তুমিহীনা_আমি_যে_শূন্য #Nushaiba_Jannat_Arha #পর্ব ২

0
1122

#তুমিহীনা_আমি_যে_শূন্য
#Nushaiba_Jannat_Arha
#পর্ব ২

এতোকিছুর মাঝেও বিন্দুমাত্র অনুভূতি নেই আভানের। তার মনে যে বয়ে চলেছে এক তুফান। এই রাত তাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে নানা স্মৃতি। একটা চেয়ার টেনে বসে চোখ বুজে ডুব দিলো তার অতিতের কিছু স্মৃতিতে। কি সুন্দরই না ছিল সেইসব দিনগুলো। আর এখন একটা বিরাট ঝড় এসে সব তছনছ করে দিলো। এই ঝড় মুহূর্তের মাঝেই তাদের সম্পর্ক টা নষ্ট করে দিলো।

( চলুন দেখে আসা যাক ছয় মাস আগের ফ্লাশব্যাক)

– আম্মু আসি। দেরি হয়ে গেলো আমার।

– আরে খেয়ে তো যাবি।

– আম্মু তুমি কি ভুলে গেছো আজ আমার কলেজের প্রথম দিন। প্রথম দিনই যদি এতো দেরি করে যাই তাহলে কি হবে বলো তো? এমনিতেই লেট হয়ে গেছে তারউপর আরও লেট হয়ে যাচ্ছে।

– একটুও লেট হবেনা আমি খাইয়ে দিচ্ছি।

-প্লিজ, আম্মু আমি এখন খাবো না। তুমি টেনশন করো না, আমি ক্যান্টিনে কিছু খেয়ে নিবো। বলেই একপ্রকার দৌড়ে বেরিয়ে পড়লো। রিকশায় করে কলেজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল আরহা।

– আরে শোন তো, খেয়ে যা মা। দেখো মেয়ের কাণ্ড আর পারি না একে নিয়ে। খাবারের প্লেটটা রেখে তিনি তার কাজে গেলেন।

——————-

(বাবা-মায়ের খুব আদরের ছোট মেয়ে আরহা। ছোটবেলা থেকেই খুব চঞ্চল স্বভাবের মেয়ে। দেখতে যেমন মায়াবী তেমনি পড়ালেখাতেও দূর্দান্ত। আরহারা দুইভাইবোন। বড় ভাই ইহসান আহমেদ , সে এখন অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ে।ইহসানও পড়ালেখায় বেশ ভালো। মারামারি,খুনসুটি করাই দুই ভাইবোনের কাজ। দুই ভাইবোনই সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখে। আরহার বাবা একজন ছোটোখাটো চাকরি করেন। এ দিয়েই তাদের সংসার চলে যায়। আর আরহার মা একজন গৃহিনী। এইতো এভাবে হেসে খেলেই চলে যাচ্ছে তাদের চারজনের ছোট সুখী পরিবার)

একপ্রকার দ্রুতই কলেজে প্রবেশ করলো আরহা। একটু হেটে সামনে গিয়ে দেখতে পেলো একটা মেয়ে গাল ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দেখেই পেছনদিক থেকে জড়িয়ে ধরে বলল

– কি রে। কি খবর আরিশা? কতদিন পর দেখলাম তোকে।

– সর তুই। কতক্ষণ ধরে তোর জন্য অপেক্ষা করছি। এতো দেরি করে এলি কেন। তোকে না বলেছি তাড়াতাড়ি আসতে।

– দোস্ত সরি রে। সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে রে।

– হুম বুঝছি।

– এতোদিন পর দেখা হলো কই বললি না তো, আমি কেমন আছি।

– দেখলে তো মনে হচ্ছে ভালোই আছিস।

– আসলে তুই না একটা আনসোসাল।

– কিহ্ আমি আনসোসাল। তবে রে।

– আচ্ছা আচ্ছা বাদ দে এসব। এতোদিন পর দেখা মারামারি করতে চাই না। তার থেকে এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে চল ক্লাসে যাই।

– হুম চল।

বলেই দুই বান্ধবী মিলে ক্লাসে চলে গেলো।
আরহা আর আরিশা দুই বেস্টফ্রেণ্ড। সেই ছোট্টবেলার ফ্রেণ্ড ওরা। গল্প করতে করতেই ওরা ক্লাসে চলে গেলো।ক্লাসে গিয়েই সবার সাথে পরিচিত হয়ে নিলো আরহা আর আরিশা। দুজনে খুবই মিশুক প্রকৃতির। সহজেই সবার সাথে মিশে যেতে পারে।

———-

– আরিশা, এই আরিশা। আমার না খুব খুদা লেগেছে রে। কি করি বল তো। সকালে কিচ্ছু খাইনি রে।

– চল তাহলে ক্যান্টিনে যাই।

– এখন তো ক্লাস চলতেছে। এখন কিভাবে যাবো?

– ওয়েট দেখছি কি করা যায়।

টিচার অন্যদিকে কনসার্নট্রেট করার সাথে সাথে কিছু একটা ভেবে আরিশা দিলো এক দৌড়। আরিশাকে দৌড়াতে দেখে আরহাও আরিশার পিছন পিছন দৌড়ানো শুরু করলো। আরিশা দৌড়ে ক্যান্টিনে গেলেও আরহা এখনও পৌঁছাতে পারেনি দেখে কোনোদিক না দেখেই দৌড়াতে শুরু করলো।

হঠাৎ কারও সাথে ধাক্কা খেয়ে চমকে উঠলো আরহা। সামনে তাকিয়ে উচু লম্বা একটা ছেলেকে দেখে কিছুটা ভয় পেলো আরহা। আজ কলেজের প্রথমদিন আর আজই এমন হলো। সামনে থাকা ছেলেটার মুখে স্পষ্ট রাগের ছাপ। রাগান্বিত কণ্ঠেই বলল

– কি করলে তুমি এটা? আমার শার্টটাই নষ্ট করে দিলে। How dare you.

– সরি ভাইয়া। আমি আসলে খেয়াল করিনি। আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি অনেক দুঃখিত।
আর কিছু বলার আগেই সামনে থাকা ছেলেটা আরহাকে চড় মারার জন্য হাত উঠালেই আরহা ভয়ে মুখ ঢেকে নিলো। আর তখনই পাশ দিয়ে একটা ছেলে হেটে যাচ্ছিলো। তবে আশ্চর্য ব্যাপার এইযে আরহার গালে এখনো পর্যন্ত কোনো চড় পড়লো না। একটু একটু করে চোখ খুলেই দেখতে পেলো সামনে থাকা ছেলেটার হাত শক্ত করে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে সেই ছেলেটা।

– কি ব্যাপার কি তামিম, তুমি এভাবে একটা মেয়ের গায়ে হাত তুলতে যাচ্ছিলে কেন?

– আরে ভাই দেখেন এই মেয়েটা কি করেছে আমার। আমার নতুন শার্টটা নষ্ট করে দিলো। জাস্ট বিরক্তিকর।

– সরি ভাইয়া। আমি ইচ্ছা করে এমন করিনাই। আমি আসলে খেয়াল করিনি। আমি অনেক অনেক দুঃখিত। (আরহা)

– সরি তো বলেই দিলো। ওকে সব মিটমাট। তামিম ভবিষ্যতে তুমি আর এমন করবেনা। আমি যেন না দেখি এইসব। মাইণ্ড ইট।

– কিন্তু ভাইয়া আমার শার্ট….

– আরেহ্ তখন থেকে খালি শার্ট শার্ট করতেছো। একটা শার্টের দাম কতোইবা। আচ্ছা আমি কিনে দিবো। তামিম আর কোনো কথা না বাড়িয়ে চলে গেলো।

– থ্যাংক ইউ। আমাকে বাঁচানোর জন্য।

– বড় ভাই হিসেবে এটা আমার কর্তব্য। এছাড়া আর কিছুই না।
বলেই সেখান থেকে সেই ছেলেটি চলে গেলো। ছেলেটার এমন অদ্ভুত আচরণে আরহা বেশ অবাক হলো। তবে এ নিয়ে তেমন একটা মাথা ঘামালো না।

আর এদিকে আরিশা ক্যান্টিন থেকে খাবার কিনে আরহাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল

– কিরে তুই এইখানে কেন?

আরহা আর কিছু না বলে সোজা আরিশাকে নিয়ে বাসায় চলে এলো। বাসায় ঢুকেই আরিশা কে নিয়ে নিজের রুমে ঢুকে দরজা লক করে দিলো। তারপর আরিশাকে বসিয়ে রেখেই আরহা চলে গেলো ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে আরিশার পাশে চুপচাপ হয়ে বসে রইলো আরহা । আরিশার খটকা লাগলো আরহার এমন আচরণে। তাই আরিশা জিজ্ঞেস করলো আরহাকে।

– এবার তো বল, কি হয়েছে? তখন ওভাবে দাঁড়িয়ে ছিলি কেন?

– আরে জানিস কি হয়েছে?

– তখন থেকে তো সেটাই জিজ্ঞেস করছি। কিছুই তো বলিস না। আর কি এমন হলো যে তুই ওখানে ওভাবে দাঁড়িয়ে ছিলি আর আমায় তখন ওখানে কিছু না বলেই সোজা বাসায় নিয়ে আসলি কেন?

– আরে বলছি, ওয়েট। এতো প্রশ্ন একসাথে করিস না তো। ধৈর্য্য ধর সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি।

– আচ্ছা বল তাহলে এবার।

আরহা তখনের ঘটনা সবটা খুলে বলল আরিশাকে।

————

অন্ধকার একটা রুমে বসে রকিং চেয়ারে বসে আছে হুডি পরিহিত একটা যুবক। হাতে তার ২০-২১ বছরের হাস্যজল এক মেয়ের ছবি। গভীর দৃষ্টি দিয়ে দেখছে মেয়েটাকে। আর মনে মনে বলছে

– কি মায়বী তুমি দেখতে। প্রথম দেখাতেই তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি যে। সত্যিই তুমি অনেক মিষ্টি। আমি খুব শীঘ্রই তোমার সামনে আসছি, মাই লাভ। সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করো আমার জন্য একটু কষ্ট করে। আমি জানি আমি আসলে তোমার থেকে খুশি আর কেউই হবে না। আমি শীঘ্রই আসছে। বলেই মুচকি হাসি দিয়ে সেই মেয়েটার ছবি বুকে জড়িয়ে নিলো।

#চলবে ~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here