~হাউ ডেয়ার ইউ??কোন সাহসে আমাকে থাপ্পড় মারলেন আপনি?জানেন আমার বাবা কে??
কথাটা শেষ ও করতে পারি নাই আর এক থাপ্পড় খেলাম।আগের বার ডান গালে এবার বাম গালে,থাপ্পড় খেয়ে এবার আর নিজেকে সামলাতে পারিনি নিচে পড়ে গিয়েছি আর বাচ্চাদের মতো ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিয়েছি।
ছেলেটা একটু ঝুকে আমার ঠিক মুখের সামনে চলে আসলো,,
–জীবনে যদি আর বাবার পয়সার ফুটানি করো তাহলে এর থেকেও খারাপ অবস্থা হবে।মাইন্ড ইট….
হন হন করে চলে যাচ্ছে,,কিছুদূর যাওয়ার পর একটা বাইকে উঠে চলে গেল,,আমি এখনো গালে হাত দিয়ে বসে আছি।
–নিহু ওঠ,দেখ সবাই কিভাবে তাকিয়ে আছে।কানাকানি করছে কিছু একটা নিয়ে।এখানে আর বসে থাকিস না।ভিতরে চল বাবু।ওঠ…..
মীরার কথাই উঠে পড়লাম।গায়ের ধুলো মুছতে মীরা সাহায্য করলো।সকাল সকাল তাও আবার প্রথম দিন ভার্সিটিতে এসেই কোন ছেলের হাতে এভাবে থাপ্পড় খাওয়াটা মেনে নিতে পারছিলাম না।
আমি নিহীন রুবাইয়াত,শহরের বেশ নাম করা ইন্ডাস্ট্রিয়াস এর মেয়ে।বড় ভাইয়া আর আপু আছে কিন্তু আমিই বেশি আদরের।বাড়ির ছোট মেয়ে হওয়ায় এসব চড় থাপ্পড় এর সাথে কোনদিনই পরিচয় হয়নি আমার,কিন্তু আজ আমাকে থাপ্পড় খেয়ে মান সম্মান খোয়াতে হলো,তাও আবার এক দেড়শ মানুষের সামনে,কান্না পাচ্ছে,অনেক কান্না পাচ্ছে,কিন্তু রাগটা আরো বেশি অবশ্য দোষটা আমার কিন্তু আমি তা মানতে রাজি না।ছেলেটার সাহস কি করে হলো আমাকে মারার?
ফ্লাসব্যাক—
বাবার গাড়িতে করে ভার্সিটিতে আসছিলাম,মাঝরাস্তাই ড্রাইভার কাকাকে ৫০০টাকা বকশিস দিয়ে নামিয়ে দিয়েছি।ভার্সিটির পার্কিং সাইডে গাড়ি পার্ক করার সময় পিছন থেকে আর একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা মেরে দিয়েছি।সেই গাড়িটার কিছু না হলেও আমার গাড়িটার পিছনের হেড লাইট ভেঙেচুরে শেষ।ব্যাস গাড়ি থেকে বের হয়েয় দেখি যেই গাড়িটাই মেরেছি তার গা ঘেষে একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে।লম্বা প্যায় ৬’১” হবে,গায়ের রং ধবধবে ফর্সা,সিল্কি চুলগুলো চোখের ওপর এসে পড়ছে,ছেলেটা বারবার কপাল থেকে চুল সরাচ্ছে আর আমার দিকে তাকাচ্ছে।ছেলেটা এতোটাই কিউট যে ক্রাশ খেয়ে ফেলার মতো কিন্তু না গাড়িটার কথা মনে পড়ে গেলো।ছেলেটার কাছে যেয়েই কিছু না বলেই দিলাম এক থাপ্পড়।ছেলেটার বোকার মতো গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে থাকলো।
–আমার গাড়ির ক্ষতি করে এখানে দাড়িয়ে থাকা?জানিস এটার দাম কতো?তোর এই সস্তা গাড়ির জন্য আমার গাড়ির এতো ক্ষতি হলোলো,আমার বাবা চাইলে এরকম ৫ টা সস্তা গাড়ি কিনতে পারে..আর কিছু বলতে পারিনি ছেলেটা আমাকে একটা থাপ্পড় দিয়ে বসে।
তার পরের ঘটনা জানেনই।সবার ফিসফিসানিতে এটুকু বুঝালাম কোন সিনিয়র ভাইকে মেরেছি।কিন্তু আমি পাত্তা দিলাম না।জীবনে আমার বাবাও কখনো আমায় মারেনি আর এই ছেলে সবার সামনে আমাকে মেরেছে একে তো আমি ছাড়বো না।কোনরকম একটা ক্লাস করেছি কিন্তু মেজাজ তো আমার তুঙ্গে উঠে গেছে কিছুতেই সকালের ঘটনা ভুলতে পারছি না।বের হয়ে গেলাম ক্লাস থেকে ক্যান্টিনে এসে বসে রইলাম।ক্যান্টিনেও দেখি সবাইআমার দিকে তাকিয়ে ফিসফাস করছে এতে রাগ আরো বেড়ে গেলো বরাবরের মতো এবার আর রাগ কমানোর জন্য ব্লেড দিয়ে হাত কাটতে পারছি না,কিছু ভাংচুর ও করতে পারছি না,তাড়াহুড়াই আজ মোবাইল টা আনিনি তা না হলে ওটা আস্ত থাকতো না আজ..
|
—নিহু,নিহু….ভাই তুই এবার শেষ…কি করলি এটা।এখন এখন কি হবে??হাই আল্লাহ….(মীরার এভাবে ছুটে এসে হাপানো আর কি হয়েছে না বলে ফাও বকাতে আরো মেজাজ বিগড়ে গেলো।উঠে দাড়িয়ে টেবিলে দিলাম এক ঘুষি)
—কথা না পেচিয়ে সোজাভাবে বলতে পারিস না??(আমার চিল্লানোতে ক্যান্টিনের সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে পড়েছে।মীরা আমার হাত টেনে ধরে বসিয়ে দিলো)
—আস্তে কথা বল নিহু,আস্তে..তোর কপালে এমনিতেই অনেক দুঃখ আছে এখন যদি আবার তোর চিল্লানি শোনে না জানি কি করবে।তোর সাথে সাথে আমিও মারা পড়বো(কথাটা শেষ করে মীরা মাথায় হাত দিয়ে কাঁদো কাঁদো ভাব নিলো)
—উফফ!!ক্লিয়ারলি বল তো?আর কে তোরে মারবে?কার এতো বড় সাহস যে নিহীন রুবাইয়াতরে মারবে?সে কি জানে না আমার বাবা…
—চুপ চুপ,,,একদম চুপ…ভুলেও বাবার কথা না বলিস না আগের বার তো থাপ্পড় খেয়েছিলি এবার তো খুনই করে দেবে..সাথে আমাকেও..আল্লাহ আমার বিয়েটাও তো হয়নি এখনো,,কাল রাতে আবার দাদুভাই আইসক্রিম এনেছিলো সেটাও তো খাইওনি।ও দাদুভাই তুমি ভালো থেকো,,ও আমার না খাওয়া আইসক্রিম তুইও ভালো থাকিস।
(এবার আরো রাগ হয়ে গেলো আমার মীরার এই নাকি কান্না আর আজাইরা আলাপে।মীরা আমার ঢঙ্গি বেষ্টু।মাঝে মাঝে ওর এই ঢং এর জন্য মন চাই আচ্ছা মতো কিলাই।বর্তমানে ওরে একটা জোরে চিমটি কেটে দিয়েছি।)
–আউচ,চিমটি দিলি কেন???ব্যাথা লাগে না??
–নাটক মারছিস কেন তা?কি হয়েছে বলবি নাকি উঠবো?
উঠেই যাবো,কিন্তু তার আগেই কিছু ছেলেমেয়ে এসে আমাদের টেবিলটার সামনে দাঁড়ালো,দুইটা ছেলে সবাইকে কি যেন ইশারা করার সাথে সাথে ক্যান্টিন পুরো ফাকা।বুঝলাম সিনিয়র এরা কিন্তু ক্যান্টিন কেন ফাকা হয়ে গেলো কিছুই বুঝলাম না।এদিকে মীরা দেখি কাপাকাপি শুরু করেছে।মনে মনে কি যেন বিড় বিড় করছে।আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না।শর্ট টপস,জিন্স পরা রিবন্ডিং হেয়ার একটা মেয়ে আমাদের কাছে এগিয়ে আসছে।মীরা তো আমার হাতটা শক্ত করে ধরে ফেললো,মীরা আগে তো শুধু কাপছিলো এখন রিতিমতো ঘামছে,,
|
–এই মেয়ে তুমি সৌভিকের বাইকের টায়ার পাঞ্চার করেছো?
(মেয়েটার কথা বুঝলাম না ঠিক।আমি তো ওই অসভ্য ছেলেটার বাইকের টায়ার পাঞ্চার করেছি।ক্লাস থেকে বের হয়ে ক্যান্টিন খুজার সময় ছেলেটিকে আবার দেখি বাইক থেকে নেমে কয় যেনো গেলো।ছেলেটাকে দেখা মাত্রই আবার রাগ হয়ে গেছে আমার।বাইকটার কাছে গিয়ে সেফটিপিন দিয়ে টায়ারটা পাঞ্চার করে দিলাম।একটু হলেও শান্তি পাওয়া গিছিলো।)
–এই মেয়ে বলো?(মেয়েটা রিতীমতো আমাকে ধমকে উঠলো)
–কিসের বাইক আর সৌভিক টাই বা কে?
আমার কথা শুনে মেয়েটা হেসে দিলো,আশে পাশের সবাই হাসছে।
–এই শিবলি এ মেয়ে কি বলে?সৌভিক কে জিজ্ঞেস করছে?হাহাহহাহহহাহহাহাহাহাহহ…
(মেয়েটার কথাই পিছন থেকে আর একটা লম্বা মতো সুন্দর ছেলে হাসতে হাসতে সামনে এলো)
–এই যে পুচকি মেয়ে তোমার বান্ধবিকে বলোনি সৌভিক কে??
–না মা মানে ভাইয়া,বলতেই যাচ্ছিলাম তার আগেই তো আপ আপনারা চ চলে আসলেন..
–না তুতলিয়ে তোমার ফুলকোলি বান্ধবিকে বলো সৌভিক কে..এস ফার্স্ট এস পসিবল ড্যামেট।আমাদের এতো ফালতু সময় নেই তোমাদের সাথে এখানে বসে থাকার।(কথাটা শেষ করেই ছেলেটা একটা চেয়ার টান মেরে ছুড়ে মারলো।মীরা ভয় পেয়ে কেঁদেই দিলো আমিও হাল্কা ভয় পেয়েছি কিন্তু স্বাভাবিক বিহেভ করলাম)
–এই পুচকি তুমি বললে না ওরে..
ছেলেটার কথাই মীরা এবার আমাকে কোনরকম টেনেহিচড়ে সাইডে আনলো,,
–দোস্ত তুই যেই ছেলেটাকে থাপ্পড় মেরেছিস সেটাই সৌভিক ভাই।আশহাদ আরিয়ান সৌভিক,ক্যাম্পাসের ক্রাশ বয়।অনার্স ফাইনাল ইয়ার সব মেয়ে সিনিয়র হোক বা জুনিয়র সৌভিক বলতে পাগল।ওনার বাবার অনেক টাকা তোদের থেকেও বেশি।ওনার অনেক ক্ষমতা,শুধু তাই না উনি রাজনীতিও করে আবার ওনার সিজিপিএ সবার থেকে উপরে।ক্যাম্পাসের চোখের মনিকে তুই থাপ্পড় মেরেছিস।গাড়িটা তো ওনার ছিলোও না।ফাও ফাও মার দিছিস।উনি হয়ত ব্যাপার টা ছেড়ে দিতো বাট তুই ওনার বাইকের টায়ার পাঞ্চার করেছিস এবার।উনি তোকে ছাড়বে না।সাথে আমাকেও না…এতোক্ষন এটাই বলতে চাইছিলাম আমি….(মীরা আবার কান্না শুরু করলো)
মীরার কথা শুনে এবার আমারো ভয় লাগছে।ভয়টা আরো বেড়ে গেলো যখন ওই অসভ্যটা মানে ক্যাম্পাসের ক্রাশ সৌভিক না ফৌবিক ক্যান্টিনে ঢুকলো,ওনার চোখমুখ লাল হয়ে আছে,চোখ দিয়ে তো আগুন বের হচ্ছে মনে হচ্ছে ওনেক বেশিই রেগে আছে বোঝা যাচ্ছে।মনে হচ্ছে আমাকে কাচা চিবিয়ে খাবে..
আমি একটা শুকনো ঢোক গিললাম।মীরা তো আমার পিছনে গিয়ে লুকালো।
–নিহুরে এবার তুই শেষ..আল্লাহ গো বাচাও আমাদের…
চলবে কি???
#প্রেম_পাগলামি
#পর্ব:০১
#নিহীন_রুবাইয়াত
(ভুলত্রটি ক্ষমা করবেন আর গল্পটা ভালো লাগলে অবশ্যয় জানাবেন,,ধন্যবাদ)