প্রেম_পাগলামি
#পর্ব:০৬
#নিহীন_রুবাইয়াত
–নিহী এখন কেমন আছিস?
–আমি এখন কোথায় আছি?আমার মাথা ঘুরছে।(মাথায় হাত দিয়ে উঠার চেষ্টা করলাম,মা আমাকে উঠতে দিলো না)
–তুই সুয়ে থাক মা তোর শরীর ভালো না।
–মা তুমি?আমি বাসায় কিভাবে….আমি তো…
–হ্যা মা তুই ভার্সিটিতে কিভাবে যেন অজ্ঞান হয়ে গেছিলি মীরা আর একটা ছেলে এসে তোকে দিয়ে গেছে বাসায়।তুই সুয়ে থাক,জানিস আমাদের সবার কত্তো চিন্তা হচ্ছিলো।তোকে ওরা বাসায় এনেছে দুপুর ৩ টার দিকে আর এখন বাজে রাত ১:৩০।তোর বাবা,দাদি,ফুফু ফুফা,আপু সবাই এই ঘরেই ছিলো কিছুক্ষন আগে ওদের পাঠিয়েছি।তুই সুয়ে থাক মা আমি তোর জন্য স্যুপ করে আনি।
মা উঠে চলে গেলো।আমি সকালের কথা মনে করার চেষ্টা করলাম,আমাকে কেউ আটকে দিলো আমি কান্নাকাটি করলাম কিন্তু কেউ দরজা খুললো না।একটা গান শুনলাম তারপর আহ,তারপর না মনে পড়তেছে না।মাথা চেপে ধরলাম,খুব বেশি করে মনে করতে চাইছি মনে পড়ছে না।রাগ হচ্ছে,কেন পড়ছে না??
–নিহীন তুই উঠেছিস কেন?একা একা কেন উঠতে গেলি বলতো
–………………..
–হা কর দেখি স্যুপ টা খাইয়ে দিই
–আমি খাবো না মা
–খাবো না বললে হবে না হা কর,এরপর ওষুধ খাওয়া লাগবে
মা জোর করে খাইয়ে দিলো।আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।একটা সময় মা ঘুমিয়ে পড়ে আমি ঘুমাতে পারিনা।ভাবছি আমার সাথে কে এমন করলো আর আমাকে রুম থেকে বের করলোই বা কে?মীরা তো নিশ্চয় জানবে ওরে একটা কল দিই..ফোন টা খুজতে লাগলাম কিন্তু কিছুক্ষন পর খেয়াল হলো আমার তো ফোনই নেই..নিজের রাগের জন্যই নিজের ওপর রাগ লাগছে এখন।এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেছি।
–নিহু,ভালো আছিস এখন?(চোখ মেলে দেখি মীরা)
–মীরা,দোস্ত আমাকে তুই কই পাইছিলি?আর কখন?আমার কিচ্ছু মনে পড়ছে না জানিস।মনে করতে পারছি না কেন আমি?
–রিলাক্স নিহু,তুই শান্ত হ আমি সব বলছি..আমি তোকে পাইনি তোকে পেয়েছিলো(মীরা সোফার দিকে ইশারা করে।সোফায় শাওন বসা)
–আরে আরে নিহীন উঠো না,তুমি সুয়ে থাকো।
–তুমি কিভাবে আমাকে পেলে?
–সব বলবো তার আগে বলো তুমি ওখানে আটকে গেলে কি করে?
–আমার শাড়িতে কে যেন জুস ফেলে দিছিলো,আমি ওয়াশরুমে যাচ্ছিলাম কিন্তু আমার হাত টেনে ধরে কে ওই ঘরটাই আটকে দেই,আমি মুখ দেখিনি অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু কেউ আমার আওয়াজ পাইনি হয়তো এক্টা সময় আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি তারপর আর…
–আচ্ছা।ফাংশন শেষে মীরা তোমাকে খুজছিলো আমি ওর কাছে গিয়ে জানতে পারি তোমাকে নাকি ও অনেক্ষন ধরে পাচ্ছে না।তোমার ফোন না থাকায় কল ও দিতে পারছে না।আমি ভেবেছিলাম তুমি বাসায় চলে এসেছো কিন্তু পার্কিং সাইডে তোমাদের ড্রাইভার কে দেখি তখন খুব চিন্তা হচ্ছিলো।মাইকে এনাউন্স করলাম তোমার খোজ নেই।তখন এক সিনিয়র ভাই বললো তুমি নাকি ওইদিকে গেছো আমি মীরা আরো অনেকেই ছুটে যায় দেখি তুমি ওই রুমটাই পড়ে আছো কিন্তু রুম তো লক ছিলো না…
–কি?রুম লক ছিলো না?
–হুম নিহু ও ঠিক বলছে
–আমার মাথায় কিচ্ছু ঢুকছে না।এটা কিভাবে সম্ভব।
আরো কিছুক্ষন থাকলো তারপর চলে গেলো।আমি ভেবে পাচ্ছি না আমার সাথে এমন কে করবে?কার শত্রুতা আছে আমার সাথে?ভার্সিটিতে তো একটাই মানুষ আছে যার সাথে আমার…..আচ্ছা উনি করেননিতো?ধুর আন্দাজে ওনাকেও দোষ দেয়াটা অন্যায়…
এভাবেই কেটে গেলো তিনদিন..আমি ভেবেই পেলাম না।সন্ধ্যায় শুয়ে আছি বাবা রুমে আসলো
–মা কেমন আছিস এখন?
–ভালো আছি বাবা..
–তোর জন্য অনেক চিন্তাই ছিলাম রে এখন তোকে দেখে একটু চিন্তা কমলো
(আমি হালকা হাসলাম)
–মা তোর জন্য একটা জিনিস এনেছি..
–কি জিনিস বাবা?
–এই নে,নিজেই দেখ
আমি প্যাকেট টা খুললাম,,
–আইফোন!!
–হ্যা
–থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ বাবা।লাভ ইউ,
বাবার গলা জড়িয়ে ধরে গালে চুমু দিলাম একটা বাবাও আমার কপালে চুমু দিয়ে চলে গেলো।আমার আগের নাম্বারটাই আছে দেখি।
রাত ২ টা বাজে,হটাত একটা কল আসলো ঘুম ভেঙে গেলো।নাম্বার টা আননোন চিনতে পারলাম না।কেটে গেলো,আবার কল দিলো আমি রিসিভ করে হ্যালো বলেছি কেটে দিলো।
–আজব তো!রাত দুইটার সময় কল দিয়ে ঘুম ভাঙাই আবার কথা না বলেই কেটে দেই।ফালতু পোলাপান কোথাকার…যত্তসব
ফোন রেখে আবার শুলাম এবার একটা মেসেজ এলো,লক স্ক্রিন থেকে দেখলাম সেই নাম্বার থেকে মেসেজ
‘আমাকে ক্ষমা করে দিও নিহীপাখি তোমাকে অনেক বেশিই কষ্ট দিয়ে ফেলেছি,আমি যদি জানতাম বন্ধ ঘরে তোমার দম আটকে আসে আমি কোনদিন ওমন করতাম না’
–কে এটা?আমাকে নিহীপাখি বললো আবার ক্ষমা চাইলো।ব্যাপারটা কি?আমি অনেকবার কল দিলান নাম্বার অফ। কিছুই মাথাই ঢুকছে না।আর তাছাড়া আমাকে তো ওই নামে কেউ ডাকে না খালু ওই পিচ্চিটা কোন ভাই সে একদিন চিঠিতে ওয়েট ওয়েট।।ওই লোকটাই কি তাহলে আমাকে ওইভাবে….কি খারাপ!!আমাকে এতোদিন কতোই না কেয়ার করার নাটক করছে আর নিজে কিনা…শয়তান বেটা একবার তোরে পাই আস্ত রাখুম না।তুই তো আর আমকে চিনিস না।
সকালে খুব জোর করে ভার্সিটিতে এলাম মা আসতে দেবে না তাও অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে এসেছি।
–নিহু সেই কখন থেকে ভার্সিটি চক্কর দিচ্ছি তুই কি করছিস বলত।আমার তো পা ব্যাথা করছে।
–……….
–ধুর আমি আর হাটতে পারবো না,তুই যেখানে যাবি যা।
মীরা ঘাসের উপর বসে পড়লো।আমি খুজেই চলেছি কিন্তু পেলাম না।ওই পিচ্চি ছেলেটা কোথাও নেই।কিন্তু ওর যে খুব দরকার,তা না হলে তো লোকটার ব্যাপারে কিছুই জানতে পারবো না আমি।খুজে পেলাম না।
(দেখতে দেখতে কেটে গেছে ছয় মাস।আমার সাথে কোন অস্বাভিক কিছু ঘটেনি আমিও আগের ব্যাপার টা নিয়ে মাথা ঘামাই না।এদিকে শাওনের সাথে আমার অনেক ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে,শুধু বন্ধুত্ব বললে ভুল হবে,ও হয়তো আমকে পছন্দ করে তবে আমি ওকে বন্ধুই ভাবি আপাতত,ফিউচারে কিছু হতেও পারে)
বর্ষাকাল এখন আমি আজ গাড়ি আনিনি,একটা রিক্সাও নেই,কি করবো ভাবছি হটাত শাওন আসল,
–এই যে মিস বাসায় যাবেন না??
–……….(মন খারাপ করে দাড়িয়ে আছি)
–কি হয়েছে মন খারাপ কেন?
–গাড়ি আনিনি আর রাস্তাই একটা রিক্সাও নাই।কিভাবে যাবো?
–ওহ এই ব্যাপার তুমি চাইলে আমার সাথে শেয়ারে ছাতার নিচে আসতে পারো(মাথা চুলকাতে চুলকাতে সে বলে আমিও কিছু না বলেই ছাতার নিচে চলে যাই)
–নিহীন
–হুম?
–তোমার কদম ফুল কেমন লাগে?
–ভালো লাগে অনেক..
–আচ্ছা।নাও তোমার বাসায় চলে এসেছি।
সত্যিই তো বাসা এসে গেছে,গল্প করতে করতে কখন যে চলে এসেছি খেয়াল করিনি।আমি ওকে বাই বলে বাসার ভিতরে ঢুকে পড়ি।
ফ্রেস হয়ে ফোন চেক করে দেখি শাওনের মেসেজ
‘ধন্যবাদ আমার সাথে এটুকু সময় হাটার জন্য’
আমি মেসেজটা পড়ে মুচকি একটা হাসি দিলাম।
রাতে শাওনের সাথে প্রায় ২ টা পর্যন্ত চ্যাট করলাম,
–নিহীন,আমার না একটুটু কাজ আছে,আমি কাল কথা বলবো।এখন বাই প্লিজ কিছু মনে করো না
–ওকে।আর কি মনে করবো।বাই তাহলে টেক কেয়ার
–গুড নাইট।
আমি ঘুমিয়ে পড়লাম,ভোরে নামাজ পড়তে উঠেছি।নামাজ শেষে সকালের সূর্যটা দেখতে বেশ ভালোই লাগে,আমি ব্যালকনিতে যেয়ে তো শকড,,ফ্লোরে একগুচ্ছ কদম আর একটা চিঠি।কিন্তু এটা কে রেখে গেলো এখানে,রুম তো ভিতর থেকে লকড ছিলো তাহলে কেমনে কি?কে এসে আমার বেলকনিতে রাখলো?চিঠিটা খুলে দেখলাম,
“এই একগুচ্ছ কদম শুধুই তোমার”
আমার মাথায় কিছুই আসছে না।আচ্ছা এটা শাওনের কাজ না তো??
ভার্সিটিতে যেয়ে শাওনকে ধরলাম কিন্তু ও বলল করেনি এমন কাজ।অনেক বার শুনলাম কিন্তু ও একি কথা বলছে ও জানেনা।আমার মনে হলো ও মিথ্যা বললো।
কেটে গেল আরো কয়েক মাস,ফাইলাম এক্সাম কাছেই প্রায়।শাওনের সাথে এখন রাতে ওতো কথা বলিনা,সারা বছর ফাকি দিছি তাই এখন সব পড়া লাগছে।একদিন রাত জেগে পড়ছি একটা মেসেজ আসলো,নাম্বারটা তো সেই লোকটার,হ্যা আমি তো ওইদিন ওনার নাম্বার শয়তান বেটা দিয়ে সেভ করে রাখছিলাম যাতে পরে নক দিলে চিনতে পারি তাড়াতাড়ি মেসেজ সিন করলাম,
‘একটু বেলকনিতে আসবে নিহীপাখি।তোমাকে একবার দেখেই চলে যাব’
আমি বেশ শকড হলাম,আমাকে বেলকনিতে যেতে বললো।যাওয়ার জন্য উঠে দাড়ালাম কিন্তু আমার সাথে ওনার করা অন্যায়টার কথা মনে পড়ে গেলো,খুব রাগ হল।
__’নিহীপাখি আসো না প্লিজ’
__’কে আপনি?’
__’সময় হলে জানতে পারবে,প্লিজ এখন একবার এসো না প্লিজ।তোমাকে না দেখে পড়ায় মন বসাতে পারছি না।প্লিজ’
__’যাবো না’
__’আই বেগ ইউ একবার এস,খুব মশা তোমার বাসার নিচে।দাড়াতে পারছি না।প্লিজ’
ওনার মেসেজটা দেখে খুব হাসি পেয়ে গেল,ঠিক হয়েছে আরো মশা কামড়াক আমি তো যাবো না।বইটা হাতে নিলাম হটাত মনে হল আমি কি পাগল?যাকে এতদিন খুজেছি সে আমার বাসার নিচে দাড়িয়ে আর আমি কিনা তাকে দেখতেতে গেলাম না ধুর…..তাড়াহুড়া করে দৌড়ে বেলকনিতে গেলাম কিন্তু নিচে কাউকেই দেখলাম,মনে হয় চলে গেছে।সত্যিই তো যে মশা তাতে ৫ মিনিট দাড়ানো যাই না।রুমে এসে মনটা খারাপ হয়ে গেল।
মেসেজ আসলো,,
–থ্যাঙ্কু ইউ সো মাচ নিহীপাখি,আমার খুব ভালো লাগছে তোমাকে দেখতে পেয়ে।অনেক অনেক থ্যাঙ্কস।
–আপনি আমাকে দেখতে পেয়েছেন?
–হ্যা।এই প্রথমবার তোমাকে সামনা সামনি হিজাব বাদে দেখলাম,শুধু হিজাব কেন বলছি ওরনা বাদে দেখলাম,খুব সুন্দর লাগছিলো গো তোমাকে(লজ্জার ইমুজি)
এ্যা..শীট!আমি তো তাড়াহুড়া ওরনা নিয়ে যেতে ভুলে গিছিলাম বেশ লজ্জা লাগলো কিন্তু নিচে তোল কেউ ছিলো না তাহলে…..
আবার মেসেজ,
__তোমাকে লুকিয়ে দেখেছি নিহীন তুমি হাজার চেষ্টা করেও দেখতে পারবে না।ভালো থেক নিহীন,,লাই ইউ
আমি মেসেজ দিলাম আপনি কে কিন্তু নো রিপ্লাই,বেশ সময় কেটে গেলো।কল দিলাম নাম্বার অফ।আমি মীরাকে কল দিলাম কিন্তু ওউ কিছুই বুঝলো না।
ফাইনাল এক্সাম শেষ।এ কদিনে রোজ আমি শাওন কে খুটিয়ে দেখি যে লোকটা ও কিনা।কিন্তু ওর কথাবার্তা ওনেক কনফিউজড করে দেই আমাকে।আজ সেকেন্ড ইয়ারের প্রথম দিন আজও গাড়ি একা চালিয়ে এসেছি যেমনটা এক বছর আগে এসেছিলাম কিন্তু সেদিন যা ঘটেছিলো তা ভাবলেই কলিজা শুকিয়ে যায়।আজ খুব সৌভিক ভাইর কথা মনে পড়ছে।
–আচ্ছা কোথায় উনি?হটাত করেই ক্যাম্পাসের ক্রাশ বয়য় উধাও হয়ে গেলো কেন?নবীন বরনের দিন থেকে সৌভিক বা শিবলি কারোর সাথেই দেখা হয়নি।মাঝে মাঝে ক্যাম্পাসে খুজেছি কিন্তু পাইনি।ধুর ওনাদের কথা ভাবছি কেন আমি?
গাড়ি পার্ক করে ভিতরে গেলাম।ক্যাম্পাসের পুকুর পাড়ের দিকে কেমন যেন ভীড় জমে আছে।আমিও এগিয়ে গেলাম..
–সৌভিক ভাই…
আমার কথাই সবাই তাকিয়ে পড়লো।কিছুক্ষন পর আমাকে দেখে উনি উঠে দাড়ালেন।রুম্পা আপু বলে উঠলো
–কিরে গান গাইবি না??
–ফালতু মেয়ে ছেলের সামনে আমি গান গাইবো না।
কথাটা আমার দিকে তাকিয়ে বলাই সবাই আমার দিকে তাকালো।আমার খুব খারাপ লাগল আজ এতোদিন পর দেখা হলো তাও উনি এমন করলেন।আমি আর এক মুহুর্ত দাড়ালাম না চলে আসলাম ওখান থেকে….
চলবে…
(গল্পটা কেমন লাগছে জানাবেন আর কোন ভুল হলে ক্ষমা করবেন..ধন্যবাদ)