#তুমিহীনা_আমি_যে_শূন্য
#Nushaiba_Jannat_Arha
#পর্ব ১৯
পুরো একদিন যাবত কাউকে কিছু না বলে সেই যে কলেজের উদ্দেশ্যে আরহা বেরিয়ে ছিল, এখনও বাড়ি ফেরেনি সে। মেয়ের চিন্তায় কাল থেকে এখনো অবধি না খেয়ে বসে রয়েছেন আরহার মা। কাল চিন্তায় সারা রাত দু চোখের পাতা এক করতে পারেন নি তিনি। আরহার বাবাও ভীষন চিন্তিত তবে তিনি তা ভাবে প্রকাশ করছেন না। একটু আগে আরিশা ফোন দিয়ে জানাল আরহাকে নিয়ে আরিশা আসছে তাদের বাসায়। তারা অপেক্ষায় আছেন আরহা কখন আসবে।
হঠাৎ কলিংবেলের আওয়াজে ধরফরিয়ে উঠে দরজার খোলার জন্য গেলেন আরহার মা। দরজা খুলতেই বাহিরে আরিশা এবং আরহাকে দেখতে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন তিনি। কিন্তু না জানিয়ে এভাবে বাড়ি থেকে পুরো একদিন উধাও হয়ে যাওয়াতে ভীষণ ভাবে রাগ করলেন তিনি।
রাগান্বিত সুরে আরহার উদ্দেশ্যে বললেন
– কাল যখন না জানিয়ে যখন বাড়ি থেকে যেতে পেরেছো, তাহলে আজ হঠাৎ বাড়ির কথা মনে পড়ল কেন? না আসলেই হতো।
– মা বিশ্বাস করো এমন কিছু না।
– থাক হয়েছে আর ইনিয়ে বিনিয়ে মিথ্যা কথা বলতে হবে না তোমায়।
– মা
– চুপ একদম চুপ, বাসায় আসলে আসো, না আসতে চাইলে যেখানে ছিলে সেখানে চলে যাও।
বলেই তিনি মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলেন। আরহার বাবা কিছু না বলে তিনি নিজের রুমে চলে গেলেন। আরহা অশ্রু সিক্ত নয়নে সে দিকেই চেয়ে রয়েছে। তখনই আরহার ভাই ইহসান বলল
– বাইরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন, ভিতরে আসলে আয় না আসলে চলে যা। এতো ভঙিতা ভালো লাগছে না।
ভাইয়ের কথামতো আরহা বাসার ভিতর প্রবেশ করল সেই সাথে আরিশাও আরহার পিছন পিছন এলো। ইহসানের কাছে গিয়ে ডুকরে কেদে উঠল আরহা। এবার নিজের ভাইকে দেখে আর চোখের পানি সামলাতে পারল সে, কেদেই ফেলল। আরহাকে এভাবে কাদতে দেখে ইহসান শান্ত কণ্ঠে বলল
– কাদছিস কেন? এভাবে বললাম তাই খারাপ লেগেছে?
– না ভাইয়া।
– তাহলে?
– কিছু না। ( কিছু একটা বলতে গিয়েও বলল না আরহা)
– আমার রুমে চল তো তোর সাথে কথা আছে আমার। আর আরিশা তুমিও আসো।
আর কোনো কথা না বাড়িয়ে নিজের রুমে চলে গেল ইহসান। আরহা আর আরিশাও পিছন পিছন গেল ইহসানের।
রুমে এসেই আরহার উদ্দেশ্যে ইহসান বলল
– এবার বল কি হয়েছে? কোথায় ছিলি কাল সারাদিন? আর আমাদের কিছু না জানিয়ে কেন গিয়েছিস? A to Z সব কিছু বলবি আমায়। কিচ্ছু লুকাবিনা আমার কাছ থেকে।
আরহা কিছু বলতে গিয়েও পারল না। সত্যিটা যে সে বলতে পারবেনা। বললেই যে আভান সব শেষ করে ফেলবে। আরহা যে সেই সাধ্য নেই তার ভাইয়াকে মিথ্যা বলবে।তাই সে চুপ করেই রইল। আরহাকে চুপ থাকতে দেখে ইহসান বলল
– কি হলো চুপ করে আছিস কেন?
– ভাইয়া আমি বলছি। ( পাশ দিয়ে বলে উঠল আরিশা)
– হুম বলো।
– আসলে আরহা কাল কলেজে গিয়ে বাসায় আসার সময় হোচট খেয়ে পিচ ঢালাই রাস্তায় পড়ে গিয়েছিল, হাতে বেশ ব্যথা পেয়েছে, বেশ ইনজুরি হয়েছে। আর ক্ষত স্থান থেকে অনেক রক্তক্ষরণ হওয়াতে ও সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিল। তাই কাল ওকে হসপিটালে নেওয়া হয়েছিল। আর আজ হসপিটাল থেকে রিলিজ করিয়ে বাসায় নিয়ে এলাম।
– কি বলছো কি আরিশা, এতো কিছু হয়ে গেল তোমরা জানাও নি কেন আমাকে।
– আসলে ভাইয়া জানানোর পরিস্থিতিতে ছিলাম না।
আরহা এককোণে দাঁড়িয়ে সব শুনে যাচ্ছে মাথাটা নিচু করে। একটার পর একটা মিথ্যা বলেই যাচ্ছে আর সেগুলো শুনে হজম করছে সে। আরহার যে নিজের ভাইয়ের দিকে চোখে চোখ রাখারও ক্ষমতা নেই। যে ভাইকে সে কোনো দিনও মিথ্যা বলেনি সে ভাইকে আজ মিথ্যা বলছে। আর এসবের পিছনে আভানই দায়ী।
আরহা চেয়েছিল আভানের সাথে কিছুক্ষণ ঘোরার পর ইহসানকে ডাকবে তারপর আভানের সাথে ইহসানের পরিচয় করিয়ে দিবে আরহা। একমাত্র ইহসানকেই সব বলে আরহা। তারপর সব ঠিক থাকলে পড়াশোনা শেষ হলে আভানের সাথে আরহা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হবে। কিন্তু এসবই কল্পনা মাত্র। তিলে তিলে গড়ে তোলা স্বপ্নকে এক নিমেষেই শেষ করে দিল আভান। আরহার ভাবতেও অবাক লাগে এমন একটা মানুষকে কিনা সে ভালোবেসেছে। আরহার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু কণা। চোখ মুছে ইহসানের উদ্দেশ্যে কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বলল
– ভাইয়া আমার না ভালো লাগছে না রে। আমি আমার রুমে যাচ্ছি।
– আচ্ছা যা রুমে গিয়ে রেস্ট নে।
আরহা আর কোনো কথা না বাড়িয়ে নিজের রুমে চলে গেল। আরিশাও বিদায় জানিয়ে নিজের বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল।
.
.
.
নিজের রুমে এসে ওয়াশরুমে চলে গেল আরহা ফ্রেশ হওয়ার জন্য। কিছু ভালো লাগছে না তার। ওয়াশরুমে গিয়ে ঝর্নার দিকে দাঁড়িয়ে রইল সে। অঝোর ধারা পড়ে যাচ্ছে ঝর্না পানি আর সেই সাথে অঝোর ধারায় গড়িয়ে পড়ছে আরহার চোখের অশ্রু কণা গুলি।
হাতের ক্ষত স্থানে যখন পানি পড়ছিল তখন হালকা করে চিৎকার দিয়ে উঠল আরহা। পানি পড়ার সাথে সাথে জ্বলে যাচ্ছে। কোনো মতে পরিষ্কার করে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে ক্ষত স্থানে ওষুধ লাগিয়ে নিল আর ডক্টরের দেওয়া এন্টিবায়োটিক খেয়ে নিল।
যখনই বিশ্রাম নিতে যাবে তখন রুমের দরজায় কেউ নক করল। অনেকটা অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পা বাড়িয়ে রুমের দরজা খুলতে গেল আরহা। রুমের দরজা খুলতেই আরহার মাকে দেখতে পেল। আরহার মা কোন কথা না বলে রুমে প্রবেশ করলেন।
আরহাকে বিছানায় বসিয়ে তিনি পরম মমতার সহিত স্নেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আরহার গালে হাত রেখে বললেন
– সকালে একটু খারাপ ব্যাবহার করেছি বলে রাগ করেছিস বুঝি?
– না আম্মু
– আমি বুঝি তোর মন খারাপ হয়েছে তখন আমার আচরণে, মায়ের মন তো সবসময়ই তোকে নিয়ে আমার চিন্তা হয়। জানিস কাল রাতে আমি তোর টেনশনে সারা রাত দু চোখের পাতা এক করতে পারিনি। তুই হয়তো বুঝবি না এসব, কিন্তু যখন তুই মা হবি তখন বুঝবি।
আরহা ওর মায়ের কথা শুনে ওর মাকে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কান্না করে দিল। এতোক্ষণ অনেক কিছু সহ্য করেছে সে কিন্তু এখন তা অসম্ভব হয়ে পড়ছে ওর জন্য। পরম যত্নে আরহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন তিনি আর শান্ত কণ্ঠে বললেন
– বোকা মেয়ে এভাবে কি কেউ কাদে নাকি? পাগলী একটা। আমি জানি কি হয়েছে?
আরহা ওর মায়ের কথা শুনে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ওর মায়ের দিকে। মেয়েকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তিনি মুচকি হেসে বললেন
– পড়ে গিয়ে হাতে ব্যথা পেয়েছিস তাইনা?
– তুমি জানলে কিভাবে আম্মু?
– ইহসান বলল।
– ওহ।
– আচ্ছা তোর হাতটা দেখা তো দেখি তোর হাত, কি হয়েছে?
– আচ্ছা আম্মু যাও, আমি একটু রেস্ট নেই, আমার শরীরটা ভাল লাগছে না। ( আরহা কোনো ভাবে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করল)
– আগে আমি হাত দেখব তারপর রেস্ট নিবি।
আরহা আর কথা বাড়াল না। আরহার মা আরহার হাত টা দেখলেন। ওষুধ আর এন্টিবায়োটিক খাওয়ার কারণে কিছুটা মিলিয়েছে। তাই আরহার মা তেমন একটা বুঝতে পারলেন না। তবে তিনি একটু হলেও কিছুটা আচ করতে পারলেন। সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। তবে কিছু বললেন না। এবার বললেন
– এখন রেষ্ট নাও তুমি।
মায়ের কথা শুনে বিছানায় সুয়ে পড়ল আরহা। আরহার মা আরহার পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিল পরম যত্নে। কিছুক্ষণের মাঝেই ঘুমিয়ে পড়ল আরহা..
#চলবে ~