তুমিহীনা_আমি_যে_শূন্য #Nushaiba_Jannat_Arha #পর্ব ৮

0
680

#তুমিহীনা_আমি_যে_শূন্য
#Nushaiba_Jannat_Arha
#পর্ব ৮

কলেজে গিয়েই একটা জিনিস লক্ষ্য করল আরহা। আগে যে ছেলে গুলো আরহাকে দেখলেই নানা ভাবে কথা বলার চেষ্ট করত, নানা ভাবে ডিস্টার্ব করত, তারা এখন আরহাকে দেখলেই ভয়ে সরে যাচ্ছে। চোখ তুলে তাকানোরও সাহস পর্যন্ত কারও নেই। এটা দেখে আরহা বেশ অবাক হলো সেই সাথে বেশ মজাও পেল। তবে ব্যাপারটাকে খুব পাত্তা না দিয়ে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলল। আর দাঁড়িয়ে থেকে নিজের ক্লাসের উদ্দেশ্যে অগ্রসর হলো।

(গত দুদিন আগেই আরহারা চলে এসেছিল কক্সবাজার থেকে। মেয়ের নিরাপত্তার কথা ভেবেই কক্সবাজারে দুদিন থেকে দ্রুত পরিবারসহ চলে এলেন নিজ বাসায় আরহার বাবা।)

ক্লাস শেষ করে ক্লাসরুম থেকে বের হওয়ার সময় দেখতে পেল কলেজের একদম শেষ প্রান্তে আভান কয়েকটা ছেলের সাথে কোনো একটা বিষয় নিয়ে কথা বলছে। সাথে রয়েছে আভানের বন্ধুবান্ধবও। কিন্তু ওদের মাঝে যে ঠিক কি বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছে তা দূর থেকে ঠিক মতো বুঝতে পারলো না আরহা। কিছু একটা ভেবে আরহা সেদিকে যেতে লাগল। যখন প্রায় কাছাকাছি তখন আরহার দিকে চোখ পড়ল আভানের। আভান কে তাকাতে দেখে দ্রুতই চোখ সরিয়ে নিয়ে উল্টো দিকে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলে আভান পিছন থেকে আরহা কে ডাক দিল।

– এই হ্যালো, এই যে এই দিকে।

আভানের কণ্ঠস্বর পেয়ে পিছন ফিরে তাকল আরহা। কথার উত্তরে বলল

– জ্বি, কি জন্য ডেকেছেন আমায়? কোনো সমস্যা?

হাতে থাকা একটা পায়েল দেখিয়ে আরহাকে বলল

– এইটা কি তোমার?

– হ্যাঁ এটা তো আমারই। কিন্তু আপনার কাছে এলো কিভাবে এটা? পেলেন কিভাবে আপনি? আমি তো এটা ভুলে কক্সবাজারে ফেলে এসেছিলাম। অনেক খুঁজেও পাইনি।

– তা তো আমি বলতে পারব না। আমি এটা এখানেই পেলাম।

– আচ্ছা মানলাম যে আপনি এইখানে এটা পেয়েছেন, কিন্তু আপনি কিভাবে বুঝলেন যে এটা আমারই। কলেজে তো আরও অনেকেই আছে।

-, তোমাকে একদিন আমি এই সেম পায়েলটা পরে আসতে দেখেছি।

– ওহ আচ্ছা। ধন্যবাদ।

আভান আর কথা বাড়াল না। আভান কথা বলছে না দেখে পায়েলটা হাতে নিয়ে আরহা সে স্থান ত্যাগ করে নিজ বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল।

বাসায় এসেই ফ্রেশ হয়ে নিয়ে রেস্ট নিতে চলল নিজের রুমে আরহা। ঠিক সন্ধ্যার দিকে আরিশার ফোন পেয়ে ঘুম ভাঙল আরহার। কোনো মতো ফোনটা ধরে ঘুম ঘুম কণ্ঠে বলল

– হ্যালো

– কি রে ঘুমিয়েছিলি নাকি?

– হা

– ওহ আচ্ছা। আজ কলেজে গিয়েছিলি নাকি?

– হ্যাঁ, মুখপুরি তুই যাস নি কেন আজকে

– আজ মামা বাসায় গিয়েছিলাম বলে যাওয়া হয়নি কলেজে। তুইও তো কলেজে যাসনি ৪ হয়েছে। আরে এসব বাদ দে কি হয়েছে জানিস?

– কি?

– আরে আমাদের কলেজে রিইউনিয়ন হবে রে। কলেজের যত প্রবীণ স্টুডেন্ট রা ছিল তারা আসবে। আর নবীনরাও আসবে। অনেক মজা হবে রে। আমি তো যাবই, তুইও আসবি।

– ওহ আচ্ছা দেখি কি করি।

– দেখি কি করি না, তুই আসবি মানে আসবি। দরকার পড়লে আন্টিকে বলবো।

– আচ্ছা, সে দেখা যাবে। কিন্তু কবে এই রিইউনিয়ন?

– আর ৩ দিন পর। আচ্ছা শোন এখন রাখি। এটা বলার জন্যই ফোন দিয়েছিলাম। বাই।

– ওহ আচ্ছা। বাই।

——————

সুন্দর একটা নেভি ব্লু রঙের গাউন পরে হালকা সাজে বেশ সুন্দর লাগছে আরহাকে। সাজ বলতে শুধুই হালকা মেহরুন রঙের লিপস্টিক, কাজল আর আইলাইনারই দিয়েছে। আর কোমর অবধি চুল গুলো পুরো ছেড়ে দেওয়া। এতেই যেন পরীর মতো লাগছে আরহাকে।

কলিংবেলের শব্দে দৌড়ে মেইন গেট খুলতে গেল আরহা। খুলেই দেখতে পেল আরিশা দাঁড়িয়ে আছে। আরিশাকেও কিন্তু কম সুন্দরী না। মেহরুন রঙের গাউনে আর এক সাইডে বেনি করা চুলে বেশ ভালোই মানিয়েছে আরিশাকে। মাকে বলে দুই বান্ধবী একটা রিকশা নিয়ে চলল কলেজের উদ্দেশ্যে।

(আজই সেই কাঙ্খিত দিন যেটা নিয়ে কথা হয়েছিল আরহা আর আরিশা। অনেক জোড়াজুড়ি করে আরহার মায়ের কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে আজকে কলেজের রিইউনিয়ন এ যাচ্ছে আরহা আর আরিশা।)

বেশ সুন্দর ভাবেই সাজানো হয়েছে আরহাদের কলেজটাকে। বাহির থেকে অপূর্ব সুন্দর লাগছে। ভেতরটাও অনন্য। প্রতি বছর এমন ভাবেই সাজানো হয় কলেজটাকে।

আরহা আর আরিশা কলেজে প্রবেশ করল তখনই আরহার চোখ পড়ল কলেজের ঠিক এক কোণায় দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটির দিকে। সে আর কেউ নয় সে আভান। পরনে তার ব্লাক কালারের পাঞ্জাবি, ব্লাক ঘড়ি, ব্লাক সানগ্লাস। ঠিক একদম রাজপুত্রের মতো দেখাচ্ছে আভানকে। আরহা তো পুরো হা হয়ে তাকিয়ে ছিল। আরহাকে এমন ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরিশাও ফিরে তাকাল সেদিকে। আরিশা আরহার এমন কাণ্ড কারখানা দেখে একবার আরহার দিকে তো একবার আভানের দিকে তাকাচ্ছে। হাসি আর চেপে না রাখতে পেরে শব্দ করে হেসে দিল আরিশা। আরিশার এমন বিদঘুটে হাসির শব্দ শুনে আরহাদের দিকে ফিরে তাকাল আভান। আরহা হতভম্ব ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে। এবার আরিশার দিকে চোখ গরম করে তাকাল। আরহার অগ্নি দৃষ্টি দেখে তাড়াতাড়ি মুখ চেপে ধরল আরিশা। আর ওদের এই কাণ্ড কারখানা দেখে দূর থেকে মুচকি হাসল আভান। পরক্ষনেই আরহার দিকে গভীর দৃষ্টি পাত করে বাঁকা হাসল। যদি সে হাসি ওদের কারও চোখে পড়ে নি।

আরহা আর বেশিক্ষণ না দাঁড়িয়ে দ্রুত অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য পা বাড়ালো। আরহা দেখে আরিশাও আরহার পিছ পিছ গেল।

চলমান অনুষ্ঠানের মাঝামাঝি সময়ে,

আরহা আর আরিশা দুজন মিলে আইসক্রিম খাচ্ছিল এমন সময় আরহার গায়ে আইসক্রিম পড়ে যাওয়ায় আরিশাকে বসতে বলে, একা একাই ওয়াশরুমে চলে গেল ড্রেসে পড়ে যাওয়া আইসক্রিম ওয়াশ করতে। সব কিছু ঠিক ঠাক করে যখন ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে অনুষ্ঠানে যাবে তখনি হাতে টান অনুভব করল। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই অন্ধকার রুমের মাঝে কেউ জোরে টান দিল আরহাকে। ভয়ে আরহা চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে নিলো। অন্ধকারের জন্য সামনে থাকা ব্যক্তিটির চেহারা বুঝতে পারল না আরহা। আরহার অবস্থা বুঝতে পেরে ওর থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে ঝুকে দাঁড়িয়ে ফিসফিসিয়ে বলল

– তোমায় অনেক সুন্দর লাগছে, মাই কুইন। সত্যি বলছি, তোমায় আজ যখন দেখেছি তখন চোখ সরাতে পারছিলাম না। তুমি পরীর থেকে কোনো অংশে কম নও। যেদিন তোমায় প্রথম দেখেছিলাম সেদিনই ভালোবেসে ফেলি তোমায়।

এসব শুনে আরহা বেশ অবাক হলো সেই সাথে অজানা এক ভয় আরহাকে গ্রাস করে ফেলল। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠেই আরহা ব্যক্তিটির উদ্দেশ্যে বলল

– ক ক কে আ আপনি? আ আর আ আমায় এ এখানে ক কেন নিয়ে এ এলেন?

আরহার কথা শুনে ব্যক্তিটির ভীষণ হাসি পেল। তাই জোরেই হেসে দিল। এতে আরহা আরও ভয় পেল। ভয়ে যেন ও গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। আরহার এরূপ অবস্থা বুঝতে পেরে ব্যক্তিটি হাসি থামিয়ে বলল

– তুমি ভয় পাচ্ছো বুঝি?

– হ হ্যাঁ।

– Don’t worry. আমি তোমার কোনো ক্ষতি করবো না। আফটারওল তুমি আমার…

– কি আমি আপনার কি হই?

– উডবি।

নির্বিকার চিত্তে সামনে থাকা লোকটি বলল কথাটি।

– ম মা মানেহ?

– মানেটা খুব সহজ, তুমি আমার হবু বউ।

কথাটা বলেই আরহার কাছে আরেকটু ঝুঁকে আসাতে, আরহা ভয়ে ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেল। ভয়ে আরহার হ্রদ স্পন্দন দ্রুতি গতিতে বাড়তে লাগল। বুঝতে পেরে এবার লোকটি একটু দূরে সরে দিয়ে বলল

– আমি থাকাতে মনে হয় তোমার অসুবিধা হচ্ছে। ওকে আমি এখনের জন্য চলে যাচ্ছি। তবে কোনো এক সময় আবার আমাদের দেখা হবে। সে পর্যন্ত ওয়েট করো। এখন আসি কেমন।

কথা বলেই হনহনিয়ে লোকটি চলে গেল। আরহা হাফ ছেড়ে বাঁচল। এতোক্ষণ যেন দম বের হয়ে যাচ্ছিল। দরজা খোলাই ছিল দ্রুত রুম থেকে বের হয়ে এল আরহা। এসে কাউকেই দেখতে পেল না। এদিক সেদিক খুজল কিন্তু পেল না কাউকে। সিড়ি দিয়ে নামার সময়ই আরহার চোখ পড়ল…….

#চলবে

গল্পটা হয়তোবা আপনাদের আর ভালো লাগছেনা, এজন্য আর আগের মতো কেউ রেসপন্স ও করেননা। তাই খুব দ্রুতই শেষ করে দিব গল্পটা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here