#প্রেম_পাগলামি
#নিহীন_রুবাইয়াত
#পর্ব:২৬
|
উনি ছাদ থেকে নেমে গেলেও নামি দাড়িয়ে থাকি,উনি এতোক্ষন কি বলে গেলেন আমি সেটাই ভাবছি।উনি আমাকে ভালোবাসেন??
–এই নিহু তুই ছাদে এলি কেন??
মীরাকে দেখে আমি ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।
–কিরে কি হয়েছে?আর তুই এখানে কেন?আর সৌভিক ভাইয়া তোকে কি বলে গেলো রে?
–দোস্ত
–কি
–আমাকে ধর।
মাথার মধ্যে চিনচিন করছে,নাকে খুব বাজে একটা ধোয়া আসলো,কাশি শুরু হয়ে গেলো।।আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকালাম।চোখ খুলতেই দেখি উনি আমার পাশে বসে সিগারেট টানছে। আমার কাশির আওয়াজে উনি আমার দিকে তাকালেন।ওনার হাতে সিগারেট দেখে আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম।আমাকে দেখে উনি তাড়াতাড়ি হাত থেকে সিগারেট ফেলে দেন।
–না মানে আমি কিন্তু সবসময় স্মোক করিনা।টেনশনে থাকলে মাঝে মাঝে,,ওই আর কিকি।এই তো এখন তোমার জ্ঞান ফিরেছে,খুব টেনশন হচ্ছিলো তোমার জ্ঞান ফিরছিলো না তাই।যাও এবার বাসায় চলে যাও,ভোর হতে চললো।
আমি গাড়ির জানালার বাইরে তাকালাম আমার বাসার সামনে,ঠিক মনে করে উঠতে পারলাম না।তখন তো আমি ছাদে ছিলাম আমার মাথা চক্কোর দিয়ে উঠলো তারপর কি হলো?আমি গাড়ির পিছনে তাকিয়ে দেখি শিবলি ভাইয়া ঘুমাচ্ছে।মীরা আর শাওন কই গেলো।আমি কিছু না বলেই ওনার দিকে তাকালাম।
–মীরার কথা ভাবছো হয়তো,ও শাওনের সাথে চলে গেছে বাসায়।এবার তুমিও…..
আমি গাড়ি থেকে নেমে গেলাম,একটা কথাও বলিনি উনি হয়তো কষ্ট পেলেন,নাও পেতে পারেন।কারন কাল রাতে উনি আমাকে যা বলেছেন তা আমার ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না।আমি পিছন গেট দিয়েই ভিতরে ঢুকলাম।রুমে ঢুকতে যাবো তখনি মা ডাক দেই আমায়।মায়ের গলার আওয়াজে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে।আমি তো ভয়ে আল্লাহকে ডাকা শুরু করলাম,,
–কি রে মা তুই এতো রাতে এখানে কি করছিস??
–……
–কি হয়েছে কথা বলছিস না যে??পানি খেতে এসেছিলি নাকি??
–হ্যা মা হ্যা।পানি খেতে গিছিলাম
–কিন্তু আমি যে তোর ঘরে পানি রেখে এসেছিলাম।
–কই না তো।।
–কি বলিস রেখেছি তো।
–না মা
–সর তো দেখে আসি।
আমি মা কে বাধা দিই,কারন মা ঘরে যেয়ে যদি দেখে পানি আছে তাহলে সন্দেহ করবে।আর তখনি বুঝে যাবে আমি মিথ্যা বলেছি।না বাবা ধরা পড়া যাবে না।মাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে পাঠিয়ে দিলাম।
ঘরে এসে ভাবছি ওনার কথা,উনি কি মজা করলেন??আর যদি সত্যিও হয় তাইলে শাওন সেজে কেন??উনি হয়েই তো কথা বলতে পারতো।এমন তো না যে ওনাকে আমার একদমি পছন্দ ছিলো না।কাজটা উনি ঠিক করেননি।ঘুমিয়ে পড়লাম।ঘুম ভাংলো অনেক বেলা করে।সারাদিন বাসার সবার অনেক আদর পেয়েছি,উপহারও অনেক পেয়েছি।সন্ধ্যাবেলা পার্টি।শাওন,মীরা সবাই আগেই এসেছে কিন্তু আমার শাওনের অপর খুব রাগ হচ্ছে ও এতোদিন ওর ভাইয়ের সাথে ছিল।কোথাও না কোথাও ওউ তো সৌভিক ভাইর সাথে মিলে আমাকে ঠকিয়েছে।শাওনের সাথে এটা নিয়ে অনেক ঝামেলা করলাম ও আমাকে কিছু কথা বললো যেগুলো জানার পর আমি রাতের থেকেও বেশি শকড কিন্তু এটা কিছুটা শিউর যে সৌভিক ভাই হয়তো সত্যি বলেছেন।
সন্ধ্যা গড়িয়ে এলো।আমি সাদা এক্টা গাউন পরেছি আজ।একে একে সব মেহমান আসছে।কিন্তু কেন জানি না আজ ওনার কথা বেশিই মনে পড়ছে।আমি দরজার দিকে তাকিয়ে ওনাকে খুজছি।
–আমাকে খুজছো বুঝি?
হটাত করে ওনার কথা শুনে আমি ভয় পেয়ে যায়।
–আর খোজা লাগবে না আমি এসে গেছি।
–আ আপনাকে কে খুজছিলো আমি তো আপনাকে খুজিনি।
–যাহ মিথ্যুক খুজেছো।
–না খুজিনি।
–আচ্ছা ঠিক আছে।মানলাম খোজোনি কিন্তু আমার ব্যাপারটা কি ভেবেছো?
–কোন ব্যাপার?
–কোন ব্যাপার মানে??রাতে যে তোমায় মনের কথাগুলো বললাম সেই ব্যাপার।
–না ভাবিনি
–কেন?
–কারন আপনি চিট করেছেন।শাওন সেজে দিনের পর দিন আমাকে ঠকিয়েছেন।আমার ফিলিংস নিয়ে খেলেছেন।আর আমি কিভাবে বিশ্বাস করব যে আপনি যা বলেছেন তা সত্যি?প্রাংক ও তো করতে পারেন।
–আমার মুখের কথাই কি যথেষ্ট না?
–না যথেষ্ট না।
–কিন্তু আমি
• আমি আর কথা শুনলাম না।চলে গেলাম ওখান থেকে।পার্টি শেষ হলো উনি এর মধ্যে অনেকবার কথা বলার চেষ্টা করেছেন কিন্তু আমি কথা বলিনি রাতে উনি অনেক বার কল দেন আমি রিসিভ করিনা।
পরের দিন ভার্সিটিতেও উনি কথা বলতে চান কিন্তু আমি চরম মাত্রায় ইগনোর করি।তিন দিন কেটে যায় আমি ওনাকে ইগনোর করেই চলেছি আর উনি আমাকে দিনে ৫০০ বার কল দেই,ক্লাসের সামনে দাড়িয়ে থাকে।এর মাঝে অনেকবার আমার রাগ ভাঙানোর ট্রাই করেছে কখোনো বার্গার দিয়ে,কখোনো বা ক্লাসরুমের হোয়াইট বোর্ডে সরি লিখে।ব্যাপারগুলো আমার বেশ হাসি পাই কিন্তু আমি রাগ করে থাকার অভিনয় করি।একদিনে ওনার কথা কম ভাবিনি কিন্তু আমি ওনার প্রতি এখোনি দুর্বল হতে পারবো না।আমাকে জানা লাগবে ওনার ফিলিংসটা আসলেই সত্যি কিনা।
আজ ভার্সিটিতে আসার পরপরি অনেক বৃষ্টি।ক্যাম্পাসের অনেক জাইগায় কাদা জমে গেছে।কাদা বরাবরি আমার বিরক্তির বিষয়।পা টিপে টিপে পার্কিং সাইডে যাচ্ছি হটাত পিছন থেকে কেউ যেন আমার হাত চেপে ধরলো।আমিও দেখা নেই তার আগেই উল্টা ঘুরে অন্য হাত দিয়ে দিলাম এক চড়।
–আহ!!আজ আবার মারলে কেন??
উনি গালে হাত দিয়ে আছে।আমি ওনাকেই মেরেছি।ওনার অবস্থা দেখে একটু খারাপ লাগ্লো।আমারি ভুল হুটহাট কাউকে মারা ঠিক না।তারপরো ওনার মুখের রিয়াকশনটা জোস একদম।
–নিহীপাখি তুমি মানুষকে এতো মারো কেন?অবশ্য সবাইকে মারো না আমাকেই মারো।বরকে কেউ মারে?
–বর কে বর?(আমি রাগ করার ভান করে)আর মেরেছি বেশ করেছি।এইভাবে মেয়েদের হাত ধরে কেউ?অসভ্য কোথাকার।
–কি?আমি কি অন্য কোন মেয়ের হাত ধরেছি?আমি তো আমার বউ এর হাত ধরেছি।
–আমি কবে বিয়ে করলাম আপনাকে??
–এখনো করোনি।ভবিষ্যতেতো করবা।
–নাআআআআআআ…..
আমার চিল্লানি শুনে উনি বললেন,
–ঠিক আছে ঠিক আছে।কিন্তু এভাবে চিল্লিয়ো না প্লিজ মানুষ খারাপ ভাব্বে তো।মনে নেই পার্কের ঘটনা।
উনি কথাটা বলে ঢোক গিললেন।আমিও ওইদিনের কথা মনে করে মনেমনে হাসলাম।আসলেই ওইদিন উনি মার খেতে খেতে বেচেছেন।
–হাত ছাড়ুন আমার
–ছাড়ছি আগে বলো আমাকে ইগনোর করছো কেন?
–আপনার সাথে আমার কোন কথা নেই।ইউ চিট মি।
–আমি তো ইচ্ছা করে কিছু করিনি যা করেছি তোমাকে ভালোবেসে।আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি।প্লিজ নিহীন বোঝ
ওনার মুখ দেখে আমার হাসি পেয়ে গেলো।আর মাথায় খেলে গেলো এক দুষ্ট বুদ্ধি।
–ওকে।প্রুভ করেন আপনি সত্যি বলছেন।(আমার কথা শুনে উনি খুশি হয়ে গেলেন যেন)
–হ্যা হ্যা বলো কি করা লাগবে??আমি সব করবো।কিন্তু আমাকে ইগনোর করে কষ্ট দিও না আর।
–ভেবে চিন্তে বলছেন তো সব পারেন?
–হ্যা।তুমি বলো কি করা লাগবে??
(আমি দুষ্টু হাসি দিয়ে মাঠের মধ্যের কাদা ইশারা করলাম উনি আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন)
–বুঝলেন না তো?
–না
–ওই কাদা দেখতে পারছেন?(উনি তাকালেন)
–হুম
–যান ওখানে গিয়ে গড়াগড়ি খেয়ে আসেন।তাহলেই মানবো আপনি সত্যি বলছেন
–মানে?(উনি অসহায়ের মতো তাকালেন)
–হ্যা যা বলেছি তাই।
–কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব?
–অসম্ভবের কিছু নেই তো?
–কিন্তু এটা তো নিছক পাগলামি।
–পাগলামি কি জানি না।আপনি যদি ওটা না করেন তাহলেই আমি মানবো
–কিন্তু নিহী
–আমি আর কোন কথা শুনতে চাই না।
উনি কথা বলতে গেলেও আমি বলতে দিলাম না।আমি হাত দিয়ে ইশারা করলাম উনি অসহায়ের মতো হাটতে লাগলেন।আমার বেশ হাসি পাচ্ছে ক্যাম্পাসের ক্রাশ বয় এতোটাই বোকা যে সত্যি কাদার মধ্যে যাচ্ছে।আমি হাসি আটকে রাখলাম।
–নিহীন এখানে তো অনেক কাদা আমি তো
ধপাস,,উনি আর কিছু বলার আগেই পড়ে গেলো কাদার মাঝে।ওনার মুখে কাদা লেপ্টে গেলো।উনি কাদাই মাখামাখি পুরো এবার আর আমি হাসি আটকাতে পারলাম না।হোহো করে হেসে দিলাম।উনি শুকনো মুখে উঠে দাড়ালেন আমার নাম নিতে না নিতেই আমার ধপাস আমি আরো জোরে হাসলাম আর উনি রাগে গজগজ করছে।আমার হাসছি তখন শিবলি ভাইয়া এসে জিজ্ঞেস করলেন
–হাসছো কেন নিহীন??
আমি হাসতে হাসতে ইশারা করলাম।উনি কাদাই মাখামাখি সৌভিক ভাইকে চিনতে পারলেন না।
–ওমা ওটা কে??
আমি আরো হাসছি।শিবলি ভাইয়া নিজের বন্ধুকেই চিনলো না।অবশ্য ওনার মা আসলেও ওনাকে চিনতো না এতোটাই বাজে অবস্থা।শিবলি ভাইয়া চিল্লিয়ে শুনলো
–কে ভাই তুমি??ওখানে কি করছো?
–ঘোড়ার ঘাস কাটছি হারামজাদা(রাগে)
–এই তোমার গলাটা চেনা লাগছে।একদম আমার বন্ধু সৌভিক এর মতো
–ওরে ঢেড়স আমি সৌভিকি
–কি??তুই ওখানে কেন??
ওনাদের এই কথপোকথনে আমি আরো জোরে জোরে হেসে দিলাম।উনি কাদার থেকে উঠতে উঠতে বললেন,,
–তোমার হাসি বের করছি একবার ওখানে যেতে দাও।
আমি আর দাড়ালাম না।মুখ ভেংচি দিয়ে দৌড় দিলাম।
চলবে……..
(পার্ট ছোট হলে দুঃখিত। জার্নি করে এসে খুব ক্লান্ত তাই মাথা ম্যাথা করছে।তবে আজকের পার্টটা লিখতে যেয়ে পুরোনো স্মৃতিগুলো ভেবেছি আর খুব হেসেছি।তবে বাস্তবের সৌভিককে কাদার মধ্যে যেতে বললেও সে যায়নি উল্টা রাগ করে চলে গিছিলো।ব্যাটা শয়তান একটা)