প্রেম_পাগলামি #নিহীন_রুবাইয়াত #পর্ব:১৮

0
355

#প্রেম_পাগলামি
#নিহীন_রুবাইয়াত
#পর্ব:১৮

খাওয়া শেষ করে,দুজন পানি খেয়ে নিলাম।তারপর উনি আবার গাড়ি স্টার্ট দিলেন।সন্ধ্যা হয়ে গেছে প্রায়।আমি গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে শুয়ে আছি।
–নিহীন
ওনার ডাকে ঘাড় ঘুরালাম।
–কেমন লাগল আজ সবার সাথে পরিচিত হয়ে?
–সত্যি বলতে অনেক অনেক ভালো লেগেছে আমার।থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ।
–থ্যাঙ্কস দেয়া লাগবে না।

উনি গাড়ি চালাচ্ছে,শহর থেকে বেশ দূরেই এসে গেছি মনে হচ্ছে।হটাত ফোনে কল আসলো,আমি ব্যাগ থেকে ফোন বের করেই দেখি মা কল দিয়েছে।স্ক্রিনে মা লেখা দেখায় আমার হাত পা কাপা শুরু করলো।
–মাম মাম মা…!!
আমি তো এতক্ষন বাসার কথা ভুলেই গেছিলাম,বাসায় তো কিছুই জানাইনি আর এদিকে সন্ধ্যা হয়ে গেছে বাসায় যায়নি।নিশ্চয় সবাই অনেক চিন্তা করছে।বাবা নিশ্চয় অনেক রেগে গেছে আজ যে কপালে কি আছে আল্লাহই জানে।আমি এখন কি করবো?এসব ভাবতে ভাবতেই ফোন কেটে যায়।আমি তাও স্ক্রিনের দাকি তাকিয়ে থাকি।উনি গাড়ি খুন জোরে ব্রেক কষে।আমি কোনমতে নিজেকে সামলায়।আমি ওনার দিকে তাকানোর আগেই গাড়িতে কেউ একজন উঠে পড়ে,আমি পিছু ঘুরে লোকটা কে দেখেয় শকড।পিছনে শাওন বসে আছে।
–ভাই চল,অনেক লেট হয়ে গেছে,তোর জন্য আমিই ফেসে যাবো।

সৌভিক ভাইয়া গাড়ি স্টার্ট দিলেন আর শাওন আমাকে না দেখার ভান করে ফোন বের বসে রইলো।
–কি হচ্ছে টা কি এটা?শাওন তুমি এখানে?
–তাড়াতাড়ি বাযায় যেতে হবে,সবাই ওয়েট করছে আমাদের জন্য।(শাওন,সৌভিক ভাইর দিকে তাকিয়ে কথাটা বললেন।আমার কথার যেন কোন পাত্তাই দিলেন)
–আজব তো শাওন তুমি আমার কথার উত্তর দিচ্ছো না কেন?আর আপনাদেরই বা কি সম্পর্ক আর কোথায় যাচ্ছি আমরা?
–……………..
–চুপ করে আছেন কেন?বলুন কিছু?শাওন তুমিই না চুপ কেন?তোমরা কি পূর্ব পরিচিত?

আমার কথায় কেউ কোন উত্তর দিলো না।এরা কি আগে থেকেই চেনে একে অপরকে?আমার কথার তো কোন উত্তরও দিচ্ছে না।কি হচ্ছে কিছুই বুঝতেছি না।আমাকে দুজন এভাবে ইগনোর করছে কেন?আমার মাথায় আগুন উঠে গেলো।খুব জোরে চিল্লিয়ে উঠলাম,,
–তোমরা কি কিছু বলবে??
–……………………
–কথা বলতে কি সমস্যা?শেষবারের মতো বলছি যদি না বলো আমি কিন্তু এই চলন্ত গাড়ি থেকে লাফ দেবো।

এবারো কোন রিয়াকশন নেই,আমার রাগ আরো বেড়ে গেলো।মন চাচ্ছে সত্যিই লাফ দিই।আমি একটা মানুষ সেই কখন থেকে চিল্লিয়ে যাচ্ছে কিন্তু এদের কোন হেলদোলই নেই।দুজনের দিকে একবার তাকালাম ইচ্ছা হলো গলা টিপে ধরি।আমি সৌভিক ভাইকে আবারো গাড়ি থামাতে বলবো কিন্তু তার আগেই উনি গাড়ি থামিয়ে দিলেন।উনি সাথে সাথে বের হয়ে গেলেন,শাওনও নেমে গেলো গাড়ি থেকে।সামনে এসে গাড়ির গেইট খুলে দিলো,
–নামো নিহীন।
–কোথায় এসেছি আমরা?
–কথা বলার সময় না এখন নিহীন,নামো।ফাস্ট।
–না আমি নামবো না।

শাওন আমার হাত ধরে নামালো।গাড়ির ভিতর থেকে এতোক্ষন খুব ভালো বুঝতে পারিনি কিন্তু এখন গাড়ির থেকে নামার পর খেয়াল করলাম আমরা একটা কনভোকেশন হলের সামনে দাড়িয়ে।
–এখানে কি করছি আমরা??এখানে নিয়ে এলে কেন?
–সব বল
–না আগে বলো তোমাদের কি সম্পর্ক?তোমরা কি আগে থেকে চেনো?আমাকে আগে কেন বলোনি এটাও কি তোমাদের নতুন কোন সিক্রেট?
–নিহীন চুপ করো আর আমার কথা শোনো।
–না আমি শুনবো না।তুমি

–নিহী তোরা এখনো রেডি হসনি?
সাইড থেকে মায়ের গলা শুনে আমি তো থ মেরে গেছি।মা এখানে কেন??মা কথা বলতে বলতে আমার কাছে চলে এলো।
–আচ্ছা তোরে ফোন দিয়ে পাওয়া যায় না কেন?ভাগ্যিস শাওনের সাথে কথা হলো।আচ্ছা শাওন,সৌরভ এর মেজ ভাইয়ের জন্মদিন তাই তুই আর শাওন মিলে হল ডেকোরেট করছিস এতে কি আমি তোকে বকা দেবো।পাগল মেয়ে।(আমার গালে হাত দিয়ে মা কথাটা বলে)

মায়ের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলাম না।মা আমাকে তাড়াতাড়ি আসতে বলে চলে গেলো আমি শাওনের কাছে জিজ্ঞেস করবো এসবের মানে কি কিন্তু তা আর হলো না,আপু এসে হাজির।
–নিহী তুই এখনো রেডি হসনি?শাওন তুমিও রেডি হওনি?যাও রেডি হয়ে নাও।
–ওকে ভাবি(শাওন মুচকি হেসে চলে যায় আর আমি তো বোকা বনে দাড়িয়েই আছি)
–নিহী তোর বন্ধু শাওন যে সৌরভের সেই ভাই আমি তো আগে চিনতেই পারিনি।আজ যখন শাওন সৌরভের সাথে বাসায় এলো তখন চিনেছি।তখনি তো সৌরভ বললো আজ ওর ভাইর বার্থডে তাই নাকি আমাদের ফুল ফ্যামিলি ইনভাইটেড আর শাওনও বলল যে ডেকোরেশনে তুই নাকি ওর হেল্প করবি।জানিস তোর ওপরে অনেক রাগ হচ্ছিলো তখন আমি তো তোর নিজের বোন কোনদিন তো আমার বার্থডেতে কিছু করিস না।যাই হোক,তুই এখনো রেডি হসনি কেন,আগে যা রেডি হয়ে নে।তুই কোন ড্রেস পরবি তা তো আমি জানি না।পরে তোর আলমারি থেকে একটা নীল শাড়ি নিয়ে এসেছি।শাড়িটা বেশ সুন্দর,কবে কিনলি রে?আমাকে আগে দেখাসনি কেন?

আপুর ননস্টপ বকবকানি কিছুই আমার মাথায় তো গেলোই না উল্টা মাথা ঘুরা শুরু করলো,মাথার ভিতরে যেন মৌমাছি ভন ভন করছে।আমি দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরলাম।
–নিহী তুই ঠিক আছিস??
–হু হুম??
–কি হুম?তুই ঠিক আছিস?

আমি আপুর দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছি আমার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।আপু আমার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলো।একটা রুমের ভিতরে গিয়ে আমাকে বেডে বসিয়ে দরজা লক করে দিলো।বেডের এক সাইড থেকে একটা প্যাকেট নিল।ও এখনো কথা বলেই যাচ্ছে কিন্তু আমার কানে গেলো না,কানে যেন কেউ তালা মেতে দিয়েছে।কিছুক্ষন পর আপু আমাকে নাড়া দিয়ে উঠলো,
–নিহী,নিহী…
–হুম
–কি ভাবছিস এতো।
–কি কিছু না।

তোকে রেডি করে দিলাম তাও কিছু বললি না এতোক্ষন ধরে কথা বলছি তাতেও কোন সাড়া নেই।তুই যে মাঝে মাঝে কি করিস আমি একদম বুঝি না।
–তাড়াতাড়ি নিচে আয়,কেক কাটা হবে তো।

ও কথাটা বলে নিচে চলে যায়।আমি ধপ করে বসে পড়ি।একটুপর আমি স্বাভাবিক হয়।মাথা ঠান্ডা করে ভাবছি হচ্ছে টা কি এতোক্ষন।প্রথম থেকে ভাবতে শুরু করলাম,,
আমি আর সৌভিক ভাই গাড়িতে ছিলাম,শাওন হটাত চলে এলো তারপর আমি অনেকবার জানতে চাওয়ার পরও কিছু বলেনি।তারপর এখানে এসে যা যা হলো এসব তো আমার ভাবনার বাইরে।আমি বসে বসেই ভাবছি তখনি দরজাই নক দিলো কেউ,আমি তাকালাম দেখি শাওন।শাওনকে দেখেই আমি উঠে দাড়ালাম।কি হচ্ছে এসব আমার জানা লাগবে আর ও ছাড়া কেউ বলতে পারবে না এসব।
–শাওন…
–আমি জানি তুমি কি বলবে।ডোন্ট বি হায়পার আমি সব বলছি(ও আমার পাশে এসে বসলো)
–তুমি অনেক কিছুই জানো না নিহীন,কিন্তু আজি সব জানবে।সত্যিটা জানার পর তোমার হয়তো অনেক রাগ হবে,কান্না পাবে কিন্তু আমি বা আমরা নিরুপায় ছিলাম।
–কি এমন সত্যি যেটা জানলে আমার রাগ হবে,কান্না পাবে?
–একটু ধৈর্য ধরো,সব জানতে পারবে।তার আগে শোন,আমি সৌরভ ভাইয়ার আপন ভাই না।ওরা তো দুই ভাই।আমি ওদের মামার ছেলে,ছোট বেলায় আমার বাবা-মা মারা যায় তখনি আমার ফুফু মানে সৌরভ ভাইয়ার মা আমাকে ওদের বাসায় নিয়ে যায় সেদিন থেকে আমি ওই বাড়ির ছোট ছেলে।কিন্তু ওই বাড়ির আসল ছোট ছেলে যদিও আমার জন্য এখন মেজ ছেলে হয়ে গেছে আজ তার জন্মদিন,তুমি তো আজ সারাদিন বাইরে ছিলে তাই আমিই তোমার বাসায় বলেছিলাম ভাইয়র বার্থডের ডেকোরেশন এ তুমি আমাকে সাহায্য করছো।এটা না বললে সবাই সন্দেহ করতো।

আমি ঠিকমতো বুঝলাম না ওর কথা।
–এটাই কি সত্যি?কিন্তু সৌভিক ভাইর সাথে আছি আমি তুমি সেটা কিভাবে জানলে আর ওনাকে তুমি কিভাবে চেনো?
–বললাম তো সব জানবে তার আগে নিচে চলো।আর বিভেব করবে এমন যে তুমি সব আগে থেকেই জানো আর তুমিই সব কাজ করেছো।
–কিন্তু…
–এখম আর কোন কিন্তু না চলো।

ও আমার হাত ধরে আমাকে নিচে নিয়ে গেলো।নিচে যেতেই আমার হাত ছেড়ে দিলো।আশেপাশের সাজসজ্জা দেখে আমি তো হা করে ফেললাম,বিল গেটসের ছেলের জন্মদিনেও এতো সাজানো হয়নি হয়তো।আমি চারিদিকে ঘুরে ঘুরে সব দেখছি মা আমার হাত ধরে বললো,,
–বাহ!আমার মেয়েটাকে তো খুব সুন্দর লাগছে একদম পরীর মতো।আর এই ডেকোরেশন ও অনেক সুন্দর হয়েছে মা।

আমি মাকে বলতে চাইলাম যে এসব করিনি কিন্তু শাওন আমকে নিষেধ করেছে আর তাছাড়া আমি যদি এখন বলি আমি আগে এখানে আসিই নি তাহলে মা জানতে চাইবে সারাদিন কই ছিলাম?তখন কি বলবো আমি।আমি আর মা কথা বলতে বলতে মাইকে এনাউন্স করা হলো।স্টেজের দিকে তাকিয়ে দেখি সৌরভ ভাইয়া আর আপু।
–লেডিস এন্ড জেন্টালম্যান গুড ইভিনিং।আজ আপনাদের সকলকে এখানে ডাকা হয়েছে আর তার জন্য একটা স্পেশাল কারন আছে।আর সেটা হলো আজ আমাদের মেজোর জন্মদিন।

সবাই হাত তালি দিয়ে উঠলো।সৌরভ ভাইয়া স্টেজে ওনার বাবা-মা,দাদু,শাওন এমনকি আমার বাবা-মাকেও ডাকল।সবাই স্টেজে যাওয়ার পর গেস্টরা চিল্লিয়ে উঠলো,
–সৌরভ হয়ার ইজ আওয়ার হিরো??
–কুল কুল আপনাদের হিরো এখনি চলে আসবে।
সবাই আবার হৈচৈ শুরু করলো।সৌরভ ভাইয়া এবার সবাইকে থামতে বললো কারন ওনার ভাই চলে এসেছে।সবাই গেটের দিকে তাকালো আমিও তাকিয়ে আছি।আমিও তো দেখতে চাই লোকটা কে।লাইট অফ হয়ে গেলো রুমের।একটা স্পটলাইট অন হলো,একজন মানুষ সেখানে দাড়িয়ে।কোর্ট-প্যান্ট পরা মানুষটি কিন্তু এখনো তার মুখ দেখা যাচ্ছে না।লোকটি এক পা দুপা করে এগিয়ে আসছে।যতো আগাচ্ছে আমার হার্টবিট ততো বেড়ে যাচ্ছে।মনের মধ্যে একটা কথায় বাজছে
–কে আপনি?

চলবে……..

নেক্সট পার্টে আপনাদের জন্য চমক অপেক্ষা করছে
(কোন ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন।আর নেক্সট নেক্সট না করে গল্পটা কেমন লাগছে সেটা জানালে বেশি খুশি হবো।ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here