#প্রেম_পাগলামি
#নিহীন_রুবাইয়াত
#পর্ব:৩১
ভেজা চুল,আধ ভেজা খালি গা,পরনে ছোটখাটো একটা টাওয়াল।বেশ লজ্জা পেয়ে গেলাম,কিন্তু উনি যে আমার থেকে বেশি লজ্জা পেয়েছেন তা বুঝলাম।উনি এতোক্ষনে চিতকার থামিয়ে দিয়েছে।আমি উল্টোঘুরেই চোখ বন্ধ করে আছি এখনো।
–সরি সরি আমি জানতাম না আপনি এখানে এভাবে আছেন,সরি।
–কি ইয়ার নিহীন?তুমি আমার রুমে কেন আসলে এখন??এভাবে কারোর রুমে নক না করে আসতে হয় না জানো না??তোমাকে কি সব বলে বলে শেখানো লাগবে??
–আ আমি তো জাস্ট ভুল করে ঢুকে গেছি।আগে যদি জানতাম যে আপনি এভাবে থাকবেন তাহলে আসতাম না।সরি আমি বুঝতে পারিনি।
–আর এভাবে আসবা না।আমি তো নিচে যেতামি,কালকে একটা এক্সাম আছে তাই আজ সারাদিন পড়াশুনা করেছি ভার্সিটিতে না যেয়ে যাতে সারা সন্ধ্যা তোমার সাথে কাটাতে পারি,নিচে যাবো বলেই শাওয়ার নিয়ে রেডি হচ্ছিলাম।তার আগেই তুমি চলে এলে।
–আমি তো ভেবেছিলাম আপনি বাসায় নেই।সরি
–এখন আর সরি বলার মানে কি?যা দেখার তা তো দেখেই নিয়েছো।আমি ভাবতাম তুমি মেয়েটা অনেক সহজ সরল কিন্তু তলে তলে যে তু..(ওনার কথা শেষ করতে দিলাম না)
–এই এই আমি কিছু দেখিনি।আর আমার ওতো ইচ্ছাও নেই কিছু দেখার।
–আরে হয়ছে হয়ছে।ওতো লজ্জা পেয়ে কাজ নেই।হবু স্বামীর কিছু দেখলে পাপ হবে না।
(ওনার কথাই খুব রাগ হলো,ওনাকে বকা দেয়ার জন্য উল্টা ঘুরতেই আবার লজ্জা পেয়ে গেলাম আর উনিও।উনি প্যন্ট পরছিলো এমন সময় আমি তাকিয়েছি আবার।দোষটা আমারি আমিই তো ভুল সময়ে তাকিয়েছি।আমি আবার উল্টা ঘুরে যায়)
–শীট ম্যান
–ওহ নোওওও নিহীন তুমি আবার..
–আমি ইচ্ছা করে তাকাইনি
–থাক চুপ করো এবার।প্রথমবার না হয় ভুল করে তাকিয়েছো তাই কিছু মনে করিনি কিন্তু এবার আমাএ সত্যি লজ্জা করছে।(ওনার কথা শুনে বেশ হাসি পেলো)
–আমি তো
–তুমি তো কিছুই ইচ্ছা করে করো না।মান সম্মান আর রইলো না।
(ওনার কথাই খুব হাসি পাচ্ছে।এখানে আর থাকা যাবে না।আমি কিছু না বলেই দৌড় দিলাম।নিচে এসে হাফাচ্ছি আর হাসছি।আমার পাশে ওনার দাদু এসে বসলো)
–কি হয়েছে দাদুভাই এতো হাসছো যে(দাদুকে দেখে আমি হাসি থামালাম)
–কিছু হয়নি দাদু
–কিন্তু তোমায় দেখে তো মনে হচ্ছে কিছু হয়েছে।
–না দাদু কিছু হয়নি..
(আমার কথা শেষ হওয়ার আগে অসভ্যটার দিকে চোখ গেলো।সাদা টি-শার্ট,থ্রী কোয়াটার প্যান্ট,ভেজা চুলগুলো সুন্দর করে আঁচড়ানো।একদম ভদ্র পোলা লাগছে কিন্তু মনে মনে যে কত্ত শয়তান তা তো আমি জানিই।কিন্তু দেখতে ভালোই লাগছে।ওনাকে দেখে আমারো বুকে হাত দিয়ে বলতে ইচ্ছা করছে,”হায় ম্যে মারজাভা!এ লাড়কা ইতনা সুন্দার কিউ হ্যে?”দাদু থাকাই চুপ থাকলাম।আমার দিকে উনি তাকাতেই চোখ সরিয়ে নিলো।বেচারা সত্যিই অনেক লজ্জা পেয়েছে।আমারো লজ্জা লাগলো কিছুটা।আবার হাসিও পেলো)
–দাদুভাই চুপ যে..
দাদুর কথাই হুশ ফিরলো।কিন্তু আমি কিছু বলার আগেই দাদু ওনাকে ডাক দেই।উনি এসে দাদুর পাশে বসে।সবাই চলে আসলো,বিয়ের কথাবার্তা শুরু হলো।দুই পরিবারের মতামতে দুই সপ্তাহ পর বিয়ের তারিখ ঠিক হলো।সবাই তো অনেক খুশি।আমরা প্রায় ৩ ঘন্টা থাকলাম এর মাঝে ওনার সাথে বেশ কয়েকবার আই কন্টাক্ট হলো।আমার বেশ লজ্জা লাগছে কিন্তু ওনার তো লজ্জাশরম কিছু নেই।বাসায় ফেরার সময় হয়ে গেলো।সবাই এক এক করে বের হয়ে গেছে কিন্তু আমি ওয়াশরুমে থাকায় সবার শেষে বের হচ্ছি।গেটের বাইরে যাওয়ার সময় কেউ আমার হাত টেনে ধরলো,এরকম হুট করে ধরায় ভয় পেয়ে গেলাম।কিন্তু তা কিছুক্ষনের জন্যেই কারন এ কাজটা যে কার তা আমার ভালো মতোই জানা।ওই অসভ্যটা ছাড়া এই কাজ আর কারই বা হতে পারে?আমার কোমরে এক হাত আর অন্যহাত দেয়ালে রেখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমার খুব লজ্জা লাগছে।
–কি করছেন এটা?
–কি করছি আমি?তোমাকে দেখছি।আমার তো এখনো ওতো সৌভাগ্য হয়নি যে তোমাকে ওইভাবে দেখবো,বিয়ের আগে তো হবেও না।কিন্তু তুমি চালাকি করে দেখে নিলে।
–মানে?
–যাহ দুষ্টু আবার মানে শোনে।আমার বুঝি লজ্জা করে না?
–বেশি না পেচিয়ে বলেন তো।
–ওই যে তখন আমি…
–থাক আর বলতে হবে না।ছাড়ুন আমাকে কেউ দেখে ফেলবে।
–না কেউ দেখবে না সবাই তো বাইরে
কথাটা বলেই উনি মুখটা আমার মুখের দিকে এগিয়ে আনছেন।আমার হার্টবিট বেড়ে গেলো,ঠোট কাঁপছে।উনি আরো এগিয়ে আসছে।না পেরে আমি বলে উঠলাম,
–দাদু
আমার মুখে দাদু কথাটা শুনেই উনি তাড়াহুড়া করে ছেড়ে দিলেন।আশেপাশে তাকিয়ে দাদুকে কোথায় না পেয়ে উনি তো বোকা বনে গেলো।আমি ওনার অবস্থা দেখে হেসে ফেললাম।
–খুব হাসি পাচ্ছে তাই না??ঠিক আছে হাসো দিন আমারো আসবে।মাইন্ড ইট!
আমি মুখ ভেংচে দিয়ে দৌড়ে পালালাম।বাসায় এসে ওনার কথা ভাবছি আর হাসছি।সকাল এ ভার্সিটিতে যাওয়ার সময় মা বললো আজ সন্ধ্যায় নাকি বিয়ের শপিং করতে যাবে দুই পরিবার।আমাকেও যেতে হবে।দুই পরিবার একসাথে যাবে শুনে বেশ ভালো লাগলো।
বাসায় ফিরে শুনলাম জাস্ট মেয়েরায় থাকবে,ছেলেরা যাবে না কেউ আজ।মায়ের কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেলো।কোথায় ভাবলাম ওনার সাথে কিছুটা সময় কাটাবো কিন্তু তা আর হলো না।মাকে বললাম যাব না কিন্তু মায়ের বকাবকিতে যেতেই হবে।হলুদ একটা থ্রীপিছ আর ব্লাক হিজাব পরে রেডি হয়ে নিচে আসলাম।নিচে আসতেই তো আমার চোখ চড়কগাছ,সিড়ির মাঝেই দাড়িয়ে পড়লাম।অসভ্যটা এখানে কি করছে?সোফায় বসে সৌভিক ভাই দাদির সাথে গল্প করছে।আকাশি রং এর শার্ট এর হাতা কনুই পর্যন্ত ফোল্ড করা,চুল গুলো স্পাইক করা হাতে ডায়ালের ঘড়ি একদম হিরো লুক।আমি তো ওনাকে দেখায় ব্যস্ত তখনি মা ডাক দিলো আমায়,
–ওখানে দাড়িয়ে আছিস কেন নিহীন?তাড়াতাড়ি আই..
মায়ের কথাই নিচে নামলাম।মা বললো,,
–আন্টিকে সালাম দাও নিহী
আমি নিলু আপার শাশুড়িকে সালাম দিলাম।উনি উত্তর দিয়ে ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করলেন।তারপর নিজেই বললেন,,
–ড্রাইভার বাসায় নেই তাই সৌভিককে নিয়ে এলাম।
আমি ওনার দিকে তাকালাম উনি দাত বের করে হাসি দিলেন তারপর হুট করে বলে উঠলেন,
–দাদি আপনার ছোট নাতনিকে কিছু শিক্ষা দেননি?বড়দের সম্মানি করে না।আমি তো তার থেকে বয়সে বড় আবার ক্যাম্পাসেও সিনিয়র তাও আমাকে দেখে সালাম দিলো না।ভেরি ব্যাড।
ওনার কথাই আমার তো খুব মেজাজ গরম হয়ে গেলো।আর আমার মা তো আমার দিকে রাগে রাগে ইশারা করলো।তারপর মা ওনার দিকে তাকিয়ে বললো,,
–তুমি কিছু মনে করো না বাবা।আমার মেয়েটা একটু ওরকমি।নিহী…(আমার দিকে দাত খিটমিট করে তাকায়)
আমি সালাম দিলাম এবার..
–আসসালামু আলাইকুম
–ওলাইকুম আসসালাম (টেনে)
–এবার যাওয়া যাক মা??
–হ্যা হ্যা চল
সবাই বের হয়ে গেলাম।উনি ড্রাইভ করছে,আপু ওনার পাশে বসেছে আর আমি,মা,আন্টি পিছনের সিটে বসে আছি।সারা রাস্তা জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকলাম।শপিং মলে এসে শপিং করছি।আপুর জন্য শাড়ি সিলেক্ট করার সময় একটা শাড়ি বেশ পছন্দ হলো।কিন্তু মাকে বলতে পারলাম না।আপুর জন্য শাড়ি/গহনা নেয়া হলো,এর মাঝে সৌরভ ভাইয়াও চলে এসেছে।ভাইয়ার জন্যেও শেরোয়ানি কেনা হলো।সব শপিং শেষে সৌরভ ভাইয়া বললো মা,আপু আর আন্টিকে উনি নিয়ে যাবেন এখন নাকি কোন কাজ আছে তাই পরে যাবে।আমি যেন সৌভিক ভাইয়ার সাথে চলে যায় বাসায়।মা প্রথমে আপত্তি করলো কিন্তু সৌরভ ভাইয়ার জোরাজুরিতে মা রাজি হলো।গাড়ি তো নিয়ে যাওয়া যাবে না এখন তাই আমাদের দুজনকে রিক্সায় যাওয়া লাগবে।উনি তো ব্যাপারটাই অনেক খুশি মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে,মুচকি মুচকি হেসেই যাচ্ছে।
–আর কতোক্ষন দাড়িয়ে থাকবো?তাড়াতাড়ি রিক্সা খোজেন।
–এই তো…
একটা রিক্সা ডাকলেন আমি আগে উঠে বসলাম পরে উনিও উঠলেন,ওনার পাশে বসে কেমন একটা লাগছে।রিক্সা কিছুদুর যেতেই হটাত ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো।
–এই এই মামা দাড়ান বৃষ্টি হচ্ছে
আমার কথায় রিক্সাওয়ালা থেমে যাচ্ছিলো কিন্তু উনি থামতে নিষেধ করেন।
–মামা চালান আপনি।আপনার মাথার ওপর তো ছাতা বাধা সমস্যা নাই।
–কি হলো?মানা করছেন কেন?ভিজে যাবো তো আমরা ওনার না হয় ছাতা আছে কিন্তু আমাদের তো..
–চুপ থাকো আজ(ওনার কথা শেষ হওয়ার আগে রিক্সাওয়ালা মামা বললেন
–মামা আপনারা হুড তুলে নেন)
–না মামা লাগবে না
–লাগবে না মানে?
–মানে আজ আমরা ভিজবো?
–হোয়াট
–ইয়েস বেবি
–এই মামা দাড়ান আপনি নামবো আমি এই লোক পাগল হয়ে গেছে।
–না মামা আপনি দাড়াবেন না চালান তো।নিহীপাখি চুপচাপ বসে থাকো।আজ তোমাকে ভিজতে হবে
আমি কথা বলতে গেলাম উনি এক হাত দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরে কানের কাছে এসে বলেন,
–চুপ করে বৃষ্টি এনজয় করো নিহীপাখি।
আমি আর কথা বলতে পারলাম না,চুপ করেই রইলাম উনি আমার হাত ধরে বসে আছেন,দুজনে ভিজছি।বেশ ভালোই লাগছে।উনি আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেও আমি চোখ নিচু করে বসে আছি।বৃষ্টি থেমে গেলো,দুজনেই কাক ভেজা অবস্থা এখন।উনি এখনো আমার দিকে তাকিয়ে আছেন এভাবেই বাসায় পৌছে গেলাম।
–বাসায় এসে গেছি
–হুম??
–বাসায় এসে গেছিইই
–ওহ।মামা দাঁড়ান।
আমি রিক্সা থেকে নেমে আর দাড়ালাম না বাড়ির ভিতরে চলে আসলাম।ঘরে এসে দরজা লাগিয়ে দিলাম।ফ্রেশ হয়ে বিছানায় এসে বসলাম তখনি আপুরা এলো।নিচে আসলাম,মায়ের কাছ থেকে জানলাম সৌরভ ভাইয়া নাকি সবার জন্যে শপিং করে দিয়েছে।আমার জন্যেও নাকি আছে।আমার হাতে শপিং ব্যাগটা দিয়ে মা নিজের রুমে চলে গেলো আমিও আমার রুমে এসে প্যাকেটটা খুললাম।প্যাকেট খুলতেই আমি তো শকড।
এটা তো সেই শাড়িটা যেটা আমি দোকানে পছন্দ করেছিলাম।
চলবে…..
(আমার সকল পাঠকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।অনেক অনেক sorry।আসলে আমি বাসায় নেই এখন,এক আত্মীয়র বাড়িতে আছি।গ্রাম তো তাই নেট কানেকশন অনেক স্লো।কাল তো অনলাইনেই আসতে পারিনি।আজ অনেক কষ্টে এলাম।প্লিজ কিছু মনে করো না কেউ)