কুসুম_কাঁটা #পর্ব-১৫

0
451

#কুসুম_কাঁটা
#পর্ব-১৫
রাফাত কে এতো মিষ্টি আনতে দেখে রঙ্গনার দাদী ভীষণ খুশি হলেন। তিনি শিলাকে বললেন,

“বউ শুনো, ছোট্ট বুর বিয়া এইখানে দেওন দরকার। পোলার কলিজা বড়। ওরে রানী বানায়ে রাখবে। ”

শিলা অবশ্য কারোর কথায় কান দিচ্ছেন না, দিবেনও না৷ রঙ্গনার যাকে ভালো লাগবে, যেখানে ভালো লাগবে করবে। এই ব্যাপারে অন্য কারো মতামত শুনবে না।

রঙ্গনা গিয়ে শ্রাবণ্যর ঘরের দরজা আটকে দিলো। ওর মেজাজ ঠিক না হওয়া পর্যন্ত বের হবে না। এদিকে রাফাতের বাড়ির লোকজন এমন ভাব করছে যে কিছুই ঘটে নি। তারা খেতে বসেছেন। খেতে বসে রাফাতের মামী তুলিকে বলল,

“বিরিয়ানি কে রান্না করছে? এতো এঁলাচ দিছে ক্যান? ”

তুলি কিছু বলল না। শ্রাবণ্য পাশে দাঁড়িয়ে মুখ টিপে হাসলো।

রাফাতের কাজিন দল এখন যথেষ্ট ভদ্র হয়ে বসে আছে। কেউ কারোর দিকে তাকাচ্ছে না পর্যন্ত। এমনভাবে একেকজন বিরিয়ানি মুখে দিচ্ছে যেন নিমপাতা ভাজি খাচ্ছে।

এদিকে স্বপ্নীল কে কঠিন বকা খেতে হলো রঙ্গনার কাছে। স্বপ্নীল বকাঝকায় তেমন রিয়েক্ট না করলেও কানমলায় খুব মাইন্ড করলো। তারচেয়েও বেশী অভিমান হলো শ্রাবণ্যর হাসি দেখে।

স্বপ্নীল ছাদে গিয়ে অন্ধকারে বসে রইলো। রাত বেশী হয় নি, সাড়ে দশটার মতন বাজে। নির্মল বাতাস বইছে। মিশুক আজ এখনো খেতে যায় নি। দোতলার ব্যাপারে ওর যথেষ্ট ইন্টেরেস্ট ছিলো, কিন্তু রাফাত কে দেখার পর সব কেমন বদলে গেল। খেতে ইচ্ছে করছে না। সকালে অফিসে নতুন প্রজেক্টের ব্রিফিং আছে। সেটা নিয়ে একটু স্টাডি করা দরকার। কিন্তু ল্যাপটপ টা দেখেই বিরক্ত লাগছে।

ছাদে এসেছিল এমনিই। দেখলো স্বপ্নীল দাঁড়িয়ে আছে। মিশুক বিস্মিত গলায় বলল,

“ওমা স্বপ্নীল যে! এখানে কী করছ?”

স্বপ্নীল বেরিয়ে এলো। আলোর কাছাকাছি আসতেই ওর থমথমে মুখ টা দেখতে পেল মিশুক। জিজ্ঞেস করলো,

“কী হয়েছে স্বপ্নীল? কোনো ঝামেলা? ”

স্বপ্নীল আক্ষেপের সুরে বলল,

“ছোটপা যেখানে আছে সেখানে ঝামেলা তো হবেই। আমি শিওর এই বিয়ে হবে না৷ ”

মিশুক হেসে বলল,

“কেন হবে না?”

“কেন আবার? ওর ওভার রিয়েক্টের জন্য। ওর আসলে বিয়ে হওয়া উচিত। ও সবাই কে ভীষণ বিরক্ত করে। ও না থাকলেই আমরা ভালো থাকব।”

মিশুক কিছু বলল না, মৃদু হাসলো। রাগী স্বপ্নীল কে দেখছে। এই ছেলেটা অনেক কিছুই বোঝে না। যে কাজগুলো ওর করা উচিত সেগুলো ওর ছোট আপা করে। তবুও ও চাইছে ওদের জীবনে না থাকুক!

মিশুক হেসে বলল,

“তবুও ভালো, তোমার যে রাগটাগ হয় সেটা আজ দেখলাম। ”

স্বপ্নীল মন খারাপ করা গলায় বলল,

“আজ শ্রাবণ্য আমাকে দেখে হেসেছে। ও তো এমন ছিলো না। ও আমায় অন্যরকম দেখতো। ”

“অন্যরকম কেমন? ”

স্বপ্নীল মিশুকের দিকে তাকিয়ে বলল,

“ও কখনো আমাকে নিয়ে হাসতো না৷ ”

মিশুক সরল ছেলেটাকে দেখে হাসলো। এই ছেলেটার বিয়ের গল্প, পাগলামী ও জানে। শ্রাবণ্যর সঙ্গে একসঙ্গে অনেক বার দেখেছে। সবসময় ই মনে হয়েছে এই ছেলেটা সত্যিই সরল। জগতে জটিল কিছু না বোঝা কিছু মানুষ বোধহয় ওর মতো হয়।

মিশুক স্বপ্নীলের কাঁধে হাত রেখে বলল,

“এই নিয়ে মন খারাপ কোরো না। শ্রাবণ্যর সঙ্গে কথা বলে ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নিও। আমি যতদূর বুঝেছি, ও ভালো মেয়ে। এভাবে হাসা ওর উচিত হয় নি৷ ”

স্বপ্নীলের মন খারাপ ভাব তবুও গেল না। ও একা একা দাঁড়িয়ে রইলো। ও’কে স্পেস দেবার জন্য মিশুক সেখান থেকে চলে গেল৷

***
রাফাত কে পয়তাল্লিশ মিনিট অপেক্ষা করতে হলো। পয়তাল্লিশ মিনিট রঙ্গনার মেজাজ ঠিক হলো। ও বেরিয়ে এসে কৃত্রিম হাসি দিয়ে বলল,

“কেমন আছ? এতো রসগোল্লা ঠিক কী কারণে এনেছ? আমাদের রাক্ষস মনে হচ্ছে?”

রাফাত হেসে ফেলল। বলল,

“আমার খালা বলেন, বেশী মিষ্টি আনা মানে বেশী গুরুত্ব দেয়া।

রঙ্গনা হাসলো। খালাকে এখন ভালো লাগলো, একটু আগে অবশ্য মনে মনে মোটা মহিলা বলে গালাগালি দিচ্ছিল।

রাফাত কে বাড়ির সকলের ভীষণ পছন্দ হলো। ইনক্লুডিং রঙ্গনা। রাফাত দেখতে অত্যন্ত সুপুরুষ। ফ্যাশন সেন্সও বেশ ভালো। স্মার্টলি কথাও বলে। অল্প কিছু সময় অথচ রঙ্গনার কথা বলে ভালোই লাগলো।

কিছুক্ষনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নেয়া হলো আজ ই বিয়ে হবে। দাদু মালেক মামাকে খুঁজছেন। সে গিয়ে কাজী নিয়ে আসবে। রঙ্গনা হুংকার দিয়ে বলল,

“দাদু এমন ফকিরের মতো আমি বিয়ে করব না। আমার বিয়ে ধীরেসুস্থে হবে। ”

রঙ্গনার সঙ্গে বাড়ির অন্যান্য সবাই সহমত পোষন করলো। রাফাত সহ বাকী সবাই বিদায় নিতে নিতে একটা বেজে গেল।

***
তুলি খাবার দাবার নিয়ে মিশুকের কাছে এলো একটার পর। মিশুক তখনও ঘুমায় নি। তুলি ব্যস্ত গলায় বলল,

“ভাই তুমি নিচে কেন গেলে না? আমরা এতো ঝামেলায় খেয়াল ই করিনি যে তুমি নেই। ”

“এরকম হয় আপু৷ আপনাদের ঝামেলা মিটেছে। ”

“হ্যাঁ ফাইনালি। বিয়ের ডেট টা ফিক্সড হয় নি। ওরা রঙ কে আংটি পরিয়ে গেছে।”

মিশুক আচ্ছা বলল। ওর মুখ দেখে মনে হলো তুলির কাছ থেকে ও এমন কিছু শুনতে চায় নি।

চলবে….

(ঠান্ডায় অসুস্থ হয়ে গেছি। যেটুকু পারছি লিখছি। সবাই সাড়া দিবেন প্লিজ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here