুচ্ছ হাসি হেসে সন্ধ্যা বললো, “আমি ভবিষ্যতে আমার সর্বনাশ দেখতে পাচ্ছি সায়মা।আমি আমার দুর্বলতাকে আমার কাছে ঘনিয়ে আসতে দেখছি”
“মাঝেমধ্যে দুর্বল হওয়া ভালো।শক্ত পাথরকে মানুষ শুধু আঘাত করে ভাঙতে চায়।আর দুর্বলকে যত্ন করে”
যত্ন,ভালোবাসা আর সহানুভূতি পাওয়াকে ভয় পেতে শুরু করেছে সন্ধ্যা বহু আগে থেকেই।নিজেকে ভাবে অযোগ্য এসবের।এসবের কিছুই কি কখনো পাওয়া হয়েছে?রক্তের সম্পর্কের মানুষগুলোওতো অনেকবার তাচ্ছিল্য করেছে তাকে।না পাওয়ার অনুভূতি কেমন সেটা তারা কিভাবে জানবে?মুখ দিয়ে ক’টা কথা বলে প্রেরণা দিলেই হলো?যারা অনুপ্রেরণা দেয় তাদের মধ্যে অনেকেই এই পরিস্থিতি সম্পর্কে অজ্ঞ।মুখের কথা জীবনে আদৌ প্রভাব ফেলে? প্রেরণাকে সঙ্গে নিয়ে আর কিছু হোক না হোক জিবনে সবসময ভালো থাকা যায়না।মানুষের ধর্মে নেই এই সুখ।মানুষ অন্যের হৃদয়কে খুঁড়ে খুঁড়ে খেয়ে স্বস্তি পায়।নিজেকে অন্যের থেকে বেশি মর্যাদাপূর্ণ আর উচুঁতে ভাবে।এটাই স্বভাব!এটাই নিয়ম।এটা চলে আসছে আদিমকাল থেকে।চলছে,চলবে!
মুখ খুললো সন্ধ্যা, “যত্নের নামে কারো দয়া আমি চাই না”
নিজেকে লোকাতে বোরকা হেজাব পড়ে নেয় সন্ধ্যা।আজ ইচ্ছে হলো ছোটবেলার কিছু শখ পূনরায় জীবিত করা যাক।এই চেনা পরিচিত এলাকা।নিজের এলাকা।সেখানে জন্ম থেকে বেড়ে উঠা।কত মুখ আছে যাদের খুব কাছ থেকে চেনে সে।নিজের অশান্ত মনকে শান্ত করতে বেরিয়ে পড়লো।হাঁটছে!চোখ ঘুরিয়ে আশপাশ দেখছে।পা জোড়া চলতে চলতে স্কুলের সামনে এসে দাঁড়ালো। চারতলা ভবনের একটি স্কুল।চোখ যত উচুতে গেলো দেখে বোঝা গেলো টিফিন পিরিয়ড চলছে।বাচ্চারা দৌড়াচ্ছে এদিক ওদিক। চারিদিকে শোরগোল।এখানে একসময় সন্ধ্যার কেটেছে দশ দশটি বছর।কত স্মৃতি! অথচ সবই বিভীষিকাময়।কিছুক্ষন দাড়িয়ে স্থান ত্যাগ করে সন্ধ্যা।সামনেই আরো একটি পরিচিত স্থান আছে। মিনিট দশেক হেঁটে এসে দাড়ালো কলেজের সামনে।এখানে দাড়াতেই নিঃশ্বাস আটকে গেলো।দ্রুত গতিতে সেই স্থানটাও ত্যাগ করে পুকুর পাড়ে গিয়ে বসে পড়ে।তার মন খারাপ দুর করার স্থান।বিয়ের আগে সব কোলাহল থেকে দূরে এখানে এসেই বসে থাকা হতো।কিছুক্ষন এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকলে মস্তিস্ক প্রশান্ত হতো। শীতলতা নেমে আসতো চিত্তে।
__
ঢাকার কাছাকছি এসেছে দ্রুতগামী বাস। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হতে চললো।হঠাৎই আকাশে কালো মেঘ জমতে শুরু করলো।অরণ্য এক লাফে বাসের জানালা দিয়ে মাথা বের করে দেখতে শুরু করে।বিচলিত দেহের ভঙ্গিমা।আবিদ কাধ টেনে ভেতরে নিয়ে আসে তাকে। ক্ষুব্ধ হয়ে বলে,
“জানালা দিয়ে মাথা বের করছিস কেনো?এটা কতটা রিস্কি জানিস না?”
“বৃষ্টি হবে আবিদ!”
“তো?”
“আমি চাইনা বৃষ্টি হোক”
“কেনো?সেই সকাল থেকে একটা কথাই বলে যাচ্ছিস।”
“বৃষ্টি হলে আমি তাকে পাওয়ার আগেই হারিয়ে ফেলবো।”
“কাকে?”
“সন্ধ্যাকে।ও আমার কথা শুনবে না।বুঝবে না।সে যেহেতু বলেছে এক বৃষ্টির সন্ধ্যায় মুক্তি দেবে?আমি জানি! ও একথা বলেছে মানে ও মুক্ত করবেই!ছেড়ে চলে যাবে কোনো এক বৃষ্টির সন্ধ্যায়।আমি ওর চোখে জেদ দেখতে পাই।”
অরণ্যের গলা কাপছে।তার কথার মূল অর্থ কিছুই বুঝতে পারছে না আবিদ।কিসের মুক্তি?কিসের বৃষ্টির সন্ধ্যা?অরন্যের কাধে হাত রেখে বলল,
“আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখ।কালো মেঘ কেটে গেছে”
“কালো মেঘ কেটে গেলেও আমার ভয় কাটছে না”
“তুই বুঝতে পারছিস কতটা ব্যাকুল হয়ে আছিস তুই সন্ধ্যার জন্য? অথচ মেয়েটার রং রূপ নিয়ে তার সাথে কতটাই না অন্যায় করেছিস।এমনকি আমাকেও ওকে অপছন্দ করার কথাটা খুব তাচ্ছিল্য করেই বলেছিস। হঠাৎ কি হলো অরণ্য?বদলে গেলো কয়েকমাসে?”
যেই চোখে – মুখে ভয়ের ছাপ ছিল সেটা আকস্মিক বদলে গেলো। অপরাধবোধটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।আবিদের চোখের আড়ালে নয় এটাও।শুরু থেকেই জানে সে।এক না একদিন এই পরিস্থিতিতে পড়বে অরণ্য।সেদিন তার পরিণতি কী হবে?সেটা দেখাই যাচ্ছে।
“আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি আবিদ”
“ভুলের মাশুল দিতে পারবি?”
“ক্ষমা চেয়ে নিবো”
“সন্ধ্যা তোকে মেনে নেবে?”
“হয়তো না”
“এরপর কি করবি?”
উত্তর দিলো না অরণ্য। দৃষ্টি নামিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।জানালার দিকে মাথা ঘুরিয়ে বসে রইলো।আবিদ দেখছে আর ভাবছে।হয়তো গভীর কোনো পরিকল্পনা চলছে তার মধ্যে।কে জানে?তাদের সম্পর্কের শেষ পরিণতি কি?
প্রকৃতি বড়ই অদ্ভুত।কখন রূপ বদলায় কেউ জানে না। কখনও প্রযুক্তিকে বুড়ো আংগুল দেখিয়ে নিজের মন মোতাবেক চলে।কখনো প্রখর রৌদ্রের উত্তাপ কখনো ঘনকালো মেঘ। ঝোড়ো হাওয়া বইছে চারিপাশে।বাতাসের জোরে উড়ে বেড়াচ্ছে ধূলিকণা,দুলছে জমিনের সাথে শক্ত হয়ে দাড়িয়ে থাকা গাছগুলোও।আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।অথচ বৃষ্টির ছিটেফোঁটাও নেই।রাত তখন এগারোটা।সকলে ঘুমিয়ে।ঝড়ের আভাস পেয়ে সন্ধ্যার মার উচ্চস্বরে বললেন,
“সন্ধ্যা!ঘরের জানালাগুলো লাগিয়ে দে মা।ঝড় আসবে বোধহয়”
মায়ের কথা শ্রবণইন্দ্রিয়তে পৌঁছায়।কিন্তু মন বলছে অন্য কথা।বলছে থাক না।এই ধুলোবালি মাখা ঠান্ডা বাতাসটাওতো কত প্রশান্তি দিচ্ছে।হলে হোক একটু নোংরা ঘরবাড়ি। পরিষ্কার করে নেওয়া যাবে।একটু ভিজলেইবা কি আসে যায়? পানিতো? শুকিয়েই যাবে না হয়।কিছু জিনিস সাময়িক অসুবিধে করলেও কোনো ক্ষতি নেই।এই ঝড় বাধা দিলেও থামবে না।
চোখে ধুলো এসে পড়লে চোখটা ঝাপসা হয়ে আসে সন্ধ্যার।জ্বলছে।হাত দিয়ে চোখ কচলে সামনে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নেয়। হঠাৎ হাতটা থেমে গেলো। অস্পষ্ট চোখে সদর দরজার সামনে দাঁড়ানো মানুষের অবয়ব দেখে ঘাবড়িয়ে উঠলো।বাইরের ঝড়ের গতির সাথে তাল মিলিয়ে চোখে পানি দিয়েছে।দিয়েই দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো।কাধে ব্যাগ আর উস্কখুস্ক চুলে দাড়িয়ে অরণ্য।ধুলোবালি মাখা মুখটা কালচে হয়ে আছে। সন্ধ্যার চোখজোড়া বেরিয়ে আসার উপক্রম।এই সময় অরণ্য এখানে?তাও এই অবস্থায়!
রক্তিম চোখ নিয়ে সন্ধ্যার দিকে এগিয়ে গেলো।এখনও উদ্যম ঝড় বইছে। সন্ধ্যাকে কোনো শব্দ উচ্চারণ করার সুযোগ দেয়নি।
হাত চেপে ধরেছে শক্ত করে।বললো,
“বাড়ি চলেন!”
রাত বিরাতে পাগলের কারবার।হাতে প্রচুর ব্যাথা পাচ্ছে সন্ধ্যা।হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলো।সম্ভব হয়ে উঠেনি। অগ্যতা বলে উঠলো,
“এই ঝড়ের মধ্যে বাড়ি যাবো?পাগল হয়ে গেলেন নাকি!”
“এখনও পাগল হইনি।হয়েও যেতে পারি।বাড়ি চলেন।”
“কিসব বলছেন?আকাশের অবস্থা দেখেছেন আর এত রাতে!”
“ঝড় বৃষ্টি রাতের আঁধার কোনোটাই কিছু করতে পারবে না।আমি আছি না সাথে!”
“দেখেন…”
“আমি আপনাকে এক মুহুর্ত একা ছাড়বো না।”
অবস্থা বেগতিক।অরণ্যের সাথে জোর করে কোনো লাভ হবে না। কথাবার্তায় বোঝা যাচ্ছে তার তেজ। হুশে নেই সে।রাতেই নিয়ে চলে যাবে বাসায়।এই বৃষ্টি বাদলে রাস্তায় বের হওয়াটাও বিপদজনক।সন্ধ্যা হাত টেনে ধরে বললো,
“শোনেন।আমার কথাটা শোনেন।আমি বাড়ি কাল বাড়ি যাবো”
“মিথ্যে!আপনি মিথ্যে বলছেন।আপনি আমাকে ডিভোর্স দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন!আমি আপনাকে এখন রেখে চলে গেলে আপনি আর ফিরবেন না”
কোনো কথা মানতে নারাজ অরণ্য। উপায়ও খুঁজে পাচ্ছে না সন্ধ্যা। মস্তিস্ক জুড়ে একটাই প্রশ্ন কি করবে! চেঁচামেচির আওয়াজ পেলে বাবা মা জেগে ওঠবে।তাদের এভাবে দেখলে খারাপ দেখাবে।অরণ্যকে শান্ত করতে বললো,
“আপনি বিশ্বাস করেন নাতো আমি কাল সত্যিই আপনার সাথে যাবো?”
“একদম নাহ!”
“ঠিক আছে।আপনি আজ আমাদের বাড়িতে থাকুন। কাল আমাকে নিয়ে একবারে বাড়ি ফিরবেন।…আপনি বুঝতে পারছেন না বাহিরের অবস্থা।এখন গাড়ি কোথায় পাবো বলেন?”
জবাব দিলো না অরণ্য।হাতের দিকে চাইলো একবার। সন্ধ্যা তার হাতটা ধরে আছে। মাথা ঠাণ্ডা করার চেষ্টা করছে।চোখ তুলে আশপাশও দেখে নিলো। সন্ধ্যা তার দিকে চেয়ে ভাবলো হয়তো অল্প হলেও তার কথা বুঝতে পারছে।সঙ্গেসঙ্গে আবার বললো,
“আপনি একটু শান্ত হোন। ঘরে আসুন। বাবা মা ঘুমিয়ে আছে।জেগে গেলে বাজে দেখাবে।”
সাবধানতার সাথে সন্ধ্যার ঘরে এসে বসেছে। ছিমছাম একটা ঘর। নজরকাড়া কিছুই নেই এখানে। সব প্রয়োজনীয় জিনিস আর কিছু বইপত্র।পনেরো মিনিট যাবৎ বেডের এক কোনায় মাথা নুয়ে আছে।একদম নিশ্চুপ।একটু দূরেই সন্ধ্যা দাড়িয়ে।কোনো প্রশ্ন করবে কি করবে না সেই দ্বিধায় জর্জরিত।অনেক সময় পাড় হয়ে গেলে তাওয়াল এগিয়ে দিল।বললো,
“আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন”
মাথা তুলে একবার সন্ধ্যার দিকে চাইলো।সেই মলিন রুক্ষ চেহারা।সে ঠিক তেমনই আছে।মুখে কোনো পরিবর্তন নেই তার। তাওয়ালটা হাতে নিয়ে চলে যায় ওয়াশরুমে। এরই মধ্যে সন্ধ্যা পা বাড়িয়েছে কিচেনে।অরণ্যের মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো বেশ ক্ষুধার্থ সে।একবার বাবা মায়ের ঘরে নজর দিয়ে ধীর পায়ে কিচেনে চলে যায়।রাতের খাবার গরম করে প্লেটে সাজিয়ে ঘরে এনে রেখে দিলো। ওয়াশরুম থেকে ঝর্নার আওয়াজ আসছে।হয়তো গোসল করছে অরণ্য।খাবার রেখেই আবারো রান্না ঘরে পা বাড়ায়।মাথা ধরলে চা তার চাইই চাই।সাথে চা-টাও করে নিলো।চা নিয়ে ঘরে এসে দেখলো অরণ্য বসে।
এগিয়ে গিয়ে বললো, “খাবারটা খেয়ে নিন”
“আমার ক্ষুদা নেই”
“আমি জোর করবো না।কিন্তু খাবারের অপমান করা ঠিক না”
অরণ্য হাসলো।প্রাণহীন হাসি।জোর করবে না!সে চাইতো সন্ধ্যা জোর করুক।অধিকার খাটিয়ে খাবারটা খেতে বলুক।করলো না।অন্য উপায়ে খাবার খেতে বললো।ভেবে চিন্তে খাবারে হাত দেয় অরণ্য।এটা তার ঘর না।এখানে তার জেদ চলবে না।খাওয়ার মধ্যেই সন্ধ্যা গিয়ে চা আবার গরম করে আনে।এগিয়ে দেয় অরণ্যের দিকে।
বললো, “জার্নি করে এসেছেন। চা-টা খেয়ে নিন”
“আমার এতটা যত্ন না করলেও পারেন।আমি এসবের যোগ্য না”
“যত্ন পেতে যোগ্য হতে হয় না।”
সবটা গুছিয়ে ঘরে ফেরে সন্ধ্যা।অরণ্যের শোবার জায়গা করে দিয়ে নিজে বালিশ নিয়ে নিচে শোবার প্রস্তুতি নেয়।অরণ্য হুট করে বলে উঠে,
“নিজের বাড়িতেও আমাকে বিছানায় ঘুমোতে দিচ্ছেন?”
“আমার কোনো অসুবিধে নেই এখানে।”
“উঠে আসুন।নিচে ঘুমানোর দরকার নেই”
“আমি ঠিক আছি”
“আপনি কি চান আমি এখনই আপনাকে নিয়ে বাসায় রওনা হই?”
অরণ্যের ঠান্ডা হুমকি। সন্ধ্যা মানতে বাধ্য।সে কোনো ঝামেলা চায় না।অহেতুক কথা বাড়াতে চায়না কোনোভাবেই।উঠে অরণ্যের ডান পাশে শুয়ে পড়লো।উল্টো ঘুরে শুয়ে পড়তেই অরণ্য বললো,
“আপনার কাছে আমার একটা অনুরোধ আছে।”
সন্ধ্যা ঘুরে তাকায়।প্রশ্ন করে, “সেটা কি?”
“আমি কখনো কোনো আবদার করবো না।আপনি কি মানবেন?”
“মানার হলে মানবো”
ইতস্তত বোধ করছে অরণ্য।মনের হাতে বাধ্য সে।একটা ছোট ইচ্ছে পূর্ণতা পেতে চায়।আর একটা ভয়!কয়েক সেকেন্ড চিন্তা ভাবনা করে বললো,
“আমি আপনার হাত ধরে ঘুমাই?……আপনি পালিয়ে যাবেন এই ভয়টা আর পাবো না”
চলবে..