প্রেম_পাগলামি #নিহীন_রুবাইয়াত #পর্ব:২৯

0
321

#প্রেম_পাগলামি
#নিহীন_রুবাইয়াত
#পর্ব:২৯

বাইরে এসে দেখি ওনার গাড়ি দাড়িয়ে,ওনার গাড়িতে উঠে বসলাম।উনিও আমার পাশে বসলো।আমি এখনো রেগে আছি।তারপর মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললো,,
–আসলে কি জানো নিহীপাখি,রাজনীতি ব্যাপারটা অনেক খারাপ।আবার ভালোও আছে।তুমি কোন সাইডটা বেছে নিবা সেটা তোমার ব্যাপার।কিছু কিছু মানুষ এতোটাই জঘন্য হয় যে বিপক্ষ দলকে দমানোর জন্য এরা যা না তাই করতে পারে,পরিবারকেউ হার্ট করতে পারে।
–এতোই যখন খারাপ তাহলে ওসব করা লাগে কেন??
–আরে বললাম না ভালো দিকও আছে আমি সেটাই করি।কিন্তু তুমি আজ যা করলে ভয় ঢুকে গেলো।
–আমি আবার কি করলাম?
–ওই যে মিটিং এর মাঝে গেলে,কতো বড় ভাই,বিপক্ষদলের ছেলেরা ছিলো ওরা তো তোমার দিকে খারাপ নজর দিতে পারতো।যদিও আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে ওই আদিল আমাকে শায়েস্তা করার জন্যে তোমার না আবার……আচ্ছা বাদ দাও।খাবার খাওনি কেন তুমি?
–এই ব্যাটা ক্যামনে জানলো?(মনে মনে ভাবলাম)
–আমি সব জানি..
–হাই আল্লাহ মনের কথাও পড়তে পারে নাকি?(এটাও মনে মনে ভাবলাম)
–নিলুফা বলছিলো ভাইয়াকে,আমি পাশেই ছিলাম তাই শুনেছি।
–যাক তাও ভালো(মনে মনে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম)

উনি আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে গাড়ি থেকে বের হয়ে গেলেন,তারপর সামনের সিট থেকে একটা ব্যাগ আনলেন।ছোট্ট একটা ব্যাগ,ব্যাগ খুলেই উনি একটা টিফিন বক্স বের করেন।টিফিন বক্স খুললেন।ভিতরে ভাত,ডিম ভাজি আর আলু ভর্তা।উনি হাত ধুয়ে এক লোকমা ভাত হাতে নিয়ে আমার মুখের সামনে ধরলেন,
–নাও খাও
(আমি ওনার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।উনি আমাকে ভাত খাইয়ে দিতে যাচ্ছে??)
–কি হলো খাও।আমি এর থেকে বেশি কিছু পারিনা রান্না করতে।না কফি পারি অবশ্য।কিন্তু কফি তো আর খাওয়ানো যাবে না এখন।খেয়ে নাও না নিহীপাখি..
–………..
–ওভাবে কি দেখছো?খেয়ে নাও।আমি আর কোনদিন তোমাকে মারবো না,প্রমিস
–খাবো না আমি
–প্লিজ খেয়ে নাও।আমি তো বললাম আর মারবো না।
উনি অনেকবার রিকুয়েস্ট করলেন আমি শুনলাম না।উনি এবার মন খারাপ করে বললেন,
–ঠিক আছে খাওয়া লাগবে না।তোমার আর কি?তুমি তো না খেয়ে থাকতে পারো আমি তো পারি না।আমি না হয় ন খেয়ে মরেই যাবো(ওনার মুখে মরে যাওয়ার কথা শুনে আমার বুকের মধ্যে কেপে উঠলো)তুমি খাওনি তাই আমিও খাইনি।এখন আমি তোমার জন্যে নিজে হাতে রান্না করে আনলাম আর তুমি।ভেবেছিলাম তুমি খাওয়ার পর আমি খাবো কিন্তু এখন তো….আচ্ছা তুমি বাসায় যাও
–না আমি খাবো
–কি বললে শুনতে পেলাম না।
–আমি ভাত খাবো।
উনি আর একটা কথাও বললেন না হাতে ভাত নিয়ে আমাকে খাইয়ে দিলেন।প্রথমবার গালে দিতেই পোড়া আর সাথে লবনে ভরা ডিমভাজিতে আমার বমি চলে আসলো।কিন্তু ওনার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বললাম না।উনি খুব আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,,
–কেমন হয়েছে?
–ভালো(মুখে ভালো বললেও টেস্ট খুব বাজে)

উনি হাসি মুখে আরো দুয়েকবার খাইয়ে দিলেন।
–এবার আপনিও খেয়ে নেন।আমি আর খাবো না।আই এম ডান
–এইটুকুতেই হয়ে গেলো।এইটুকু খাও বলেই তুমি এতো শুকনা।যায় হোক আমি খায়।খুব খুদা পেয়েছে।
উনি একবার ভাত মুখে দিলেন আলু ভর্তা দিয়ে।তারপর ডিম ভাজি গালে পড়তেই ওয়াক করে উঠলেন।গাড়ির জানালা দিয়ে বমি মতো করে খাবার তুলে দিলেন।
–ছি!এটা ডিক ভাজি না অন্য কিছু?এতো বাজে খেতে??ওয়াক থু..(ওনার অবস্থা দেখে এবার বেশ হাসি পেয়ে গেলো।ওনার ওপরের সব রাগ যেন এক নিমিষেই শেষ)
–আচ্ছা নিহীন তুমি এটা খেলে কিভাবে?এটা তো
–জানি বাজে তাও আপনার খারাপ লাগতো তাই…

উনি আমার কথা শুনে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো।তারপর ওনার চোখের কোনের পানি মুছে নিলো আমার আড়ালে।আমার দিকে তাকিয়ে,
–এই জন্যেই আমি ইউটিউবে বিশ্বাস করি না।
–মানে?
–ওই যে ডিম ভাজি।আমি আসলে ভাত আর ভর্তাই পারি।ডিম আজকে ফার্স্ট টাইম ভেজেছি তাও ইউটিউবের জোরে।হিহিহহহহহ

ওনার কথা শুনে হাসবো না কাদবো ভাবছি।ডিম ভেজেছে নাকি ইউটিউব দেখে।লাইক সিরিয়াসলি?

–আচ্ছা এসব বাদ দাও তোমার জন্যে আরো একটা সারপ্রাইজ আছে?
–কি?
–ওয়েট।(উনি সামনের সিটে হাত বাড়িয়ে আরো একটা বক্স নিলেন।বক্সের ভিতরে বরফ অনেক আর তার মাঝে দুইটা আইসক্রিম)
–আইসক্রিম??
–হ্যা।
–আমার জন্যে?
–হ্যা
–থ্যাঙ্ক ইউ(আমি আইসক্রিম দুইটাই নিয়ে নিলাম)

আমি দুইটাই খাচ্ছি আর উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছে।হটাত আমার খেয়াল হলো আমি তো সব নিজেই খেয়ে নিচ্ছি ওনাকে তো কিছুই দিলাম না।ধুর!উনি কি ভাবলেন?মেয়েটা এতোই খাদক যে দিলো না।
–……….
–কি হয়েছে কিছু বলবে?
–সরি…
–কেন?
–আইসক্রিম দুইটাই আমি
–আরে ব্যাপার না।খাও তুমি?
–সত্যি?
–তিন সত্যি।
–থ্যাঙ্ক ইউ
–নিহীন
–হুম(খেতেই)
–ভালোবাসো আমায়?
ওনার কথা শুনে আমি তাকালাম।
–জানি এখনো ভালোবাসো না।তবে আমি অপেক্ষায় রইলাম(আমি মাথা নিচু করে রইলাম)
আচ্ছা ভালোবাসো না ঠিক আছে।কিন্তু তোমার রাগ কুমেছে তো??নাকি এখনো রাগ কুমলো না?

ওনার ওপর আমার একটুও রাগ নেই।কিন্তু কেন জানি না মাথায় দুষ্টু একটা বুদ্ধি আসলো।মুখ গম্ভীর করে বললাম,
–আমি ওতোটাও হেলা ফেলা করা মেয়ে না যে এতোতাড়াতাড়ি সব ভুলে যাবো
–কিন্তু নিহী

আমি আর ওনার কথা শুনলাম না।গাড়ি থেকে নেমে বাসায় চলে আসলাম।ঘরে এসেই খুব হাসি পেয়ে গেলো।ভাবছি ওনার সাথে কি এটা ঠিক করলাম?আমি তো রাগ করে নেই তাও।।না ঠিকি করেছি ব্যাটা বুঝুক আমাকে কষ্ট দিলেই আমি তা মেনে নেবো না।আচ্ছা উনি কি আছেন নাকি চলে গেছেন??চুরিচুরি করে জানালা দিয়ে তাকালাম।উনু এখনো আছেন উপরের দিকে তাকিয়ে।আমার বেশ হাসি পেলো।১০ মিনিট মতো পর উনি চলে গেলেন।আমি শুয়ে শুয়ে ভাবছি লোকটা এতোটাও খারাপ না,আমার জন্যে রান্না করে আনলো।যদিও সিম্পিল তাও তো করলো।এতোকিছু তো আর ফেইক না।ব্যাটা শয়তানটা তাহলে সত্যিই ভালোবাসে।লজ্জা পেয়ে গেলাম আমি।

সকালে ভার্সিটি যাওয়ার পথে ভাবলাম আজ যদি দেখা হয় তাহলে কাল রাতের মতোই রাগ করার অভিনয় করবো।ভার্সিটির ভিতরে ঢুকতেই সেই পিচ্চি ছেলেটা হাজির।ওকে দেখে আমি দাড়ালাম,হাতে একটা লাল গোলাপ নিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো আমার দিকে আর বললো,,
–নিহীপাখি সরি
–হোয়াট
–নিহীপাখি সরি
আমি বেশ অবাক হলাম,ছেলেটা আমার ডান হাত নিয়ে ফুলটা আমার হাতে দিয়ে দিলো দৌড়।
–এই পিচ্চি দাড়াও,এটা কেন??এই…..
না পিচ্চিটা দাড়ালো না চলে গেলো।আমি আমাদের বিল্ডিং এর দিকে যাওয়ার জন্যে রওনা দিলাম,তখনি কিছু জুনিয়র ছেলে মেয়ে এক এক করে এসে আমাকে এক্টা করে লাল গোলাপ দিয়ে গেলো,সবার মুখেই একটাই কথা।নিহীপাখি সরি।কিছু সিনিয়র আপুও আমাকে ফুল দিয়ে এই কথাটা বলে গেলো।আমার মাথায় তো কিছুই আসছে না।আমাকে এরা সবাই ফুলই বা কেন দিচ্ছে আর সরিই বা কেন বলছে?আমাকে তো নিহীপাখি নামে শুধু উনিই ডাকে তাহলে কি???এসব ভাবতে ভাবতে আমদের বিল্ডিং এর সামনে চলে এসেছি।মীরা আর শাওন দাড়িয়ে ছিলো ওদের দেখে ডাক দিলাম।তারপর নিজেই ওদের কাছে গেলাম।ওদের কাছে গিয়ে এই ব্যাপারটা বলতে যাবো তার আগেই
–নিহীপাখি সরি
দুজনি হাতে লাল গোলাপ নিয়ে আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়েছে।
–তোরাও
–আরে ধরো ধরো নিহীপাআআখিইইইইউউ(মীরা দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে)
আমি একবার শাওনের দিকে তো একবার মীরার দিকে রাগী চোখে তাকালাম।আমাকে দেখে ওরা দুজনেই হোহহোহোহহ করে হেসে দিলো।আমি বুঝেই গেলাম এটা ওনার কাজ।উনিই সবাইকে দিয়ে এটা করাইছে।
–তাহলে তোমাদের ওই অসভ্য ভাইটাই এসব করছে।
–জি ভাবি।(শাওন হাসতে হাসতে বলে)
–ভাবি?কে ভাবি?
–কেন তুমি..হোহহহোহহহ

দুটোই হাসছে।আমার বেশ রাগ হয়ে গেলো।আমি হাত দিয়ে মারতে লাগলাম।
–আরে থামো থামো আর কত মারবা ব্যাথা লাগছে তো।
শাওন কথাটা বলে।আমি থেমে যায়।এরপর ও জানতে চাই আমি কেন এখোনো রেগে আছি।আমি ওরে সবটা বলি যে আমি রেগে নেই জাস্ট অভিনয় করছি।আমার কথা শুনে মীরা শাওন দুজনেই তো হা হয়ে গেছে।ওরা সৌভিক ভাইকে সব বলে দিতে চাই কিন্তু আমিও ওদের পটিয়ে নিজের দলে করেনিই।ওরাও আমাকে প্রমিস করে যে ওনাকে বলবে না যে আমি আর রেগে নেই।

তিনজন কথা বলতে বলতেই স্যার চলে আসে।আমরা ক্লাসে ঢুকে পড়ি।টানা তিনটা ক্লাস করে আমি টায়ার্ড।আমি আর মীরা ক্যান্টিনে যায় কিছু খেতে।ক্যান্টিনে গিয়ে হালকা স্নাক্স অর্ডার দিই কিন্তু আসে একটা এক পাউন্ড মতো সুন্দর চকলেট কেক তারওপরে লেখা সরি।আমি কেক দেখেই বুঝেছি এটা ওনার কাজ।ক্যান্টিনে কেক পাওয়া যায় না এমন পাউন্ডের।আমার বেশ হাসি পায় আর কেন জানি না ভালোও লাগে আমার রাগ এভাবে আগে কেউ ভাঙায়নি,ওনার এই পাগলামি গুলো বেশ ভালো লাগছে।কিন্তু আমি এখনি গলে যাবো না আরো একটু ঘুরায়।মনে মনে দুষ্টু হাসি দিলাম।তারপর ক্যান্টিনে যে ছেলেটা ওয়েটারের কাজ করে তাকে ডেকে একটু বকাবকি করলাম।যদিও ওরে বকতে খুব খারাপ লাগছিলো কিন্তু ইচ্ছা করেই বকলাম কারন আমি ভালো মতোই জানি উনি আড়াল থেকে আমাকে দেখছে।ওনাকে দেখানোর জন্যেই এই বকা।আমার বকা শুনে ছেলেটা মন খারাপ করে চলে গেলো।এরপর মীরা বললো,
–ওরে কেন বকলি?ওর কি দোষ?আর কেকটা তো অনেক সুন্দর আমার তো দেখেই খেতে ইচ্ছা করছে।
–তাইলে বসে আছিস কেন গিলতে থাক।
আমি মীরারকে কথাটা শুনিয়ে উঠে গেলাম ব্যাগ নিয়ে।মীরাও আমার পিছু পিছু আসলো।

সন্ধ্যা বেলা সোফায় বসে টিভি দেখছি হটাত কলিং বেল বেজে উঠলো,আমি গিয়ে দরজা খুললাম।সৌরভ ভাইয়ার মা-বাবা আর শাওন দাড়িয়ে।ওনাদের দেখে আমি সালাম দিলাম।ওনারাও উত্তর দিয়ে কেমন আছি জানতে চাইলো।কুশল বিনিময় শেষে ওনারা ভিতরে আসলেন।আমি মা-বাবা সহহ সবাইকে ডাক দিলাম।সৌরভ ভাইয়ার বাবা জানালেন তারা তাড়াতাড়িই বিয়ে দিয়ে দিতে চান।দুই পরিবারের সম্মতিতে ঠিক হলো তাড়াতাড়িই বিয়েটা হবে।ওনারা আগামীকাল ওনাদের বাসায় আমাদের দাওয়াত দিলেন,কালকেই ডেট ফিক্সড হবে।রাতের খাবারের পরর ওনারা চলে গেলেন আপু তো অনেক খুশি সাথে আমরাও।কিন্তু মা-বাবা চিন্তায় পড়ে গেলো কিছুটা।বিয়ে মানে তো হাজার কাজ,হাজার ঝামেলা সব ঠিকঠাক সামলে উঠলে হয়।

রাতে বিয়ে নিয়ে কিছু আলোচনা করা হলো,মানে আমাদের কবে সুবিধা হবে যদিও ওই ফ্যামিলিও ডিসিশন নেবে তাও আমাদেরও তো মতামত আছে।মিটিং শেষে ১২ টার দিকে ঘরে আসলাম।আমার ফোনটা হাতে নিলাম।
আপনার পছন্দের গল্প পড়তে গল্পের লিংক story link( ভালোবাসার রোমান্টিক গল্প) গ্রুপে জয়েন করুন

চলবে…..
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here