প্রেম_পাগলামি #নিহীন_রুবাইয়াত #পর্ব:১৯

0
367

#প্রেম_পাগলামি
#নিহীন_রুবাইয়াত
#পর্ব:১৯

লোকটি এক পা দুপা করে এগিয়ে আসছে।যতো আগাচ্ছে আমার হার্টবিট ততো বেড়ে যাচ্ছে।মনের মধ্যে একটা কথায় বাজছে
–কে আপনি?কে?

লোকটা আমার ঠিক সামনে,যদিও তার মুখ আমার দিকে না,আমি শুধু তার এক সাইডই দেখতে পারছি।কিন্তু মুখটা দেখা যাচ্ছে না।স্পট লাইটটাও অফ হয়ে গেলো।হলরুমটা একদম ঘুটঘুটে অন্ধকার।কয়েক সেকেন্ড পর দুম করে কিছু লাইট জ্বলে উঠলো,আর সাথে অনেক টুকরো কাগজ।মানুষটার ওপর পড়ছে,এসবের মাঝে তার মুখটা আমি এখনো দেখতে পারছি না।নীরবতা কাটিয়ে সবাই একসাথে চিল্লিয়ে উঠলো,
–হ্যাপি বার্থডে সৌভিক
সাথে সাথে হলরুমটায় আলোর ছড়াছড়ি।আমি চাইলেই লোকটার মুখ দেখতে পারবো এখন কিন্তু আমি এখন মুখ দেখার অবস্থায় নেই।আমার কান যে থেমে গেছে,আমার চোখ আটকা পড়েছে স্টেজে থাকা আমার এবং নিলু আপার হবু শশুরবাড়ির লোকদের ওপর।সবাই কার নাম নিলো এটা?সৌভিক কেন বললো?আমার পা ভেঙে আসলো আমি যেন মাটিতে লুটিয়ে পড়বো এখনি।আমি এখনো ওদিকেই তাকিয়ে আছি।আমার চোখ শাওনের দিকে গেলো।আমার সাথে চোখাচোখি হতেই ও চোখ সরিয়ে নিলো।আমার চোখ যেন কিছুতেই চাইছে না আমি সামনে দাড়ানো লোকটিকে দেখি,আমি যাকে ভাবছি ইনি যদি সেই হয় তখন??আমার ভাবনায় আরো কিছুটা বিষ ঢেলে দিলেন নিলু আপার হবু শশুর।

–হ্যাপি বার্থডে মাই বয়।
–থ্যাঙ্ক ইউ বাবা।
ওনার গলা শুনে আমি বুঝে ফেলেছি উনিই সৌরভ ভাইয়া আর শাওনের ভাই।আমাকে এতোদিন ধরে দুই ভাই মিলে বোকা বানালো??ওনার পাশে শিবলি ভাইয়া,রুম্পা আপু,টিনা আপু,সাদাফ ভাইয়া।
বাবার সাথে কোলাকুলি শেষে উনি আমার দিকে তাকাই,মুখে খুব সুন্দর একটা হাসি।অন্য সময় হলে আমি হয়তো ক্রাশ খেয়ে যেতাম কিন্তু আজ কেন জানি না ঘেন্না লাগল।উনি স্টেজে গেলেন,সবাই ওনাকে একে একে উইশ করলো,কেক কাটা হলো,ফ্যামিলি ফটো তুললেন সবাই মিলে আমি কৌতুহলি চোখে চেয়ে আছি।পার্টির শেষের দিকে আমি একটা চেয়ারে বসে আছি এক কোনে।শাওন এসে আমার পাশে বসে,আমি একবার ওর দিকে তাকালাম ও আল্লাদি বাচ্চার মতো মুখ নিয়ে বসে আছে,আমি অভিমান,রাগ,কষ্টে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।
–সরি নিহীন,রিয়েলি সরি।
আমি ওর দিকে রাগি লুক দিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিয়েছি।
–প্লিজ নিহীন তুমি রাগ করো না।আমি তোমাকে আগেই বলতাম কিন্তু..
–কিন্তু কি শাওন?আমাকে বোকা বানাতে চেয়েছিলে তাই তো?আমার থেকে এতোগুলো সত্যি লুকিয়ে কি খুব মজা পেলে?কি এমন হয়ে যেতো আমি সব জানলে।তোমার ভাই দিনের পর দিন আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে তুমি সব জেনে শুনেও কিছু বলোনি।আমি তোমাকে অনেক ভালো বন্ধু ভাবতাম কিন্তু তুমি,তুমি কি করলে এতোগুলো সত্যি লুকালে?ইউ চিটেড মি।আই হেট ইউ এন্ড ব্রাদার অলসো।

আমি উঠে চলে আসলাম।শাওন আমার পিছু পিছু দৌড়াচ্ছে।হল থেকে বের হয়ে এসে ফুটপাত ধরে হাটছি।আমার মাথায় আগুন লেগে গেছে,ওই দুই ভাই আমাকে এভাবে বোকা বানাবে কোনদিন কল্পনাও করিনি।কতো বড় সাহস আমাকে,নিহীন রে বোকা বানালো।ওইদুইটার মাথার চুল ছিড়তে ইচ্ছা করছে আমার।রাগে নিজের মনের সাথে কথা বলতে বলতে কখন যে রোডের মাঝে এসে গেছি খেয়াল নেই।খেয়াল না থাকায় একটা চলন্ত গাড়ির সাথে ধাক্কা খাচ্ছিলাম প্রায়,কিন্তু গাড়ির ড্রাইভার ঠিক সময়ে ব্রেক কষেছে হয়তো তাই বেচে গেলাম।আমার চোখে হাত থাকায় গাড়ির ভিতরের মানুষগুলোকে দেখতে পারিনি।আমি এখনো ওভাবেই দাড়িয়ে আছি চোখে মুখে হাত দিয়ে আসলে হটাত গাড়ি চলে আসায় ভয়ে চোখমুখ খিচে হাত দিয়ে চোখমুখ ঢেকে ফেলেছিলাম।পরিচিত কন্ঠে হাত সরালাম।বাবাকে চোখের সামনে দেখেই জড়িয়ে ধরলাম।বাবাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেদে দিলাম,আজ যদি গাড়িটা আমায় মেরে দিতো তাহলে?
–নিহী মা তুই এখানে কি করছিস?কাউকে কিছু না বলে চলে আসলি কেন?তোকে কোথাও না পেয়ে তোর মা তো পাগল হয়ে যাচ্ছে,ফোনটাও সাথে নিয়ে আসিসনি আর এভাবে রোডের মাঝখানে কেউ আসে?আমার গাড়ির জায়গাই যদি অন্য কোন গাড়ি থাকতো বা ড্রাইভারের বদলে অন্য কেউ যদি ব্রেক না কষতো তখন?কি যে করিস না তুই মা।কান্না থামা,কিচ্ছু হয়নি তো সব ঠিক আছে
–বাবা বাসায় যাবো

আমি কাদতে কাদতে শুধু এটুকুই বললাম।বাসায় আসার পর মা,দাদি আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করছে আর বারবার জানতে চাইছে আমি কেন কিছু না বলে বের হয়ে এসেছি।আমি কারোর কোন কথারি উত্তর দিলাম না চুপচাপ বসে রইলাম না পেরে বাবা সবাইকে চুপ করতে বললো আর আমাকে ঘরে যেতে বলল,আমি রুমে এসে দরজা লক করে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।গায়ে থাকা শাড়িটা খুলার সময় খেয়াল করলাম এটা তো সেই শাড়িটা যেটা আমায় ওই পিচ্চি ছেলেটা দিয়েগিছিলো ওই অপরিচিত লোকটার হয়ে,এতোক্ষন পরে আছি কিন্তু খেয়ালি করলাম না,অদ্ভুত।অবশ্য খেয়াল হবে কি করে যা ঘটে গেলো এই সময়টুকুতে তাতে খেয়াল না হওয়ারি কথা।ওয়াশরুমের আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে বেশ খানিক্ষন পর্যবেক্ষণ করলাম।কি আজব ব্যাপার আমার সাথে ঘটে যাওয়া কিছুই আমার মনে আসলো না।হাসিমুখে আয়নার দিকে তাকাতেই কেন জানি না শাওন আর সৌভিকের আমার সাথে করা অন্যায়টা মনে পড়ে গেলো আবার।রাগে শাড়িটা টান মেরে গা থেকে ফেলে দিলাম।ঘন্টা দেড়েক শাওয়ার নিলাম।চোখের সামনে বারবার ওই গাড়ি চলে আসার দৃশ্যটা ভাসছে কিন্তু মন ও কম যায় না।ওই দুই ভাই আমার থেকে সত্যিটা কেন লুকালো সেটা জানার ইচ্ছা আরো তীব্র হয়ে উঠছে।এমনিতেই শীতকাল এখনো যায়নি,এতো রাতে শাওয়ার নিচ্ছি,পানি গরমও করিনি।শীত শীত লাগা শুরু করলো।শাওয়ার নেয়ার পর মাথা অনেকটা ঠান্ডা হয়েছে,ঠান্ডা মাথায় এবার সব ভাববো ওনারা কেন এমন করলো? টাওয়াল পরে বাইরে আসলাম।এসেই ওয়াশরুমে ঢুকেছি তাই সাথে জামাকাপড় ও নিইনি।রুমে এসে ওয়ারড্রব থেকে কাপড় বের করতে যাবো হটাত মনে হলো বেলকনিতে কারো ছায়া সরে গেলো।আমার বুকটা ধুক করে উঠলো।আমি ভয় পেয়ে গেলাম,এখনো যেন কারো ছায়া স্পষ্ট কিন্তু এতো রাতে কে আসবে?আমি দুয়েকটা ভেজা ঢোক গিললাম তারপর এক পা দু পা করে এগোতে লাগলাম।ভয় ও লাগছে আবার আসলেই কেউ দাড়িয়ে আছে নাকি আমার মনের ভুল সেটাও জানতে ইচ্ছা করছে।আমি এইভাবে কয়েক পা যাওয়ার পরি আমার ফোন বেজে ওঠে,রিংটোন শুনে আমি ভয় পেয়ে উঠি।ফোন হাতে নিয়ে দেখি মীরা।আমি রিসিভ করলাম।
–হ্যালো দোস্ত তুই জানিস আজ সৌভিক ভাইয়ার বার্থডে।এই তুই আমাকে আগে কেন বলিসনি ওনার ভাইর সাথেই নিলু আপার বিয়ে হবে তা,তোর ফুল ফ্যামিলি ছিলো।কুত্তি তুই আমার থেকে এতো বড় সত্যি লুকালি?আমি না তোর বেস্টু তুই কিভাবে পারলি এটা।আচ্ছা তুই কি ছিলি না পার্টিতে তোর একটা ছবিও কেন পোষ্ট করিনি সৌভিক ভাই?ওহ নিহু আরো একটা কথা,সৌভিক ভাইয়ার ফ্যামিলি ফটোতে শাওনের মতো কেউ একজন ছিলো জানিস…আমি তো

মীরার এই ননস্টপ বকবকানিতে আমার মেজাজ আরো হাই হয়ে গেলো।কোন কথা না বলেই কেটে দিলাম কল।ফোন সুইচড অফ করে বেডে ছুড়ে মারলাম।বেলকনির দিকে চোখ পড়তেই মনে পড়লো এখানে কেউ একজন ছিলো।আমি ছুটে গেলাম কিন্তু কাউকে পেলাম না।বেলকনি পুরো ফাকা।টাওয়াল গায়ে চলে এসেছি খেয়াল করে তাড়াতাড়ি রুমে আসতে যাবো পায়ের নিচে কাগজ মতো কিছু পড়লো।পা সরিয়ে দেখলাম সত্যিই একটা কাগজ।আমি কাগজটা নিয়ে খুলে দেখলাম,

“নীল শাড়িটাই তোমাকে মারাত্মক সুন্দর লাগছিলো নিহীপাখি”
হাতের লেখা দেখে আমি হা হয়ে গেলাম,এটা সেই লোকটাই যে শাড়িটা দিয়েছে।তারমানে এখানে উনিই ছিলো।ধুর!মীরা কল না দিলে আজ দেখেই নিতাম।আবার রাগ বেড়ে গেলো,এমনিতেই ওই দুই ভাইয়ের ওপর রাগ এখন আবার এসব।রাগে বিছানার চাদর তুলে মাটিতে ফেললাম,বালিশ ছিড়ে সব তুলো বের করে ফেলে বসে রইলাম।

পরের দিন সকালে ভার্সিটিতে যেয়েই মীরার রাতের বকবকানি শুরু হলো।বাধ্য হয়ে ওরে সব বললাম।আমার কথা শুনে ওউ বেশ অবাক হলো।

চলবে………..
(কোন ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন।আর নেক্সট নেক্সট না করে গল্পটা কেমন লাগছে সেটা জানালে বেশি খুশি হবো।ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here