প্রেমদণ্ড (০৭)❤

0
338

#প্রেমদণ্ড (০৭)❤

রাতে ভালো ঘুম হয়নি ইসরাতের। বলতে গেলে একটা বিনিদ্র রজনী গিয়েছে। প্রভাতের আলো ফুটতেই বিছানা ছাড়ে ইসরাত। ফ্রেশ হয়ে এলোমেলো পায়ে কিচেনে গেল চা বানাতে। চায়ের জন্য চুলায় পানি বসিয়ে মায়ের রুমে একটিবার উকি দিল। নামাজ পড়ছেন তিনি। চা বানানো শেষ হলে চা নিয়ে ব‍্যালকনির প্ল‍াস্টিকের হাতল দেওয়া চেয়ারে আরাম করে বসল ইসরাত। শহরে এখন শীতের তীব্রতা বেশ কম। পাতলা টিশার্টের ওপর চাদর জড়ানো। অর্ধখোলা বেনি চুলে এলোমেলো লাগছে ইসরাতকে। বেবি হেয়ারগুলো কপাল ঘিরে রেখেছে। চোখ বন্ধ করে প্রাণ ভরে ভোরের সতেজ, স্নিগ্ধ বাতাস উপভোগ করল কিছুক্ষণ। কোথায় যেন দু একটা পাখি ডাকছে। গোটা একটা রাত চোখে ঘুম ধরা না দেওয়ায় যে অস্বস্তি, খারাপলাগা ছিল, নিজেকে দিবালোকের সদ‍্য ফোটা আলোয় মেলে দিয়ে যেন শরীর মন চনমনে হয়ে উঠল ইসরাতের। আইমান নামক মানুষটা তার চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। না চাইতেও মানুষটাকে নিয়ে সে ভেবেছে। তার শেষে বলা কথাগুলো ইসরাতের কিশোরী হৃদয়ে দারুণ নাড়া দিয়েছে। এভাবে কেন বলল মানুষটা? দিনের আলো গাঢ় হওয়ার সাথে সাথে ইসরাতের কাপও চা শূন্য হয়ে পড়ল। ইসরাতের মনে হল প্রকৃতির মাঝে এরকম কিছু সময় কাটালে মন্দ হয় না। কি সুন্দর স্নিগ্ধতায় ঘেরা সকাল। যিনি এই সুন্দর প্রকৃতি সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টি করেছেন জগতের সব সৃষ্টি না জানি তিনি কতই সুন্দর। শূন্য দিগন্তে চোখ তুলে চাইল ইসরাত। মেঘমুক্ত এক নিলাভ অন্তরিক্ষ ধরা দিল তার চোখে।

“প্রকৃতি বিলাস করা শেষ হলে, পড়তে বসলে ভালো হয়। হাতে গোনা কটা দিন বাদেই পরিক্ষা। বেকার সময় নষ্ট করা একেবারে ঠিক নয়। তুমি পড়তে বস। কি খাবে বল? বানিয়ে দিচ্ছি।” পেছন থেকে মায়ের শান্ত স্বরে বলা কথায় ইসরাতের ধ‍্যান ভাঙলো।

পিছন ফিরে আবিষ্কার করল মায়ের সফেদ রঙা হিজাবে আবৃত শ‍্যামবর্ণের স্নিগ্ধ মুখখানা। হালকা ঠোঁট নড়ছে মায়ের। হাতের দিকে তাকিয়ে দেখল অনবরত তাসবিহ পাঠ করছেন তিনি। সুন্দর প্রকৃতি ও সুন্দর মানুষটার দর্শনে ইসরাতের মন আরও চনমনে হয়ে উঠল। মায়ের উদ্দেশ্যে বলল, “যাচ্ছি আম্মু। বোনুর জ্বর সেরেছে?”

“আগে থেকে তাপমাত্রা কিছু কমেছে। পুরোপুরি সাড়েনি। ওকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। তুমি পড়তে বসো। আর হ‍্যাঁ অনুজার শশুর বাড়ির সবাই কেমন? কদিন বাদে পরিক্ষা। এরমধ্যে বিয়ে। কি একটা অবস্থা!”

অনুজার কথা বলতেই আরেকটিবার আইমানের গম্ভীর শ‍্যামবর্ণের মুখখানা মনের দর্পণে ভেসে উঠল। প্রতিত্তোরে হেসে বলল, “সবই ভালো। একটু সমস্যা তো হবেই। তবে ওনারা অনেক ফ্রেন্ডলি। তেমন কিছু হবে না। আচ্ছা, আম্মু নুডুলস কর। আমি পড়তে বসছি।”

ইসরাত দ্রুত ব‍্যালকনি ছাড়ল। সে আইমানের কথা ভেবে অকারণেই হেসে ফেলছে। পাছে মা আবার কিছু বুঝে যায় কিনা! অনুভূতি গুলো বড্ড বেহায়া, নির্লজ্জ। যখন তখন ঝুলি থেকে বেড়িয়ে পড়ে।
_______________________
ড্রয়িং রুমের সোফায় একজোড়া কপোত কপতি। মেয়েটাকে বেশ চিন্তিত মনে হচ্ছে। ছেলেটা স্বাভাবিক। দুজনেরই বয়স অল্প। ফাতিমা বেগম প্রথম দর্শনে অবাক হলেন। বিস্ময় নিয়ে শুধালেন, “আরে, অনন‍্যা যে! কি খবর তোমার? গতকালের অনুষ্ঠানে আসলে না কেন? তা পাশে কে?”

ফাতিমা বেগমের বিরতিহীন প্রশ্নে অনন‍্যা নামের মেয়েটি আরেকটু গুটিয়ে নিল নিজেকে। ইতস্তত করে কিছু বলবার পূর্বেই মুশফিকা উত্তর দিল, “অনন‍্যার হাসবেন্ড।”

“সেকি ওর বিয়ে হয়ে গিয়েছে? কই কিছু জানলাম না তো। এতদিন হল এসেছে।”

ফাতিমা বেগমের প্রশ্নে বিরক্ত হল মুশফিকা। বিরক্তি নিয়ে বলল, “আহ মা। থামো তো। তোমার ছেলের বিয়ে হয়েছে কজন জানতো? ওদেরও তেমনি। তুমি এসব বাদ দাও। আমিই ওদের ডেকেছি। প্রয়োজন আছে। খাবার বাড়ো। খেতে দাও ওদের।”

পাশ থেকে অনন‍্যা বলে উঠল,
“না না আপু। আমরা খেয়ে এসেছি।”

মুশফিকা অনন‍্যার কথা আমলে নিল না। বলল, “জানি কি খেয়েছ। চিন্তায় মেয়ে মুখ শুকিয়ে ফেলেছে। আবার বলছে খেয়ে এসেছে। কেন এ বাসায় খেলে সমস্যা হবে?”

প্রতিত্তোরে অনন‍্যা আমতা আমতা করে বলল, “না আপু। তা না।”

“তাহলে এসো। খাওয়ার পরে বাকি কথা হবে।”

অগ‍্যতা অনন‍্যা আর তার স্বামী খেতে বসল। ঘিয়ে ভাজা পরোটা আর গরুর কলিজা ভুনা সকালের ব্রেকফাস্ট। একটু ওয়েলি কিন্তু মেহমান থাকায় এটাই শর্টকাটের মধ্যে সহজ মনে হয়েছে ফাতিমা বেগমের। কিচেন থেকে পরোটা ভাজার সুঘ্রাণ আসছে। গরম গরম পরোটা পরিবেশন করা হচ্ছে। এতক্ষণ চুপচাপ থাকা ছেলেটি গপাগপ মুখে পরোটা মুখে পুড়ে দিচ্ছে। তা দেখে অনন‍্যার শুকনো মুখখানা আরও শুকিয়ে গেল। মানুষটা টাকার অভাবে না জানি কয় বেলা ঠিকমতো পেটপুড়ে খাইনি। বাকিরা এখনো ঘুম থেকে উঠেনি। মুশফিকা ওদের স্পেস দিয়ে সরে গেল। আরাম করে খাক।
________________
রাত করে ঘুমানোর জন্য বেশ বেলা করে উঠেছে অনুজা। চোখ কচলে ভালো করে তাকাতেই নজরে আসল অনিশাকে। সে নিশ্চিতে ফোনে কার্টুন দেখছে। অনুজা প্রথমে অবাক হল। অনিশা ফোন পেল কোথায়! মস্তিষ্কে প্রশ্ন উকি দিতেই শুধাল, “কি রে কখন উঠেছিস? আমাকে ডাকিসনি কেন? ফোন পেলি কোথায়? ইজহান দিয়েছে?”

অনিশা বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে রইল বোনের দিকে। হয়তো বোনের এত প্রশ্নে সে বিরক্ত হয়েছে। পরক্ষণেই বলল, “দুলাভাই বলল তোমাকে না ডাকতে। তাই ডাকিনি। ভাইয়া ই ফোন দিয়েছে।”

“ক্ষুদা লেগেছে?” অনুজা পুনরায় শুধাল।

অনিশা মাথা নাড়াল। অর্থাৎ হ‍্যাঁ।

অতঃপর অনুজা অনিশাকে কোলে নিয়ে বিছানা ছাড়ল। বোনকে ফ্রেশ করে, নিজেও ফ্রেশ হয়ে নিল। তারপর ইজহানকে ডেকে তুলে অনিশাকে নিয়ে রুম ছাড়ল।

ড্রয়িং রুম আর ডায়নিং পাশাপাশি। পরিচিত দুটো মুখ চোখে পড়তেই চলমান পা দুখানা স্থির হল অনুজার। পরক্ষণেই অবাকতার রেশ কাটিয়ে হেঁটে গেল অনন‍্যার কাছে।

“ভালো আছো আপু? ইমতিহান ভাইয়া আপনি কেমন আছেন?” অনুজার উপস্থিতি ও প্রশ্নে খাওয়া থেকে মুখ ফিরিয়ে দুজনেই অনুজার দিকে তাকালো। অনুজার চোখেমুখে খুশি খুশি ভাব। অনন‍্যা মুচকি হেসে বলল, “এইতো আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো। তোমার কি খবর?”

“চলছে আলহামদুলিল্লাহ্। কখন এলে? আমাকে একটু ডাকবে না?”

“কিছুক্ষণ আগেই এসেছি।” পাশ থেকে জবাব দিল ইমতিহান।

অনুজাকে দেখে মুশফিকা টেলিভিশন দেখা বন্ধ করে এগিয়ে গেল ডায়নিংয়ে। অনিশাকে উদ্দেশ্য করে বলল, “ঘুম ভাঙলো ছোট আপু?”

অনিশা ছোট্ট করে জবাব দিল, “হুম।”

অনুজা খালি চেয়ারে অনিশাকে বসিয়ে দিল। মুশফিকা প্লেটে পরোটা, কলিজা ভুনা বেড়ে দিলে অনুজা অনিশাকে খাইয়ে দিতে লাগল। টুকটাক কথা চলল সকলের সাথে।

ঘড়ির কাটায় যখন ঠিক দশটা বেজে পনেরো মিনিট তখনই এক এক করে সকলে ড্রয়িং রুমে উপস্থিত হল। আইরিন রহমান এসেছেন। ফাতিমা বেগম, রমিজ উদ্দিন, ইজহান, ছোট্ট আরু এমনকি জামিলার মাও। সকলের মুখভঙ্গি সিরিয়াস।সকলের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলল অনন‍্যা। ইমতিহান চোখের ইশারায় সাহস জোগালো। অনন‍্যা নিজেকে স্বাভাবিক করে বলতে শুরু করল, “আমাদের জন‍্যই আজ ইজহান ভাইয়া আর অনুজার এ অবস্থা। আসলে ইজহান ভাইয়া আর অনুজার মধ্যে আর যাই থাকুক প্রেম ঘটিত কিছু ছিল না। থাকলে আমি অন্তত জানতাম। ওর সাথে আমার খুব ভালো সম্পর্ক। ছোট বোনের মত দেখি ওকে। তেমনি ইজহান ভাইয়ার সাথে ভালো সম্পর্ক। ইজহান ভাইয়া এমনিতে খুব বিশ্বাসী মানুষ। বিপদ আপদে যতবার ডেকেছি না করেনি কখনও। তাই আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কাজেও ভাইয়ার সাহায্য চাইলাম। অনুজাকেও বললাম। আমাদের বিয়েতে সাক্ষী লাগতো। তাই আমার তরফ থেকে ইজহান ভাইকে আর আমার এক বান্ধবীকে বলেছিলাম। আমাদের বিয়ের পরে ওরা বেড়িয়ে পড়েছিল। কোথায় গিয়েছিল জানিনা। পরে বাড়িতে আসার পর রাতে মা বলছিল অনুজাকে ইজহান ভাইয়ার সাথে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। বাবাও সেখানে ছিলেন। বিশ্বাস করুন আঙ্কেল আন্টি আমি যদি জানতাম আমার জন্য ওদের এই অবস্থা হবে কখনও ডাকতাম না। আপনাদের কে কি বলেছে জানিনা। বিয়েটা আমার সাথে ওর হয়েছিল। ইজহান ভাইয়া আর অনুজা শুধু আমার শুভাকাঙ্খী হিসাবে ছিল। এরবেশি কিছু না। ওদের হঠাৎ বিয়ের কথা শুনে নিজেকেই দোষী মনে হচ্ছে। প্লিজ! ওদের ওপর রাগ, অভিমান রাখবেন না। এখানে ভুল বুঝাবুঝি ছাড়া আর কিছু না।”

মাঝখানে রমিজ উদ্দিন হঠাৎ গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠেন,
“তুমি মা-বাবাকে না জানিয়ে কিভাবে বিয়ে করলে? তাদের কথা একবার চিন্তা করে দেখছ?”

“ভেবেছি আঙ্কেল। বলতে সংকোচ, লজ্জা লাগলেও না বলে থাকতে পারছি না। ইমতিহানের সাথে আমার কলেজ থেকে সম্পর্ক। এখন আমি ভার্সিটিতে পড়ছি। ওকে ভিষন ভালোবাসি আমি। এবং ইমতিহানও। কিন্তু ওর পড়াশোনা শেষ না হওয়ায় বাসায় বিয়ের কথা বলতেও পারছে না। বাবা আমাকে কিছুতেই বেকার ছেলের হাতে তুলে দিবেন না। ভালোবেসেছি একজনকে অথচ বিয়ে করব অন‍্যজনকে এ আমি ভাবতেই পারিনা। শুধুমাত্র ও বেকার বলে ওকে আমি কেন ছেড়ে দিব? সারাজীবন বেকার থাকবে না। চাকরি ঠিকই করবে। কিন্তু আমরা আমাদের হারিয়ে ফেলব। তাই সাহস করে বিয়ে করে ফেলেছি। সম্পর্ক যখন শুধু প্রেমের ছিল তখন হারিয়ে যাওয়ার ভয়টাও ছিল প্রবল। এখন একটা শক্ত জোড়ালো সম্পর্কে আছি ইনশাআল্লাহ ভাঙার ভয় করছি না। তবে আম্মুকে আমি বলে দিয়েছি। আম্মু প্রথমে খুব ভেঙ্গে পড়েছিলেন, কষ্ট পেয়েছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে মেনে নিয়েছেন। তবে আব্বু কিছু জানেন না এ বিষয়ে। আঙ্কেল আপনারা আমাকে খারাপ, বেয়াদব ভাবতেই পারেন। আমার আব্বু আম্মুকে যেমন ভালোবেসেছি এই ছেলেটাকেও ভালোবাসি। আব্বু আম্মুকে যেমন ছাড়তে পারব না ওকে ও না। আশাকরি বুঝবেন সবাই।” অনন‍্যা কথার ইতি টেনে ঘন ঘন শ্বাস নিল। হাপিয়ে গিয়েছে সে। অনুজা গ্লাসভর্তি পানি এগিয়ে দিল। পুরোটা সময় অনন‍্যার হাত শক্ত করে ধরে ছিল ইমতিহান।

রমিজ উদ্দিন বললেন, “বুঝেছি তোমার কথা। বড় সাহস নিয়ে পা বাড়িয়েছ। তা বাবা তোমার বাড়ি কোথায়? থাকো কোথায়? তোমার মা-বাবাকে কিছু বলেছো?”

ইমতিহান প্রতিত্তোরে শান্ত স্বাভাবিক স্বরে বলতে শুরু করল, “আঙ্কেল, আমার বাবা একসময় সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। বছর পাঁচেক আগে অবসর নেন। আগে আমরা ক‍্যান্টমেন্টেই থাকতাম। পরবর্তীতে আব্বু আম্মুকে নিয়ে গ্রামে চলে যান। আব্বু মা’রা গিয়েছেন আজ এক বছর হল। আব্বু থাকতেই আমার একমাত্র বড় বোনকে বিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন। বর্তমানে মা বাড়িতে একা থাকেন। আমি ঢাকার একটা মেসে থেকে পাবলিক ভার্সিটিতে এবার অর্নাস ফাইনাল ইয়ারে পড়ছি। চাকরির চেষ্টা করছি। টিউশন পড়িয়ে নিজের খরচ চালাচ্ছি।বিয়ের খবরটা অবশ্যই আমার আম্মুকে জানিয়েছি আগেই। চাকরি পেলে আম্মুকে কাছে নিয়ে আসব। আর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে ওর বাবার কাছে যাব। বিয়ের প্লান ছিল না। কিন্তু ওর বাবা অর্থাৎ আঙ্কেল বেশ কয়েকবার পাত্রপক্ষ দেখিয়েছেন। তাই ঝুঁকি নিয়ে বিয়েটা করেই ফেললাম। এর আগে ওর প্রতি আমার অধিকার না থাকলেও এখন তো আছে।”

রমিজ উদ্দিন বললেন, “হুম বুঝলাম। এ যুগের ছেলেমেয়েরা ঝুঁকি নিতে চাই না। নিশ্চয় সিদ্ধান্ত যখন নিয়েছ ভাবনা চিন্তা করেই নিয়েছ। পরবর্তীতে কোন প্রয়োজন পড়লে আমার গাধা পুত্রকে না ডেকে আমার কাছে এসো। শহরে তোমার কে আছে না আছে জানিনা। কোন প্রয়োজন পড়লে আমার স্বরাণাপন্ন হইও। বুঝেছ ছেলে?”

ইমতিহানের চোখ ভর্তি পানি টলমল করছে। ধরা গলাই বলল, “আমাদের ধর্মে তো পায়ে হাত দিয়ে সালামের নিয়ম নেই। যদি থাকতো অবশ্যই আপনাকে সালাম করতাম আঙ্কেল। আমার বাবা মা’রা যাবার পরে এতটা জোড় দিয়ে কেউ আমাদের পাশে এগিয়ে আসেননি। লুকিয়ে ঝুঁকি নিয়ে বিয়ে করলেও সংসারজীবন অবশ্যই সবার দোয়া নিয়েই করব ইনশাআল্লাহ। আমি কৃতজ্ঞ থাকব। দোয়া করবেন আঙ্কেল। আমি যেন মিতুর প্রতি যথেষ্ট সম্মান, মর্যাদা আজীবন অক্ষুন্ন রাখতে পারি।”

“ইন শা আল্লাহ।” রমিজ উদ্দিন মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন ইমতিহানের। তারপর গম্ভীর মুখে বসে থাকা আইরিন রহমানকে উদ্দেশ্যে করে বললেন, “ভুলটা বুঝলাম আপা। আপনিও বুঝেছেন হয়তো। এমনভাবে খবরটা কানে গেল না চাইতেই কঠোর হয়ে পড়েছিলাম।আপনার যা বলার বলুন। কিন্তু এটা যেন বলবেন না বউমাকে আপনার কাছে রাখবেন। ও এখানেই থাকবে। আপনি চারতলায় আছেন ও থাকবে পাঁচ তলায়। এটুকু শুধু ব‍্যবধান। আমার মুশফিকার বিয়ের পরে ঘর আমার আলো শূন্য হয়ে পড়েছে। কন‍্যা হলো ঘরের প্রদীপ। বিয়েটা যেভাবেই হোক, হয়েছে। আমার ঘরের মেয়ে হয়ে এসেছে। ঘর শূন্য করে আর যেতে দিচ্ছি না। ওর কোন কিছুর অভাব হবে না।”

আইরিন রহমান হেসে দিয়ে বললেন, “আমার বলার আর বাকি রাখলেন কোথায়? সব তো বলেই দিলেন। ভুল বুঝে যা করেছি তার ভুক্তভোগী অনুজা ইজহান। ওদের কাছেই শোনা হোক ওরা কি চায়।”

রমিজ উদ্দিন ছেলের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছেন। ফাতিমা বেগম তড়িঘড়ি করে ইজহানকে বললেন, “কিছু বলার আছে তোর? অনুজা মা তুমি কিছু বলবে?”

অনুজা নিরুত্তর। ইজহান কিছুক্ষণ ইতস্তত করে বলল, “এখন আর কি বলব! যা হওয়ার তাতো হয়েছেই। এসব কথা এখন থাক।”

ফাতিমা বেগম ছেলের কথায় সম্মতি জানিয়ে বললেন, “থাকুক এসব কথা। যা হওয়ার হয়ে গেছে। ওরা স্বাভাবিক আছে।”

ইনশাআল্লাহ চলবে……

লেখায়~সুমাইয়া ইসলাম জান্নাতি

আসসালামু আলাইকুম।
কেমন লাগছে জানাবেন অবশ্যই।☺

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here