#দর্পহরন
#পর্ব-৫২
“আমি বলেছিলাম খুশির দিকে না তাকাতে। শুনলে না কেন তন্ময় ভাই?”
তন্ময় কাচুমাচু দৃষ্টিতে শুভ্রাকে দেখলো। শুভ্রা কঠিন চেহারা নিয়ে তন্ময়কে দেখছে-“আজ তুমি কি করতে যাচ্ছিলে ভাইয়া? তোমার কোন আইডিয়া আছে ওর কানে গেলে কি হবে?”
শুভ্রার হুঙ্কারে কেঁপে উঠলো তন্ময়-“আমার অন্য কোন মতলব ছিলো না শুভ্রা। আমি কেবল খুশির সাথে কথা বলে আমার ব্যাপারে ওর মতামত জানতে চেয়েছি। আর কিছু না।”
“সিরিয়াসলি! ওকে মিথ্যে বলে ডেকে নিয়ে তুমি ওর মতামত জানতে চাইছো? আর ইউ ম্যাড? ও কি কখনো তোমাকে বলেছে বা ইঙ্গিত দিয়েছে যে ও তোমাকে পছন্দ করে?”
“আর খুশি, বোকা মেয়ে! তুই কি মনে করে তন্ময় ভাইয়ের ডাকে সারা দিলি? তোকে কি বলেছিলাম? আমি ফোন না দিলে বেরুবি না।”
খুশি কেঁদে দিলো-“তোমার অসুস্থতার কথা শুনে ভয় পেয়েছিলাম ভাবি। মাথা কাজ করছিল না।”
শুভ্রা খুশিকে জড়িয়ে ধরে-“আর কখনো এমন করবি না খুশি। যা গাড়িতে গিয়ে বয়।”
খুশি মাথা নেড়ে চুপচাপ গাড়িতে বসলো। তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে শুভ্রা বললো-“তোমাকে অনেকদিন বলেছি কিন্তু তুমি শোননি আমার কথা। এখন ও জানলে তোমার কি হাল করবে আমি জানি না। আমি তোমার সাহস দেখে অবাক হচ্ছি। কোন সাহসে তুমি ওকে মিথ্যে বলে ক্লাস থেকে বের করে আনলে?”
তন্ময় হঠাৎ করে শুভ্রার হাত চেপে ধরে-“শুভ্রা, আমি ওকে বিয়ে করতে চাই। প্লিজ শুভ্রা, তুই না আমার বোন। তুই একটু কথা বলে দেখ না রণর সাথে।”
শুভ্রা হাত ছাড়িয়ে নিলো-“আমার মাথা খারাপ হয়নি ভাইয়া যে তোমার জন্য প্রস্তাব দেব। যাদের মেয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেবে কি করবে। আর তুমি কি কথা বলার মতো অবস্থা রেখেছ? তুমি আজ যা করলে তাতে তুমি নিজেকেই বিপদে ফেলে দিলে৷ আমি এখন বাবাকে জানাবো তোমার ঘটনা। তা না হলে উনি কিছু একটা করবেন আর বাবা ওনাকে ভুল বুঝবে।”
শুভ্রা মোবাইল বের করতেই তন্ময় শুভ্রার হাত চেপে ধরে-“প্লিজ বোন, চাচ্চুকে জানাস না। খুব রাগ হবে চাচ্চু।”
শুভ্রা হাত ছাড়িয়ে নিলো-“আর কোন কথা নেই তোমার সাথে। আশাকরি আজকের পরে খুশির আশেপাশে তোমাকে দেখবো না। নেহাৎ তুমি আমার ভাই তাই নিজের উপর রিস্ক নিয়ে তোমাকে ছেড়ে দিচ্ছি। ভালো থেক।”
শুভ্রা গাড়িতে উঠে বসলো। খুশি কৌতূহলে জানতে চাইলো-“তুমি কি করে আমাদের ধরতে পারলে ভাবি?”
শুভ্রা অন্যমনস্ক হয়ে ছিলো। বারবার ভাবছে তন্ময় আজ কি করতো খুশির সাথে। তাতে ওর আর রণর সম্পর্ক কোথায় দাঁড়াতো? ভয়ে গায়ে কাটা দিলো শুভ্রার। খুশি আবার ডাকলো-“ভাবি কি ভাবছো?”
“কিছু না। তুই কি যেন বলছিলি?”
“”তুমি কিভাবে জানলে ওনার ব্যাপারে? আমাকে কেন ফোন করে বললে ওনার কথা মেনে নিয়ে নাটক করতে? ওনার তালে তাল দিতে।”
শুভ্রা হাসলো-“তোকে নামিয়ে ফিরে যেতে ভাইয়াকে দেখে ফেলেছিলাম। তারপর বুঝলাম তোকে আজ একা নামতে দেখেছে। কি মনে করে আমি ভাইয়ার আড়ালে গাড়ি নিয়ে থেকে গেছিলাম। ভাগ্যিস থেকে গেছিছিলাম।”
“কিন্তু তোমার ইন্টারভিউ মিস হলো যে?”
খুশি মন খারাপ গলায় জবাব দিতেই শুভ্রা হেসে দিয়ে খুশির চিবুক ছুঁয়ে দিলো আলতো করে-“তোর চেয়ে কি চাকরি বড়? চাকরি আসবে যাবে তোর কিছু হলে তোর ভাইয়াকে কি জবাব দিতাম?”
খুশির চেহারায় ভয়ের ছাপ স্পষ্ট হলো-“ভাইয়াকে বলো না ভাবি। অযথাই ভুল বুঝবেো তোমাকে।”
শুভ্রার চেহারা মলিন হলো-“না বললেও সে খবর পাবে খুশি। তোমার ভাইয়াকে বোকা ভেব না। সে হয়তো লোক লাগিয়ে রেখেছে তোমাদের পেছনে।”
খুশি ভয় পেয়ে ঢোক গিললে শুভ্রা অভয় দিলো-“তোমাকে কিছু বলবে না। ভেব না।”
সারাদিন নিজের মেজাজ কোনরকমে ধরে রেখেছিল রণ।বাসায় ফিরে শুভ্রার উপর সেই মেজাজের তাপ ঢাললো-“তুমি জানতে তন্ময় এমন কিছু করতে পারে, তাই না?”
শুভ্রা অবিচল হয়ে মাথা নাড়ে-“না, জানতাম না।”
“অনেক সহ্য করেছি শুভ্রা আর না। এবার ওর কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করছি দাঁড়াও। ওর এতো সাহস আমার বোনকে কিডন্যাপ করতে চায়।”
শুভ্রা রণর দিকে তাকিয়ে থেকে মৃদু হাসলো-“আপনিও সাহস করেছিলেন। ইব্রাহিম সালিমের মেয়েকে কিডন্যাপ করেছিলেন। কেন? নির্বাচনে ওনাকে পরাস্ত করতে। তাই না? আপনি জানতেন সালিম সাহেব মেয়ের প্রতি দূর্বল, তাকে দূর্বল করতে চাইলে মেয়েকে ব্যবহার করতে হবে। তা না হলে সালিম সাহেবকে পথ থেকে সরানো যাবে না।”
রণর মুখে কথা জুটলো না। শুভ্রা কিছুক্ষন থেমে বললো-“আপনার বুদ্ধি সত্যিই কাজে লেগেছিল। বাবাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে আমাকে আঁটকে রাখার বুদ্ধিটা সফল হয়েছিল। অথচ দেখুন আপনাদের রাজনীতির খেলায় মাঝখানে আমি ফুটবল বনে গেলাম। সবাই আমাকে নিয়েই তাদের খেলা চালিয়ে যাচ্ছে।”
রণর চেহারা টকবগ করে ফুটছে। সে ছটফটিয়ে উঠে বললো-“সেসব কথা এখন আসছে কেন? আজকের ঘটনার সাথে সেসব ঘটনার সম্পর্ক কি?”
“সম্পর্ক নেই? না থাকলে ভালো। শুনুন, মাত্রই সোহেল ভাইয়ার ঘটনা ঘটেছে। এমনিতেই সবাই মুড়ষে আছে। আমি চাই না আর কিছু হোক আমাদের পরিবারে। তাই এবারকার মতো তন্ময় ভাইকে একটা সু্যোগ দেবেন আপনি। আপনার নিজের দোষ যদি মাফ হওয়ার মতো হয় তাহলে এটাও মাফ করতে হবে আপনাকে।”
“শুভ্রা!”
রণ ফুঁসে উঠলো। শুভ্রা হাসলো-“নিজের দোষ মানতে শিখুন মিস্টার মন্ত্রী মশায়।”
“কাজটা মোটেও ভালো করছো না শুভ্রা। ভবিষ্যতে কিছু হলে তার দায়ভার সম্পূর্ণ তোমার হবে।”
শুভ্রা জবাব দিলো না। বুকে ভয় থাকলেও বুঝতে দিলো না সে।
*****
“ভাইজান, একটা জরুরি কথা আছে।”
খেতে খেতে থেমে গেলো মোর্শেদ। ছোট ভাইয়ের কন্ঠ ভালো ঠেকলো না মোর্শেদের কানে। চিন্তিত হয়ে শুধায়-“কি কথা সালিম? কি হইছে?”
“তন্ময় কি পাগলামি শুরু করছে ভাইজান?”
“তন্ময় আবার কি করছে?”
“শুভ্রার ননদের পিছনে পইড়া আছে তন্ময়। বিরক্ত করতাছে। আইজকা তো বাড়াবাড়ি কইরা ফালাইছে। জামাই জানলে কি হইবো বুঝছেন?”
মোর্শেদ বিরক্ত হয়ে তন্ময়কে দেখলো-“কিরে তন্ময়, সমস্যা কি তোর? এইসব করতেছোস কেন?”
তন্ময়ের খাওয়া বন্ধ হয়েছে আগেই। সে মুখ শক্ত করে বললো-“আমি বিয়ে করতে চাই আব্বা। শুভ্রার ননদকে আমার ভালো লাগছে। বিয়ে করলে ওকেই বিয়ে করবো আর কাউকে না।”
সালিম সাহেব মেজাজ হারিয়ে চেচিয়ে উঠলো-“ফাজলামি করস নাকি তমাল? জামাই স্পষ্ট মানা করছে তার বোনের ব্যাপারে। তারপর কি আর কথা থাকে?”
তন্ময় হাত ঝাড়লো-“তোমাদের সামনে ফাজলামি করবো এমন সাহস আমার নাই। যেমন ভালোলাগার উপর কারো হাত নাই। আমি আমার কথা ক্লিয়ার বলে দিলাম, বিয়ে করলে খুশিকে করবো। এখন তোমরা কেমনে ম্যানেজ করবা করো।”
সালিম সাহেব হুঙ্কার দিলেন-“মাইয়ার শশুরবাড়ি ভাইজান। কোন ভ্যাজাল করতে চাই না। তারউপর ওয় এখন ক্ষমতায় আছে। আর কারো সোহেলের মতো পরিনতি হোক এইটদ আমি কিছুতেই চাই না। ওরে বুঝান ভাইজান।”
তন্ময় গোয়ারের মাথা নাড়ে-“বুঝাইলেও আমি বুঝবো না। যা বলছি তা বলছি। কথা শেষ।”
খাবার থেকে হাত ঝাড়লো তন্ময়। হনহন করে চলে গেলো নিজের কামরায়। মোর্শেদ ডাকলো কয়েকবার, সারা দিলো না। সালিম সাহেব মোর্শেদের দিকে তাকিয়ে রাগত স্বরে বললো-“দেখছেন ভাইজান, দেখছেন? পোলাগুলা সব এইরকম হইছে কেন? কথা শুনতে চায় না? আমরা কি ওদের খারাপ চাই? পরিস্থিতি বোঝা লাগবে না? যা মন চায় তাই করার দিন কি এখন আছে? এমনিতেই সবাই কোপানলে আছি। একটু উঁচুনিচু কিছু হইলে সব শেষ। এদের এইসব কেমনে বুঝাই? এতোসব কাদের জন্য করি আমরা? ওদের ভবিষ্যত ভাইবাই তো করি নাকি?”
মোর্শেদ চিন্তিত হয়ে ছেলের চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে ছিলো। ছোট ভাইয়ের কথায় কপালে চিন্তার ভাজ বাড়লো। তন্ময় ভীষণ গোয়ার। একবার বলে ফেলেছে মানে ও সিরিয়াস। এদিকে সালিম তো মানবেই না কারণ মেয়ে আছে সেখানে। এ কি জ্বালায় পরা গেলো?
“ভাইজান, আপনে চুপ কইরা আছেন কেন? কিছু কন?”
“তুই কিছু ভাবিস না সালিম। আমি তন্ময়ের লগে কথা কমু।”
মুখে বললেও মনে মনে শঙ্কিত হয়ে ভাবছেন, মহা মুছিবতে পড়া গেলো তো! তন্ময়কে কিভাবে বোঝাবেন তিনি?
★অমর একুশে বইমেলা ২০২৪ উপলক্ষে আমার দু’টো বই এসেছে। একটা পলিটিকাল মার্ডার মিস্ট্রি থ্রিলার ‘অন্ধকারে জলের কোলাহল’ পাবেন ৩৫৬ নং স্টলে। অন্যটা সমকালীন রোমান্টিক জনরার ‘আমি ডুবতে রাজি আছি’ পাবেন উপকথার ৫৬৪ নং স্টলে। চমৎকার বইদুটো ঘরে বসে অর্ডার করতে পারবেন রকমারিসহ আপনার পছন্দের বুকশপেও। আমার লেখা ভালো লাগলে বইদুটো সংগ্রহ করুন। আশা করছি বই পড়ে নিরাশ হবেন না।★
চলবে—
©Farhana_Yesmin