হৃদয়_মাঝে ( শেষ পর্ব ) #ঈপ্সিতা_মিত্র

0
480

#হৃদয়_মাঝে ( শেষ পর্ব )
#ঈপ্সিতা_মিত্র
<১৭>

সেদিনের পরেরদিন সকালে প্রিয়ম ডাইনিং টেবিলে কফির কাপটা নিয়ে চেয়ারের ওপর বেশ পা তুলে বসেছিল পেপার পড়ার জন্য | কিন্তু হিয়া ওকে দেখে কিরকম অবাক হয়ে যাচ্ছিলো যেন ! এমন একটা ভাব ছেলেটার , যেন এই বাড়িতে জন্ম জন্মান্তরের জন্য ছিল ! যেন সত্যিই জামাই ! হিয়া বুঝতে পারছে না অরুনিমা যখন ফিরেই এসেছে , তাহলে চন্দননগরে থেকে এরকম টাইমপাসের কি মানে ! কথাটা ভেবেই বিরক্ত লাগছিলো ! রাগ হচ্ছিলো খুব ছেলেটার ওপর | তবে ওর রাগে ঘি ঢেলে মা হঠাৎ বলে উঠলো সেই মুহূর্তে রান্নাঘরে এসে ,

————– ” আজ দুপুরে চিকেন , আর ভেটকি মাছের পাতুরি করবো | প্রিয়ম এসেছে ! কাল তো এমন কিছুই খাওয়াতে পারেনি ছেলেটাকে ! তুই আমার সঙ্গে বাজারে চল |”

কথাটা শুনে হিয়া কিছু বলার আগেই প্রিয়ম পেপারটা থেকে মুখ তুলে বলে উঠলো এবার ,————— ” না না কাকিমা ! আপনি কেন বাজারে যাবেন কষ্ট করে ! আমি তো আছি | আমি যাচ্ছি বাজার | হিয়া আমাকে ডিরেকশন দেখিয়ে নিয়ে যাবে | আপনি বাড়িতে কাকুর সঙ্গে থাকুন |”

হিয়ার এই মুহূর্তে মনে হলো আরেকবার কেস খেলো | ও তো আর এই ছেলেটার সঙ্গে একলা সময় কাটাতে চায় না ! চায় না প্রিয়মের সঙ্গে থাকার অভ্যেসটা তৈরী হয়ে যাক ওর | তারপর তো ছেড়েই দেবে কোনোদিন অরুণিমার জন্য ! কথাগুলো ভেবেই হিয়া বলে উঠলো ,

————- ” তুমি জামাই মানুষ ! তুমি কি যাবে বাজারে ! তার ওপরে তোমার স্টেটাস আলাদা | আগে কোনোদিন গেছো বাজারে ! তোমাদের বাড়িতে তো সব বাজার কাজের লোকই করে দেখেছি | তাই তুমি বাড়িতেই থাকো | দর দাম করে বাজারটা আমিই ভালো করতে পারি , আমি একই যাবো তাই |”

রাগ মেশানো হাসি হেসে বললো কথাটা হিয়া | কিন্তু আজকাল হিয়ার প্রত্যেকটা কথারই একটা প্রত্যুত্তর প্রিয়মের কাছে রেডি থাকে যেন ! ও নিজেও তাই কিছু কথা ভেবে অল্প হেসে বললো ,

————– ” একটু ভুল বললে ! জামাই না , ছেলে | আমি এইবাড়ির নিজের ছেলের মতোই | তাই ওই বাড়িতে পা এর ওপর পা তুলে বসে খেতে পারবো না ! আর জীবনে সব কিছুই তো শিখে রাখা উচিত | বলা যায় না , কখন কি কাজে লেগে যায় ! তাই ধরে নাও আজ আমি তোমার সঙ্গে গিয়ে বাজার করাটাই শিখলাম , দরদাম করে ! কি কাকিমা , ভুল বলেছি কিছু ?”

শেষ কথাটা প্রিয়ম হিয়ার দিক থেকে চোখ ঘুরিয়ে একেবারে হিয়ার মা কে ই বললো | বা বলা যায় হিয়ার মায়ের কোর্টে বলটা পাঠিয়ে দিলো | আর ব্যাস, সঙ্গে সঙ্গে হিয়ার মা নিজের একমাত্র জামাইয়ের হয়ে কিরকম ওকালতি শুরু করে দিলো হিয়ার সঙ্গে | বেশ জোর দিয়েই বললো উনি ,

————- ” এই হিয়া , তুই কাল থেকে ছেলেটার সঙ্গে এইভাবে শুনিয়ে শুনিয়ে কথা বলছিস কেন রে ! আর ঠিকই তো , ও তো জামাই না | ও আমাদের ছেলে | ও একটু বাজারে যেতে চাইছে যখন , নিয়ে যা না ! কি হয়েছে ! বরং বাইরে বেরোলে আমাদের জায়গাটাকেও একটু দেখতে পারবে | নতুন শহর , ভালোই লাগবে ওর |”

কথাগুলো কিরকম এক নিঃশ্বাসে বলে গেলো মা | হিয়া এরপর সত্যি কেসে হেরে গেলো ! আর কোনো যুক্তি, কথা ঠিক সাজিয়ে উঠতে পারলো না প্রিয়মের এগেনস্টে | তাই আর তর্ক না করে একটু কঠিন মুখ করেই বললো এবার মা কে , ————– ” ঠিক আছি | যাচ্ছি নিয়ে |”

তারপর মা চলে যাওয়ার পর প্রিয়মের দিকে তাকিয়ে রাগের মধ্যে ভদ্রতা মিশিয়ে একটু শোনানোর মতন করেই বলে উঠলো , ———– ” চলুন , চিফ গেস্ট ! আপনাকে আমাদের এই ছোট্ট মফঃস্বলের বাজারে ঘুরতে নিয়ে যাই | নইলে তো আমার মা বাবার ঠিক শান্তি হবে না ! ”

প্রিয়ম এবার আর আড়ালে না , হিয়ার সামনেই হেসে উঠলো জোরে | দৃশ্যটা দেখে হিয়ার পারদ আরো চড়লো | তবে আর ঠিক কোনো কথা বললো না ও |

সেদিন বাড়িতে এসে হিয়া রান্নাঘরে ঢুকেছিলো কিছুক্ষণের মধ্যে | ও থাকতে মা গরমে রান্না করুক , এটা ঠিক হিয়ার ভালো লাগে না ! তাই নিজেই কিছুটা রান্না এগিয়ে রাখছিলো | সবজিগুলো কাটা , চিকেনটা ধোয়া , পাতুরির জন্য কলাপাতা গুলো সাইজ করে কাটা ! অনেক কাজ ! কিন্তু এইসব কাজের ভিড়েই হঠাৎ প্রিয়ম এসে হাজির হয়েছিল | তারপর হিয়ার কিছু বলার আগেই নিজের হাতে ছুরিটা তুলে নিয়েছিল , সবজি কাটার জন্য | হিয়া দৃশ্যটা দেখে বেশ উত্তেজিত হয়েই বলেছিলো ,

————- ” আরে কি করছো তুমি ! ছুরিটা রাখো ! অভ্যেস নেই এইসব করার | হাত কেটে যাবে !”

কিন্তু প্রিয়ম ওকে বিশেষ পাত্তা না দিয়েই বলে উঠেছিল ,

————– ” কিচ্ছু হবে না | আমি কি বাচ্চা না কি যে ছুরি ধরলে হাত কেটে যাবে ! অদ্ভুত !”

কথাগুলো বলেই ও পেঁয়াজের ওপর একটা কোপ বসিয়েছিলো বেখেয়ালে | আর পেঁয়াজের বদলে বুড়ো আঙ্গুলটা কেটে গেছিলো হঠাৎ ! প্রিয়ম চিৎকার করার আগেই হিয়া দৃশ্যটা দেখে ফেলেছিলো | তবে এই মুহূর্তে ও নিজে কিছুতেই নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে হেসে উঠেছিল জোরে | নিজের মনেই বলে উঠেছিল কেমন , ———- ” সত্যিই বাচ্চা | চৌবাচ্চা !”

কথাটায় এবার প্রিয়মও হেসে ফেলেছিলো হঠাৎ | একটু লজ্জাও লাগছিলো সঙ্গে ওর | এতো কায়দা করে বললো সবজি কাটবে ! ইশ , হিয়ার সামনেই হাতটা কাটতে হলো ! তবে এই কেটে যাওয়ার যন্ত্রণার মাঝে ও হিয়ার হাসি মুখটা কিরকম থমকে গিয়ে দেখছিলো যেন ! মনে হচ্ছিলো এই হাসিটাই তো মিস করছিলো এতদিন ধরে | এই মেয়েটার জন্যই তো সব কিছু থেকেও চারিদিকটা ফাঁকা লাগছিলো ওর | ভিড় শহরে হঠাৎ একাকিত্ব নেমে এসেছিলো যেন | প্রিয়মের এই এলোমেলো ভাবনার ভিড়েই এবার হিয়া ওর কাছে এলো খুব ! একটা ফার্স্ট এড বক্স নিয়ে | আঙ্গুলটা তারপর ডেটল দিয়ে পরিষ্কার করে ওষুধ লাগিয়ে দিলো নিজে | সঙ্গে একটা ব্যান্ডেডও লাগিয়ে দিলো | তারপর প্রিয়মের থমকে থাকা চোখে চোখ রেখেই বললো ,

————- ” অনেক কাজ হয়েছে ! এরপর আর কিছু করার দরকার নেই | আর এই হাতে একদম জল লাগবে না | আর রান্নাঘরের ত্রিসীমানায় এখন যেন না দেখি ! ”

কিরকম যেন শাসন করার মতন করে বললো কথাগুলো হিয়া | প্রিয়মের মনে হলো আগের জন্মের কোনো টিচার এসেছে ওর ! তবে এরকম মিষ্টি শাসন ভালো লাগলো খুব | তাই আর তর্ক না করে বেড়িয়ে এলো রান্না ঘর থেকে চুপচাপ | তবে মুখে একটা আলতো হাসি লেগেই রইলো প্রিয়মের | হিয়াও খেয়াল করলো ব্যাপারটা | শুধু বুঝতে পারলো না হাত কেটে যাওয়ার পরও এতো আনন্দ কিসের ! ছেলেটার কি কিছু মাথার প্রব্লেম হয়েছে ! অরুনিমা ফিরে এসে কি ওকে শক দিয়েছে কোনো কারেন্টের ! কথাটা ভেবেই আবার মনটা তিতো হয়ে গেলো হঠাৎ আনমনে | সেদিনের দৃশ্যটা না চাইতেও চোখের সামনে ভেসে উঠলো কেমন | অরুনিমা প্রিয়মকে জাপটে ধরেছিলো সেদিন | কতটা অধিকার নিয়ে আঁকড়ে ধরেছিল প্রিয়মকে ! সেই অধিকার তো হিয়ার নেই ! কথাটা ভেবেই ভেতরটা আবার ফাঁকা হয়ে এলো ওর | না , এইভাবে আর এই মুহূর্তগুলোর সঙ্গে নিজেকে জরাতে পারবে না হিয়া | প্রিয়ম যতদিন এই বাড়িতে থাকবে , ততদিন স্মৃতিগুলোকে একটু একটু করে বাড়িয়ে যাবে ও | তাই সব কিছু খুব তাড়াতাড়ি শেষ করতে হবে হিয়াকে | নিজেকে যখন একই বাঁচতে হবে এরপর , সারাটা জীবন , তাহলে মরীচিকার মতন এই সময়টার সঙ্গে জরিয়ে থেকে তো কোনো লাভ নেই ! কথাটা ভেবেই চোখটা ভিজে এলো হঠাৎ কেমন | তবে হিয়া নিজের মনকে শক্ত করলো | প্রিয়ম হয়তো নিজের মুখে কিছু বলতে পারছে না ! হিয়া যে ওকে ভালোবাসে , এটা হয়তো বোঝে ! তাই ভাঙতে পারছে না সম্পর্কটা | সেই জন্যই হিয়ায় বলবে | সব কিছু শেষ করার শুরুটা হিয়াই করবে |

সেদিন সন্ধ্যেবেলা এই ভাবনাগুলোকে সঙ্গে নিয়েই ও ছাদে গিয়েছিলো , প্রিয়মের সঙ্গে কথা বলতে | প্রিয়ম আগের থেকেই অপেক্ষা করছিলো যদিও | হিয়া হঠাৎ ওকে ফোন এ একটা মেসেজ করেছিল দশ মিনিট আগে , ছাদে আসার জন্য | প্রিয়ম ড্রইং রুমে ছিল সেই সময় | টিভি দেখছিলো হিয়ার বাবা মার্ সাথে | আচমকা হিয়ার এই মেসেজটা পেয়ে তো বেশ অবাকই হয়েছিল ও সেই মুহূর্তে ! তাহলে কি রাগটা একটু কমলো মেয়েটার ! শুনবে এরপর ওর কথাগুলো ! ওর এক্সপ্লিনেশনটা ! কথাগুলো ভেবেই ও ছাদে গিয়েছিলো সেইদিন | তারপর দেখেছিলো হিয়া চাঁদের নিঃসঙ্গতাকে ভেঙে ওর সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল হঠাৎ | কিন্তু হিয়া আজ বেশ গুছিয়ে এসেছে নিজেকে | এই কথাটা বলার সময় ও কোনোভাবেই প্রিয়মের সামনে কাঁদবে না ! নিজের চোখের জল দেখাবে না ! যা বলবে , খুব দৃঢ়ভাবে বলবে | যাতে প্রিয়মের জন্যও সহজ হয় সাইন করাটা | কথাগুলো ভেবেই ও হাতের কাগজটা প্রিয়মকে দিয়ে বলেছিলো সেদিন ,

————- ” মিউচুয়াল ডিভোর্সের এপ্লিকেশনটা | অনেকদিন ধরে আমার কাছে ছিল | সাইন করে দাও তুমি | বেশিদিন লাগবে না এরপর ডিভোর্স পেতে | তুমি খুব তাড়াতাড়ি ফ্রি হয়ে যাবে | অরুণিমার সাথে তারপর নতুন করে !”

না , কথাটা আর শেষ করতে পারেনি হিয়া | গলাটা ধরে আসছিলো হঠাৎ ওর না চাইতেও | কান্নাটা যেন আটকে গেছিলো ভেতরে | জলটা চোখ ঠিকরে বেড়িয়ে আসতে চাইছিলো সেই সময়ে | কিন্তু হিয়া হাতের মুঠোটাকে শক্ত করে সেই জলটাকে থামিয়ে রেখেছিলো কোনোভাবে ! কিন্তু এই মুহূর্তে হিয়া খেয়াল করেছিল প্রিয়ম ওর দিকে কিরকম স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে যেন ! কিছু না বলে একদম নিঃস্তব্ধ হয়ে দেখছে ওকে ! হিয়া ঠিক বুঝতে পারলো না এখন , ওর এই নিঃস্তব্ধতার মানে ! কিন্তু তখনই প্রিয়ম নিজের হাতে ধরে থাকা ডিভোর্সের এপ্লিকেশনটা ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করতে শুরু করলো হঠাৎ হিয়ার দিকে তাকিয়েই ! হিয়াও এই সময় কিরকম নির্বাক হয়ে গেলো ! প্রিয়ম এটা কি করছে ! ছিঁড়ে ফেলছে কেন কাগজগুলো ! তাহলে কি ও এতদিন ধরে যা ভেবেছিলো সেটা ভুল ! ভুল বুঝেছিলো ও ছেলেটাকে ! কথাগুলো ভাবতেই এবার প্রিয়ম বলে উঠলো শব্দহীন ছাদে ,

————— ” এই বিয়েটা আমার জীবনের সব থেকে বড়ো সত্যি | আর এটা এতো সহজে ভাঙবো বলে আসিনি এখানে | তোমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছিলাম | ভেবেছিলাম তুমি এটলিস্ট একটা সুযোগ দেবে আমাকে কিছু বলার ! আমার সেদিনের কারণটা শোনার ! কিন্তু তুমি তো কিছু না জেনেই একেবারে ডিসিশন নিয়ে ফেললে !”

কথাগুলো খুব কঠিনভাবে বললো প্রিয়ম | হিয়ার চোখের জলটাও এবার হঠাৎ উঁকি দিলো কেমন | আর কোনোভাবেই যেন আটকে রাখতে পারলো না হিয়া নিজেকে | প্রিয়মের সামনেই চারিদিকটা আবছা হয়ে গেলো ওর | জলে ভর্তি হয়ে উঠলো সবদিক | তখন প্রিয়ম আবার বলে উঠলো ,

—————- ” আমি তোমাকে একবার বলেছিলাম , যদি আমি কিছু শেষ করে দিই , তাহলে আমি আর কোনোদিন ফিরে যাই না সেখানে | সে ফিরে আসলেও আমি ফিরিয়ে নিই না | কথাটা তুমি হয়তো ভুলে গেছো ! কিন্তু এটাই সত্যি | সেদিন একসিডেন্ট হয়েছিল অরুনিমা আর ওর বন্ধুর | ড্রিংক করে ড্রাগস নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিল ওরা | কথাটা শুনে দেখতে গেছিলাম জাস্ট | কিন্তু অরুনিমা নেশার ঘোরে জরিয়ে ধরেছিলো আমায় ! ওর কোনো সেন্স কাজ করছিলো না ! সেই সময় আমি ওকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছিলাম , কিন্তু তখনি তুমি চলে এসেছিলে ! ” কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে এবার থামলো প্রিয়ম | তারপর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আরো কিছু কথা সাজিয়ে বললো ,

———— ” হ্যাঁ, আমার একটাই ভুল হয়েছে , আমার তোমাকে জানিয়ে যাওয়া উচিত ছিল সেদিন | এন্ড আই এম সরি ফর দ্যাট … আর হয়তো শুধু সেইদিন না , অনেকদিন ধরেই একটা ভুল করছি আমি ! অনেক কিছু করেও ঠিক বোঝাতে পারিনি যে কতটা ফিল করি ! কতটা ভালোবাসি ! তাই সরি … আর এরপর আমি আর এখানে থাকবো না | তোমার কাছে যখন এই সম্পর্কটা শেষই , তাহলে আমি আর জোর করবো না | আর এইভাবে সবার আড়ালে না , কাকু কাকিমা, আমার বাবা , সবার সামনেই আমি তোমাকে ডিভোর্সের নোটিশ দেব | আর বলবো , যে ভুলটা আমার ছিল , শুরু থেকেই |”

কথাগুলো বলে প্রিয়ম এবার চলে যেতে যাচ্ছিলো হিয়ার সামনে থেকে | নিঃস্তব্ধতার আড়ালে ছাদটাকে ঢেকে দিতে যাচ্ছিলো সেই মুহূর্তে | কিন্তু পারলো না ! হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো কেমন ! আসলে কেউ খুব শক্ত করে ওর হাতটা ধরে ফেললো যেন ! আর ওই চেনা স্পর্শটা আবার ফিল করলো প্রিয়ম | হিয়া এরপর আর অপেক্ষা না করে খুব জোরে আঁকড়ে ধরলো প্রিয়মকে | নিজের সর্বস্ব দিয়ে জরিয়ে ধরলো ওকে ! আর নিজের কান্নাটাকে আটকে না রেখে পুরোপুরি ভেঙে পড়লো প্রিয়মের সামনে ! কিছু না বলেই বুঝিয়ে দিলো সবটা | কতটা ভালোবাসে !

না , প্রিয়মও আর এরপর ওকে ছেড়ে যেতে পারেনি এক পা ও | হিয়ার এই আঁকড়ে ধরাটাকে ছাড়াতে পারেনি নিজের থেকে | বরং ও নিজেও দু হাত দিয়ে শক্ত করে জরিয়ে ধরেছিলো মেয়েটাকে | যতটা ভালোবাসা এতদিন মনে জমিয়ে রেখেছিলো , সবটা দিয়ে হিয়াকে আগলে রেখেছিলো নিজের কাছে | মনে হচ্ছিলো এতদিনে পুরো গল্পটাকে পড়তে পেরেছে ও যেন ! ওই অসমাপ্ত বই এর পাতাটাকে নিজের করে পেয়েছে আজ | হিয়াকে সম্পূর্ণভাবে পেয়েছে আজ | তাই চুপচাপ ,কিছু না বলে , এই মুহূর্তটায় হারিয়ে যাচ্ছিলো শুধু | আর এইসবের মাঝে একটা জোৎস্না ভরা রাত , হাজারটা তারার আকাশ , আর ওই গোল পূর্ণিমার চাঁদটা সবার আড়াল থেকে , অলক্ষে দেখছিলো দুজনকে | একটা না শেষ হওয়া গল্পের শুরুকে |

——- < সমাপ্ত >—————

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here