দর্পহরন #পর্ব-৫১

0
244

#দর্পহরন
#পর্ব-৫১

“রাগীব, সালিম সাহেব যে কোন মুল্যে মেয়র পদে মনোনয়ন চায়। ওকে অনেক ভাবে দমাতে চেয়েছি কিন্তু কিছুতেই মানছে না। কি করি বলো তো?”
নেত্রীর এমন প্রশ্নে রণ কিছুটা বিচলিত হলো-“উনি তো কোনভাবেই মনোনয়ন এর যোগ্য হয় না ফুপু। ওখানকার পরিবেশ কেবলই কিছুটা সুস্থির হতে শুরু করেছে। এখন যদি আবার উনি ফিরে আসে তাহলে আবার আগের মতো ত্রাশ সৃষ্টির চেষ্টা করবে। কাজ সব নিজের আয়ত্তে নেওয়ার চেষ্টা করবে। এলাকার মানুষের শান্তি বিনষ্ট হবে।”
নেত্রীর মুখে বিরক্তির রেখা ফুটে উঠলো-“সেসব তো আমি জানি রাগীব। কথা হলো তাকে ঠেকাবো কি করে? সালিম বেশ মরিয়া হয়ে গেছে। মনোনয়ন না পেলে ও কি করবে আমি জানি না।”
চুপ করে থেকে কিছু একটা ভাবলো রণ। নেত্রী বললো-“আর ওকে মনোনয়ন দিলে যে কোন মুল্যে হোক ও জিতবে। যত ভালো প্রার্থীই দাও না কেন।”
“আপনি ওনাকে মনোনয়ন দিন ফুপু।”
রণর কথায় চমকে উঠলো নেত্রী-“মানে? কি বলছো বুঝতে পারছো? ওকে মনোনয়ন দেওয়া ওকে ওই এলাকার নিয়ন্ত্রণ দিয়ে দেওয়া।”
রণ গম্ভীর হয়ে জবাব দিলো-“উনি মনোনয়ন পাবে কিন্তু জিতবে না এই শিওরিটি আমার। যতদূর জানি আজ পর্যন্ত উনি বা ওনার পরিবার নির্বাচনে হারেনি কখনো, তাই তো? এবার হারবে এবং ওনার দর্ম্ভ চূর্ন হবে।”
“যদি না হয়? সালিমকে মাত দেওয়া এতো সহজ না রাগীব। আমার এতোদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থাকার পরও ওকে নিয়ে খেলতে ভয় পাই। বুঝতে পারছো তো তুমি?”
রণ এবার ঠোঁট টিপে জবাব দিলো-“আমার উপর ভরসা করুন ফুপু। আপনি পুরো ব্যাপারটা আমার উপর ছেড়ে দিন। দল থেকে ওনাকে মনোনয়ন দিন। তবে সতন্ত্র একজন কিন্তু থাকবে। তার প্রতি প্রছন্নভাবে সাপোর্ট করতে হবে আপনাকে।”
নেত্রীর সন্দিহান নজরে রণকে দেখলো-“কাকে দেবে সতন্ত্রতে?”
রণ এবার সামান্য ঠোঁট ফাঁক করলো-“দেখি কাকে দিলে সুবিধা হয়। আপনি প্লিজ দলের মধ্যকার আলোচনা সামলে নেবেন ফুপু।”
নেত্রী মাথা নাড়ে-“ঠিক আছে। তোমার মা কেমন আছে?”
হুট করে মায়ের প্রসঙ্গ আসায় একটু হকচকিয়ে গেল রণ-“ভালো আছে।”
তোমার মাকে একদিন নিয়ে এসো এখানে। অনেক দিন দেখা হয় না। আমি তো সময় করতে পারি না তাই বলাও হয়ে ওঠে না।”
“জ্বি আনবো। আজ তাহলে আসছি ফুপু।”
নেত্রী মাথা দুলালেন। রণ চলে এলো। নেত্রীর মাথায় অন্য চিন্তা। সালিম এবার খুব খারাপ কাজ করেছে৷ তার অত্যন্ত স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দিয়ে ফেলেছে। এবার সালিমকে ছাড়া যাবে না কিছুতেই। ঘটনা দু’চার কান হলে বাকী সদস্যরা যে কোনদিন বেয়াদবি করবে না তার কি গ্যারান্টি? সমস্যা বিষফোড়া হওয়ার আগেই তাকে গোড়া থেকে উৎপাটন করা জরুরি। সেটাই করতে হবে তাড়াতাড়ি।

*****

তন্ময়ের মাথায় খুশির ভুত চেপেছে। কিছুতেই খুশিকে মাথা থেকে বের করতে পারছে না। তন্ময় বুঝতে পারছে না খুশিকে বিয়ে করতে চাইলে সমস্যা কোথায়? সে তো ছেলে হিসেবে খুব খারাপ না৷ তাহলে? গাড়ির জানালা দিয়ে উঁকি দিলো তন্ময়। খুশি কি আজ ভার্সিটিতে আসবে না? ভাবনার মাঝেই খুশিদের গাড়িটা দেখলো। ভার্সিটির গেটে খুশিকে একা নামতে দেখে তন্ময় মনে মনে পুলকিত হয়ে উঠলো। আরেহ! আজ হাসি আসেনি দেখা যাচ্ছে। তন্ময়ের চেহারায় একটা পৈশাচিক খুশি ফুটে উঠে মিলিয়ে গেলো। সে ঘড়ি দেখলো। সকাল দশটা বাজে। কিছুক্ষণ বসে ভাবলো কি করবে। আজকের সু্যোগটা কাজে লাগাতে হবে। কিছুতেই ছাড়া যাবে না। তন্ময় চুপচাপ বসে রইলো।

ঘন্টা দেড়েক বাদে ফোনটা হাতে নিলো সে। কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে ডায়াল করলো খুশির নাম্বারে-“হ্যালো, খুশি বলছো?”
“জ্বি। আপনি কে?”
ওপাশে খুশির গলা পেয়ে ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটলো তন্ময়ের-“আমি তন্ময়।”
“তন্ময়, আপনি কেন ফোন করেছেন? সরি, আপনার সাথে কথা বলতে পারবো না।”
খুশি ফোন কেটে দিলো। তন্ময় আবার ফোন দিলো। কয়েকবার দেওয়ার পরেও খুশি ফোন না ধরলে তন্ময় ম্যাসেজ দিলো-“জরুরি না হলে কি ফোন দিতাম? তোমাদের বাসায় এসেছিলাম। তোমার ভাবি বাসায় একা, দেখি সে অসুস্থ হয়ে গেছে। তুমি কি আসতে পারবে? ও তোমাকে নিতে পাঠিয়েছে আমাকে। আমি ইউনিভার্সিটির গেটে তোমার অপেক্ষা করছি।”
শুভ্রার অসুস্থতার কথা শুনে খুশি ঘাবড়ে গেল-“কককি বলছেন এসব? সকালে তো ভাবি ঠিকই ছিলো। কি হলো হঠাৎ?”
“জানি না। তুমি কি আসবে নাকি আমি চলে যাব?”
“না না আমি আসছি।”
খুশি তড়িৎ উত্তর দিলো। তন্ময় ফোন নামিয়ে রেখে হাসছে। পাঁচ মিনিট পরেই খুশিকে হন্তদন্ত হয়ে গেটের দিকে ছুটে আসতে দেখলো। গম্ভীর হয়ে তন্ময় খুশির দিকে তাকিয়ে হাত নাড়লো-“খুশি, এই যে এখানে।”
খুশি প্রায় ছুটে এলো-“চলুন যাওয়া যাক। ভাবি কি এখনো একা আছে? আমি তাহলে মাকে ফোন করে জানিয়ে দিচ্ছি।”
তন্ময় বাঁধা দিলো-“না দরকার নেই। কাজের মেয়েটাকে বসিয়ে দিয়ে এসেছি। আপনার মাকে জানাতে মানা করলো শুভ্রা। কি নাকি জরুরি কাজে গেছে। আপনি বরং গাড়িতে বসুন তাড়াতাড়ি।”
খুশি মাথা নেড়ে গাড়িতে বসলো। তন্ময়ের গাড়ি চলতে শুরু করলো। পরিচিত রাস্তা ছেড়ে অপরিচিত রাস্তায় গাড়ি ঢুকতেই খুশি চমকে গেলো-“এদিকে কেন ঢুকলেন? এদিক দিয়ে তো দেরি হবে বাসায় যেতে।”
তন্ময় খুশির দিকে তাকিয়ে হাসলো-“ভয় পেয় না। তোমাকে বাসায় পৌঁছে দেব তার আগে কিছু কথা বলতে চাই তোমার সাথে।”
খুশির বুক ধরাস ধরাস করছে। সে বুঝে গেলো তন্ময় তাকে মিথ্যে বলেছে। সে চেচিয়ে উঠলো-“আপনি মিথ্যে বলেছেন তাই না? ভাবি অসুর না।”
তন্ময় মুচকি হেসে মাথা নাড়ে-“ভাবিকে এতে ভালোবাসো জানা ছিলো না।”
“আপনি গাড়ি থামান প্লিজ। আমাকে নামিয়ে দিন। আপনার সাথে কোন কথা নেই আমার।”
তন্ময়ের চোয়াল শক্ত হলো-“খুব ভালো মতো বলছি খুশি। শুধু কিছু কথা বলবো তোমার সাথে। তারপর ছেড়ে দেব তোমাকে।”
খুশি অস্থির হয়ে হাতপা ছুড়লো। গাড়ির দরজা খোলার চেষ্টা করলো কিন্তু তন্ময় দরজা লক করে দিয়েছে। খুশি চেঁচালো-“প্লিজ আমাকে নামিয়ে দিন। বললাম তো আপনার সাথে কোন কথা নেই।”
তন্ময়ের চেহারায় কাঠিন্যে ফুটে উঠলো। সে গাড়ি থামিয়ে খুশির দিকে তাকালো-“এখনই এসব বন্ধ না করলে আপনাকে কিডন্যাপ করবো খুশি। কেউ বাঁচাতে পারবে না আপনাকে।”
খুশি চমকে উঠে নিশ্চুপ হয়ে গেলো। তন্ময় ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো-“এই তো লক্ষী মেয়ে। এবার বলুন তো আমার মধ্যে কি সমস্যা? মানে পাত্র হিসেবে আমি কি যোগ্য না?”
খুশি জবাব না দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলো। তন্ময় তাড়া দিলো-“বলুন। কথা বলছেন না কেন? আমি বিয়ে করতে চাই আপনাকে। আপনি কি রাজি না?”
খুশি ঝট করে ফিরে তাকালো-“শুনুন, বিয়ে নিয়ে ভাববার জন্য মা আর ভাইয়া আছে। আমি এসব নিয়ে এখনও ভাবছি না পরেও ভাববো না। কাজেই আমার কাছে মতামত জানতে চেয়ে খুব একটা লাভ নেই। আপনার যদি কিছু বলার থাকে তাহলে তাদের বলুন কিংবা ভাবিকে বলুন। সে তো আপনার বোন তাই না?”
“বলেছিলাম কিন্তু শুভ্রা মানছে না। সে বলেছে সম্ভব না।”
খুশি হেসে দিলো-“তাহলে তো হয়েই গেলো। উত্তর তো পেয়েই গেছেন।”
তন্ময় গম্ভীর হয়ে উত্তর দিলো-“কিন্তু উত্তরে আমি খুশি না। খুশি হওয়ার জন্য যা করতে হবে তাই করতে চাই আমি।”
খুশি ভীত কন্ঠে জানতে চাইলো-“মানে? কি করতে চাইছেন আপনি?”
“আপনাকে বিয়ে। আপনার নিশ্চয়ই আপত্তি নেই?”
খুশি ভীত চোখে চেয়ে আছে। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। ঠিক ওই সময় তন্ময়ের জানালায় নক হলো। একজন ঝুকে পড়লো সেদিকে। তন্ময়ের মেজাজ খিঁচে গেলো। জরুরি আলাপে কে বিরক্ত করে? ধমক দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে দ্রুত হাতে জানালা খুলতেই চমকে গেলো সে। এভাবে ধরা পড়ে যাবে জানা ছিলো না। তন্ময় পুনরায় মাথা ঢুকিয়ে জানালা বন্ধ করতে চাইলে বাঁধা পেলো। উল্টো ওর দিকের দরজাটা খুলে গেলো সহসাই। তন্ময় ভয় পেয়ে ঢোক গিললো।

★অমর একুশে বইমেলা ২০২৪ উপলক্ষে আমার দু’টো বই এসেছে। একটা পলিটিকাল মার্ডার মিস্ট্রি থ্রিলার ‘অন্ধকারে জলের কোলাহল’ পাবেন ৩৫৬ নং স্টলে। অন্যটা সমকালীন রোমান্টিক জনরার ‘আমি ডুবতে রাজি আছি’ পাবেন উপকথার ৫৬৪ নং স্টলে। চমৎকার বইদুটো ঘরে বসে অর্ডার করতে পারবেন রকমারিসহ আপনার পছন্দের বুকশপেও। আমার লেখা ভালো লাগলে বইদুটো সংগ্রহ করুন। আশা করছি বই পড়ে নিরাশ হবেন না।★

চলবে—
©Farhana_Yesmin

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here