তুমিহীনা_আমি_যে_শূন্য #Nushaiba_Jannat_Arha #পর্ব ১০

0
658

#তুমিহীনা_আমি_যে_শূন্য
#Nushaiba_Jannat_Arha
#পর্ব ১০

অনুষ্ঠান শেষে আভানকে বিদায় জানিয়ে বিকেলের দিকে আরিশাকে নিয়ে নিজের বাসার উদ্দেশ্যে রিকশায় করে রওয়ানা দিল আরহা। পুরো অনুষ্ঠানে আভানের সাথেই ছিল আরহা। সেই সাথে আরিশাও ছিল। এতো ঘুরাঘুরি এসবের মাঝে তখনের ঘটে যাওয়া ঘটনা একপ্রকার ভুলেই গেল আরহা। আরিশা আরহার সাথে ঘটে যাওয়া তখনের ঘটনার কিছুই জানে না।

পথিমধ্যে অনেক বার জিজ্ঞেস করেছে আরহাকে আরিশা। কিন্তু প্রতিবারই এড়িয়ে গেছে। ব্যাপারটা খটকা লাগল আরিশার কাছে। হঠাৎ কি এমন হলো আরহার যে এমন করছে, প্রথমে উধাও হয়ে যাওয়া, অনেক খোজাখুজি করেও না পাওয়া, তারপর হঠাৎই আভানের সাথে আরহাকে দেখা। কিছুই বুঝতে পারছে না আরিশা। এসবই মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে তার। তাই আরহার সাথে এ নিয়ে আর কোনো কথা বাড়াল না সে। পথে কেউ কারও সাথে কোনো কথাও বলল না। আর এদিকে আরিশা তো গভীর চিন্তায় মগ্ন।

আরহার বাসার সামনে এসে থামল রিকশাটা। রিকশা ভাড়া মিটিয়ে আরিশার হাত ধরে বাসার ভিতর প্রবেশ করলো আরহা। বাসাতে এসেই নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল আরহা। আরিশা চুপচাপ বসে দেখছে আরহার কার্যকলাপ।

– আরিশা তুই বয়, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

– আচ্ছা।

কিছুক্ষণ পর,

ফ্রেশ হয়ে আরহা বের হয়ে এল ওয়াশরুম থেকে। বিছানায় বসতে বসতেই আরিশাকে উদ্দেশ্য করে বলল

– আজ কি হয়েছে জানিস?

– আমি কিভাবে জানব কি হয়েছে আজ? এইজন্যই তো সেই তখন থেকে জিজ্ঞেস করেই চলেছি, কিন্তু আমার কোনো প্রশ্নের উত্তর দিস না।

– সরি রে, তখন বলার তো অবস্থা ছিল না।

– এখন সেই অবস্থা হয়েছে? যদি হয় তাহলে বল।

– তাহলে শোন। বলেই আভানের সাথে লেকের পাড়ে বসে আইসক্রিম খাওয়া থেকে শুরু করে গল্প করা পর্যন্ত সবই বলল। শুধু বলল না তখনের ঘটনা। কারণ এক প্রকার ভুলেই গেছে সে। আভানের কথা মতো মনের ভুল বলেই ধরে নিল আরহা। তাই বলার প্রয়োজন মনে করল না।

সব শুনে আরিশা বেশ অবাক হলো সেই সাথে আভানকে কেন জানিনা সন্দেহ হতে শুরু করল ওর। সন্দেহ ভরা কণ্ঠে আরহাকে বলল

– তোর খটকা লাগছে না ব্যাপারটা?

– কেন এতে খটকা লাগার কি আছে?

– দেখ, আভান ভাইয়া তো তোকে পাত্তাই দিত না। আজ সে হঠাৎ তোর সাথে কথা বলল, হাসি মজা করল, তাও আবার নিজ থেকে সেধে। ব্যাপারটা কেমন জানি লাগছে আমার কাছে। আমার কেন জানিনা আভান ভাইয়াকে সন্দেহ হচ্ছে।

– আরে ধুর, তুই না কেমন জানি। শুধু শুধু ওনাকে সন্দেহ করছিস।

– সবই ঠিক আছে, কিন্তু…….

আরিশা কিছু বলতে যাবে তখনই আরহা থামিয়ে দিয়ে বলল

– কোনো কিন্তু নয়। চল খেয়ে নিবি।

– না রে এখন না, পরে অন্য কোনো একদিন। আজ বাসায় যাই।

– যাস না রে, প্লিজ। থাক না আরো। কিছুক্ষণ।

– বাসায় যেতে হবে রে। আসি।

চলেই যাচ্ছিল আরিশা তবে কিছু একটা ভেবে পেছন ফিরে আরহার কাছে এসে বলল

– কিছু কথা বলবো মন দিয়ে শুনবি।

– কি বল?

– সাবধানে থাকিস রে আরহা। আমি তোর ভালো চাই, তুই শুধু আমার বান্ধবীই না তোকে আমি আমার আপন বোনের মতোই ভালোবাসি।

– আমিও রে।

– আরেকটা কথা, তুই আভান ভাইয়াকে অতিরিক্ত বিশ্বাস বা ভরসা কোনটাই করতে যাস না, তা হলে কিন্তু বিপদে পড়বি। আমার কেন জানিনা ভীষণ সন্দেহ হচ্ছে ভাইয়াকে।

– কি সব আজে বাজে কথা বলছিস তুই ওর নামে। বলতে মুখে বাধল না তোর।

– আচ্ছা আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিবি তুই?

– কি প্রশ্ন?

– তুই কি আভান ভাইয়াকে পার্সোনালি চিনিস? জানিস ও কেমন? কে ও? ওর পরিচয় কি? বা ফ্যামেলী সম্পর্কে কিছু জানিস, তুই? ইভেন ওর ব্যাপার কিছু কি জানিস তুই?

– না তো আমি কিছুই জানিনা।

– আমি জানতাম, তুই কিছুই জানিস না ওর ব্যাপারে। যাকে চিনিস না, জানিস না। তাকে বিশ্বাস করিস কি হিসেবে? আর ভরসা তো অনেক পরের বিষয়।

আরিশার কথা শুনে একটু হলেও বুঝতে পারল আরহা।

– তাই তো।

– এইজন্যই বলছি সাবধানে থাকবি। কারও ইমপ্রেস হয়ে যাস না। আর আভান ভাইয়াকে অন্ধ বিশ্বাস করা বন্ধ কর। তা না হলে কিন্তু তুই অনেক পস্তাবি। এনিওয়েস অনেক কথা বললাম আমার কথাতে কিছু মনে করিস না তুই, যা বললাম তোর ভালোর জন্যই বললাম। আসি রে।

আরহা চুপচাপ বসে আরিশার কথা শুনছিল কিন্তু কথার পিঠে একটা কথাও বলল না। যেন কিছু একটা মন দিয়ে সে চিন্তা করছে। এখন সে তার চিন্তার জগতে বিচরণ করছে।

আর এদিকে আরিশা যাওয়ার আগে আরহার বারান্দায় কারও ছায়ামূর্তি দেখে থমকে দাঁড়াল। বারান্দায় গিয়ে কাউকে না দেখতে পেয়ে নিজের মনের ভুল ভেবে আরহাকে বিদায় জানিয়ে নিজ বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেওয়ার জন্য পা বাড়াল।

————————-

দুদিন ধরে আরিশা কলেজে আসছে না বলে এটা নিয়ে বেশ চিন্তিত আরহা। আরহার বাসা থেকে সেদিন যাওয়ার পর আর দেখাও হয়নি কথাও হয়নি ওর সাথে। ছুটি হয়ে গেছে তাও ক্লাসরুমে বসে বসে ভাবছে এসব।

একটা কাজে আভান এসেছিল কলেজে। কাজ শেষে আরহার ক্লাসরুমের সামনে দিয়েই যাচ্ছিল এমন সময় আরহাকে একা একা বসে থাকতে দেখে ক্লাসরুমে প্রবেশ করল সে। আরহাকে এমন চিন্তিত অবস্থায় দেখে গলা ঝেড়ে বলল

– ছুটি হয়ে গেছে তো, এখনও এখানে বসে বসে কি এতো ভাবছো?

আভানের কণ্ঠস্বর পেয়ে চিন্তার জগত থেকে বেড়িয়ে এলো আরহা। আভানের দিকে তাকিয়ে বলল

– আরিশা আসেনি কলেজে আজ দুদিন হলো। আমার বাসা থেকে যে এসেছে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি ওর সাথে।

– ওহ এই ব্যাপার এ নিয়ে এতো চিন্তা করে কেউ। ফোন দিলেই তো প্রবলেম সল্ভ।

– ফোন বন্ধ ওর। অনেকবার ট্রাই করেছি।

– তাহলে বাসায় যাও৷

– বাসায় নেই ও। ওর মা ফোন দিয়ে অনেক কান্নাকাটি করেছিল যে ওকে নাকি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

আরহার সাথে সাথে আভানেরও কপালে চিন্তার ভাঁজ। চিন্তিত গলায় বলল

– তাহলে যাবে কই?

– জানিনা। আমি কিচ্ছু জানিনা। দুদিন ধরে ওর কোনো খোঁজ আমি পাইনি। বলেই কান্নায় ভেঙে পড়ল আরহা। কাঁদতে কাঁদতে বলল

– ও তো শুধু আমার বান্ধবীই ছিল না ওকে আমি আমার আপন বোনের মতো ভালোবাসতাম। আপনি ওকে খুঁজে এনে দিন না, প্লিজ আভান প্লিজ। বলুন আপনি পারবেন না ?

– আমি চেষ্টা করবো আরহা। যতটা সম্ভব পারা যায়। কিন্তু সব শুনে মনে হচ্ছে আরিশাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। কিন্তু কে করবে ওকে কিডন্যাপ?

– কি বলছেন কি আপনি এইসব?

– আমি ভুল কিছু বলিনি। যদি তা না হয় তাহলে কোথায় যাবে আরিশা?

– আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা। কি থেকে কি হয়ে গেল। কালও তো আমরা কত্তো গল্প করেছিলাম।

– এসব বলে এখন লাভ নেই আরহা। তুমি বরং বাসায় যাও। দেরি করো না, তোমার আম্মু আবার টেনশন করবেন। এমনিতেও আরিশাকে পাওয়া যাচ্ছে না। তারউপর তোমার কিছু হলে তখন কি হবে, বলোতো?

– আমার ভীষণ ভয় করছে।

– আচ্ছা সমস্যা নেই, আমি তোমাকে তোমার বাসায় পৌঁছে দিচ্ছি। বলেই আভান ওর গাড়ির কাছে গেল। সেই সাথে আরহাও গেল আভানের পিছপিছ। উদ্দেশ্য আরহার বাসায় যাওয়া।

গাড়ি এসে পৌঁছালো আরহার বাসার কিছুটা আগে, আরহার কথামতোই। গাড়ি থেকে নেমেই আরহা বলল

– আচ্ছা আসি, আর হা আপনি পারবেন তো আরিশাকে খুঁজে আনতে?

– আমি যখন দায়িত্ব নিয়েছি, তখন আমি আমার সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করব। শুধু আমার উপর ভরসা রাখলেই চলবে।

– ভরসা করি বলেই তো দায়িত্ব দিলাম।

কথাটা বলেই আরহা বিদায় জানিয়ে নিজ বাসায় চলে গেল। পরক্ষণেই আভানের মুখে ফুটে উঠল এক রহস্যময় হাসি…..

#চলবে

হাতে মেহেদী দেওয়া অবস্থায় আজকে পর্বটা লিখলাম। আমি ছোটমানুষ তো এইজন্য জানি কম বুঝিও কম তাই ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। জানিনা কেমন হচ্ছে গল্পটা। Anyways, Eid Mubarak, সবাইকে। কাল তো ঈদ এইজন্য কালকের পর্ব দিতে পারবো না হয়তো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here