তুমিহীনা_আমি_যে_শূন্য #Nushaiba_Jannat_Arha #পর্ব ৯

0
670

#তুমিহীনা_আমি_যে_শূন্য
#Nushaiba_Jannat_Arha
#পর্ব ৯

সিড়ি দিয়েই ওপরে উঠছিল আভান, এমন সময় আরহাকে এভাবে হন্তদন্ত হয়ে সিড়ি দিয়ে নামতে দেখে আরহাকে উদ্দেশ্য করে বলল

– কি ব্যাপার, এভাবে নামছো যে? পড়ে যাবা তো।

আরহা নামছিল এক খেয়ালে হঠাৎ কারও কণ্ঠস্বর পেয়ে চমকে উঠল। সামনে তাকিয়ে দেখল আভান সিড়ির রেলিং এ হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আভানকে দেখে কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল আরহা। আরহাকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আভান আবার আরহার উদ্দেশ্যে বলল

– আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি, কিছু বলছো না কেন?

আভানকে তখনের ঘটনা বলবে কিনা এ নিয়ে দ্বিধায় পড়ে গেল আরহা। আদতেও আভান তার কথা বিশ্বাস করবে কিনা সে নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেল আরহা। কিছুক্ষণ চুপ থেকে দ্বিধা দ্বন্দ্ব নিয়ে অবশেষে বলেই ফেলল তখনের ঘটনা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। আরহা যখন বলছিল তখন আভান খুব মনোযোগ সহকারে শুনছিল আরহার বলা প্রতিটা ঘটনা। সব শুনে আভান বলল

– আমাদের কলেজে এমন কোনো দিন হয় নি কারও সাথে। আমার এই কলেজের প্রথম থেকে কলেজ লাইফের শেষ পর্যন্ত এসব কিছু দেখিও নি আমরা।

– বিশ্বাস করুন আভান। আমি একটাও মিথ্যা বলিনি আপনাকে। যা বলেছি সব সত্যি বলেছি।

– আচ্ছা ধরে নিলাম তোমার সব কথা সত্যি, তাহলে সেই লোকটা যাবে কই এতো তাড়াতাড়ি, তুমি নাকি সাথে সাথে বেড়িয়ে এসেছিলে।

– সেটাই তো আমি অনেক খুঁজেছি, কিন্তু কোথাও পাই নি লোকটাকে।

– আচ্ছা চলো তো ঐ রুমে গিয়ে দেখি আর সেই সাথে আশপাশও খুঁজে দেখব।

– না না, ঐ রুমে আমি আর যাবো না। যদি আবার….

– ভয় পেও না আমি আছি তো তোমার সাথে।

আরহা কিছুটা ভরসা পেল আভানের কথাতে। তাই আভানের পিছ পিছ পুনরায় ঐ রুমটাতে গেল। কিন্তু রুমে গিয়ে দেখল কেউই নেই, না আশেপাশে কেউ আছে। আভান এবার আরহার দিকে তাকিয়ে বলল

– দেখলে তো কেউ নেই এখানে। তোমার মনের ভুল হয়তোবা।

– কিন্তু আমি স্পষ্ট আমার হাতে টান অনুভব করেছিলাম।

– তাহলে সে কোথায় যে তোমার হাত টান দিয়েছে, কই এখানে তো কেউই নেই। এটা তোমার মনের ভুল ছাড়া আর কিছুই না।

আরহা প্রথমে আভানের কথা না মানলেও পরে নিজের মনের ভুল বলেই ধরে নিল। এটা আর মাথা ঘামাল না আরহা। আরহার মন থেকে তখনের ঐ ঘটনা দূর করার জন্য কিছু একটা ভেবে আভান বলল

– আইসক্রিম খাবে, আরহা?

চলেই যাচ্ছিল আরহা এমন সময় পেছন থেকে আভানের এ কথা শুনে থমকে দাঁড়াল। বিষ্ময় নিয়ে ফিরে তাকাল আভানের দিকে। যে আভান আগে ওর সাথে কথা বলতো না, এড়িয়ে চলত, আজ সেই আভান ওর সাথে এত কথা বলছে। ভাবতেও অবাক লাগছে আর সেই সাথে আনন্দও হচ্ছে বইকি। আরহাকে চুপচাপ আভানের দিকে এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে দেখে আভান দুষ্টুমির ছলে বলল

– I know, আজ আমাকে অনেক সুন্দর লাগছে, তাই বলে এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকবা আমার দিকে, আরহা?

আভানের এমন কথাতে ভীষণ ভাবে লজ্জা পেল আরহা। দ্রুত আভানের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে নিচের মেঝের দিকে তাকিয়ে রইল আরহা। আরহাকে এমন ভাবে নাস্তানাবুদ করতে পেরে ভীষণ হাসি পেল আভানের। হাসি থামিয়ে আবার আরহাকে বলল

– আমি কি একটু আগে কিছু বলেছিলাম তোমায়?

– হ হ্যাঁ, কি যেন বলেছিলেন?

– হাহ্ বলেছি যে আইসক্রিম খাবা কিনা?

– এই গরমে আইসক্রিম, খাওয়াই যায়।

– আচ্ছা, তুমি ঐ পিছনের ঐ লেকের পাড়ে গিয়ে বসো। আমি আইসক্রিম নিয়ে আসছি।

আভানের কথা মতো আরহা লেকের কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্যে অগ্রসর হলো। লেকের কাছে গিয়ে দেখল পাশে বসার জন্য জায়গাও আছে। পাশে আছে বিভিন্ন ফুলের গাছ। ফুলের কারণে চারপাশ সুগন্ধময় হয়ে উঠেছে। সব মিলিয়ে বেশ সুন্দর পরিবেশটা। আসলেই আরহাদের কলেজটা অনেক সুন্দর কিন্তু কলেজের পেছন দিকে যে একটা এতো সুন্দর ছোট খাটো লেক আছে তা জানতো না আরহা। আজ আভানের কথাতেই জানতে পারল সে। আসলে কলেজের সিনিয়র স্টুডেন্ট তো আভান, সেই জন্যই হয়তো কলেজের খুঁটিনাটি সবই জানে। আভানের কথা ভাবতেই মুখে হাসি ফুটে উঠল আরহার। আজ ভীষণ খুশি যে সে।

ইতোমধ্যে আভান চলে এল হাতে দুটো কোণ আইসক্রিম নিয়ে। কাছে আসতেই আরহাকে এমন ভাবুক কবি হয়ে বসে থাকতে দেখে বলল

– এই যে নিন আপনার আইসক্রিম।

আভানের কথা শুনে ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে এল আরহা। আভানের দিকে তাকাতেই হাত বাড়িয়ে আইসক্রিম এগিয়ে দিল আভান। আরহা তা সাদরে গ্রহণ করল। আইসক্রিম খেতে খেতেই আরহার পাশে বসল আভান, তবে সেটা বেশ দূরত্ব বজায় রেখেই। আরহার দৃষ্টিগোচর হলো না ব্যাপারটা। এটা দেখে মুচকি হাসল সে। আভানের এই গুণ গুলো ভীষণ ভালো লাগে তার। অন্য সবার থেকে আলাদা মনে হয় আভানকে আরহার।

দুজনেই চুপচাপ বসে আছে লেকের পাড়ে, যে যার মতো আইসক্রিম খাচ্ছে আর প্রকৃতির অনাবিল সৌন্দর্য উপভোগ করছে। কেউ কারও সাথে কথা বলছে না। আরহা একবার আইসক্রিম খাচ্ছে তো আরেকবার আভানের দিয়ে তাকাচ্ছে, তবে আভান একবারও আরহার দিকে তাকাল না। সে তো আইসক্রিম খাওয়াতে ব্যস্ত। এটা দেখে আরহার খারাপ লাগল বেশ। হাসপাস করছে আভানের সাথে কথা বলার জন্য কিন্তু কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। আরহাকে এমন করতে দেখে আভান হয়তো বুঝতে পেরেছে আরহার অবস্থা, তাই বলল

– কিছু কি বলবা, আরহা?

– হ হা হ্যাঁ ম মানে না।

কি বলবে আরহা ভেবে পাচ্ছে না তাই এসব আবোল তাবোল বলতে শুরু করল। আরহাকে এমন করতে দেখে আভান শব্দ করে হেসে দিল। আরহা কখনো আভানকে এভাবে হাসতে দেখেনি। সব সময় গম্ভীর মুখেই দেখেছে। আরহাও ফিক করে হেসে দিল আভানের হাস্যজ্জ্বল মুখখানা দেখে। অনেক কষ্টে এবার হাসি থামিয়ে আভান বলল

– এতোদিন জানতাম তুমি অনেক স্পষ্ট ভাবে কথা বলো, কিন্তু আজ দেখলাম, তুমি তোতলামো করছো। তুমি যে তোতলা, তা আমি জানতাম। তোতল, তোতলা, তোতলা আরহা। বলেই আরও একদফা হাসতে লাগল আভান। আভানের আগের হাসি আরহার ভালো লাগলেও এবারে হাসি দেখে ভাল লাগা তো দূরে থাক ভীষণ রাগ হলো ওর। মানে কি, ইন্ডাইরেক্টলি আরহাকে তোতলা বলে অপমান করল আভান। এসব ভেবে আরও বেশি রাগ হলো আরহার। এবার বেশ রাগ নিয়েই আরহা বলল

– আপনি কি আমায় ইন্ডাইরেক্টলি অপমান করলেন?

– আরেহ্ না অপমান কেন করতে যাব, যাস্ট মজা করলাম। ডোন্ট টেক ইট সিরিয়াসলি।

– আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করবো আপনাকে?

– বলো কি বলবা?

– আজ কি কোনো বিশেষ দিন নাকি? না মানে আপনি এতো হাসি খুশি যে, এতো দিন গম্ভীর ভাবেই থাকতেন। আমি কোনো দিন আপনাকে হাসতেই দেখিনি, আর আজ আপনি এতো হাসছেন। দেখেও ভাল লাগল।

আরহার কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ থেকে আভান বলল

– আমি তো হাসিখুশিই ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ ই কেমন যেন হয়ে গেলাম সময়ের ব্যবধানে।

– কিন্তু কেন?

– তা আমি নিজেও জানি না। আর হ্যাঁ আমার সম্পর্কে এতো জেনে তোমার কোনো কাজ নেই। কি যেন বললে একটু আগে, আজ কোনো বিশেষ দিন কিনা? হ্যাঁ তো বিশেষ দিনই বটে।

– কি জানতে পারি?

– আরে আমাদের কলেজের আজ রিইউনিয়ন, আমরা সব সিনিয়র স্টুডেন্টরা আবার একত্রিত হতে পেরেছি, এটাই অনেক। আমি এই বিশেষ দিনের কথাই বলেছি।

– ওহ আচ্ছা।

– আচ্ছা তাহলে যাওয়া যাক, অনুষ্ঠান তো প্রায় শেষের পথেই, লাস্টটুকু মিস করতে চাইনা আমি। আভান অনুষ্ঠানের দিকে গেল সেইসাথে আরহাও গেল আভানের পিছ পিছ। কিন্তু আরহার মাথাতে আভানের বল কথাটা ঘুরপাক খাচ্ছে, কি এমন হয়েছে যে আভান এমন হয়ে গেল?

#চলবে ~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here