প্রেম_পাগলামি #নিহীন_রুবাইয়াত #পর্ব:২৩

0
388

#প্রেম_পাগলামি
#নিহীন_রুবাইয়াত
#পর্ব:২৩

নিচে এসে দেখি বাড়ি ডেকোরেশন শুরু হয়ে গেছে।দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো।আপুকে পার্লারের লোকেরা সাজিয়ে দিয়ে গেছে।বেগুনি রং এর লেহেঙ্গার ওপর গোল্ডেন স্টোনের কাজ তার সাথে ম্যাচিং করে গোল্ডেন হিজাব আর ভারী অর্নামেন্টস,হালকা সাজে নিলু একদম হিরোইন লাগছে।আমি আর মীরা দুজনি ব্লাক এর ওপর রেড স্টোনের লং ড্রেস পরেছি,কিছুদিন আগেই দুজন সেম বানিয়েছিলাম কিন্তু কোন ওকেশনে পরবো বুঝতে পারছিলাম না।আজ নিলু আপুর এংগেজমেন্ট এই কাজে লেগে গেলো।

আমি আর মীরা স্টেজের কাছে দাড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছি এমন সময় ভাইয়া এসে বললো ছেলে পক্ষ এসেছে আমরা যেন ওনাদের রিসিভ করতে চাই।ভাইয়ার কথা শুনে মীরা বললো,,
–নিহু চল চল
–কই?
–কই মানে?
–বর এসেছে তো?
–বর টা কি তোর??
–যাব বাবা আমার হবে কেন?
–তাহলে তোর এতো মাথা ব্যাথা ক্যান?ফুচকা খাচ্ছিস চুপচাপ সেটাই খা।
–কিন্তু সবাই যাচ্ছে তো??চল না আমরাও যা।
–না আমরা যাবো না।
–প্লিইইজ
আমি মীরার দিকে চোখ গরম করলাম ও আর কিছু বললো না।
সৌরভ ভাইয়া আর ওনার বাবা মা আগে আসলো ওনাদের দেখে আমরা সাইডে চলে গেলাম।সৌরভ ভাইয়াও নিলু আপার সাথে ম্যাচিং করে গোল্ডেন শেরওয়ানি পরেছে,জোস লাগছে ভাইয়াকে ক্রাশ খাওয়ার মতো।আমি এখনো ফুচকা খেয়েই চলেছি,মীরা গেলো আপুর কাছে আমি যায়নি।আপমনে একা একা দাড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছি,আহ!!কি শান্তিইইইইইইইইইইইইইইইইইই…চোখ বন্ধ করে একটা ফুচকা গালে দিয়ে চিবানো শুরু করলাম,হটাত আমার হাত থেকে কে যেন ফুচকার প্লেট টা কেড়ে নিলো।কার এতো বড় সাহস দেখার জন্য চোখ খুলতেই বিষম খেলাম,কাশতে লাগলাম,আমি কেশেই চলেছি কিন্তু সামনে দাড়ানো মানুষটার কোন গুরুত্বই নেই,সে আমার ফুচকার প্লেট থেকে ফুচকা নিয়ে নিলো একটা,গরুর মতো হা করে খেতে গেলো,আমি এখনো কাশছি।লোকটা ফুচকা গালে দিতে যাওয়ার সময় আড়চোখে আমার দিকে তাকাই।
–কি হয়েছে কাশছো কেন?
আমি হাত দিয়ে পানি ইশারা করছি কিন্তু ব্যাটা বোঝেই না।
–কি লাগবে?ভালো করে বলো…
আমি হাত দিয়ে পানির গ্লাস ইশারা করলাম উনি আমার দিকে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে মুখে হাত দিয়ে আস্তে আস্তে বলল,,
–মদ খাবা নাকি??ছি ছি ছি এসব খেতে হয় না নিহীন,এগুলো পচা জিনিস,পচা লোকেরা খাই।তুমি কি পচা মেয়ে যে এসব খাবে??
ব্যাটার কথা শুনে আমি তো আরো বিষম খেলাম,কি বলছে এসব?আমি মদ কেন চাইবো??উনি আবার বললেন মদটদ বাজে জিনিস আমি হাত দিয়ে ইশারা করলাম মদ না।উনি কিছুক্ষন পর বুঝলেন।
–ওহ আচ্ছা।তাও ভালো,,যাক ভালো মেয়ে।আচ্ছা তুমি কি চাচ্ছো ভালো করে বলো।
আমার ইচ্ছা হচ্ছে ওনার গলাটা টিপে দিতে।আমি যদি বলতেই পারতাম তাহলে কি আর তোরে বলতাম।আর কাশছি যখন নিশ্চয় পানিই চাইবো।এটা না বোঝার কি আছে??উনি কি লাগবে লাগবে কি করছে এর মধ্যেই মীরা চলে আসে।আমাকে কাশতে দেখে জিজ্ঞেস করে,
–নিহু কি হয়েছে তোর??সৌভিক ভাই এভাবে কাশছে কেন??
–কি জানি!!!আমিও সেই কখন থেকে জিজ্ঞেস করছি কিছুই বলছে না।
–এই নিহু…
আমি পানি ইশারা করলাম ও বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি পানি এনে দেই।পানি খেয়ে আমি মাথায় হাত দিয়ে একটা চেয়ারে বসে পড়লাম।
–তুমি পানি চাচ্ছিলে এতোক্ষন?
ওনার কথা শুনে রাগি চোখে তাকালাম।
–ভালো করে বোঝালেই তো আমি বুঝে যেতাম।
আমার আরো রাগ আরো বেড়ে গেলো।আমি আর কি করে বোঝালে উনি বুঝতো।আমার তো মনে হয় উনি ইচ্ছা করে এটা করলো অসভ্য ব্যাটা।
–তুমি কি রেগে আছো নিহীন??
ওনার এই কথাটা যেন আগুনে ঘি ঢালার মতো মনে হলো,তাও রাগ কন্ট্রোল করে বললাম,,
–না রাগবো কেন??
–যাক ভালো।
আমি মীরা আর উনিই ছিলাম এরি মাঝে আমাদের ইনভাইট করা কিছু মেয়ে এসে ওনার গায়ের ওপর ঢলে পড়লো।সবাই ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে পরিচিত হতে,উনি বেশ অস্বস্তিতে পড়ল যেন।
–হাই হ্যান্ডসাম।কেমন আছো?
–জি ভালো।আপনারা?
–আমরাও ভাল আছি..আচ্ছা তোমার নাম কি?তুমি কি পাত্র পক্ষ?
–হ্যা আমি বরের ভাই।
–ওয়াও ওসাম।
–বাই দা ওয়ে তুমি কিন্তু অনেক হ্যান্ডসাম
একটা মেয়ে তো ওনার গায়ে হাত দিলো এবার উনি একটু সরে গেলেন।মেয়েগুলো আরো ক্লোজ যাচ্ছে উনি হটাত,
–আসছি বাবা…আপু আমার বাবা ডাকছে আপনারা থাকেন আমি যাই।
উনি সবাইকে সাইড করে দ্রুত পায়ে চলে গেলেন।ওনার বাবা কিন্তু মোটেও ওনাকে ডাকিনি তাও উনি মিথ্যা বললেন।ওনার এমন নাজেহাল অবস্থা দেখে আমি আর মীরা হেসে দিলাম।আমাদের হাসির আওয়াজে মেয়েগুল আমাদের দিকে তাকালো,
–কি হয়েছে তোমরা হাসছো কেন?
আমরা কোনমতে হাসি থামিয়ে বললাম এমনিই।ওরা চলে গেলো।আমরা আবার হেসে দিলাম।আমরা হাসছি এরি মাঝে শাওন আসলো,,
–তোমরা হাসছো কেন?কি হয়েছে আমাকেও বলো আমিও হাসি।
শাওনকে দেখে আমার হাসি থেমে গেলো,কারন আমাকে বেশি কষ্ট তো ওই দিয়েছে।ওরে দেখে মীরা সৌভিক ভাইয়ের ব্যাপারটা বলে শাওন ও হেসে ফেলে।মীরা আর শাওন দুজনি হাসছে।শাওন আমার দিকে তাকাতেই আমার গম্ভির মুখ দেখে হাসি থামিয়ে বললো,,
–আমাকে কি এখনো ক্ষমা করোনি?
–……….
–কথাও বলবে না বুঝি??
–তোমাকে কি ক্ষমা করা যায়??আমার জায়গায় তুমি থাকলে কি পারতে ক্ষমা করতে??
–আই এম রিয়েলি সরি।আর লুকানোর একটা কারন ছিলো যেটা সময় আসলে তুমিও জানতে পারবে।
–কবে আসবে সে সময় শুনি?
–খুব তাড়াতাড়িই,,প্লিজ আর রাগ করে থেক না।প্লিজ
শাওনের মুখটা দেখে খুব মায়া হলো ইচ্ছা করছে না তাও ক্ষমা করে দিলাম।শাওন আমাকে অনেকগুলো থ্যাঙ্কস দিল।

আমি,মীরা আর কয়েকজন মিলে আপুকে আনলাম।এংগেজমেন্ট শেষ হলো।কিন্তু এই সম্পূর্ন অনুষ্ঠানে এক জোড়া চোখ আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো।আমি বেশ কয়েকবার দেখেছি কিন্তু বুঝে উঠতে পারলাম না উনি ওভাবে কেন তাকাচ্ছে।উনি এখনো আমার দিকে তাকিয়ে আছে।বিদায় বেলাও সৌভিক ভাই আমার দিকেই তাকিয়ে ছিলো।রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছি উনি আজ ওমন করে কেন তাকিয়ে ছিলো।
পরের দিন ভার্সিটিতে গেলাম সবাই দেখি আমার দিকে কেমনভাবে তাকিয়ে আছে।আমি নিজের ড্রেসের দিকে তাকালাম।না সব তো ঠিকি আছে তাহলে এভাবে কেন তাকাচ্ছে।মীরাও বুঝে উঠতে পারলো না।আমি না পেরে একটা জুনিয়র ছেলেকে ডাক দিলাম।
–এই ছেলে এদিক আসো।
ও আমার কথা মতো আসলো….
–আমার দিকে ওভাবে তাকিয়ে আছো এককেন?
–আপনাকে চিনে রাখার জন্য ভাবি..
–আমাকে চিনে রাখা…ওয়েট ওয়েট তুমি আমাকে কি বললে?ভাবিইইইই??কে ভাবিইইইই??কার ভাবি
–আপনি ভাবি
–আমি ভাবি মানে টা কি?কোন ভাইর বউ আমি তোমার?
–নাম বলা যাবে না এখন ভাবি।ভাই মানা করছে।

ছেলেটা আর কথা বলে না আরে দাড়াও কই যাও।দাড়াও…আমার কোন কথাই শোনে না।এভাবেই প্রায় তিন চারদিন চলে।আমি তো বিরক্ত হয়ে উঠি।আমার সাথেই কেন এমন হয়,একজন লুকিয়ে ভালোবাসে,আরে একজন তো কখনো আগুন তো কখনো পানি আবার উৎপত্তি হয়েছে এই নাম না জানা ভাইর।ভার্সিটিতে যেতেই ইচ্ছা করে।লাইফ টা জোক হয়ে দাড়িয়েছে।ভার্সিটিতে যেতে ইচ্ছা করে না তাও গেলাম,আমি আর মীরা টং এর দোকানে বসে চা খাচ্ছি তখনি শাওন আসে,,
–কি অবস্থা ভাবি??
–শাওন তুমিও
–হ্যা আমিও।তুমি তো পাবলিক ভাবি হয়ে গেছো।হাহাহহাহাহহহহহ(ওর কথায় বেশ রাগ লাগছে)
–আচ্ছা আমাকে যে তুমি ভাবি বললে তা আমি তোমার কোন ভাইয়ের বউ শুনি।
ও একটু থেমে বলল,
–আমার তো দুইটাই ভাই।এখন বড় ভাই তো তোমার বনের লগে সেটিং করাই আছে বাকি থাকে মেজ ভাই।তুমি চাইলে ওর সাথে তোমার……হিহিহিহহহহ,,বুঝেছো নিশ্চয়।
শাওনের কথা শুনে গালে থাকা চা কুলি করে বের করে দিলাম,আর কাশতে লাগলাম।
–আরে আরে ঠিক আছো তো তুমি??এই মামা পানি দাও।
দোকানির থেকে পানি নিয়ে ও পানি দিল।আমি ঢোক ঢোক করে খেয়ে নিলাম।
–ঠিক আছো এখন?
আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললাম।ও এবার বললো,,
–তাহলে কি বাসায় বলবো তোমাকে নকল ভাবি থেকে আসল ভাবি করার কথা।
–হ্যা হ্যা শাওন বলে দাও।আমাদের নিহীনের সাথে সৌভিক ভাইয়াকে কিন্তু জোস লাগবে।(মীরা আর শাওন হেসে উঠলো)
–ধ্যাত তোরা কি শুরু করেছিস বল তো??থাম
–আরে আমরা সিরিয়াস
–শাওওন….
–ওকে ওকে থামলাম।

ক্লাস শেষ করে বাসায় যাবো এক জুনিয়র সালাম দিলো।জুনিয়ররা সালাম দিলে বেশ ভালোই লাগে।এটিটিউড নিয়ে সালামের উত্তর দিলাম।নিজেকে রানী রানী ফিল হয় যখন কোন জুনিয়র সম্মান দেই।আজো তাই হলো কিন্তু আনন্দটা বেশিক্ষন থাকলো না।
–ভাবি ভালো আছেন??
ছেলেটার মুখে ভাবি ডাক শুনে মেজাজটাই বিগড়ে গেলো।
–এই আমাকে ভাবি বললে কেন?
–ভাই বলেছে তাই।
–কোন ভাই?নাম কি বল
–ভাবি নাম বললে ভাই আমাকে আস্ত রাখবে না।প্লিজ ভাবি আমি যাই।
আমি ছেলেটার কলার ধরে ফেললাম।
–ভাবি আমাকে যেতে দেন আমি যদি বাই চান্স আপনাকে নাম বলে দিই ভাই আমাকে অনেক মারবে।আমার জীবনটা আপনার হাতে।প্লিজ ভাবি আমাকে জোর করবেন না।
–নাম না বললে আমি তোকে মেরে ফেলবো নাম বল
আমার ধমক শুনে ছেলেটা কেদে দিলো।তারপর,
–বল নাম কি?
–স স সৌভিক।
ছেলেটার মুখে ওই নাম টা শুনে আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম।ছেলেটার কলার থেকে আমার হাত সরে গেলো সেই সুযোগে ছেলেটা পালিয়ে গেলো।আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না।আমি কি ঠিক শুনলাম।এটা সত্যি কি মিথ্যা এখন উনিই বলতে পারবে।ঘড়ি দেখলাম ১:৩০ টা বাজে।তারমানে উনি এখনো আছে ভার্সিটিতে।আমি ওনাকে খুজতে লাগলাম।অনেক খোজার পর ওনাকে পেলাম ওনাদের বিল্ডিং এর সামনে।বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো।আমি ওনাদের সামনে গিয়ে দাড়ায়।আমাকে দেখে উনি ওনার বন্ধুদের ইশারা করেন সবাই চলে যায়……

চলবে……..
(আপনাদের কথাটাই রাখলাম সৌভিক তাড়াতাড়ি কনফেস করে দেবে এবার)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here