#তুমিহীনা_আমি_যে_শূন্য
#Nushaiba_Jannat_Arha
#পর্ব ৪
এমন সময় কেউ একজন এসে সেই লোকটা যে আরহার দিকে এগিয়ে আসছিলো তাকে পেছন দিক থেকে এসে সজোরে ঘুষি দিলো। এতো করে লোকটা মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। সাথে থাকা কয়েক জনকেও চড় – থাপ্পর দিল। পরিস্থিতি খারাপ দেখে সাথে থাকা লোকগুলো দৌড়ে পালালো। আরিশা আর আরহা ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো। কিছুক্ষণ পর যখন কোনো সাড়াশব্দ নেই তখন চোখ খুলে দেখলো সেই ৪-৫ জন যারা ওদের ডিস্টার্ব করছিলো তারা কেউ নেই। এমনকি তাদের আশেপাশে ছায়াও দেখা যাচ্ছে না। আরিশা আর আরহা দুজনেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। তবে যে তাদের বাঁচিয়েছে তাকে দেখে বেশ অবাক হলো আরহা। কেমন জানি চেনা চেনা লাগছে আরহার কাছে। তাই অনেকটা দ্বিধা নিয়েই লোকটাকে উদ্দেশ্য করে বলল
– আপনি এইখানে? আপনি সেই না যে আমাকে কলেজের এক সিনিয়র ভাইয়ের চড়ের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন?
আরহার এই কথা শুনে বেশ অবাক হলো আরিশা। অবাক করা দৃষ্টি নিয়েই সামনে থাকা ব্যক্তিটার দিকে তাকাল।
– কি হলো কিছু বলছেন না যে।
আরহার কথার প্রতিউত্তরে শুধু হাসলো সামনে থাকা ব্যক্তিটা। তবে এবার একটু গম্ভীর কণ্ঠে বলল
– হ্যাঁ আমি সে যে তোমাকে বাঁচিয়েছিলাম। আশা করি কোনো ডাউট নেই। আর হ্যাঁ এতো রাতে এখানে কি করছো? জানো না যে রাস্তাটা ভালো না। এখানে রাতের বেলা বেশ নির্জন থাকে। আমি সময়মতো না আসলে তো খারাপ কিছু হয়ে যেতে পারত।
– আসলে আজ আমার জন্মদিন ছিল। অনুষ্ঠান শেষে সবাই চলে যাওয়ার পর আমার খুব বোরিং লাগছিলো তাই লেকের পাড়ে এসেছিলাম ঘুরতে। কিন্তু এতো রাত যে হয়ে যাবে তা বুঝতে পারিনি। আর এরকম ঘটনা যে হবে তা আগে জানলে কখনোই এতো রাতে এখানে থাকতাম না।
– বড় হয়েছো, বুদ্ধিও হয়েছে। বিচার – বিবেচনা আর বুদ্ধি দিয়ে সবকিছু বোঝার এবং ভাবার চেষ্টা করবে। যদি তা না হয় তাহলে প্রতি পদে পদে পস্তাবে। বিপদে পড়লে হয়তোবা ১ দিন ২ দিনই বাঁচাতে আসবে কেউ, কিন্তু প্রতিদিন কেউ বাঁচাতে আসবেনা। তাই নিজের সেইফটি, নিজের কাছে। যাতে করে বিপদে পড়লে তুমি নিজেকেই নিজে রক্ষা করতে পারো।
– তার মানে ২ বার তো আমাকে বাঁচালেন। এরপরে যদি বিপদে পড়ি তাহলে আর বাঁচাবেন না তাই তো?
– আমি কি সেই কথা একবারও বলেছি তোমায়। এতোক্ষণ ধরে কি বোঝালাম আর তুমি কি বুঝলে?
– আপনি যা বলেছেন আমি তা বুঝেছি।
– কি বুঝছো, এবার আমাকে বোঝাও।
– বিপদে পড়লে নিজেকেই নিজের রক্ষা করতে হবে বিচার- বুদ্ধি দিয়ে। কারও উপর নির্ভর করা যাবে না। নিজেকে নিজেরই প্রটেক্ট করতে হবে। কি ঠিক বললাম তো?
– হুম। এ কথা কেন বললাম জানো? আমি বা অন্য কেউ তো সবসময় নাও থাকতে পারে তোমায় বাঁচানোর জন্য। বুঝেছো আমি কি বলতে চেয়েছি?
– হুম বুঝেছি। Anyways, অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
– অনেক কথা হয়েছে। যত কথা হবে তত রাত বাড়বে + বাড়ি ফিরতে দেরি হবে। সো কোনো কথা না বলে গাড়িতে উঠো। ওহ আবার ভাবতে পার, হঠাৎ তোমাদের গাড়িতে উঠতে বললাম কেন? এতো রাতে রিকশাও পাবে না, গেলে হেটেই যেতে হবে।তখন পথিমধ্যে আবার বিপদের সম্মুখীন হবে তখন কিন্তু নিজেদেরই হেণ্ডেল করতে হবে। তাই তোমাদের ভালোর জন্যই বললাম। এখন তোমাদের ব্যাপার তোমরা গাড়িতে যাবে কি যাবে না?
একবার আরিশা আরহার দিকে আরেক বার আরহা আরিশার দিকে তাকাল। অনেক ভেবে আরহা বলল
– আচ্ছা ঠিক আছে, আমরা যাবো।
এইবার আরিশা কে উদ্দেশ্য করে আরহা বলল
-এই চল আরিশা। যাওয়া যাক।
আরিশা এতোক্ষণ নিরব দর্শকের মতোই ওদের সব কথা শুনে যাচ্ছিলো। আরহার কথা মতোই আরিশা আগে গিয়ে গাড়িতে বসলো। আরহা যখনই আরিশার পাশের ব্যাকসিটে গিয়ে বসতে যাবে তখনই লোকটা বলে উঠলো
– এই যে হ্যালো, মিস। আমি আপনার গাড়ির ড্রাইভার না যে আমার পাশের সিটে বসা যাবে না, ব্যাক সিটে বসতে হবে। সো তাড়াতাড়ি উঠো।
লোকটার এমন কথা শুনে বেশ কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে লোকটার পাশের সিটে বসল। হঠাৎ লোকটা আরহার দিকে এগিয়ে আসার কারণে আরহা বেশ ভয় পেয়ে গেল।
– আ আপনি ক কি ক করছেন…
– উহু, যা ভাবছো তা নয়। আমি সিটবেল্টটা লাগাতে এসেছি জাস্ট, আর কিছু না। ভাবলাম আবার সিটবেল্ট লাগাতে পারো কি না।
আরহাও আর কিছু বলল না। মনে মনে আরহা নিজের বোকামির জন্য ভীষণ লজ্জা পেল। আর ভাবতে লাগল, লোকটা কি অন্তর্জামী নাকি? মনের কথা সব কিভাবে যেন বুঝে ফেলে? একরাশ চিন্তা এসে ভর করল আরহার মাথায়।
গাড়ির কাচ নামানোই ছিল। আরহা গাড়ির জানালার কাছে মুখ বাড়িয়ে চোখ বন্ধ করে ঠান্ডা বাতাস অনুভব করতে লাগল। মিষ্টি হিমেল হওয়ায় আরহার চুলগুলো বাতাসে উড়ছে। যা দেখতে নজরকারার মতো।
লোকটা একবার আরহার দিকে তাকালো। পরক্ষনেই আবার চোখ সরিয়ে নিল কিছু একটা ভেবে। গাড়িতে কেউ কারও সাথে কথা বলল না। গাড়ি চলতে শুরু করল তার আপন গতিতে।
—————–
আরহার দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী তার গন্তব্যে স্থলে পৌঁছে গেল। গাড়ি থেকে নেমেই গাড়ির ভেতরে বসে থাকা লোকটাকে বিদায় জানালো আরহা।
– আজ যা উপকার করলেন আমাদের। তার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন। আশা আবার দেখা হবে আমাদের। আল্লাহ হাফেজ।
– আর কি বললাম মনে থাকে যেন।
– হুম মনে থাকবে। আসি, আল্লাহ হাফেজ।
প্রতিত্তোরে শুধু মুচকি হাসলো লোকটি। আর কিছু বলল না। গাড়ি টান দিয়ে তার গন্তব্য স্থলে চলে গেল।
আরিশাকে নিয়ে আরহা চলে গেল তার আপন গৃহে। আজ আরিশাকে আর এতো রাতে ওর বাসায় যেতে দিলো না আরহা।
আরহার বাসাতেই নিয়ে এলো। আরিশার মাকে ফোন দিয়ে বাসায় জানিয়ে দিলো যে আরিশা আজ আরহার বাড়িতে থাকবে। ছোটবেলা থেকে আসা যাওয়া এবং সুসম্পর্ক থাকার কারণে তিনি আর আপত্তি করলেন না।
কলিংবেলের আওয়াজে দরজা খুললেন আরহার মা। তিনি জেগেই ছিলেন এতোক্ষণ। আর বাকিরা সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। আরহার ভাইয়ের সকালে ক্লাস থাকায় এবং আরহার বাবার অফিস থাকায় দ্রুতই ঘুমিয়ে পড়লো তারা। আরহার মায়ের হালকা চোখটা একটু লেগে এসেছিল আর তখনই কলিংবেলের আওয়াজে তড়িঘড়ি করে দরজা খুলতে চলে এলেন। আরহাকে উদ্দেশ্য করে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন
– কি ব্যাপার এতো দেরি করে বাসায় এলি কেন? ক’টা বাজে খেয়াল আছে? আমাদের চিন্তা হয় না বুঝি?
– সরি আম্মু আসলে ঘুরতে ঘুরতে দেরি হয়ে গেছে। কখন যে সময় চলে গেলো নিজেই জানি না। ( আরহা এড়িয়ে গেলো তাদের সাথে রাস্তায় কি কি হয়েছে সেই ঘটনা কারণ আরহার মা বাবা অনেক টেনশন করবেন।)
– এরপর থেকে সন্ধ্যার পর আর কোথ্থাও বেরোতে দেবোনা তোকে। বেশি বাড় বেড়েছো তুমি।
– সরি আম্মু। আর হবে না এমন।
– আচ্ছা হয়েছে এবার খেয়ে নে তোরা। তার আগে ফ্রেশ হয়ে নে।
মায়ের কথা মতো দুজনেই ফ্রেশ হয়ে নিয়ে নিচে চলে এলো রাতের খাবার খেতে। খাওয়া- দাওয়া শেষ করে দুজনেই আরহার রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো, কারও সাথে কোনো কথা না বাড়িয়ে। কারণ কাল আবার ওদের কলেজ আছে।
এলার্মের আওয়াজে ঘুম ভাঙল আরহার। সকাল ৭ টা বেজে ৪৫ মিনিট। উঠে ফ্রেশ হয়ে সকালের নাস্তা করে সবাই কে বিদায় জানিয়ে আরিশাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো কলেজের উদ্দেশ্যে।
কলেজে গিয়েই…….
#চলবে ~