দর্পহরন #পর্ব-৬৬

0
270

#দর্পহরন
#পর্ব-৬৬

তুলতুলের ছেলে হয়েছে সিজারে। পেটে পানি ভেঙে যাওয়ার কারনে আগেভাগে সিজারের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। সময়ের আগে পৃথিবীতে এসেছে বলে বাচ্চাটাকে ইনকিউবেটরে রাখা হয়েছে। তুলতুলের অবস্থা ক্রিটিক্যাল। সিজারের মাঝে হঠাৎ তার খিচুনি শুরু হয়ে শ্বাস কষ্ট হতে থাকে। তাড়াহুড়ো করে তাকে আইসিইউততে শিফট করা হয়েছে।

নাতির মুখ দেখে সালিম সাহেব যারপরনাই আনন্দিত। তার মনে হলে বাচ্চাটা তার জন্য অত্যান্ত ভাগ্যবান। বাচ্চাটা দু’টো সুসংবাদ নিয়ে এলো তার জন্য। বাচ্চা দেখতে দারুণ সুন্দর হয়েছে। একেবারে তাদের বংশের ধারা পেয়েছে। ভারী স্নেহার্দ হয় সালিম সাহেবের মন। তার সোহেল যেমন তাকে ভালোবাসতো তার সন্তান যেন তার দ্বিগুণ ভালোবাসা দিচ্ছে দাদাকে। নাতির প্রতি অপার স্নেহ অনুভব করে সালিম সাহেব। সে মনে মনে নিশ্চিত হয়ে যায় নির্বাচনে তার জয় সুনিশ্চিত।

এদিকে শরীফ ছোটাছুটি করছে তুলতুলকে নিয়ে। মেয়েটা কিসের জন্য যেন ভয় পেয়েছিল। বারবার মায়ের কথা বলছিল। সেই জন্য ওর মাকে খবর দিয়ে হাসপাতালে এনেছে শরীফ। কিন্তু মনেহচ্ছে এনে আরও বিপাকে পড়েছে। মহিলা সেই থেকে মেয়ের জন্য কেঁদে যাচ্ছেন তো যাচ্ছেন। কোন কিছুতে শান্ত হচ্ছে না। এদিকে ডাক্তারও কোন কথা বলছে না। তুলতুলের অবস্থা আদৌও কেমন সেটা বলছে না। নিজের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। শান্ত হয়ে বসা যাচ্ছে না। শরীফ হাসপাতালের এ মাথা থেকে ও মাথা হেঁটে বেড়ায়।বারবার নিজেকে বলছে, তুলতুলের যেন কিছু না হয়। এই মেয়েটা অনেক কিছু সয়েছে। এবার ওর সুখের পালা। আমি ওকে সুখের স্বাদ পাওয়াতে চাই। তাই ওকে বাঁচতে হবে, বাঁচতেই হবে।

উপরওয়ালা শরীফের প্রার্থনা শুনলেন বলেই দুইদিন পরে তুলতুলের শারীরিক অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলো। তাকে আইসিইউ থেকে কেবিনে স্থানান্তর করা হলো। শরীফ যেন নতুন করে নিজের মধ্যে প্রান ফিরে পেলো।

*****

“তোমার আর ও বাড়ি যেতে হবে না ফাহিম। তোমার উচিত হয়নি আমার কথা অমান্য করে ওনার সাথে কাজ করতে রাজি হওয়ার। এতো রিস্ক কেন নিয়েছ?”
ফাহিম অবাক হয়ে রণর দিকে তাকালো-“ভাই, আপনার জন্য এইটুকু করবো না।”
“না করবে না। আমি চাই না আমার কারনে কারো বিন্দু পরিমাণ ক্ষতি হোক। কাল একটা অনর্থ হয়ে যেতে পারতো। দেখেছ তো দিলশাদের অবস্থা? ও পুলিশ কর্মকর্তা হয়েও রেহাই পায়নি। বুঝতে পারছ উনি কতটা ডেয়ারিং?”
“আমি ওনাকে ভয় পাই না ভাই। উনি কিছু করতে পারবে না আমার।”
রণ এবার বিরক্ত হলো-“নায়কোচিত কথা বলো নাতো ফাহিম। তুমি কথা দাও আপাতত ওনার ডোরায় আর যাবে না ফাহিম। সুমনা আপার জন্য ভালো মতো কাজ করো। সুমনা আপা এলে তোমাকে স্থানীয় ভাবে একটা পদ দেওয়ার ব্যবস্থা করবো। আর কাজের ব্যবস্থা করে দেব।”
“ঠিক আছে ভাই আপনি মানা করছেন আর যাব না। একটা কথা ভাই।”
“কি কথা?”
“গতদিন দুপুরে তালই সাহেবের সাথে আমার বাইরে যাওয়ার কথা ছিলো। হঠাৎ ভাবি অসুস্থ হয়ে গেলো। পরে ভাবি ঠিক হইলেও তালই মশাই আর আমাকে নিয়ে বের হয় নাই। আমাকে বাদ দিয়ে তুহিনকে সাথে নিয়ে কই যেন গেছিল। আজব ব্যাপার হইলো এই দুইদিনে তুলতুলকে নিয়ে এতো হইচই হইলো ভাবিকে কোথাও দেখলাম না। না হাসপাতালে না বাসায়।”
রণর ভ্রু কুঁচকে গেলো ফাহিমের কথা শুনে। শুভ্রাকে নিয়ে চিন্তা হলো। এতোকিছুর মধ্যেও শুভ্রার জন্য কনসার্ন এড়াতে পারে না সে। ওর কথা শুনেই বুকের ধকধক বাড়ে। মেয়েটা সেই যে গেলো আর যোগাযোগ হয়নি। মেয়েটা কি তাকে ভুল বুঝলো? হুট করে শুভ্রাকে দেখার তীব্র আকাঙ্খা হলো তার। তবে সেটা ফাহিমকে জানান দিলো না। সে চিন্তাটুকু নিজের মধ্যে রেখে বললো-“নির্বাচন পর্যন্ত সাবধানে থাকবে। একা চলাফেরা করবে না।”

পরদিন বাসায় ফিরতেই মায়ের ডাক এলো-“বাবাই, খুব তো মাকে দোষী বানিয়ে দিয়েছিলি। ওরা বাপ মেয়ে মিলেই চুড়ান্ত খেলাটা খেলছে সেটা আর বিশ্বাস হয় না তাই না?”
রণর মনটা এমনিতেই ভার হয়ে ছিলো। সে কন্ঠে উষ্মা ঢেলে জানতে চাইলো-“আবার কি হলো মা?”
“হচ্ছে তো অনেক কিছুই। বউ বউ করে তোমার মাথা গেছে। তুমি অন্য কিছুই আর দেখছো না।”
“মা পরিস্কার করে বলবে কি হয়েছে?”
“তোমার আদরের বউ ডিভোর্স পেপার সাইন করে পাঠিয়েছে। আশাকরি তোমার এবার আপত্তি নেই ডিভোর্সে।”
রণ থমকায়, ওর মুখের কথাগুলো গুহায় লুকিয়ে যায়। মুখটায় কেউ যেন কসটেপ মেরে দিয়েছে। রণ ধীর পায়ে রুমে ফিরে এলো। কোথায় যেন জীবনের সুর কেটে গেছে। এমনটা কি হওয়ার ছিলো? সে চেয়েছিল বাবার স্বপ্নটা পূরণ করতে। তার অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করতে। সেই ভেবেই দিনরাত পরিশ্রম করে নিজেকে যোগ্য বানিয়ে রাজনীতির মাঠে আগমন। এখন মনেহচ্ছে না এলেই ভালো হতো। এতোদিনের নিয়ম মেনে চলা জীবনটা হঠাৎ অনিয়মের বেড়াজালে বন্দী হয়ে গেলো। মনমগজ ওলট-পালট হয়ে গেলো। একটা সাধারণ সুখের সংসারের স্বপ্নটা কেবলই দূরে সরে যাচ্ছে।

*****

সুমনা আর সালিম সাহেব ময়দানে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডাকায় সমাবেশ করা নিষিদ্ধ হলো। অতীত টেনে একে অপরকে কাঁদা ছোড়াছুড়ি অব্যাহত থাকলো। নির্বাচন ঘিরে সরকারি দলে একটা বিভক্তি টের পাওয়া গেলো। বয়োজ্যেষ্ঠ কয়েকজন খোলাখুলি ভাবে সালিম সাহেবকে সাপোর্ট দিচ্ছে। আরেকদিকে সুমনার সাপের্টে আছে রণ। নেত্রী নিজে এখন দোটানায় ভুগছেন তিনি কার পক্ষ নেবেন। তার ভীষণ ইচ্ছে ছিলো সালিমকে দল থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার। শুধু সালিম না বয়স্ক যারা তাদেরকে একে একে সরিয়ে দেওয়া। দলে লম্বা সময় ধরে যারা আছেন তারা বেশিরভাগ ক্ষমতা পেলে নিজেদের সম্পদ বাড়াতে তৎপর। দেশের ও জনগনের জন্য কিছু করায় তাদের উৎসাহ কম। এসব দেখে বেশ বিরক্ত হয়েছেন নেত্রী। আসলে নেত্রী চাইছেন দলকে ঢেলে সাজাতে। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য স্মার্ট, শিক্ষিত, টেকনোলজিতে ভালো জ্ঞান আছে এমন তরুন এনার্জিটিক ছেলেমেয়েদের নিয়ে দল সাজাতে। তাছাড়া তার পরে দলের ভার নেওয়ার জন্য কে উপযুক্ত সেটাও যাচাই বাছাই করতে চাইছেন এই সুযোগে। এখন এমন পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে যে ভবিষ্যত ভাবতে গেলে বর্তমানটা ছাড় দিতে হচ্ছে। আজকাল তাই বেশিরভাগ সময় গভীর ভাবনায় মগ্ন থাকছেন নেত্রী।
“মাজহার, সিদ্ধান্তে ভুল হচ্ছে নাকি? সালিমকে কি সামাল দিতে পারবো?”
মাজহার সে কথার উত্তর না দিয়ে জানতে চাইলো-“আচ্ছা, চন্দ্রের সাথে রণর ব্যাপারে কথা হয়েছে কি? সে কি চায়?”
নেত্রী অবাক হলেও নিজেকে সামলে নিলো। প্রশ্নবোধক চাহনি নিয়ে তাকাতেই মাজহার খানিকটা আনমনা হলো-“রণ ছেলেটা বেশ ঠান্ডা মাথার। দেখো সে হয়তো বুঝেছে সালিম সাহেব গ্রীন সিগনাল পেয়েছে আমাদের থেকে অথচ কোন উচ্চবাচ্য করছে না।”
“হতে পারে ব্যক্তিগত জীবনে ব্যস্ত।”
নেত্রীর কথায় মাজহারের ভাবনার জগতে কোন হেরফের হলো কিনা বোঝা গেলোনা।
“ছেলেটার মধ্যে নেতৃত্ব দানের গুণাবলি আছে। সেই সাথে প্রচন্ড সৎ, দায়বদ্ধ। এমন মানুষ পার্টনারের প্রতি লয়াল হয়। এদিকটায় এসে রণর উপর সামান্য দ্বিধা আসছে আমার। মনেহচ্ছে সালিমের মেয়েটাকে সহজে ছাড়তে পারবেনা। ছাড়লেও ওর জীবনে একটা টানাপোড়েন থাকবে।”
নেত্রীর কপালে ভাজ পড়লো দেখে মাজহার হাসলো-“এরকম আরও কয়েকজন পেলে দল নিয়ে তোমার চিন্তা দূর হয়ে যাবে। আরেকটা কথা, রণর কাছে সত্য লুকাবে না। বিয়ের কথা হলে চন্দ্রের ডিপ রিলেশনশিপের ব্যাপারটা ওর কাছে অবশ্যই খোলাসা করে বলবে। না হলে খুব সমস্যা হবে। কারন রণকে কেবল তুমি সত্য দিয়ে বাঁধতে পারবে অন্য কোন কিছু দিয়ে নয়।”
একটু থেমে নিয়ে আবার মুখ খুললো মাজহার-“আর একটা কথা কি জানো, সালিম একবার যখন দূরে সরে গেছে ওকে দূরে রাখাই ভালো হবে।”
নেত্রীকে দ্বিধান্বিত দেখায়-“কিন্তু এখন পিছিয়ে আসার উপায় নেই। তাছাড়া সব সিনিয়ররা ওর পক্ষে।”
“হুমমম। আচ্ছা, ভাগ্যের উপর ছেড়ে দাও সব। যাইহোক তাতে তোমার কোন লস নেই। কাজেই কোন ব্যাপার নিয়ে ভেবোনা।”

একদিকে নেত্রীর ভাবনা অন্যদিকে উত্তপ্ত নির্বাচনের মঞ্চ। এরমধ্যেই ঘটনাটা ঘটলো। রণ সত্যিই ভীষণ অন্যমনস্ক থাকে আজকাল। এই সুযোগে একটা অঘটন ঘটে গেলো। অন্যভাবে বলা যায় সুযোগ পেলে অঘটন ঘটিয়ে ফেললো তন্ময়। খুশিতে তুলে নিলো কিংবা বলা যায় অপহরণ করলো। অথবা আরেকভাবে বলা যায় তন্ময়কে সু্যোগ দেওয়া হলো খুশিকে তুলে নেওয়ার।

★প্রিয় পাঠক, বইমেলা শেষ। তবুও বই সংগ্রহ চলবে। আমার নতুন বইসহ তিনটে বই ঘরে বসে অর্ডার করতে পারবেন রকমারিসহ আপনার পছন্দের বুকশপে। আমার লেখা ছয়টি ই-বুক পড়তে পারবেন বইটই থেকে। বই পড়ুন বইয়ের কথা ছড়িয়ে দিন।★

চলবে—
©Farhana_Yesmin

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here