দর্পহরন #পর্ব-৬৮

0
257

#দর্পহরন
#পর্ব-৬৮

সালিম সাহেব হাসপাতালে। হাতের তালু ফুটো হয়ে গুলি বেরিয়ে গেছে। রক্ত বন্ধ হচ্ছে না বলে বাধ্য হয়ে তুহিনকে সাথে নিয়ে হাসপাতালে যেতে হয়েছে। মোর্শেদ মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। কি থেকে কি হয়ে গেলো তার মাথায় খেলছে না। সে বাধ্য হয়ে ছোট ভাই তাহেরকে ফোন দিয়ে আসতে বলেছে। তার ভয় হচ্ছে মিনু ফিরে তন্ময়ের কথা জানলে কি করবে? সেই চিন্তায় তার ব্লাড প্রেশার বেড়ে যাচ্ছে। উকিলের সাথে কথা বলা দরকার কিন্তু সাহস পেলো না। কিভাবে কি করবে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। সে আশেপাশে তাকালো শুভ্রাকে দেখা যায় কিনা। একটু আলাপ সারতেন শুভ্রার সাথে। কিন্তু শুভ্রাকে কোথাও দেখা গেলোনা। নিশ্চয়ই নিজের ঘরে বসে আছে। মনে মনে রেগে গেলো মোর্শেদ। শুভ্রার আজকের কাজের জন্য তার শাস্তি পাওনা হয়েছে। সালিম যদি এবার মেয়েকে কিছু না বলে তাহলে সে নিজে শুভ্রাকে সাজা দেবে। তার ছেলেকে জেলে ঢুকানোর সাজা তো ওকে পেতেই হবে।

বিকেলে শরীফ তুলতুল আর বাচ্চাকে নিয়ে মিনু আর রিমা বাড়ি ফিরলো। তারা তখনো জানতো না ঘটনা। পুরো ঘটনা জানতেই মিনু ভীষণ হইহই করে উঠলো। তখনই পারলে শুভ্রাকে কাঁচা খেয়ে ফেলে অবস্থা। শুভ্রা বড় চাচীর ভয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে রইলো। এরমধ্যে সালিম সাহেব ফিরলো হাত ব্যান্ডেজ করে। তখন মিনু আর রিমার মধ্যে মৃদুস্বরে ঝগড়া চলছে। মিনু সমানে শুভ্রাকে গালিগালাজ করে যাচ্ছিল। রিমা না পেরে প্রতিবাদ করলো-“আপা, বলতে গেলে তন্ময়ের কারণে আমার শুভ্রার ঘর ভাঙছে তবুও কোনদিন কিছু বলি নাই। কিন্তু আপনে তো সম্পর্কের লেহাজ করতেছেন না। যা নয় তাই বলতেছেন আমার মেয়েকে।”
“তো কি করবো? চুমা দিব তোর মেয়েকে? এই বাড়িতে কোনদিন পুলিশ ঢুকে নাই এবার সেইটাও হয়ে গেলো।”
“তাতে শুভ্রার দোষ কোথায় আপা?”
“শুভ্রার দোষ না থাকলে কার দোষ? তোর মাইয়া
বিয়ার আগে কই না কই থাইকা নষ্টামি কইরা আইসা আমাগো ঝামেলায় ফালাইছে। এখন আমার পোলার জীবন ঝুঁকিতে ফালাইলো। তোরে বইলা দিতেছি রিমা, আমার পোলার কিছু হইলে তোরা মাইয়ার জীবন বিষায় দিমু কইলাম।”
“আপা!”
আর্তনাদ করে উঠলো রিমা-“আপনে এই কথা বলতে পারলেন? শুভ্রাকে কি আপনে চিনেন না? ছোট থিকা আপনের হাতেই তো বড় হইছে। কেমনে ওর নামে এইসব বলতে পারলেন? আপনার থিকা এইসব আশা করি নাই আপা। যেইখানে আমার মেয়ের সাজানো সংসারে আপনের ছেলে ঝামেলা করলো, শুভ্রার শাশুড়ী ওকে বের করে দিলো তাও আপনের ছেলে শুধরাইলো না। আর আপনে এখন আইসা আমার মেয়েকে দায়ী করতেছেন? বাহ আপা।”
কথাগুলো সালিম সাহেবের কানে যেতেই সে গর্জে উঠলো-“চুপ করো তোমরা। কি শুরু করছো এইসব? মানুষ তো এইসব দেখলে খুশি হইবো। সবাই চায় আমাদের মধ্যে মিল না থাক। তোমরা সেই দিকে যাইতেছ।”
দুই বউ ভয়ে চুপসে গেলো। কথা বলতে বলতে সালিম সাহেব হাতের যন্ত্রণায় মুখ কুঁচকে ফেললেন। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো-“ভাবি, তোমার কথাগুলো শুনে খুব খারাপ লাগলো। আমি কখনোই আমার বাচ্চা আর তোমার বাচ্চাদের আলাদা চোখে দেখি নাই। ওরা সবাই আমার কাছে এক। যদি তাই না হইতো তাইলে তন্ময়কে আগেই শাসন করতাম। এমনকি ওর জন্য শুভ্রা কষ্ট পাইতেছে জানার পরও আমি তন্ময়কে কিছু কই নাই। আর তুমি আজকে আমার মেয়েকে কতকিছু বললা। খুব কষ্ট পাইলাম তোমার আচরণে।”
মিনু কিছু না বললেও মোর্শেদ মুখ খুললো-“শোন সালিম, কি হইছে না হইছে এইসব জানি না। আমি আমার পোলা ফেরত চাই। নাইলে ভাইরে ভুইলা যাইস।”
বলেই মোর্শেদ উঠে চলে গেলো। তার পিছনে মিনুও গেলো। একেতো হাতের যন্ত্রণা তারউপর মোর্শেদের ব্যবহার। সালিম সাহেব হাতের যন্ত্রণায় টিকে থাকতে না পেরে টলে পড়লেন সোফাতেই।

*****

রণ এলাকায় নিজের বাসায় বসে ছিলো। দিলশাদের পোশাকে লাগানো গোপন ক্যামেরায় ইব্রাহিম নিবাসের সমস্ত ঘটনা লাইভ দেখেছে সে। শেষ মেষ বোনকে সহিসালামত দেখে সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সে। খুশি হলো শুভ্রাকে দেখেও। তবে মনের খবর মনেই রাখলো রণ। দিলশাদ খুশিকে নিয়ে আসতেই ঢাকায় আসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় রণ। তার আগে দিলশাদ খুশিকে বুঝিয়ে দিয়ে হাসলো-“ভাই, ভাবি কি করেছে দেখেছেন তো?”
রণ সে কথার জবাব না দিয়ে বললো-“এককাজ কর দিলশাদ। দুটো ভিডিও আপলোড করে দে। নির্বাচনের আর কয়েকটা দিন তো বাকী। শেষ তুরুপের তাসটা ব্যবহার করে ফেল। আশাকরি কাজে দেবে। আর তন্ময় যেন কোন ক্রমেই বেল না পায়। ওর মুখ থেকে স্বীকারোত্তি নিবি যেভাবে হোক।”
দিলশাদ মাথা দুলিয়ে সায় দেয়। রণ খুশিকে নিয়ে ঢাকায় চলে এলো। জলি ভীষণ অস্থির হয়ে আছে। খুশিকে চোখে না দেখা অবধি ঠান্ডা হবে না। খুশি তখনো স্বাভাবিক হতে পারেনি। ভয়ে শরীর কাঁপছে তার। রণ তাকে শান্ত করার জন্য অনেক কিছু বলছে কিন্তু কোন কিছু তার কানে যাচ্ছে বলে মনেহয় না। শেষে হুট করে ভাইয়ের দিকে তাকায়-“ভাইয়া, আজ ভাবি বাঁচিয়েছে আমাকে। ভাবিকে প্লিজ ফিরিয়ে আনো। মানুষটা কষ্ট পাচ্ছে তোমাকে ছাড়া।”
“মা মানবে না খুশি। তাছাড়া এখন এসব নিয়ে কথা বলার সময় না খুশি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক তখন ভেবে দেখবো।”
“ভাবির বাবা ভাবিকে মেরেছে জানে তো? আমাকে বাঁচানোর জন্য না জানি আরও কতকিছু সহ্য করবে মানুষটা।”
রণ বোনের দিকে স্নেহময় দৃষ্টি নিয়ে তাকালো। খুশি এখনো ভয়ে ভীত হয়ে আছে। রণ খুশির মাথায় হাত বুলায়-“এসব নিয়ে ভাবিস না। সব ঠিক হয়ে যাবে।”

জলি মেয়েকে দেখেই জড়িয়ে ধরলো-“আমার খুশি আসছে রে। আম্মু তুই ঠিক আছিস?”
এতোক্ষণে খুশি কি ছুটা ধাতস্থ, নিজেকে সামলে নিতে পেরেছে। সে মাকে জড়িয়ে ধরে বললো-“আমি ঠিক আছি আম্মু। জানে আর কার কারণে ঠিক আছি? ভাবি। ভাবি আমাকে তন্ময় নামক বিপদের হাত থেকে বাঁচিয়েছে। ভাবি যদি চুপ করে থাকতো তাহলে আমার সাথে জি হ্তো তা ভাবতেও পারছি না।”
“সবই আল্লাহর ইচ্ছা।”
“মা, ভাবি কিন্তু চাইলে আমার জন্য কিছু করলেও পারতো। জানো ভাবির মার খেতে হয়েছে। আরও না জানি কত কি সহ্য করবে।”
জলির মেজাজ খারাপ হলো শুভ্রার গুনগান শুনে-“কি বলতে চাইছিস খুশি?”
“ভাবিকে মেনে নাও মা। কেন যেন ওনাকে আপন আপন লাগে।”
“হয়েছে এসব ফালতু প্যাচাল। হাতমুখ ধুয়ে আয় খাবার দিচ্ছি।”
জলি চলে যাচ্ছিল খুশি পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে জলিকে-“ভাবির উপর খামোখাই রেগে আছো মা। মানুষটা কিন্তু খারাপ না। আচ্ছা তুমি না ভাইয়াকে ভালোবাসো? তুমি তো ভালোমতোই জানো ভাইয়ার খুশি কিসে? তাহলে কেন জেদ করছো মা?”
জলি থমকে গেলো। খুশির সাথে এবার হাসিও জোগ দিলো-“খুশি সত্যি বলছেমা। ভাবি কিন্তু কখনো পরিবারের সাপোর্ট নেয়নি। তাহলে কেন তাকে এরকম সাজা দিচ্ছ? মেনে নাও মা, ভাইয়া খুশি হবে। দেখছো না ভাইয়ার অবস্থা। মুখে না বললেও মনে মনে গুমড়ে মরছে। তুমি চাইলে সবকিছু আগের মতো সুন্দর হয়ে যাবে মা।”
জলি অভিমানে ঠোঁট ওল্টায়-“তোদের সবার কাছে আমিই খারাপ তাই না। অথচ আমি কেন এমন করছি কেউ বুঝতে চাইছে না। তাহলে আমি চলে যাই অন্য কোথায়। তোদের ঝামেলা হবে না। যা খুশি তাই কর তোরা।”
হাসিখুশির মুখের জ্যোতি নিভে গেলো-“মা, কেন বুঝতে চাইছো না?”
আড়াল থেকে মা বোনদের আলাপ শুনলো রণ। মায়ের অনড় মনোভাব দেখে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। তারপর ধীর পায়ে নিজের ঘরে ফিরে গেলো। আজ শুভ্রাকে মন দিয়ে দেখেছে সে। শুভ্রা বলেছিল, হাসিখুশিকে বোনের নজরে দেখে। কথার কথা ছিলো না সেটা আজ শুভ্রা প্রমান করে দিয়েছে। ভিডিওতে দেখেছে রণ, মেয়েটা এরইমধ্যে ভীষণ শুকিয়ে গেছে। কি যে খারাপ লেগেছে। সালিম সাহেব যখন ওকে মারলো যেন নিজের বুকে আঘাত টের পেলো রণ। আর কখনো কি শুভ্রাকে পাবে না সে? সত্যি কি শুভ্রাকে হারিয়ে ফেললো?

★প্রিয় পাঠক, বইমেলা শেষ। তবুও বই সংগ্রহ চলবে। আমার নতুন বইসহ তিনটে বই ঘরে বসে অর্ডার করতে পারবেন রকমারিসহ আপনার পছন্দের বুকশপে। আমার লেখা ছয়টি ই-বুক পড়তে পারবেন বইটই থেকে। বই পড়ুন বইয়ের কথা ছড়িয়ে দিন।★

চলবে—
©Farhana_Yesmin

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here