প্রেমাচার কলমে: #অপরাজিতা_মুন #পর্ব_২

0
520

#প্রেমাচার
কলমে: #অপরাজিতা_মুন
#পর্ব_২
(কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ)

-“তোমাদের সবাইকে আজ এখানে ডেকেছি একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার জন্য। শোনো আলাউদ্দিন আর মফিজউদ্দিন, সব সম্পত্তি তো আমি তোমাদের দুই ভাই কে ভাগ করেই দিয়েছি। রেস্টুরেন্ট টা এতোদিন আমার তত্তাবধানে ছিলো। এটার দ্বায়িত্ব টাও আমি এখন ছেড়ে দিতে চাই।”

জরুরি তলবে একত্রিত হওয়া সৈয়দ পরিবারের অবিভাবক সৈয়দ শামসুল হকের একটা কথাতেই ডয়িং রুমে উপস্থিত সকলের মাঝে চাপা উত্তেজনা কাজ করতে শুরু করল। কি বললেন সৈয়দ সাহেব! আজকের দিনে সবাইকে এক করে এতো বড় ঘোষণা, এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত দুই ভাই থেকে শুরু করে পরিবারের একটা সদস্যও ঘুনাক্ষরে কল্পনা করতে পারে নি। রাজধানীর অন্যতম এলাকা গুলশানের মতো জায়গায় ব্যাবসা বানিজ্যে আধিপত্য বিরাজ করা চাট্টিখানি কথা না। শুরুতেই কি সৈয়দ পরিবারের এমন নামী দামী বাড়ি-গাড়ি কিংবা খ্যাতি ছিলো? ছিলো না তো। বিন্দু বিন্দু করে ধীরে ধীরে আজকের এই পাকাপোক্ত অবস্থানে এসেছেন। শুরুটা সৈয়দ শামসুল হকের ছিলো ভীষণ কঠিন। তৎকালীন পাকিস্থানি আমলে গ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছিলেন পড়াশোনার উদ্দেশ্যে। টিউশনি করে নিজের খরচ নিজে চালাতেন। হঠাৎ একদিন খুব কাছের এক বন্ধুর প্রস্তাবে তার সাথে অংশীদার হয়ে ভোজন প্রিয় যুবক সৈয়দ শামসুল হক শুরু করেছিলেন একটা ব্যাবসা, গড়ে তুলেছিলেন ছোট্ট এক ক্যাফে। হরেক রকমের চা হতে কফি বিক্রি করা শুরু করেছিলেন প্রাথমিক ভাবে। আল্লাহ সহায় ছিলো, বিভিন্ন চড়াই-উতরাই পার করে সেই ছোট্ট ক্যাফে দুই বছরের মাথায় জনপ্রিয়তা পেলো সর্বস্তরের জনগনের কাছে। দিন বদলের পালাক্রমে অংশীদার হতে মালিক হয়েছেন, ক্যাফে হতে রেস্টুরেন্টে পরিনত করে ফেলেছেন। ধীরে ধীরে মূলধন বেড়েছে, সাথে বিনিয়োগও। রেস্টুরেন্টের সহিত অন্যান্য শাখায় ক্রমাগত বিনিয়োগ করেছিলেন। কখনও বা সফল হয়েছিলেন আবার কখনও বা ব্যাথর্তা মুষড়ে দিয়েছিলো তাকে। কিন্তু থেমে থাকেন নি। ধৈর্য ধরেছেন, নিজ কর্মে মেধা খাটিয়ে লাগাতার কার্য সম্পাদন করেছিলেন। ওই যে বাংলা ভাষায় প্রচলিত একটা প্রবাদ আছে না, “কষ্ট করলে কেষ্ট মেলে।” হয়েছেও তাই। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর পরিশ্রম করে প্রপার্টি করেছেন, ব্যাবসা-বানিজ্যের শাখা প্রশাখা বাড়িয়েছেন ঢাকার বিভিন্ন স্থানে। ব্যাংক ব্যালেন্স করেছে কোটি’র ঘরে। এতো কিছুর পরেও তার গোড়া, তার শিকড় কে ভুলেন নি, রেস্টুরেন্ট কে ছাড়েন নি। ভোজন প্রিয় স্বাস্থ্যবান সৈয়দ শামসুল হক ছাড়বেন ই বা কি করে! বর্তমানে ঢাকার নামকরা টপ ফাইভ রেস্টুরেন্টের একটা তার নিজ হাতে গড়ে তোলা “ভোজনরসিক এর ভোজনালয়” রেস্টুরেন্ট। বাঙালিয়ানা ছাপ রেখে আধুনিক ডিজাইনের এই রুফটফ রেস্টুরেন্টে সব বয়সী ক্রেতার আনাগোনায় ভরপুর থাকে সবসময়। একের পর এক অর্ডার তো আসেই, সাথে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ইভেন্ট থেকে খাবারের অর্ডার রেস্টুরেন্ট টাকে জমজমাট করে তোলে।
সৈয়দ সাহেব সন্তানদের মাঝে এই চমৎকার বিলাসবহুল বাসা থেকে শুরু করে তিলতিল করে কষ্টে গড়া বিজনেস- প্রপার্টির সব কিছু ভাগ করে দিলেও উনার শেকড়টাকে আগলে রেখেছেন বছরের পর বছর। কিন্তু বয়স বৃদ্ধিজনিত কারণে আজ তিনি সেটার ও দ্বায়িত্ব ছেড়ে দিতে চান। শরীরটাও তার বর্তমানে খুব একটা ভালো না। বিছানা টানে সবসময়। অনেক ভেবে, গভীর চিন্তা করে তবেই সিদ্ধান্ত টা নিয়েছেন। যা ভাবা সেই কাজ, ঘোষণা টা দিয়েই দিলেন। আর উনার এই একটা ঘোষণা তেই নিরব পরিবেশে থাকা ড্রয়িং রুমটাতে ফিসফিস আওয়াজ উঠেছে মিনিট খানেক সময়ের ব্যাবধানেই। অধৈর্য হলো সৈয়দ সাহেবের দুই পুত্র। এমন এক ঘোষণা তারা আজকেই পাবে এটা অনাকাঙ্ক্ষিত, তবে এমন একটা ঘোষণা তাদের বহু দিনের কাঙ্ক্ষিত। রেস্টুরেন্ট টা যে তাদের কাছে সোনার হরিণ সমতুল্য। ছটফট করে উঠলো দুজনের মন। কথা বলার জন্য উন্মুখ হয়ে ওঠলেন। বড় পুত্র সৈয়দ আলাউদ্দিন হক ই প্রথমে কথা বললেন কিন্তু সম্পূর্ণ করতে সক্ষম হলেন না। পিতার হাতের ইশারায় চুপ হয়ে গেলেন। সাথে ফিসফিস আওয়াজ তুলে কথা বলতে থাকা সবাই। নিরব রুমটাতে সৈয়দ সাহেব পুনরায় বললেন,

-“আমার ভালোবাসার জায়গা, আমার যত্নে গড়া রেস্টুরেন্ট টা আমি যে কোনো এক জনের মালিকানা করতে চাই। যোগ্য হাতে দ্বায়িত্ব অর্পন করে আমি চিন্তামুক্ত হতে চাই। তোমরা যে চুলোচুলি শুরু করেছো কয়েক বছর যাবত, রেস্টুরেন্টের ভবিষ্যৎ চিন্তা করলে আমার ভীষণ কষ্ট হয়। আমি অনেক চিন্তা ভাবনা করেই ডিসিশন নিয়েছি। তোমরা কি প্রস্তুত আমার পরবর্তী কথা শোনার জন্য?”

ঠিক এমন একটা ঘোষণা শোনা মাত্র সকল উপস্থিতির উত্তেজনা চরম পর্যায়ে পোঁছে গেলো। চোখে মুখে বিস্ময়ের ছাপ লেপ্টে গেলো সাথে সাথেই। এমনিতেই দুই ভাই এর মাঝে দা কুড়াল সম্পর্ক, সেখানে সৈয়দ সাহেবের বলা কথাটা যেনো ‘কা’টা ঘায়ে নুনের ছিটা’ দেওয়ার মতো। কেননা, সৈয়দ সাহেব বলেছেন যে কোনো একজনের হাতেই তিনি এর দায়ভার অর্পন করতে ইচ্ছুক। পুনরায় নিরব রুমটাতে ফিসফিস আওয়াজ ওঠেছে, সৈয়দ সাহেবের সিদ্ধান্ত শুনে বুদ্ধিমান কেউ ঠোঁট বাঁকিয়ে মুচকি হাসছে। আর কেউ বা এমন সিদ্ধান্ত শুনেও তোয়াক্কা করছে না, সেমিস্টার ফাইনাল এর চিন্তায় মনে মনে ম্যাথমেটিক্স এর কঠিন সূত্র আওড়াতে আওড়াতে তনুমনে তোলকালাম বাঁধিয়ে ফেলেছে। পরিবারের সবচেয়ে ছোট্ট সদস্য পনেরো বছর বয়সের গলুমলু মায়মুনাও দাদাভাই এর সিদ্ধান্ত শুনে আজ ভীষণ চিন্তিত। অতিরিক্ত চিন্তায় তার পেটের ভেতর মোচড় দিয়েছে, গুরগুর আওয়াজ হচ্ছে। রেস্টুরেন্ট যদি কোনো ক্রমে মায়মুনার বড় চাচ্চুর হাতে চলে যায়, তবে যে তার উপস থাকতে হবে। চায়নিস ফুড, ফাস্টফুড এর অভাবে পেট তার উপর মারাত্নক ভাবে রেগে যাবে। খাবারের অভাবে ফাঁকা পেটে হাহাকার বিরাজ করবে, হরতাল ডাকবে, নাড়িভুড়ি মিছিল করবে দফায় দফায়।

অপরদিকে পরিবারের ছোট নাতি কলেজ পড়ুয়া সৈয়দ আব্দুল্লাহ আল মুবিন বেশ উৎসুক চোখে পরখ করছে সব কিছু। আরেকটা যুদ্ধ যে লেগে গেছে, পৃথিবীর তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ এখন তাদের ঘরে এটা মুখ ফুটে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু দাদা, বাবা সাথে বড় চাচাকেও সম্মান তো করে পাশাপাশি বড্ড বেশি ভয় পায়। তাই তার মনের আশা মনের মাঝেই কুক্ষিগত রইলো আপাতত।

পরিবারের বড় নাতনী, সৈয়দ মেহরুন হক নেহা গোলগোল চোখে বাবার দিকে তাকিয়ে। মেয়েটা ভীষণ বাবাভক্ত কি না। বাবার মাঝে যে বর্তমানে অনেক প্রেসার কাজ করছে তাতেই মেয়েটা ক্ষণে ক্ষণে হয়রান হচ্ছে। বার বার হাতের মামপট টা নিয়ে উসখুস করছে, কখন বাবার হাতে পৌঁছাতে পারবে। এমন এনাউন্সমেন্ট শুনে প্রাণপ্রিয় বাবার শুষ্ক গলাটা কখন ভেজাতে পারবে।

ঘোষণা শোনার পর পুনরায় কথা বলার জন্য মুখ খোলার চেষ্টা করেছিলো সৈয়দ আলাউদ্দিন হক এবং মফিজউদ্দিন হক। কিন্তু পিতার চোখের কড়া ইশারায় মুখ খুলতে পারেন নি। সত্যি বলতে সৈয়দ সাহেব নিজে পরিবারের উপর মাত্রাতিরিক্ত হতাশ। হতাশ হবেন ই বা কেনো? যেখানে তিনি এবং তার ছেলে দুইটা ভোজন রসিক এবং রন্ধন প্রিয় সেখানে নাতি নাতনী গুলা তার উল্টো, একেবারেই বিপরীত। ঠিক এই পয়েন্ট টাতেই ভীষণ চিন্তিত সে। নিজের তো বয়স বেড়েছেই সাথে ছেলে দুইটার ও। পরবর্তী প্রজন্ম যে তার যত্নে গড়া আবেগ মিশ্রিত রেস্টুরেন্টে কে খেয়ে বেঁচে ধ্বং’স করে ছাড়বে না তার কোনো গ্যারান্টি নেই! আসল সিদ্ধান্ত যখন জানিয়ে দিয়েছেন ই, বাকি টুকুও ও এখনি বলবেন। কি আর হবে? ভাই ভাই মনোমালিন্য তো আগেই হয়েছে, দুই পরিবারে ফাটল ও ধরেছে। আজ থেকে আরেকটা চূড়ান্ত লড়াই হয়েই যাক। তবুও তার ভালোবাসার “ভোজনরসিক এর ভোজনালয়” রেস্টুরেন্টের দ্বায়িত্ব সঠিক হাতে তুলে দিতে সক্ষম হোক। ননীর পুতুলের ন্যায় আদরে আদরে বড় হওয়া নাতী-নাতনী রা এবার ঝাঁঝালো মশলার ঘ্রাণ, আ/গুনের সংস্পর্শে এসে দাদাভাই এর শেকড়টাকে আঁকড়ে ধরুক, ভালোবাসুক, রন্ধনশালার পাক্কা রাধুনি হোক।

চলবে…..

ক্ষুদেবার্তা: গল্পটা সাধারণ ভাবেই ধীরে সুস্থে আগাবে। প্রেম-ভালোবাসাও হবে, তবে সেটা ধীরে ধীরে। আমার প্রিয় পাঠকদের বলবো ধৈর্য্য নিয়ে পড়তে। আশা করি আজ কিছু হিন্ট পেয়েছেন। আগামী পর্বে পুরোপুরি ক্লিয়ার হবে।
মতামত জানান, গঠনমূলক মন্তব্যের মাধ্যমে। শুনতে চাই, আপনাদের অভিব্যাক্তি জানতে চাই।
ভালোবাসা💛💛

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here