কুসুম_কাঁটা #পর্ব-৩০

0
438

#কুসুম_কাঁটা
#পর্ব-৩০
ডিভোর্স পেপার টা হাতে নিয়ে বসে রইলো শুভ। রাগে গা রীতিমতো কাঁপছে। শ্রাবণ্য দাঁড়িয়ে আছে ওর সামনে শক্তমুখে। সঙ্গে রাফাত আর স্বপ্নীল। একা শ্রাবণ্যকে দেখলে শুভ ভয় পাবে না। রাফাত কে পরিচয় দিলো পুলিশের লোক হিসেবে। শুভ শ্রাবণ্যকে বলল,

“আমি সই করব না। আকাশীর সাথে কথা বলতে চাই আমি। ”

শ্রাবণ্য বলল,

“কেন সই করবে না তুমি? ফা*ইজলামি পাইছ? ”

স্বপ্নীল শক্ত গলায় বলল,

“অবশ্যই সই করবেন। আপনার কী মনে হয় আপনি সই না করলে আমরা চুপচাপ বসে থাকব? কোনোভাবেই বসে থাকব না, আমরা যথাযথ স্টেপ নেব।”

শ্রাবণ্য স্বপ্নীলের দিকে তাকালো। এই মুহুর্তে ওর ভীষণ হাসি পাচ্ছে। হেসে পরিবেশ টা হালকা করতে চাইছে না। স্বপ্নীল সুযোগ পেলেই আজকাল মেজাজ দেখায়। যেখানে দেখানো লাগে না, সেখানেও ভয়ংকর ভাবে ফোঁস করে ওঠে৷

রাফাত চুপ করে আছে। আকাশী এমন হা*রামি ছেলের পাল্লায় পড়লো! আহারে এমন চমৎকার মেয়ে!

শুভ রাফাত, স্বপ্নীল কাউকেই চিনলো না। দুজনকে দেখে ভয়ও পেল না। ওর ভাবনায় অন্যকিছু। আকাশী একমাত্র মানুষ যে ও’কে এই জাহান্নাম থেকে বাঁচাতে পারবে! ওর পাঁচ লাখ টাকা দরকার। আকাশী পাঁচ লাখ টাকা দিলে প্রয়োজনে ও সারাজীবন ওর পা ধরে থাকবে ।

শ্রাবণ্য আবারও জিজ্ঞেস করলো,

“ডিভোর্স পেপারে সাইন করতে সমস্যা কী?”

শুভ নির্লিপ্ত গলায় বলল, আমার ইচ্ছে। তুমি যে বা* করবা করো।

ঠিক সেই সময়ে জেরিন উপস্থিত হলো। অফিস থেকে স্পেশাল ট্যুরে গিয়েছিল৷ আরও কয়েক দিন পরে আসার কথা, কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলার কারণে চলে এলো।

জেরিন সকলের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করলো,

“আপনারা কারা?”

রাফাত শ্রাবণ্যকে জিজ্ঞেস করলো, উনি কে?

“ওনার বউ।”

“সিরিয়াসলি! তোমরা এই লোক কে এইভাবে হ্যান্ডেল করতে আসছ?”

“ও এই কাজ টা করছে তাতে আপুর লাভ হইছে। ডিভোর্স নিলেই হবে। ”

রাফাতের ভীষণ রাগ হলো। জেরিন বলল,

“কী সমস্যা? ”

শ্রাবণ্য সমস্যা বলল। জেরিন শুভ কে বলল,

“সাইন চাইছে দিয়া দাও না ক্যান? তাও ভালো টাকা, পয়সা দেয়া লাগতেছে না।”

শুভ আবারও নির্লিপ্ত গলায় বলল,

“সাইন করব না। কী করবি তুই মা**

রাফাত শুভ’র নাক বরাবর ঘুষি মারলো প্রথমে। তারপর হঠাৎই বেল্ট দিয়ে পি*টাতে শুরু করলো। ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই হতভম্ব হলেও কেউ শুভ কে বাঁচাতে এলো না। জেরিন কে দেখে বোঝা গেল তার শোকতাপ কিছুই নেই।

শান্ত,ভদ্র রাফাত হঠাৎই এতো রেগে গেল! এই রাগ ভয়ংকর রাগ। শুভ কে পুলিশে দেয়া হলো। জেরিন কে বলা হলো যেন না ছাড়ায় জেল থেকে। সবকিছু এতো জলদি হয়ে গেল যে শুভ কিছু ভাবার সময় পেল না। ডিভোর্স পেপারে সাইন নেবার সময় রাফাত দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“আকাশীর আশেপাশে যদি তোকে দেখা যায় আর তাইলে কী অবস্থা হবে ভাবতেও পারবি না।”

শ্রাবণ্য, স্বপ্নীল সব টা দেখলো। শ্রাবণ্য মনে মনে অনেক কিছু ভাবছে। স্বপ্নীল বলল,

“তোমার আপুর সঙ্গে ওনার বিয়ে দিলে ভালো হবে। উনি মনে হয় তোমার আপুকে পছন্দ করেন। ভালোবাসা টাইপ পছন্দ। ”

শ্রাবণ্য হেসে বলল,

“আপনি কী করে বুঝলেন?”

“বুঝি। নীলাকে নিয়ে কেউ কিছু বললেও আমার ভীষণ রাগ হতো। আমি রাগ দেখাতে পারতাম না এমন। ”

শ্রাবণ্যর মন টা খারাপ হয়ে গেল। ওর জীবনের আরেকটা দীর্ঘশ্বাসের নাম নীলা। সেই মহিলাকে ও দেখে নি পর্যন্ত। এইদিকে ভাইয়ের বাসায় থাকতো। সবাই এলাকা ছেড়েছে। নীলা নাকি রংপুরে থাকে। এনজিও তে চাকরি করে। স্বপ্নীল নিশ্চয়ই এখনো সেই নীলাকে মিস করে!

স্বপ্নীল দেখলো শ্রাবণ্যর হাসি হাসি মুখ টা মিলিয়ে গেল। নীলার কথাটা যে বলা ঠিক হয় নি সেটা বুঝতে পারলো।

***
মিশুক ঘুমিয়ে আছে। হাত, পা ভেঙে শিশুদের মতো। রঙ্গনা নি:শব্দে হাসলো। ফেসবুকে হঠাৎ আকাশীর শাড়ির পেজ টা দেখতে পেল। ভালো লাগলো। শ্রাবণ্য কিছু বলে নি, আকাশী সেদিন এসেছিল ডিজাইন দেখাতে। দুজনের সঙ্গে ম্যাচিং করে কাপল ড্রেস বানাবে।

হঠাৎ একটা ছবিতে আটকে গেল। ছবিটা আকাশীর প্রোফাইলে হলেও চিনতে ভুল হলো না। রাফাতের হাত ওটা। ঘড়িটাও চেনা। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রঙ্গনা তেমন কোনো অনুভূতি হলো না। ও একবার মিশুকের দিকে তাকালো। এই ছেলেটা ভীষণ ডিস্টার্বিং ঠিকই তবে ডমিনেটিং না।

রঙ্গনা রাফাত কে টেক্সট করলো,

“তোমার কী অবস্থা? ”

টেক্সট করার আগেপিছে কিছু ভাবে নি। করার পর মনে হলো মিশুক কে একবার জিজ্ঞেস করা কী উচিত ছিলো? তারপর ভাবলো না, কোনো দরকার নেই। ও আগে যেমন ছিলো তেমন ই থাকবে। এতো বাছবিচার করে জীবন কাটাবে না।

রাফাত কিছুক্ষনের মধ্যেই জবাব পাঠালো। লিখলো,

“রঙ্গনা আমি তোমার কথা ভাবছিলাম আজ।”

রঙ্গনার মনে হলো ওর আসলে রাফাত কে টেক্সট করা ভুল হয়েছে। রাফাত কী এখন ইমোশনাল কথাবার্তা শুরু করবে?

রঙ্গনা লিখলো, রাফাত তুমি কী বোকা বোকা ইমোশনাল কথাগুলো বলবে? তাহলে আমি তোমাকে এক্ষুনি ব্লক করব!

রাফাত কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই কল করলো। রঙ্গনা বারান্দায় গিয়ে ফোন টা ধরলো।

“রঙ্গনা একটা জরুরী কথা বলার জন্য ফোন করেছি। ”

“কী তোমার জরুরী কথা? বোকাবোকা কথা বলবে না প্লিজ। আমি আমার ট্রমা থেকে বেরিয়ে আসছি। উলটাপালটা কিছু বলবে না।”

“না না। সেসব কিছু না। পার্সোনাল কিছু কথা। ”

“কী কথা? ”

রাফাত একটু সময় নিয়ে বলল,

“আই এম ইন লাভ… আই থিংক। ”

রঙ্গনা হেসে বলল,

“আকাশী?”

“হ্যাঁ। কিন্তু আমার ভীষণ সংকোচ হচ্ছে। ”

“সংকোচ হলে হোক, তাতে সমস্যা কী?”

“আমার ধারণা আমি ভালোরকম প্রেমে পড়েছি। ঠিক বোঝাতে পারছি না, আসলে আলাপ করার সেরকম কেউ নেই। ভাবলাম তোমাকে বলি। ”

“কনগ্রাচুলেশন রাফাত।”

“থ্যাংক ইউ।”

“আকাশী চমৎকার মেয়ে। তুমিও ভালো, তবে তোমার ফ্যামিলি ভয়ংকর। আকাশী একবার ভয়ংকর লাইফ কাটিয়েছি। তাই তুমি যত ভালোই হও, ওর জন্য ক্ষতিকর। কথা টা শুনতে খারাপ লাগলেও সত্যি। ”

“ওটা এবার আমি সামলে নেব। এখন আমার কী করা উচিত? সরাসরি ও’কে ভালোলাগার কথা বলা উচিত? ”

“অবশ্যই। ”

“এক্ষুনি বলি?”

“বলো। ”

রাফাত আচ্ছা বলে ফোন রেখে দিলো। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আবারও ফোন করে বলল,

“হ্যালো রঙ্গনা, আমার কী কথা টা সামনাসামনি বলা উচিত? ”

“হ্যাঁ। রিয়েকশন বুঝতে হলে সামনাসামনি বলা উচিত। ”

“থ্যাংক ইউ।”

“আচ্ছা রাখি।”

রাফাতের ভীষণ নার্ভাস লাগছে। আকাশীর উত্তর যদি না হয়? না হলেও কিছু করার নেই, ও লেগেই থাকবে। তিন মাসের ছুটি আছে। এর মধ্যে বিয়ে হানিমুন সব সেড়ে ফেলা যায়। আকাশীকে হ্যাঁ বলতে হবে।

***
রঙ্গনা ঘরে এসে দেখলো মিশুক জেগে আছে। ও’কে বলল,

“এক কাপ চা দাও। ভীষণ মাথা ব্যথা করছে।”

রঙ্গনা বলল,

“তুমি লুকিয়ে আমার ফোনে কথা বলা শুনছিলে?”

“ছি:! আমি এতো ছোটলোক না। তাছাড়া আমার এতো ভয় কিসের! কাগজে,কলমে সম্পদ তো আমার ই। ”

রঙ্গনা স্মিত হেসে চা বানাতে গেল। রঙ্গনা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ও মিশুক কে একটা গোপন কথা বলবে।

***
স্বপ্নীল বুঝতে পারছে শ্রাবণ্য রেগে আছে। কথা বলছে কম। স্বপ্নীল বলল,

“শ্রাবণ্য আমি কী তোমার পাশে মাথা রেখে শুতে পারি?”

“না। আপনি রাতে নাক ডাকেন।”

এটা মিথ্যে কথা। স্বপ্নীল কে ক্ষ্যাপানোর জন্য বলল। স্বপ্নীল তবুও বালিশ নিয়ে এসে শুয়ে পড়লো। শ্রাবণ্য বলল,

“কী চান আপনি? ”

“তুমি আমাকে তুমি করে কেন বলো না? দুলাভাই হাসাহাসি করে, আমার ভালো লাগে না।”

শ্রাবণ্য মৃদু হাসলো। স্বপ্নীল সেটা দেখতে পেল না। স্বপ্নীল উঠে বসে শ্রাবণ্যর হাত ধরে বলল,

“শ্রাবণ্য ওঠো, আমি তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাই। ”

শ্রাবণ্য বিরক্ত গলায় বলল,

“কী সমস্যা বলুন। ”

“উঠে বসো।”

শ্রাবণ্য উঠে বসলো, স্বপ্নীলের মুখোমুখি। স্বপ্নীল হাত বাড়িয়ে চশমা টা নিলো। নিজের চুল ঠিক করে শ্রাবণ্যকে চমকে দেবার মতো একটা কান্ড করলো। আচমকাই শ্রাবণ্যর ঠোঁটে চুমু খেল। আনাড়ি চুমু, নিজে ভীষণ লজ্জা পেল। গাঢ় গলায় বলল,

“আমি তোমাকে একটা বিশেষ কথা বলতে চাই… শুনবে? শুনতে হলে আমাকে তুমি করে বলতে হবে। ”

চলবে…..

(কুসুম কাঁটা শেষ হয়ে আসছে…..!)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here