#কুসুম_কাঁটা
#পর্ব-১৮
বাড়িতে বিয়ের আমেজ শুরু হয়ে গেছে এক্ষুনি। দাদু নিজেও ভীষণ খুশি। তার ঘাড়ত্যাড়া নাতনিটি এবার সত্যিই বিয়ের পিড়িতে বসতে প্রস্তুত। দাদু এমনিতে গম্ভীর হলেও নাতি নাতনিদের ভীষণ ভালোবাসেন। তিন জন তিন স্বভাবের হলেও সবাই ই তার হৃদয়ের কাছের। স্বপ্নীল কে সে যতই গাধা, গরু বলুক মনে মনে চান এই ছেলেটা একদিন আদুরে খোলস টা ছেড়ে অন্য আর দশ টা ছেলের মতোই হোক। তুলির বিদেশে যাবার ব্যবস্থা কখনোই পাকাপোক্ত না হোক। একটা না একটা ঝামেলায় এভাবেই আটকে যাক। অন্তত তিনি যে কদিন বেঁচে থাকেন সেই কদিন থাকুক।
এমন ভরা সংসারে, সবার মধ্যে মরে যেতে চান তিনি।
রঙ্গনা বিয়ের প্ল্যান করছে নিজেই। নিজের রুমের দেয়ালের ডিজাইনগুলোও যত্ন করে করছে। পার্লারে এপোয়েনমেন্ট নিয়ে রাখছে আগেভাগে। শাড়ী, জুয়েলারি সমস্ত ডিজাইন দেখছে। এই নিয়ে হৈচৈ লেগে আছে বাড়িতে একের পর এক। ওর দুজন বন্ধু আসছে। শার্ট, প্যান্ট পরা ছোট চুলের মেয়ে হলেও মেয়েদুটো ভালো। বসে বসে হাসিমুখে দাদুর লেকচার শুনেছে। দাদুর এখন আর মেয়ে দুটোকে খারাপ লাগছে না। ওরাও বেশ মাতিয়ে রেখেছে।
সেদিন মিশুকের সঙ্গে দেখা হলো। দাদু সরু চোখে দেখলেন। ভালো করে কথাও বললেন না। এগ্রিমেন্ট শেষ হলে এই ব্যটাকে বাড়ি থেকে বিদায় দিবেন। ফাজিল ব্যটা তার নাতনিকে রিজেক্ট করার দু:সাহস করেছে। শেষ মাসে ওকে কঠিন শিক্ষা দিতে হবে। বেশী কিছু না, মন্টি রিন্টিকে লেলিয়ে দিলেই হবে। এই বাচ্চাদুটো হয়েছে বাপের মতো বজ্জাত। এরা লোকজন ভালো শায়েস্তা করতে পারে।
***
আকাশী এই প্রথম রঙতুলিতে এলো বড় হবার পর। ছোটবেলায় একবার এসেছিল। ভাসা ভাসা স্মৃতি মনে আসছে। গেট দিয়ে ঢুকতেই কুকুর টা দৌড়ে এলো। কুকুর টা রঙতুলিতে এসেছে কয়েকদিন হয়েছে। রঙ্গনা রাস্তা থেকে তুলে এনেছে। কারা যেন গরম পানি গায়ে ঢেলে দিয়েছিল। চিকিৎসা করিয়ে বাড়িতে এনে রেখেছে। মালেক মামা দেখেশুনে রাখছেন। রঙ্গনা অবশ্য নিজেই কুকুর টার জন্য আলাদা করে খাবার রান্না করে।
মালেক মামা এসে বললেন,
“আপনি কাকে খুঁজেন?”
আকাশী স্মিত হেসে বলল,
“আমি শ্রাবণ্যর আপু। ”
মালেক মামা আকাশীকে ভেতরে নিয়ে যায়। শ্রাবণ্য সামনেই ছিলো। তুলি মা’কে ডেকে নিয়ে এলো। শিলা এসে আকাশীকে দেখলেন। বললেন,
“কেমন আছ তুমি?”
আকাশী স্মিত হেসে বললেন,
“আমি ভালো। আপনি কেমন আছেন?”
শিলা আকাশীকে দেখলেন। সুন্দর মুখশ্রী তবে অযত্ন, মানসিক টেনশনে মুখের মলিনতা হারিয়ে গেছে। কী সুন্দর বুদ্ধিদীপ্ত চোখ। আহারে মেয়েটা! না বুঝে একটা ভুল করে কত মাশুল ই না গুনছে। শিলা কী ভেবে যেন আকাশীকে জড়িয়ে ধরলেন। আকাশী অপ্রস্তুত হলো। তবুও এই আদরে ওর চোখে পানি এসে গেল। শ্রাবণ্যর ভালো লাগলো।
আকাশীকে বাড়ির সবাই পছন্দ করলো। দাদুও পছন্দ করলেন। তিনি বললেন,
“শুনেছি তুমি নাকি তোমার বাবার অফার প্রত্যাখ্যান করেছ?”
আকাশী জবাব দিলো না। দাদু বললেন,
“এতো ছোট মেয়ে অথচ তোমার সাহসে আমি মুগ্ধ হয়েছি। ”
আকাশী হাসলো। বহুদিন পর কিছু মানুষ কে পেয়ে মনে হলো এরা দূরের কেউ না। এরা ওরই আপন মানুষজন।
দাদু আরও কিছুক্ষন লেকচার দিলেন। তবে কিছু কথা আকাশীর ভালো লাগলো।
“শোনো মেয়ে, মানুষ ছোট থেকে বড় হয়। একদিনে কেউ তালগাছে উঠতে পারে না। সময় লাগে। সামনের দিনে পরিশ্রম করে বড় হও। কারোর উপর নির্ভরশীল হবে না। আর যেখানে সম্মান না পেয়ে ফিরে এসেছ সেখানে ভুলেও ফিরে যাবে না। আরেকবার কারও হাত ধরলে দেখেশুনে বুঝে ধরবে। ”
***
শুভ বাড়িতে আসার পর মা নতুন চাল চালতে শুরু করেছেন। বড় বাড়ির মেয়েকে ভাগিয়ে আনায় বেশ খুশি ছিলেন। আজ নাহয় কাল মেনেই নিবে। না মেনে নিয়ে যাবে কই। কিন্তু দেখলেন সে আশায় গুড়ে বালি। তারপর শুভ কে কানপড়া দিলেন যেন একটা বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে নেয়। নাতির মুখ দেখলে আকাশীর বাপ, মা গলে জল হবে। কিন্তু আকাশী বড় শক্ত মেয়ে। তার সাফ কথা! আগে শুভ কাজে ভালো করে থিতু হোক। নিজেদের চলতেই হিমশিম খেতে হয় সেখানে আরেকটা প্রাণ পৃথিবীতে এনে কষ্ট দেবার কোনো মানে হয় না।
এতো অভাব, টানাটানিতে থেকেও বাপের কাছে হাত পাতে নি। বাপও ফিরে তাকায় নি। এতো চক্ষুলজ্জা থাকলে দুনিয়ায় থাকা যায় না।
আকাশীর এখন চলে যাওয়ায় শুভর মা ভীষণ খুশি হলেন। তার মাথায় অন্যকিছু চলছে। তার চাচাতো বোন জেসমিনের একটা মেয়ে আছে। আগে একবার বিয়ে হইছিল, জামাইর সঙ্গে বনিবনা হয় নি তাই ছাড়াছাড়ি হইছে। সেখান থেকে তিনলাখ টাকা পাইছে। টাকাটা পোস্ট অফিসে রাখছে ফিক্সড করে। মাসে সাতাশ’শ টাকা পায় সেখান থেকে। তাছাড়া একটা প্লাস্টিক কোম্পানিতে চাকরি করে। উপরি ইনকাম সহ আঠারো হাজার বেতন।
সব মিলিয়ে সোনার ডিম পাড়া হাঁস। এই হাঁস ঘরে ওঠানোর প্ল্যান চলতেছে। যেভাবে হোক এই মেয়েরে ঘরে ওঠাতে হবে।
***
রঙ্গনার বিয়ের কার্ড এখন মিশুকের হাতে। কার্ড দেখে ভ্রু কুঞ্চিত হলো কিছুটা। এরা এরমধ্যে কার্ড পর্যন্ত ছাপিয়ে ফেলেছে। এদিকে সেটা দেখে ওর বুকের মধ্যে চিনচিনে একটা ব্যথা অনুভব হচ্ছে। মনে হচ্ছে এক বুক জ্বালা নিয়েই ও’কে রঙ্গনার বিয়ে খেতে হবে। পালিয়ে থাকারও উপায় নেই। ওরা অন্যকিছু ভাবতে পারে।
চলবে……
(কী করিলে বলো পাইবো তোমারে বইটার প্রি অর্ডার চলছে। প্রি অর্ডার করুন রকমারি সহ অন্যান্য যেকোনো বুকশপে।)