#প্রেম_পাগলামি
#নিহীন_রুবাইয়াত
#পর্ব:৩০
রাতে বিয়ে নিয়ে কিছু আলোচনা করা হলো,মানে আমাদের কবে সুবিধা হবে যদিও ওই ফ্যামিলিও ডিসিশন নেবে তাও আমাদেরও তো মতামত আছে।মিটিং শেষে ১২ টার দিকে ঘরে আসলাম।আমার ফোনটা হাতে নিলাম।ফোন হাতে নিয়েই দেখি ওনার মেসেজ,
“আজ আর তোমার বেলকনিতে যাবো না।লক্ষী মেয়ের মতো বাড়ির পিছনে চলে এসো।আর যদি না আসো তাহলে কিন্তু সোজা তোমার বাড়ির মেইন গেইটে নক দেবো।আমি তো জানি তুমি আমার লক্ষী নিহীপাখি।একটুও ঝামেলা না করে চলে আসবে।তাড়াতাড়ি আসো,I am waiting”
মেসেজটা ৮ মিনিট আগে দিয়েছে।মেসেজ সিন করে রেখে দিলাম।আমি তো যাবো না।হাহ!উনি বলবেন আমার বাসার মেইন গেইটে আসবে আর আমি সেটা মেনে নেবো?আমি কি বোকা নাকি যে ওনার এই কথাই ভয় পেয়ে যাবো?আমি নিহীন অনেক সাহসী।ফোন রেখে কানে ওয়ারলেস হেডফোন দিয়ে গান শুনছি আর গানের তালে তালে নাচা শুরু করলাম,,
~~main larki beautiful kar gayi chul~~
গান শুনে নাচতে নাচতে হটাত দেখি ওনার কল।ওনার নাম্বার দেখে কেটে দিয়ে আবার নাচা শুরু করলাম।২ মিনিট পরেই একটা মেসেজ রিংটন।ফোন চেক করে দেখি এম.এম.এস এসেছে ওনার নাম্বার থেকে।ওপেন করলাম,ছবিটা দেখে আমার চোখ বেরিয়ে আসছে উনি আমার বাসার গেইটের সামনে এক হাত কলিংবেলের ওপর রেখে সেল্ফি তুলেছে।ছবিটার সাথে সাথেই ওনার মেসেজ আসলো,
“কলিংবেল টা কি বাজবো একবার?”
আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম।আধা ঘন্টাও হয়নি সবাই শুয়েছে,কাচা ঘুম তারমানে এখন যদি উনি বেল দেন তাইলে তো শিউর সবাই জেগে যাবে।তখন??নো নো ওনাকে ক্ষেপানো যাবে না।আমি তাড়াতাড়ি ফোন হাতে নিয়ে ওনাকে রিপ্লাই করলাম যে,
*আমি ৫ মিনিটে আসছি।আপনি যেখানে ছিলেন সেখানে ফিরে যান*
ওড়নাটা নিয়ে চুপিচুপি বাড়ির বাইরে চলে গেলাম।বাইরে যেতেই আমি তো অবাক।ফুচকার স্টল কেন এখানে?আর উনিই বা কই??আমি এদিক ওদিক ওনাকে খুজলাম পেলাম না।আর ফুচকার স্টলি বা কেন?
–আমাকে খুজছো?
ওনার কথা শুনে ভয়ে কেপে উঠলাম।হটাত করে অন্ধকারে এমন কথা বললে যে কেউই ভয় পাবে।
–ভয় পেলে নাকি?
–এরকম ভুতের মতো আসলে ভয় পাবো না তো কি?
–হাহাহহাহহহহ
–হাসি থামিয়ে আগে বলেন আজ আবার কেন ডেকেছেন?
–আজ?আজ খুব স্পেশাল একটা কারনে।
আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম।উনি হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে,
–চলো আজ তোমাকে ফুচকা খাওয়াবো।মেইড বাই মি??
–কি?
–ওয়েট নিহীপাখি।
উনি ফুচকা বানানো শুরু করলেন,খুব যত্ন করে নিজে হাতে ফুচকা বানাচ্ছেন।আমার বেশ ভালো লাগলো,আমাকে এর আগে এভাবে কেউ ট্রিট করিনি কখনো।এক প্লেট ফুচকা বানিয়ে আমার সামনে আসলেন,,
–খাও
আমি তো হাবলার মতো তাকিয়ে আছি।হচ্ছে টা কি??
–কি হলো খাও।
আমি ফুচকার দিকে লোভ সামলাতে পারলাম না।কোন কিছু না ভেবেই ফুচকার প্লেট নিয়ে খাওয়া শুরু করলাম।খেতে খেতে,
–ঝাল একটু কম কিন্তু ভালো।
–তোমার ভালো লেগেছে?
–হুম মোটামুটি
–তাহলে তোমার রাগ কুমেছে?
আমি খেতে খেতে ওনার দিকে আড়চোখে তাকালাম।গালের ফুচকা শেষ করে বললাম,,
–রাগ ভেঙেছে মানে?
–তুমি তো রাগ করে ছিলে,রাগই ভাঙছিলো না তাই এক বন্ধুর থেকে এই আইডিয়াটা পেয়ে চলে এলাম ফুচকাওয়ালা হয়ে।তুমি আমার ওপর রেগে থাকলে আমার একটুও ভালো লাগে না,পড়াই মন বসে না।কিছুই ভালো লাগে না।তাই তোমার রাগ ভাঙানোর জন্যে সব করতে রাজি।বলো না তোমার রাগ কুমেছে?
(ওনার কথা শুনে আমি থ মেরে গেলাম।লোকটা কি পাগল?আমার রাগ ভাঙানোর জন্য এতোকিছু করে ফেললো?যতদিন যাচ্ছে এই লোকটার ব্যবহারে আমি ওনার প্রতি দূর্বল হয়ে যাচ্ছি।এসব কথা ভেবে নিজেই একটু লজ্জা পেলাম।)
–ওহ নিহীপাখি বলো,
–আজকের মতো মাফ করে দিলাম কিন্তু একটা শর্ত আছে।
–শর্ত?কি শর্ত বলো আমি সব মানতে রাজি আছি।
–যখনি আমার মুড হবে ফুচকাওয়ালাকে কিন্তু হাজির হওয়া লাগবে ফুচকা নিয়ে।
কথাটা বলেই লজ্জাই মুখ ঘুরিয়ে দৌড় দিলাম।উনি হয়তো ব্যাপারটা বেশ কিছুক্ষন পর বুঝেছেন।যখনি আমার কথার মানে বুঝলেন,,
–নিহীন(আমি পিছু ফিরে তাকালাম)ভালোবাসো বলে দাও না..
–হুহ!কে ভালোবাসে?আমি আপনাকে ভালোটালো বাসি না।
কথা শেষ করেই দৌড়ে ভিতরে চলে আসলাম।
রুমে এসে নিজের অজান্তেই ব্লাশ করছি।আমি কি তাহলে ওনাকে সত্যিই ভালোবেসে ফেলেছি?কথাটা ভেবেই আরো লজ্জা লেগে গেলো।শেষ পর্যন্ত ওই অসভ্য শয়তান ব্যাটারে ভালোবেসে ফেললাম!!রাতে বেশখানিক ওনার কথা ভাবলাম।যখনি ওনার কথা মনে পড়ছে,লজ্জাই কুকিয়ে যাচ্ছি।
সকালে ভার্সিটিতে যেয়ে ওনাকে অনেক খুজেও পেলাম না।খারাপ লাগলো,হটাত মনে পড়লো আজ তো আমরা ওনাদের বাসায় যাচ্ছি।ওখানেই তো দেখা হবে।আমি তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরলাম।বিকাল বেলা সবুজ একটা কুর্তি আর ব্লাক পালাজো,ব্লাক হিজাব পরে রেডি হয়ে নিলাম।টুকটাক সেজেও নিলাম।রেডি হয়ে গাড়িতে বসছি,
–কি ব্যাপার নিহী আজ এতো খুশি কেন তুই?সেজেছিসও বেশ।তোরে দেখে মনে হচ্ছে নিলুর শশুরবাড়ি না তোর শশুরবাড়ি যাচ্ছিস..
(ফুফুর কথা শুনে খুব রাগ হলো)
–হ্যা আমার শশুরবাড়িও হবে ওইটা তোমার সমস্যা?(বিড়বিড় করে)
–কিরে কি বিড়বিড় করছিস?
–কিছু না ফুফু।অনেক দিন সাজিনা তো তাই সাজলাম।
ফুফু এরপর কিছু বলতে গেলো কিন্তু বাবা আসায় আর বলতে পারলাম না।সৌরভ ভাইয়াদের বাসায় পৌছানোর পরর সবার সাথে কথা হলো,শাওন তো বেয়ান বেয়ান করে ইয়ারকি মারছে আমিও বেয়াই বলে পাল্টা জবাব দিচ্ছি।আধা ঘন্টামতো পার হয়ে গেলো,বাড়ির সবাই আছে কিন্তু উনি নেই।আমি সবার সাথে কথা বলছি ঠিকি কিন্তু মনে মনে ওনাকে খুজে চলেছি।শাওনকেও বলতে পারবো না।মিনিট পাঁচেক আগে ও বাইরে গেছে।আমার একটু মন খারাপ হয়ে গেলো।তখনি সৌরভ ভাইয়াদের বাড়িতে যে থাকে,রিমি ও আসলো।মেয়েটা বেশ ভালো,আগের দিন এসে ওর সাথে পরিচয় হয়েছিলো।ও আমার কাছে এসে বললো,,
–আপু ছাদে যাবেন?অনেক ফুল গাছ আমাদের।বিকেলে অনেক ভালো দেখায়।আপনার ভালো লাগবে।
আমি কি বলবো বুঝে উঠতে পারলাম না তার আগেই সৌরভ ভাইয়ার আম্মু আমাকে যেতে বললেন রিমির সাথে।আমি মায়ের দিকে তাকালাম।মাও ইশারা করলো যেতে।আমি রিমির পিছু পিছু গেলাম।দোতলায় বেশ কয়েক্টা ঘর কিন্তু হটাত একটা ঘরের সামনে থেমে গেলাম।কারন ও আছে।দরজার পাশে লেখা,বিনা অনুমতিতে প্রবেশ নিষেধ।এরকম দেখে বেশ অবাক লাগলো।এই বাসায় এরকম লেখা ঘর কার আবার?আমাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে রিমি বললো,,
–আপু দাড়িয়ে গেলেন যে
–রিমি এটা কার
–ওটা মেজো ভাইজানের ঘর(আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই রিমি বলে দিলো)
–এটা ওনার ঘর কিন্তু এরকম লেখা
–আর বইলেন আপু।মেজো ভাইজান যে রাগি ওনার কোন কিছুতেই কেউ নাক গলাক বা ওনার ব্যক্তিগত কিছুতে হাত দিক তা একদমি পছন্দ করেন না।চলেন এখন ছাদে যায়।
আমি আর দাড়ালাম না ওর পিছু পিছু ছাদে গেলাম।বেশকিছুক্ষন থাকলাম।এ বাহানা সে বাহানায় ওনার ব্যাপারে শুনলাম।রিমি যা বললো তাতে আমি হা।এই বাসায় নাকি কেউ ওনার মুখের ওপর কিছু বলে না।ওনার অনুমতি ছাড়া কেউ ওনার ঘরেও যায় না।তবে ওনার মা আর সৌরভ ভাইয়া যায়।উনি এমনিতে অনেক মিশুক হলেও রেগে গেলে রক্ষে নেই।ওনার এসব বর্ননা শুনে কিছুটা অবাক হচ্ছি যদিও আমি ওনাকে এতোদিনে ভালোই চিনেছি।রিমি কি একটা কাজে নিচে নেমে আসল আমি রয়ে গেলাম,সন্ধ্যা হয়ে আসছে তাই আমিও নেমে আসছি।ওনার ঘর পাস করার সময় কি মনে করে দাড়িয়ে গেলাম।খুব ইচ্ছা করছে একবার ভিতরে যেতে কিন্তু লেখাটার দিকে চোখ গেলো।দাড়িয়ে ভাবছি যাবো কি যাবো না।আচ্ছা উনি তো বাসায় নেই,বাসায় থাকলে তো দেখা হতোই।যেহেতু বাসায় নেই সেই সুযোগে অসভ্যটার ঘরে একবার ঘুরেই আসি।আমি আস্তে আস্তে দরজা খুললাম।ধির পায়ে ঘরের ভিতরে গেলাম।ওনার ঘরে ঢুক্তেই সবার আগে সাদা দেয়ালে টাঙানো ওনার ছবিটা চোখে পড়লো,বেশ বড় করেই ছবিটা বাধানো হয়েছে।হাসি মুখ,চোখের উপরে আসা সিল্কি চুল,ছবিটা জাস্ট ওয়াও।আমি তো ক্রাশ খেয়ে গেলাম।আমি আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম।দেয়ালে আরো কিছু ছবি,ঘরে বেশ বড় সাইজের একটা আলমারি,সুন্দর একটা বেড,দুই সিট নিয়ে একটা সোফা,পড়ার টেবিল,বেশ বড় একটা ড্রেসিংটেবিল আর ঘর সাজানো অনেক কিছুই আছে।খুব পরিপাটি করে ঘরটা সাজানো।আমি ঘুরে ঘুরে দেখছি হটাত উল্টা ঘুরতেই আমার চোখ বড়বড় হয়ে গেলো,আর আমার সামনে দাড়ানো ব্যাক্তিটি তো আমাকে দেখে ভূত দেখার মতো চিল্লিয়ে উঠলো,ওনার চিল্লানিতে
আমি চোখ বন্ধ করে উল্টো ঘুরে গেলাম।ছি ছি কি দেখলাম আমি এটা?উনি তো বাসায় ছিলো না তাহলে এখানে কিভাবে আসলো তাও আবার টাওয়াল পরে।জীবনে প্রথম কোন ছেলেকে এভাবে দেখলাম সরাসরি।ভেজা চুল,আধ ভেজা খালি গা,পরনে ছোটখাটো একটা টাওয়াল।বেশ লজ্জা পেয়ে গেলাম,কিন্তু উনি যে আমার থেকে বেশি লজ্জা পেয়েছেন তা বুঝলাম।উনি এতোক্ষনে চিতকার থামিয়ে দিয়েছে।আমি উল্টোঘুরেই চোখ বন্ধ করে আছি এখনো।
চলবে……….
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।ধন্যবাদ)