প্রেম_পাগলামি #নিহীন_রুবাইয়াত #পর্ব:২৫

0
324

#প্রেম_পাগলামি
#নিহীন_রুবাইয়াত
#পর্ব:২৫

উনি ফোন রেখে দিয়ে গাড়ি চালানো শুরু করলেন আমি ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছি।
–ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন?আগে কোনদিন সুন্দর ছেলে দেখোনি নাকি?
ওনার কথাই আমি চোখ সরিয়ে নিলাম।খেয়াল হলো আমি ওনার সাথে গাড়িতে আর উনি গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন।আমি চোখ বড়বড় করে শুনলাম,
–কোথায় যাচ্ছি আমরা???
–…………………
–কি হলো বলুন কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায়?কিডনাপ টিটনাপ করে নিবেন না তো আবার?দেখুন ভাই আমি যদি কোন ভুল করে থাকি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।কিন্তু প্লিজ আমাকে কিডনাপ করবেন না।
–হোয়াট ননসেন্স তোমাকে আমি কিডনাপ করতে যাবো কেন?
–তাহলে কোথায় যাচ্ছি?
–চুপ করে থাকো পৌছে গেলেই জানতে পারবা।

এরপর আমি বারবার শুনলেও কাজ হয় না,নাম্বারটা ওনার কিনা,কোথায় যাচ্ছি কিছুই বলছে না।প্রায় ২০ মিনিট পর উনি গাড়ি থামান।একদম ফাকা রাস্তা।উনি গাড়ি থেকে নেমেই গাড়ি লক করে চলে যান।আমি কতো চিতকার করি আমাকে একা রেখে কয় যাচ্ছেন কিন্তু কানেই নিলো না।৪-৫ মিনিট বসে থাকার পর উনি আসলেন।গাড়ির দরজা খুলে বললেন,,
–নামো
–কেন?
–নামতে বলেছি নামো।
–না আমি নামবো না।বাসায় যাবো।
–বাসায় তো যাবেই আগে নামো তো..

উনি কোন কথা না বলেই জোর করে আমার হাত ধরে গাড়ি থেকে বের করেন অন্য হাত দিয়ে গাড়ির ডোর লক করে হাটছেন।
–কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায় ছাড়ুন…
কে শোনে কার কথা??উনি তো হেটেই চলেছেন আর আমাকেও টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছেন।মনের মধ্যে বাজে খেয়াল আসা শুরু করলো,উনি আবার আমার ক্ষতি করে দেবেন না তো?ছি ছি কি ভাবছি এসব।এসব ভাবনার মাঝেই উনি আমার হাতটা ছেড়ে দিলেন।একটা গেস্টহাউজ মতো আছে সামনে।জায়গাটা তো বাসার খুব দুরে না কিন্তু কোথায় আর এটাই বা কোন গেস্টহাউজ আর উনিই বা কেন আমাকে এখানে আনলেন কিছুই বুঝতেছি না..
–নিহীন তুমি একটু দাড়াও আমি আসছি।
কথাটা বলেই উনি ভিতরে চলে গেলেন।আমি এখানে মনে হয় ৪-৫ মিনিট দাড়িয়ে থাকলাম।একা একা খুব ভয় লাগছে।উনি এলেন,
–ভিতরে চলো?
–এখানে কেন এলাম?
–চুপ।
উনি আমার মুখের ওপর হাত দিয়ে বলেন।আমার হাত ধরে হাটছেন,আমার তো বুকের ভিতরে ধকধক করছে।উনি আমাকে অন্ধকার একটা ঘরে নিয়ে গেলেন
–কোথায় আসলাম আমরা?এখানে এতো অন্ধকার কেন…
–দশ,নয়,আট,সাত,ছয়
–কি কররছেন
–তিন,দুই,এক

দুম করে বাজি ফাটার মতো শব্দ হলো,আমি কানে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলি।
–নিহীন চোখ খোলো।
–…………
–চোখ খোলো নিহীন

আমি আস্তে আস্তে চোখ খুললাম,,চোখ খুলতেই আমার মুখ হা হয়ে গেলো,চোখগুলো বেরিয়ে আসার উপক্রম।চারিদিকে সাদা কালো বেলুন এর ছড়াছড়ি।লাইটিং করা আর আমার ঠিক সামনে বড় বড় ইংরেজি তে লেখা হ্যাপি বার্থ ডে নিহীন।আমি তো হা করে তাকিয়ে আছি।তখনি উনি আমার কানের কাছে এসে বললেন,
–শুভ জন্মদিন।
ওনার কথা শুনে আমি ওনার দিকে তাকালাম।আমি এখনো ঘোরের মধ্যে আছি।উনি আমাকে এইভাবে বার্থডে তে সারপ্রাইজ দিলেন।
–কি হয়েছে নিহীন….
–……….
–নিহীন কি হয়েছে কথা বলছো না কেন?তোমার ভালো লাগেনি এগুলো??
–……………
–কিছু তো বলো।
–আপনি হটাত,,

আমি কথা শেষ করতে পারিনা।শাওন,মীরা,শিবলি ভাই এক সাথে হ্যাপি বার্থডে নিহীন বলে চিল্লিয়ে ওঠে।ওদের দেখে আবার শকড।মীরা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে,
–হ্যাপি বার্থডে নিহু
–থ্যাঙ্কস বাট তুই এখানে?? আপনারা সবাই…
–আমরা সবাই তোমার বার্থডে সেলিব্রেশন করতে এসে গেছি ফুলকলি।এটা ছিলো তোমার জন্যে সারপ্রাইজ।
সবাই একসাথে হেসে ওঠে।সবাই এক এক করে আমাকে গিফট দেই।প্রথমে দেই মীরা,তারপর শিবলি ভাইয়া তারপর শাওন।কিন্তু উনি কোন গিফট দিলেন না।আমি ওনার দিকে আড়চোখে তাকালাম উনি নরমাল ভাবে দাড়িয়ে আছেন।
–ফুলকলি গিফট গুলো খুলে দেখো তো,,
–এখনি??
–হুম এখনি
–আচ্ছা।

সবাই এভাবে আমাকে সারপ্রাইজ দিলো আমার তো খুব আনন্দ হচ্ছে।আমি খুব এক্সাইটেড হয়ে গিফট খুলা শুরু করি।প্রথমে খুলি শিবলি ভাইয়ার গিফট,প্যাকেটের ভিতরে অনেকগুলো চকলেট আর দুটো উপন্যাস।
–কি পছন্দ হয়েছে তো??
–অনেক,থ্যাঙ্কু

–নিহীন এবার আমার গিফট খোল,
আমি শাওনের গিফট খুললাম,খুব সুন্দর একটা শো পিছ।এরপর মীরার টা খুললাম,আমার বেস্টু টা আমাকে ৩ টা হিজাব গিফট করেছে।আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানালাম।এবার উনি বলে উঠলেন,
–অনেক হয়েছে এবার কেক কাটা হোক।
–হ্যা তবে তার আগে একটা সেল্ফি তুলি ভাইয়া?

মীরার দিকে উনি আড়চোখে তাকালেন পরে ইশারা করলেন ঠিক আছে।মীরা আমার কাছে এসে সেল্ফি মোড অন করে ক্যামরা ধরলো।আমি পোজ দেয়ার জন্য হাসিমুখ করতেই চিতকার দিয়ে উঠলাম।
–কি পরে আছি আমি এটা??ফকিন্নি লাগতেছে আমাকে।

আমার এতোক্ষন খেয়ালি ছিলো না আমি বাসায় যেমন ছিলাম সেভাবেই চলে এসেছি।লং টি-শার্ট,পালাজো আর মাথায় একটা স্কার্ফ পেচানো।ছিইইইইইই…সবাই হাসছে আমার কথা শুনে।আমি সবার দিকে তাকালাম সবাই নতুন ড্রেস আমিই খালি ফকিন্নির হালে।বার্থডে গার্ল কিনা ফকিন্নি সেজে আছে।মন টাই খারাপ হয়ে গেলো।হটাত করে সৌভিক ভাই আমার কাছে এসে হাতে একটা প্যাকেট দিয়ে বলেন এটা পরে নাও।
–কি এটা??
–শাড়ি
–শাড়ি??
–হুম শাড়ি।যাও পরে আসো।
–কিন্তু আমি তো
–জানি শাড়ি পরতে পারো না।মীরা হেল্প করবে তোমার।

কালো একটা শাড়ি পরে এসে দেখি ছেলে তিনটা দাড়িয়ে আছে।আমি আসার পরি কেক আনা হলো।খুব সুন্দর একটা কেক।আমি কেক কাটলাম,মীরা,শাওন,শিবলি ভাই সবাইকে কেক খাইয়ে দিলাম উনিও এগিয়ে আসলেন কিন্তু ওনাকে কেক খাওয়াতে কেমন যেন লজ্জা লাগলো কেন তা জানি না।কেক কাটার পর্ব শেষে শাওন,মীরা,শিবলি ভাই কেক খাওয়া আর ছবি তোলাই ব্যাস্ত কিন্তু ওনাকে কোথাও দেখছি না। আমি দাড়িয়ে ওদের তিন জনের পাগলামি গুলো দেখছি।আমি ভাবতেও পারিনি আমার জন্মদিনটা এভাবে সেলিব্রেট করা হবে।কিন্তু এটা কার আইডিয়া?যারি হোক অনেক হ্যাপি হয়েছি আমি এতে।ওরা এখনো কেক নিয়ে টানাটানি করছে হটাত আমার ফোনে মেসেজ আসলো।

একটু ছাদে আসবে নিহীন,কথা আছে।আমি অপেক্ষা করছি।একাই এসো প্লিজ।
-সৌভিক

নাম্বারটা শয়তান বেটা দিয়ে সেভ করা ওটাই।উনি আমাকে ছাদে কেন ডাকলো আবার কাউকে বলতে মানা করলো।কি এমন বলবে যা এখানে বলা যাবে না।যাবো কি আমি??নাহ যাই..আমি সবার আড়ালে ছাদে চলে গেলাম।

ছাদে গিয়ে দেখি উনি দাড়িয়ে আছে।চাঁদের আলোই ওনার ফর্সা মুখটা আরো ভেসে উঠেছে।খুব সুন্দর লাগছে ওনাকে।আমি আস্তে আস্তে ওনার পাশে গিয়ে দাড়ালাম উনি এবার খেয়াল করলো,
–ওহ তুমি এসেছো?
–জি।
–চাদ টা সুন্দর না??
–হুম সুন্দর(আমি চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললাম)
–শাড়িটা তোমার পছন্দ হয়েছে?
–হ্যা অনেএএক
–এটা আমার মায়ের শাড়ি

আমি অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকালাম কিন্তু উনি এখনো চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে।
–মা আমাকে দিয়েছিলো তখন আমি ক্লাস টেনে পড়ি।মা ভাইয়াকেও একটাটা শাড়ি দেই আর শাওন কেউ।তিন ভাইকে শাড়ি দিয়ে বলেছিলো,”আমার পরে যদি কোন মেয়েকে সম্মান দিয়ে থাকিস তাহলে তাকে এটা দিবি।মনে রাখবি একটা ছেলের তিন জন মহিলার সামনে মাথা নিচু করতে হয়।১ তার মা,২ তার বোন আর ৩ তার ভালোবাসার মানুষটি”

ওনার কথা আমার মাথায় গেলো না।ওনার মায়ের শাড়ি আমাকে দিলো।আমি কিছু বলার আগেই উনি বলে উঠলেন,
–ভালোবাসি তোমায় নিহীপাখি।অনেক ভালোবাসি।

আমি ওনার দিকে চোখ বড়বড় করে তাকালাম।উনি কি বললেন এটা?আমি কি ভুল শুনলাম?উনি এখনো চাঁদের দিকে তাকিয়ে।
–ঠিকই শুনেছো তোমাকে আমি ভালোবাসি।

আমি তো ফ্রিজড হয়ে গেছি ওনার কথাই।উনি এবার আমার দিকে তাকালেন।আমার সামনে মাথা নিচু করে বললেন,
–আমি মায়ের সামনে মাথা নিচু করেছি,বোন নেই থাকলে তার সামনেও করতাম।আমি আজ ৩য় ব্যক্তিটির সামনেও মাথা ঝুকালাম।
উনি মুখ উচু করে হাটু গেড়ে বসে পড়লেন,হাতে একটি গোলাপ ফুল নিয়ে বলেন,
–তোমাকে দেওয়ার মতো কিছুই আমার নেই।জীবনটাই যেখানে দিয়ে দিতে পারি সেখানে কোন উপহার খুবি সামান্য।ভালোবাসি তোমায় সেই প্রথম দেখার দিন থেকে।আড়াল থেকে ভালোবেসেছি,শাওন সেজে দিনের পর দিন তোমার সাথে চ্যাট করেছি,ক্যাম্পাসে লুকিয়ে দেখেছি বহুবার।তোমার বাসার নিচে রাতের বেলা হাজার মশার কামড় খেয়েও দাড়িয়ে থেকেছি একবার তোমাকে দেখার আশাই।পিচ্চি ছেলেটাকে দিয়ে তোমার জন্যে শাড়ি,ফুল পাঠিয়েছি।খুব কষ্ট পেয়েছিলাম যেদিন তুমি আমার দেয়া ফুলগুলো ছিড়ে ফেলেছিলে।খুব কান্না করেছিলাম খুব।সেদিনের পর থেকে এক বছর আর তোমার সামনে আসিনি।তবে তোমাকে লুকিয়ে দেখতাম।তোমাকে অনেক কথা বলার আছে নিহীন।কিন্তু আজ না।জানি না তুমি আমায় ভালোবাসবে কিনা তবে আমি তোমাকে অনেক বেশিই ভালোবাসি নিহীন,হারাতে পারবো না।তুমি সময় নাও কিন্তু খুব বেশিদিন নিয়ো না।তোমাকে ছাড়া আর এক সেকেন্ড ও ভালো লাগে না।

উনি কথাগুলো বলেই আমার উঠে দাড়িয়ে আমার কপালে চুমু খেয়ে চলে গেলেন।আর আমি এখনও ফ্রিজড হয়ে দাড়িয়ে আছি।

চলবে……………
(ঠিক গুছিয়ে লিখতে পারলাম না।দুঃখিত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here