দর্পহরন #পর্ব-৫

0
455

#দর্পহরন
#পর্ব-৫

সকালে বেরিয়ে বিকেলের দিকে বাড়ি ফিরেছেন ইব্রাহিম সালিম। সেই থেকে নিজের রুমে বসে আছেন। রিমা খাবার খাওয়ার জন্য কয়েকবার ডেকে গেছে কিন্তু তাকে নড়তে দেখা গেলোনা। মেজাজটা বেখাপ্পা রকমের খারাপ হয়ে আছে। চারিদিকের পরিস্থিতি তার বিপরীতে চলে গেছে। ইন্টারনেটে আজকের ভাইরাল ভিডিও সোহেলের মেয়ে তুলে নেওয়া। কয়েকটা পত্রিকায় তার নানা দুর্নীতি আর অনিয়মের রিপোর্ট এসেছে আজই। এইসবই কি কোইন্সিডেন্স নাকি সোহেলের কালকের কাজের রেশ বুঝতে পারছেন না। হুট করে চারিদিকে তাকে নিয়ে এমন শোরগোল শুরু হলো কেন? হতবিহ্বল লাগে তার। এদিকে পার্টির হাইকমান্ড থেকে ফোন এসেছিল। সব ঝামেলা অতিদ্রুত মিটিয়ে ফেলার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। সামনে ইলেকশন তাই দলের বদবাম হোক এমনটা তারা চায় না কিছুতেই। সব শুনে সাবেক এমপি বড়ভাই ইব্রাহিম মোর্শেদ তাকে মাথা ঠান্ডা রাখতে বলেছেন। ভাইয়ের পরামর্শে মনের বিরুদ্ধে গিয়ে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে তাকে। ভাবনার মাঝে সোহেল ঘরে ঢুকলো-“আব্বা, আপনের এই সিদ্ধান্ত মানতে পারুম না। বিয়ার সিদ্ধান্ত মানি না আব্বা। ওই ফকিরনি পুত্রীরে আমি বিয়া করুম না কোনমতেই।”
লাল টকটকে আঁখিদ্বয় খুলে ছেলেকে দেখলেন-“কি কইলি?”
সোহেল ঘাবড়ে গেল বাপের এমন রুপ দেখে। মিনমিনে গলায় বললো-“ওই মাইয়া, চিনি না জানি না ওরে বিয়া করুম না আব্বা।”
সালিম সাহেব চেয়ার ছেড়ে তেড়ে এলেন ছেলের দিকে-“তোরে আমি…”
মারতে যেয়েও শেষ মুহূর্তে হাত গুটিয়ে নিলেন। সোহেল ভয়ে চোখ বুজে আছে। সালিম সাহেব লম্বা একটা নিশ্বাস নিলেন-“তোর চাইতে তো শরিফ ভালো রে সোহেল। অন্তত ও আমার কোন ক্ষতি করে না। নিজের মতো জীবন বাইছা নিছে। তরে এতো আদর ভালোবাসা দিছি, ভাবছি তুই আমাদের বংশ উজ্জ্বল করবি। আমার যোগ্য উত্তরসুরি হবি। এখন দেখতেছি তুই আমাকে ডুবানোর তাল করছোস। আর তোর নিজের ভবিষ্যত অন্ধকার।”
শরীরে বিচুটি পাতা ডলে দিলে যেমন অনুভূতি হয় বাবার কথাগুলো তেমনই লাগলো সোহেলের কাছে। বাপের জন্য সে বিনাবাক্যে বহু অন্যায় করেছে ভবিষ্যতেও করবে। তাই বাপের মুখে অন্য কারো প্রশংসা ভালো লাগে না তার। সে নিশ্চুপ হয়ে রইলো। সালিম সাহেব ক্ষনকাল চুপ থেকে স্থিমিত কন্ঠে বললেন-“আপাতত বিয়া কইরা পরিস্থিতি ঠান্ডা কর। নির্বাচনের পরে বউরে রাখবি কিনা ঠিক করিস। আর ঝামেলা করিস না সোহেল। আমার কথা বুঝছোস?”
অনিচ্ছায় মাথা দুলায় সোহেল। ভীষণ রাগ হচ্ছে মেয়েটার উপর। ওই হা/রা/ম/জা/দি যে একটা কু/ফা সেইটা আগে বুঝলে কোনদিন এই ভুল করতো না সে। মনেহচ্ছে এখনই যেয়ে চুলের মুঠি ধরে পানিতে চুবিয়ে মা/র/তে। সোহেলের হাত নিশপিশ করে। সালিম সাহেব এগিয়ে এসে সোহেলের কাঁধে হাত রাখলেন-“মাঝে মাঝে জিতার জন্য হারতে হয় সোহেল। হারতে শিখ তাইলে জিততে পারবি। আর মেজাজটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে শেখ। যখন তখন মেজাজ হারাইলে তার পরিনতি এমনই হবে, বুজছোস?”
সোহেল একটু নরম হলো। বাবার দিকে তাকালো। সালিম সাহেব নরম গলায় বললেন-“তৈরি হয়ে যা। ওই মাইয়ার চাচা আর মা আসলে বিয়া হইবো তোদের। আপাতত কোনরকম মাথা গরম করবি না। ঠিক আছে?”
সোহেল ঘাড় হেলায়। সালিম সাহেব পিঠ চাপড়ে দিলো-“সাব্বাশ। যা এখন।”

★★★

তুলতুলের মা তহুরা, চাচা রাব্বানী আর ওর বাবার বন্ধু নতুন সূর্য পত্রিকার সাংবাদিক হাফিজ উদ্দিন সন্ধ্যার মুখে ইব্রাহিম নিবাসে পা রাখলো। নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে বন্দর থানার ওসিকেও ডেকেছিল তারা কিন্তু আনঅফিশিয়াল এই মিটিংয়ে উনি কিছুতেই থাকতে রাজি নন। আর কিছুদিন আছেন এই এলাকায়, কোন বিতর্কে যেতে চায় না বলে আসেননি। সালিম সাহেব কোন রাখঢাক না করেই তহুরাকে প্রস্তাব দিলো-“দেখেন আপা, আমার ছেলে একটা ভুল করে ফেলছে। আমি চাই এটা নিয়ে আর কোন উচ্চবাচ্য না হোক। আপনার মেয়েকে আমার বাড়ির বউ করতে চাই। তাহলে আপনার মেয়ে আর আমার পরিবার দুজনেরই সন্মান রক্ষা হবে।”
এমন প্রস্তাবে উপস্থিত তিনজনই ভরকে গেলো। এইরকম কিছু ইব্রাহিম সালিম বলতে পারে তা ওদের ধারণাতেও ছিল না। তহুরা আঁতকে উঠে আকুতি জানালো-“ভাই, আপনার কাছে করজোড়ে মিনতি করছি, আমার মেয়েটাকে ফিরায় দেন। বিয়ের কোন প্রয়োজন নাই। আমরা এলাকা ছেড়ে যাব মেয়ে নিয়ে।”
ইব্রাহিম সালিমের চোয়াল শক্ত হলো। মেজাজ এমনিতেই খারাপ তারউপর তহুরার কথা। মহিলা মনেহয় ভুলে গেছে কোথায় দাঁড়িয়ে কথা বলছে। যে মেয়ে ভয় না পেয়ে প্রতিবাদ করে তাকে আর যাইহোক খোলা ছেড়ে দেওয়া যাবে না। ওই মেয়ে মোটেও চুপ থাকার মেয়ে না। ওর বাবাও এমন ঘাউড়া ছিল। বাবার রক্ত মেয়ের মধ্যেও জাগনা।
“আমি আপনার মেয়ের সন্মান রক্ষার চেষ্টা করতেছি আর আপনি উল্টা ভাবতেছেন। ভাবনার মিল না হইলে সমস্যা আপা। আপনার মেয়েকে এখন নিয়ে গেলে কি হবে বুজতেছেন? তারে জীবনে বিয়া দিতে পারবেন না। তাছাড়া আপনার মেয়ে আমার ছেলের কোন ক্ষতি করবে না তার গ্যরান্টি কি? শোনেন আপা, অতীত ভুলে যান নাই আশাকরি। মেয়ে বাঁইচা আছে তার বিয়া হইবো এরচেয়ে আনন্দ আর কি? আর কথা বাড়ায়েন না।”
ইব্রাহিম সালিমের কথার গভীরতা বুঝতে খানিকটা সময় লাগলো তহুরা। তার বুকটা হুহু করে উঠলো। মেয়েটার সাথে খুব খারাপ কিছু হয়েছে এটা বুঝতে আর বাকী নেই। তিনি অসহায় চাহুনি নিয়ে দেবরের দিকে তাকালেন। রাব্বানীর সাথে চোখাচোখি হলো। তাকেও বিভ্রান্ত দেখালো। এরকম বাঘের অরন্যে কে থাকতে চাইবে? কিন্তু এইমুহূর্তে তাদের প্রস্তাবে না করারও কোন উপায় নেই। ইব্রাহিম সালিম সময় নষ্ট করলেন না-“কিছুক্ষণের মধ্যে কাজি আসবে। আপনি আপনার মেয়ের সাথে কথা বলেন আপা। তাকে বিয়ের কথা বলেন। আমি কোন ঝামেলা চাই না আর। এমনিতেই নানা টেনশনে আছি। আশাকরি আমার পরিস্থিতি বুঝবেন।”
ইব্রাহিম সালিম উঠে দাঁড়ালেন। ঠিক ওই সময় তুলতুল ঘরে এসে ঢুকলো। তুলতুলকে দেখেই গা শিউরে উঠলো তহুরার। হৃদয়ে আর্তনাদ করে উঠলো। তার আদরের মেয়েটার কি হাল করেছে হায়েনাটা? তুলতুল ‘মা’ বলে চিৎকার দিয়ে দৌড়ে এসে মায়ের কোলে ঝাপিয়ে পড়লো। মা মেয়ের কান্নায় ইব্রাহিম নিবাসের ইটের দেয়ালেও যেন কাঁপন উঠলো। ইব্রাহিম সালিম রিমাকে ইশারা করেন সব সামলে নিতে।

ঠিক আধাঘন্টা পরে তুলতুলের তুমুল আপত্তি আমলে না নিয়ে সোহেলের সাথে তার বিয়ের কাজ শেষ হলো। নির্বাক তহুরা, প্রথমে স্বামী হারিয়ে আর আজ মেয়ে হারিয়ে। সে জানে তার মেয়ে আর বেশিদিন নেই এই পৃথিবীতে। হয়তো আজ থেকেই তার মৃত্যুদিন গোনা শুরু হলো।

★★★

খাবার টেবিলে অন্যমনস্ক হয়ে খাবার নাড়াচাড়া করছিল রণ। জলি সেটা লক্ষ্য করে বললেন-“কি হয়েছে রণ খাচ্ছিস না কেন বাবাই? খেতে ভালো লাগছে না?”
“তোমার বাবাই তো বাবু নিজ হাতে খেতে পারে না মা। তুমি খাইয়ে দিলে ঠিকই খাবে। তাই নারে খুশি?”
পাশের চেয়ারে বসে থাকা খুশিকে চিমটি দিয়ে হাসি মুচকি হাসলো। খুশি ফিকফিক করে হাসে-“তা আর বলতে? বুড়ো খোকা একেই বলে।”
জলি মেয়েদের দিকে তেড়ে গেলেন-“এই তোরা চুপ করবি? ছেলেটা সবসময় দূরে দূরে থেকেছে, ওকে খাইয়ে দেওয়ার সুযোগ পেলাম কোথায়? খুব হিংসুটে হয়েছিস তো?”
এতোকিছুর মধ্যেও রণকে কথা বলতে দেখা গেলো না। অন্য সময় হলে সে বোনদের সাথে সমান তালে খুনসুটি করতো। জলি ছেলের কাছে এগিয়ে এলো। রণ মাথা নাড়লো-“না মা, শরীরটা হঠাৎ খারাপ লাগছে।”
জলি উৎকন্ঠিত হয়ে এগিয়ে এসে ছেলের কপালে হাত রাখলেন-“জ্বর তো নেই বাবাই। তাহলে কি হয়েছে? কোন কারনে কি তোর মন খারাপ?”
মায়ের কথা শুনে রণ খানিকটা চমকে উঠলো-“এখন খেতে ইচ্ছে করছে না মা। আমি বরং শুয়ে একটু আরাম করি। পরে খিদে লাগলে তোমাকে বলবো।”
রণ হুট করে উঠে যাওয়াতে বোনেরাও একটু অবাক হলো। তাদের ভাইয়ের সত্যিই হয়তো খারাপ লাগছে না হলে ওদের সাথে কথা না বলে থাকে না রণ। রণ চলে যাওয়ায় জলি মেয়েদের সাথে গজগজ করছে-“সবসময় ভাইয়ের পেছনে লেগে থাকা। বলি তোদের কি কোন কাজ নেই? সারাদিন কত জায়গায় দৌড়ে আসে। বাসায় এসে তোদের জ্বালা।”
হাসি আর খুশি দুই বোন মুখচোখ কাচুমাচু করে খাওয়ায় মন দিলো।

রণ চোখের উপর হাত রেখে শুয়ে আছে। ঘুমানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। অশান্ত মনটা খচখচ করছে। জীবনে প্রথমবারের মতো বাবা মায়ের শিক্ষার বিপরীত কাজ করলো সে। সে জানে খুব খারাপ কাজ করেছে কিন্তু না করলেও চলছিল না। মেয়েটার অমন অসভ্যের মতো আচরণ মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল ওর। সন্দেহ নেই মেয়েটা ওর বাবা আর ভাইয়ের মতোই ডাকাবুকো। রণ শুধু এপাশ ওপাশ করে। ওইসময় ফোনটা এলো। রণ দেখলো স্ক্রীনে মিহিরের নাম ভেসে উঠেছে। দ্রুত বিছানায় উঠে বসলে সে-“বল মিহির।”
মিহিরের কথা চুপচাপ শুনলো রণ। খবরটা চিত্ত চন্চল করার মতোই কিন্তু সে শান্ত রইলো। ধীর কন্ঠে জানতে চাইলো-“দিলশান কবে আসবে এদিকে?”
ওপাশে মিহির কি বললো শোনা গেলো না। রণ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে-“আচ্ছা, ঠিক আছে। সময় তো বেশিদিন নাই। চিরকুটটা কালকে পৌঁছানোর ব্যবস্থা কর।”
ফোন নামিয়ে বিছানা থেকে নামলো রণ। ধীরে ধীরে শক্ত খোলসে আবৃত করে নিজেকে লৌহ মানব বানালেও মনের কোথায় যেন এই পথে চলতে সায় দেয় না। অথচ প্রতিদ্বন্দী খুব চালাক এবং হিংস্র। নিজের স্বার্থে হেন কাজ নেই করে না। এমন মানুষের সাথে লড়তে নিজেকে তার চাইতে খারাপ বানাতে হচ্ছে। প্রতিদ্বন্দীকে বশে আনতে তারই দেখানো পথে এগুতে হচ্ছে। মন অটল করলো রণ। যত যাইহোক এবার তাকে পারতেই হবে। বাবা যা পারেনি সে করে দেখাবে। দেখাতেই হবে। এই ভাবনায় মন কিছুটা শান্ত হলো। বুকের ভার কমলো খানিকটা। কালকে অনেক কাজ করতে হবে। তাই বিছানায় যেতে দেরি করলোনা আর।

★★★

শুভার রাতে জ্বর এসেছিল। হলরুমের টেবিলের উপর প্রয়োজনীয় ওষুধ পেয়ে গেলেও অবাক হওয়ার অনুভূতি কাজ করছিল না ওর। কোনরকমে জ্বরের ওষুধ খেয়ে সোফায় গড়িয়ে গেছে। সর্বাঙ্গ জ্বলে শেষ। গলা ছিলে গেছে, চোখ ফুলে একাকার। পুরো হলরুম জুড়ে বমির ঘ্রান কিন্তু শুভ্রা পরিস্কার করার পরিস্থিতিতে নেই। শরীরের তীব্র জ্বালা ধীরে ধীরে কমে এলে ঘুম নামতে চায় চোখে। কিন্তু ক্ষণে ক্ষণে ভয় পেয়ে উঠে বসেছে আবার শুয়েছে। রাতে একা একা এই ভুতুড়ে বাসায় থাকতে ভয় লাগছিল ওর। সেসব কথা শোনার কেউ নেই বলে চুপচাপ আবারও ঘুমানোর চেষ্টা করে। ভাবছে গত কয়েকদিন তাহলে ঘুমালো কি করে? ওকে কি ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়েছিল? নিজের ভাবনায় বিরক্ত শুভ্রা উঠে ঘরময় পায়চারি করে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দরজা জানালাগুলো চেক করে। কোথাও কোন ফাঁক দেখা যায় কিনা। পরে হাল ছেড়ে দিয়ে আবারও হলরুমে ফেরত আসে। কিছু না পেয়ে অলীক কল্পনার রাজ্যে পারি দেয়। এলোমেলো ভাবনায় ক্লান্ত হয়ে একসময় ঘুমের কোলে নুইয়ে পড়ে।

ঘুম কয়টার দিকে ভেঙেছে জানে না শুভ্রা। এ বাড়িতে কোন ঘড়ি রাখা হয়নি। গলার তীব্র জ্বলুনির সাথে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর। পেট খিদেয় চো চো করছে। শুভ্রা পাত্তা দিলো না। সে ফাঁকা পেটেই জ্বর আর ব্যাথার ওষুধ খেল। কেন যেন ভীষণ আক্রোশ তৈরি হয়েছে তার মধ্যে। বিদ্রোহের ইচ্ছে জাগছে। সে জবাব চায়। কেন তাকে এভাবে আঁটকে রাখা হয়েছে। কি চাই ওদের? গুমোট মাথা নিয়ে শুভ্রা তাকে বেঁধে রাখা ঘরে ফিরে গিয়ে আলমারির পুরো কাপড় এলোমেলো করে নিচে ফেলে দিলো। কাঁচের জিনিসপত্র ভাঙচুর করলো অকারণে। সবঘরের বিছানা তছনছ করলো। সবার শেষে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে টিভিটায় দিকে গ্লাস ছুঁড়ে মারলো। ঝনঝনিয়ে টিভি ভেঙে পড়লো। তবুও আক্রোশ কমলো না। তিনদিনের না খাওয়া শরীরে এতো শক্তি কোথা থেকে পেলো জানে না। অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে চিৎকার করলো। যদিও তার গলার স্বর শোনা গেল না খুব একটা। ফ্যাসফ্যসে কন্ঠে চিৎকার করতে কষ্ট হচ্ছিল তার। যখন শরীরের সমস্ত শক্তি শেষ হয়ে গেলো তখন যেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।

ঘুম ভাঙতেই ছেলেটাকে তার সামনে দেখলো। ওর নড়াচড়া দেখেই বলে উঠলো-“মেঝেতে সাবধানে পা রাখবেন। কাঁচ ছড়িয়ে আছে পা কেঁটে যাবে।”
শুভ্রা সাবধানে উঠে বসলো। মাথাটা দুলে উঠলো ভীষণভাবে কিন্তু তা এই ছেলেকে বুঝতে দেবে না। সে ছেলেটার পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো জুতো পড়ে বসে আছে। শুভ্রার পুরনো মেজাজ ফিরে এলো। ফ্যাসফ্যাসে কন্ঠে বললো-“গরু মেরে জুতো দানের দরকার নেই আমার। এতো চিন্তা থাকলে ঘর পরিস্কার করে রাখতেন।”
ছেলেটা শুভ্রাকে দেখলো মন দিয়ে তারপর উচ্চ স্বরে হাসলো-“গুড জোকস। আমার জিনিসপত্র সব ভাঙবেন আপনি আর আমি সেগুলো পরিস্কার করবো যাতে আপনার পা না কাটে?”
শুভ্রা ঠোঁট টিপে বললো-“দরকার হলে তাই করবেন বৈকি।”
ছেলেটা বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে ভ্রু নাচালো-“দরকার! তা দরকারটা কেন হবে?”
শুভ্রা তেরছা হাসলো-“আমাকে তুলে এনেছেন মানেই তো আমাকে দরকার আপনার। তাই না?”
ছেলেটার ভ্রু কুঞ্চিত হলো-“আপনি আবারও ভুল করছেন। আমার ভালো ব্যবহারকে দূর্বলতা ভেবে নিচ্ছেন। দেখুন আমি চাইলে আপনাকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পারিয়ে রাখতে পারি। কোন কষ্ট করতে হবে না আমার। কিন্তু আপনার কোন ক্ষতি করার আমার সত্যিই কোন ইনটেনশন নেই। আমার প্রয়োজন ফুরালেই আপনাকে মুক্ত করে দেব। ততদিন পর্যন্ত কষ্ট করে থাকতে হবে আপনাকে।”
শুভ্রা অটল গলায় বললো-“থাকবো কিন্তু নিজের পরিচয় দিন আপনি। কেন আমাকে তুলে এনেছেন কারণ বলুন। যুক্তিসংগত মনে হলে আমি চুপচাপ মেনে নেব।”
“সরি। কারন বলতে পারবোনা।”
“তাহলে আমিও ভালোমতো থাকতে পারবোনা। চাইলে আপনি আমাকে আরও মা/র/তে পারেন। মা/র/তে মা/র/তে মেরেও ফেলতে পারেন তাতেও লাভ হবে না।”
ছেলেটা অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে রইলো শুভ্রার দিকে। শুভ্রা সে দৃষ্টির মানে বুঝলোনা। কেমন যেন নিস্পৃহ ভাব। তবে শুভ্রাও হারবে না আজ। সেও তাকিয়ে রইলো ছেলেটার দিকে। অনেকটা সময় পার হওয়ার পর ছেলেটা মুখ খুললো-“আমি রণ।”

চলবে—
©Farhana_Yesmin

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here