তুমিহীনা_আমি_যে_শূন্য #Nushaiba_Jannat_Arha #পর্ব ২৬

0
528

#তুমিহীনা_আমি_যে_শূন্য
#Nushaiba_Jannat_Arha
#পর্ব ২৬

ইমির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আরহা যাচ্ছিল আভানের খালার রুমের উদ্দেশ্যে আর তখনই ফোন এলো আরহার ফোনে। ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলো আরহার মায়ের নাম জলজল করছে। মায়ের নম্বর দেখে আরহা আফসোসের সুরে মনে মনে বলল

– ইসস, আম্মুকে ফোন দেওয়ার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম আমি।

দ্রুত ফোনটা রিসিভ করে সালাম দিল আরহা। সালামের জবাব দিয়ে অভিমানি সুরে আরহার মা আরহাকে বলল

– কি রে, শশুর বাড়ি গিয়ে নতুন মা বাবা আর বরকে পেয়ে আমাদের ভুলে গেলি বুঝি? একটা বারের জন্য তো ফোন দিয়ে খোঁজ খবরও নিলি না আমাদের। এক দিনেই পর করে দিলি আমাদের?

– না না আম্মু তুমি ভুল বুঝচ্ছো, এতো এতো ব্যস্ততার মাঝে আমি ভুলে গিয়েছিলাম।

– হুম ভুলে তো যাবেই আমাদের।

– না আম্মু ভুলিনি ফোন আমিই দিতাম, তার আগে তুমি দিয়ে ফেলেছো।

– হুম বুঝছি, আমি ফোন না দিলে তোমার আর ফোন দেওয়ার সময় হতো না। তুমি তো ব্যস্ত মানুষ।

– আম্মুুুু, থাক এসব কথা বাদ দাও, কেমন আছো তোমরা? খুব মিস করছি তোমাদের।

– তোমাকে ছাড়া ভালো কি থাকতে পারি।

বলেই কেদে ফেললেন আরহার মা। আরহাও কেদে ফেলল মায়ের এমন কথা শুনে। চোখের পানি মুছে তিনি বললেন

– কখন আসবি মা? জামাইকে নিয়ে চলে আয় আজ। কয়েক দিন থেকে আবার না-হয় যাস। তোকে ছাড়া কিছু তে মন বসছে না আমাদের।

– আচ্ছা আম্মু এখন তো ঠিক বলতে পারছি না, আমি আভানের কাছে শুনে দেখি ও কি বলে, তারপর আমরা আসলে তোমাকে জানাবো।

– আচ্ছা, কিন্তু আজকেই আসবি।

– আচ্ছা মা তাহলে রাখি।

বিদায় জানিয়ে ফোনটা কেটে দিয়ে আভানের রুমে গেল আরহা। রুমে গিয়ে দেখল ঘুমিয়ে আছে আভান। ওর কাছে গিয়ে মনে মনে বলল

– আভানকে কি এখন ঘুম থেকে ডাকা ঠিক হবে?

আভানের পাশে বসে ওর মাথায় আলতো করে হাত বুলাতে ধরফরিয়ে উঠে বসল আভান। ব্যস্ত কণ্ঠে বলল

– কি হয়েছে আরহা? কিছু হয়নি তো তোমার? তুৃমি ঠিক আছো তো?

– কি উল্টা পাল্টা বলছেন আপনি? কি হবে আমার? আমি ঠিকই তো আছি, এই যে আমি সম্পূর্ণ সুস্থ রুপে আপনার সামনে বসে আছি।

হাফ ছেড়ে বাঁচল আভান। এবার কিছুটা শান্ত হলো সে। আরহা বলল

– কি হয়েছে আপনি এমন করছিলেন কেন?

– কিছু না, তবে মনের মাঝে সব সময়ই তোমাকে হারানো ভয় থাকে আমার। আমি তোমাকে হারাতে চাই না। কথা দাও, তুমি আমায় ছেড়ে কখনো কোথাও যাবে না।

– হুম চলে যাবো আমি আপনায় ছেড়ে, বহুদুর যাবো চলে।

– এমনটা তুমি করতে পারো না আরহা।

বলেই ছোট বাচ্চাদের মতো কান্না করে ফেলল আভান। আভানকে আজ এই প্রথম কাদতে দেখল আরহা। এর আগে কখনোই কাদতে দেখেনি। তার মানে সত্যিই আভান আরহাকে এতো ভালোবাসে। আরহা পরম যত্নে মুছে দিল আভানের চোখের পানিগুলো। এবার হালকা হেসে আরহা বলল

– আমি এই পাগলটাকে ছেড়ে কোথায় যাবো?

আভান অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল আরহার দিকে। আরহা এবারও এক দফা হেসে বলল

– কি হলো হা হয়ে কি দেখছেন? মাছি ঢুকে যাবে তো মুখের মধ্যে।

আভান আরহার কথা শুনে মুখ বন্ধ করে ফেলল। সন্দেহের দৃষ্টিতে আরহার দিকে তাকিয়ে বলল

– একটা সত্যি কথা বলো তো আমায় আরহা? তুমি এতো স্বাভাবিক কি করে? যেখানে কাল অবধিও তুমি আমায় মেনে নিতে পারছিলে না, একদিনের ব্যবধানে কি এমন হলো যে তুমি এতোটা স্বাভাবিক? তোমার মনের মাঝে কিছু চলছে তাই না? অ্যাম আই রাইট?

– আপনি এসব কি উদ্ভট কথা বলছেন আভান? আপনার কি মনে হয় আমি এমন?

– না মোটেও না, আমি এমনিই বললাম তোমায়। দেখলাম তোমার রিয়াকশনটা।

আভান মজা করল আরহার সাথে। সে খুব ভালো করেই জানে আরহা কেমন। আরহা যে আভানকে ভীষণ ভালোবাসে এটাও ও ভালো করেই জানে। এতোদিন তা সুপ্ত অবস্থায় ছিল। মুলত আরহাকে রাগানোর জন্যই এ কথা বলল আভান।

আরহা এবার বলল

– আভান একটা কথা বলব?

– বলো।

– আমার না খুব খারাপ লাগছে আমার মা বাবার জন্য। আম্মুর সাথে একটু আগে কথা হলো আমার। তিনি আমাদের যেতে বলেছেন ও বাড়ি।

– তো যাও, তোমার যখন খুশি তখন যাবে তুমি। এক্ষেত্রে আমার পারমিশন না নিলেও চলবে। তবে এছাড়া কোথাও গেলে আমার পারমিশন নিবে। কারণ তুমি নিজেকে নিয়ে না ভাবলেও আমি ভাবি তোমায় নিয়ে।

– তা তো জানি, এজন্য আমি নিজেকে নিয়ে ভাবি না, কেউ তো আছে আমাকে নিয়ে ভাবার মতো। আচ্ছা আপনি চলুন আমার সাথে?

– আমি?

– না আপনি না আমার আরেকটা বর আছে না, তাকে নিয়ে যাব। আপনি ছাড়া আর কে, এ আবার কেমন প্রশ্ন।

– ওহ আচ্ছা, রেডি হও তবে। যাই আমার শশুর বাড়ি।

আভানের কথা শুনে দ্রুত রেডি হয়ে নিল আরহা। আভানও রেডি হয়ে নিল। তারপর আরহা তার মাকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দিল তারা আসছে। যাওয়ার আগে বিদায় নিয়ে নিল আভানের খালামণি আর ইমির কাছ থেকে।

বাড়ি থেকে বের হয়ে গাড়িতে করে রওয়ানা দিল তাদের গন্তব্য স্থলে।

—————

কলিংবেল বাজাতেই দরজা খুলে দিলেন আরহার মা, পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন আরহার বাবা এবং ভাই। এতো দিন পর আরহাকে দেখে তারা খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলেন। আরহা বাড়িতে প্রবেশ করেই তার মাকে জড়িয়ে ধরে একপ্রকার কান্নাই করে দিল। কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বলল

– অনেক মিস করেছি আম্মু তোমায়।

– হু তুই মিস করেছিস আমাদের। আমরা তোকে মিস করিনি। মায়ের সাথে তাও কথা বলেছিস ফোনে। আমার সাথে তো কথা বলার প্রয়োজনও মনে করলি না। তোর যে একটা ভাই আছে, তার কি অবস্থা তার খোজও নিলি না। বেমালুম ভুলে গেলি আমাকে। ( পাশ দিয়ে অভিমানি কণ্ঠে বলে উঠল ইহসান)

– তোকে কি ভুলতে পারি ভাইয়া, রাগ করিস না আমার উপর।

– আরে আরে তোমরা আরহাকে নিয়ে পড়লে? বাইরে যে আমাদের জামাই দাঁড়িয়ে আছে তাকে ভুলে গেলে তোমরা? আসো বাবা ভেতরে এসো। ( আরহার বাবা বললেন)

আভান মুচকি হেসে সবাইকে সালাম দিয়ে প্রবেশ করল বাড়িতে। সে এতোক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে দেখছিল আর মিটমিটিয়ে হাসছিল।

– কেমন আছো বাবা? ( আরহার বাবা)

– এই তো আলহামদুলিল্লাহ, আপনি?

– আলহামদুলিল্লাহ ভালো। বাবা বসো।

আরহার বাবার কথা মতো বসল আভান। পাশ দিয়ে ইহসান আভানের পাশে এসে বলল

– কি খবর ভাইয়া?

– আলহামদুলিল্লাহ ভালো, তোমার কি খবর?

– এই তো আলহামদুলিল্লাহ ভালো।

আরহা, আভান রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে আবারও ড্রয়িং রুমে চলে এলো।

সন্ধ্যে বেলা…

টি টেবেলে নানা রকম খাবারের আইটেম সাজানো। আর সবাই মিলে গোল হয়ে সোফায় বসে আড্ডা দিচ্ছে। যে যার মতো গল্প করছে। জমে উঠেছে গল্পের আসরটা। এমন ভাবে কখনোই পরিবারের সাথে আড্ডা দেয়নি আভান। ছোট বেলা থেকে সে এমন ভাবে বড় হয়নি। সে বড় হয়েছে অনাদরে, অনেক কষ্ট পেয়ে। আজ ভীষন আনন্দ হচ্ছে আভানের। সবাই মিলে বেশ আনন্দ ফূর্তিই করছে।

আড্ডা শেষে……

খাওয়া দাওয়া করে যে যার মতো রুমে চলে গেল। আরহা রুমে গিয়ে রুম গোছাতে আর বিছানা ঝারতে লাগল। আজ কতো দিন পর নিজের রুমে এলো সে। মাঝে এক দিনের ব্যবধান কিন্তু আরহার কাছে মনে হচ্ছে বহু দিন। অজান্তেই তার দু চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল।

আভান আরহাকে ডাকতে ডাকতে রুমে এসে বিছানায় বসে পড়ল। আভানকে আসতে দেখে দ্রুততার সাথে নিজের চোখের পানি মুছে ফেলল। আভান টের পেল না। বিছানায় বসে আভান বলতে লাগল তার জীবনের পুরোনো কিছু কথা যা এখনও পর্যন্ত জানে না আরহা।

#চলবে~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here