প্রেমাসুখ #পর্ব_১৯ (মেয়ে মানুষ) #লেখনীতে_নবনীতা_শেখ,

0
533

#প্রেমাসুখ
#পর্ব_১৯ (মেয়ে মানুষ)
#লেখনীতে_নবনীতা_শেখ

“আপনি আমার আশেপাশেই আছেন, তাই না?”

“হয়তো।”

“হয়তো কেমন কথা? বলুন না!”

“আচ্ছা, তাই ধরে নাও।”

“উফফ! এমন করছেন কেন?”

হৃদ কিছু বলল না। নীরবে সাঁঝের অস্থিরতা অনুভব করে গেল। এর চেয়ে শান্তির বোধহয় আর কিছুই নেই।

সাঁঝ আবারও বলে উঠল, “অন্তত আপনার নামটা বলুন।”

হৃদ ফিসফিসিয়ে বলল, ”অসুখ।”

সাঁঝ আবারও অনুনয়ের স্বরে বলল, “প্লিজ! এত করে বলছি, বলুন না!”

হৃদ আরও ফিসফিসিয়ে বলল, “হৃৎপিণ্ড।”

মুহূর্তেই সাঁঝের মস্তিষ্কে হৃদ চলে এলো। এক মুহূর্তের জন্য খুশিও হয়ে গিয়েছিল।

খুশি টু দা পাওয়ার ইনফিনিটি নিয়ে বলল‚ “হৃৎপিণ্ড! ডাক্তার সাহেব!”

সাঁঝের খুশিকে ক্ষণস্থায়ী করে তুলতে হৃদ বলে উঠল‚ “তোমার হৃৎপিণ্ড আমি। বুকের বা পাশে হাত রেখে দ্যাখো, আমায় অনুভব করতে পারবে।”

সাঁঝ মন খারাপ করে ফেলল। এর চেয়ে বেশি অবাক হলো এটা ভেবে‚ সে কেন ডাক্তারকে চাচ্ছে?

_____________________
দিন গড়িয়ে মাস পেরোল। বর্ষা মৌসুম চলছে। একবার বর্ষণ শুরু হলে থামার নামই নিতে চায় না‚ সমগ্র শহরের মানুষ যেখানে বিরক্ত সেখানে সাঁঝ মনে আনন্দ নিয়ে বারান্দায় আয়েশ করে বসে আছে। ক্ষণে ক্ষণে গেয়ে উঠছে এই বৃষ্টির সুনাম। কত মানুষেরই না উপকার করছে।

তবে ক্ষতিও যে একেবারেই হচ্ছে না, ব্যাপার টা একদম সেরকম না। প্রচন্ড ক্ষতি হচ্ছে। এই যে সিঙ্গেল পাবলিক সব জোরদার ভাবে একটা বউ কিংবা জামাইয়ের অভাব বোধ করছে, এটা কি কম কষ্টের?

সাঁঝ ছোট করে একটা শ্বাস ফেলে বলল,
“ইশ! যদি এখন হৃৎপিণ্ডের সাথে একটু ঝগড়া করতে পারতাম!”

সাঁঝ বিচিত্র, বড়োই বিচিত্র। যেখানে বকিরা প্রেম করার জন্য হা-হুতাশ করছে, সেখানে সাঁঝ ঝগড়া না করতে পারার আফসোসে মরছে।
রুমে উঁকি দিয়ে দেখল, উপমা পড়াশোনায় ব্যাস্ত। মেয়েটা সময় পেলেই পড়তে বসে।
সাঁঝ এদিক দিয়ে একেবারেই উপামার বিপরীত। অন্যান্য কাজ শেষ করে যদি সময় পায়, তবে পড়তে বসে।

চোখ সরিয়ে পুনরায় বারান্দায় দোলনায় গা এলিয়ে দিল। হুট করে নিজের ফোনে আসা একটা মেসেজের কারণে ডিসপ্লের লাইট জ্বলতে দেখে ফোন হাতে নিল।

মেসেঞ্জারে আসা মেসেজটা দেখে সাঁঝ চমকিত হলো।
মুখভঙ্গি যদি কথা বলতে পারত, তবে সাঁঝের মুখভঙ্গি স্ক্রিনে বিপদে ফেঁসে যাওয়ার মতো করে বলে উঠত, “এরকমটা না হলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেত?”

মেসেজটা ওপেন করল,
“ডিয়ার ভার্চুয়াল বউ,
বড্ড বিপদে পড়ে আপনার ভার্চুয়াল বর আপনার স্মরণাপন্ন হলো। আপনার ভার্চুয়াল শ্বশুর-শাশুড়ি কেউ বাড়িতে নেই, বাড়ির মেইডও আজ আসেনি। আপনি যদি না চান আপনার ভার্চুয়াল জামাই অভুক্ত থাকুক, জলদি কোনো কিছুর ব্যবস্থা করুন, অফলাইনেই করুন।
ইতি
আপনার ভার্চুয়াল বর।”

সাঁঝ জোরে সোরেই বলে উঠল, “না মানে এটা কোন ধরনের মেসেজ! সে কেমনে জানল, এটাই আমি!”

ওপাশ থেকে উপামা বারান্দার দিকে তাকিয়ে বলল, “কী হয়েছে? কার সাথে চিল্লাচ্ছিস?”

“তুই তোর মতো পড়তে থাক এদিকে কান দেওয়া লাগবে না।”

“আচ্ছা।”

উপমা আবারও পড়ায় মনোযোগী হলো।
সাঁঝ কিচ্ছু বুঝতে চাইছে না আর। এত শান্তিতে বৃষ্টিবিলাস করছিল। আর এই মেসেজটা এসে তার শান্তি হারাম করে দিল।

রিপ্লাই দিল সাঁঝ, “আপনি কে? আমি কি আপনাকে চিনি?”

“ আপনার একমাত্র ভার্চুয়াল বর আমি, চিনতে পারলেন না?”

“সত্যিই চিনতে পারছি না, আসলে আমার আইডি হ্যাক হয়েছিল তো!”

“ওহ আচ্ছা। যদি চিনতে নাই পারেন, তবে আগের মেসেজ গুলোর স্ক্রিনশট আপনার আব্বুর আইডিতে পাঠিয়ে দেব, দেব কি?”

“এই না।”

“এখন চিনতে পারছেন? ”

“হুম।”

“কে হই আমি আপনার? ”

“খাটাশ হৃৎপিন্ড।”
সঙ্গে সঙ্গে আনসেন্ট করে দিয়ে সাঁঝ আবারও লিখল, “ভার্চুয়াল বর।”

“গুড এভাবেই মনে রাখবেন, না হলে কিন্তু……”

“মনে রাখব।”

“এখন ফ্ল্যাটে আসুন। সাথে কিছু বইও আনবেন।”

“জি, বই কেন আনতে হবে?”

“আমি ভেজে খাব বলে।”

“আচ্ছা।”

“এখন সন্ধ্যে ৭টা বেজে ২০ মিনিট। ৮টার মধ্যে এখানে, আমার চোখের সামনে চাই।”

সাঁঝ সিন করে রেখে দিছে। রিপ্লাই দিল না। জলদি তৈরি হয়ে নিল।

হালকা সবুজ রঙের একটা চুরিদার পরল। সাঁঝকে তৈরি হয়ে কোথাও যেতে দেখে উপমা বলল, “কী রে! কোথায় যাস?”

সাঁঝ উপমার কথা শুনে থেমে গিয়ে তার কাছে ফিরল।
মুখে কৃত্রিম কান্নার ছাপ এনে বলল, “বইন আমার সব শেষ হয়ে গেছে।”

উপমা বই থেকে মুখ তুলে বলল, “কী হয়েছে?”

“যাকে জামাইজান জামাইজান বলে বলে মুখে ফ্যানা তুলে ফেলেছিলাম, মাস খানিক আগেই জানলাম সে ঐ তিন তলার খাটাশ হৃৎপিণ্ড।”

উপমা ব্যাপারটা বুঝে বলল, “সিরিয়াসলি? ভালোই হবে রে। তোদের ক্যামিস্ট্রি আমার কাছে দারুণ লাগে।”

“তুই আছিস ক্যামিস্ট্রি নিয়ে, এদিকে আমার জান যায়।”

“কেন? আবার কী হলো?”

“কী হয়নি বল! ”

“দেখ। তোর ফেবুর নাম তো ‘অনামিকা হাওলাদার’, তোর সার্টিফিকেটের নাম। আর ডাক নাম সাঁঝ। সে তো চিনবেই না।”

“এটাই তো সমস্যা, সে জেনে গেছে।”

“সে কী? কীভাবে?”

“জানি না, কিন্তু তুই আগে এটা বল।”

“কোনটা?”

“তোকে তো বলেছিলাম, আমার ভার্চুয়াল জামাইয়ের নাম ‘অনয় আহমেদ’, তখন কেন বলিসনি এটা উনি?”

“এক নাম তো অনেকেরই হয় তাই পাত্তা দিইনি।”

“আগে ক্যান বলিসনি আমায়?”

উপমার কপাট রাগ দেখিয়ে বলল, “বললে কী এমন হতো? কী পরিবর্তন করতিস? যা করার, তা তো আগেই করে ফেলেছিলি।”

সাঁঝ আর কিছু বলল না। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখল, আটটা বাজতে আর দুই মিনিট বাকি। বই গুছিয়ে নিয়ে আবারও বেরোতে গেলে উপমা ডেকে বলে, “সাঁঝ কই যাচ্ছিস, বলে তো যা।”

চেহারায় অসহায়ত্ব ফুটিয়ে এনে বলল, ”জমের বাড়ি যাই।”

উপমা আবারও প্রশ্ন করল, “কেন?”

“জমকে ভুড়ি-ভোজ করাতে।”

_____________________
ফ্যাটের দরজা খোলা রেখে ড্রইংরুমের সোফায় ইভকে কোলে নিয়ে বসে আছে হৃদ। ইভ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে হৃদের দিকে।

হৃদ আলতো হেসে বলল, “তাকে তো সেই সন্ধ্যােতেই চিনে ফেলেছিলাম। যখন তার সাথে ধাক্কা খেলাম, তার ফোনটা পড়ে গিয়েছিল, তখনই তো তার ফোনে আমার সাথে করা চ্যাটিং দেখে নিয়েছিলাম।”

খানিকটা থেমে আবারও বলল, “দুনিয়া গোল। অতীতের কার্যাবলির সাথে ভবিষ্যতের ঘটনা সামঞ্জস্যপূর্ণ, তাই বলে এতটা মিল পাব, বুঝিনি।”

ইভের দিকে তাকিয়ে আবার বলল, “বুঝলি ইভ? দুনিয়া আমার সাথে কী গেইমটাই না খেলল! একজনের প্রেমে পড়ে, জীবনে নারী-সঙ্গ নেওয়ার সিদ্ধান্ত মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললাম। বন্ধুদের প্ররোচনায় ডেয়ার নিয়ে নিজের সিদ্ধান্ত নড়চড় করলাম, একটা অপরিচিতার সাথে ভার্চুয়ালে সংসার পাতলাম। অবশেষে সেই সন্ধ্যায় এই লঙ্কাবতীর প্রতি দূর্বল হয়ে পড়লাম। আর সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং বিষয়, আমার জীবনের এই তিনরুপী নারী একই জন। আমার সন্ধ্যাবতী।”

_________
সাঁঝ অনেক ভাবছে। ভাবতে ভাবতে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে। ভাবনা এটাই, সে কী করে বুঝল যে অনামিকাই সাঁঝ! ভাবতে ভাবতে আরও একটা বিষয় খেয়াল করল, যেটা এর আগে করেনি।

“হৃৎপিণ্ডটা কেন আমাকে ‘হেই মিস,উইল ইউ বি মাই মিসেস’ বলতে গেল?”

কথাটা ভেবেই সাঁঝের মাথা এলোমেলো হয়ে গেল। এই কথাটা আগে কেন মাথায় আসেনি!

তিন তলায় এসে দরজা খোলা দেখে আস্তে-ধীরে ভিতরে প্রবেশ করল। সমগ্র ফ্ল্যাট অন্ধকার হয়ে আছে। সাঁঝ ডাক দিতে গিয়েও থেমে গেল। দ্বিধায় পড়ল। কী বলে ডাক দিবে? অনেকটা ভেবেই ডাকল, “ডাক্তার সাহেব!”

গভীর অন্ধকার ও নিস্তব্ধতায় এই আওয়াজ যেন ফিরে এসে তার কানে বাজল। সাঁঝ এবার ভয় পাচ্ছে। ফিরে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো। তখন কানে কিছু একটার স্পর্শ অনুভূত হতেই শিউরে উঠল।

যতটুকু পারে চেঁচিয়ে উঠল, “ভূত! ভূত! বাঁচাও ওরে হৃৎপিণ্ডরে! বাঁচাও! মাগো! খালাগো! ও ফুপ্পি গো!”

সঙ্গে সঙ্গে ঘরের লাইট জ্বলে উঠল। সামনে কিছুটা দূরে হৃদ চোখ ছোটো-ছোটো করে তাকিয়ে আছে। সাঁঝ জোরপূর্বক হাসল। হৃদ হাতের দুই আঙুল কপালে চালিয়ে সাঁঝের দিকে বাঁকা চাহনি নিক্ষেপ করে বলে উঠল, “মেয়ে মানুষ!”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here