প্রেম_হয়ে_এলি_তুই #লেখিকা : #Ohona_Akther #সূচনা_পর্ব

0
297

ফুলসজ্জার ঘরে বসে আছে অবনি। বুকের ভেতর ঢিপ ঢিপ করছে তার। আপাদমস্তক ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। ভয় পাবে নাই-বা কেনো। তার বিয়ে তো অন্য সকলের মতো স্বাভাবিক ভাবে হয়নি। এমনকি অবনি ভাবেওনি বিয়ে খেতে এসে বিয়ের পিরিতে কনে হিসেবে নিজেকে বসতে হবে। বাবার প্রানের প্রিয় বন্ধুর সম্মান রাখতেই বিয়ের পিরিতে বসতে হলো তাকে। আজকের দিনটি এতোটাই খারাপ অবনির জন্য যে আজকের দিনটি তার সারাজীবনের অমঙ্গল ডেকে এনেছে। এমন একজনের সাথে অবনির বিয়ে হয়েছে যে কিনা অবনির জনম জনমের শত্রু। যার সাথে অবনির সাপ আর বেজির মতো সম্পর্ক। এমনকি লোকটি স্বপ্নেও অবনির পিছু ছাড়ে না। নিজের এক্স বসের সাথে বিয়ে না হয়ে যদি একটা রিকশাওয়ালার সাথে বিয়ে হতো তাহলেও অবনি অনেক সুখে থাকতো। বিয়ে হয়েছে কিনা এমন একজনের সাথে যে রোজ রোজ অবনিকে অফিসের সকলের সামনে ডিরেক্টলি ইনডিরেক্টলি অলওয়েজ ইনসাল্ট করতো। এমনকি একদিন অফিসে সকলের সামনে অফিস থেকে চলেও যেতে বলেছে, তাই অবনিও রাগে দুঃখে লজ্জায় আর অফিসে যায়নি । কিন্তু আজ সেই অসভ্য রাক্ষস লোকটাকেই বিয়ে করতে হলো তার। তাও আবার পরিস্থতির শিকার হয়ে। আর বিয়ের পাত্র যে তার এক্স বস সেটা জানতে পারলো কবুল বলার আগ মুহুর্তে। কিন্তু গুরুতর ব্যপার হলো তার এক্স বস মানে খান গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির মালিক আরশ খান এখনো জানেই না যে অবনি তার বউ। তাই তো অবনি ভাবছে রুমে এসে আরশ যখন বউয়ের জায়গায় তাকে দেখবে তখন কেমন রিয়াকশন দিবে? তারমধ্যে আরশ বিয়েটা করতে চায়নি৷ পরিবারের সম্মান আর দাদুর আদেশ রক্ষার্থেই মত দিয়েছে বিয়েতে। কিন্তু বিয়ের কনে হিসেবে যে অবনি ছিলো তা যদি বিন্দুমাত্র আচঁ করতে পারতো তাহলে বোধহয় বিয়ে আর মৃত্যুর মধ্যে যদি দুটো অপশন দেওয়া হতো আরশ নিরদ্বিধায় মৃত্যুকেই বেঁচে নিতো। আরশের অফিস থেকে চলে আসার পর অবনি আরশকে কতো অভিশাপই না দিয়েছিলো। যেমন – আরশ কাজ নিয়ে ওভার প্রজেসিভ। তাই অবনি দোয়া করতো আরশের যাতে একসাথে তিন চারটা বাচ্চা হয়। বাচ্চা পয়দা করতে গিয়ে যেনো তার বউয়ের অকাল মৃত্যু হয়। বউয়ের শোকে আর এতো গুলো বাচ্চার অত্যাচারে যাতে আরশের জীবন তেনা তেনা হয়ে যায়। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস আজ সে নিজেই কিনা অপ্রত্যাশিতভাবে আরশ খানের বৌ হয়ে গেল। অবনি এসব ভেবে নিজে নিজেই বলছে –

“ বাই এনি চান্স যদি আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমার অভিশাপটা কবুল করে নেয় তাহলে তো সর্বনাশ হয়ে যাবে। নিজের দেওয়া অভিশাপে নিজেই ফেঁসে যাবো। ইশ বিয়েতে রাজি হওয়ার আগে কেনো পাত্রের নামটা জিজ্ঞেস করলাম না। আল্লাহ গো আমি আমার অভিশাপ ফিরিয়ে নিচ্ছি তুমিও মাপ করে দাও প্লিজ। এতো অল্প বয়সে আমার নিষ্পাপ প্রানটা নিও না। আমি যদি এতো সকাল মরে যাই ওই আরশ খানকে জব্দ করবে কে? ”
তারপর অবনি আবার নিজে নিজেই বললো-
“দূররর অবনি তুই কতো বোকারে শুধু শুধু টেনশন করছিস! তুই তো অভিশাপ দিয়েছিস এই বজ্জাত বসের বউ যেনো বাচ্চা পয়দা করতে গিয়ে মরে যায়। এমনি এমনি তো মরতে বলিসনি। আর তোর সাথে তো এই লোকের জীবনে ভালো করে দুটো কথা বলাই হবেনা আবার বাচ্চা পয়দা তো দূরের কথা৷ ”

ফ্ল্যাশব্যাক –

আমজাদ আলমের একমাত্র মেয়ে অবনি৷ পুরো নাম অবনিকা অবন্তী। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে অবনি। কোনোভাবে সংসার চলে। অবনির বাবা অনেক কষ্ট করে অবনিকে পড়াশোনা করিয়েছে৷ অন্যদিকে আমজাদ আলমের প্রানপ্রিয় বন্ধু চৌধুরী গ্রুপ অব কোম্পানির মালিক হাসান চৌধুরী। কোটি কোটি টাকার মালিক। কিন্তু একটা সময় ঠিক তার উল্টো ছিলো। আমজাদ আলম ছিলেন বিশাল ধন সম্পদের অধিকারী আর হাসান চৌধুরীর কোনো রকমে সংসার চলতেই হিমসিম খেয়ে যেতো। কিন্তু নিয়তি আজ তাদের দুজনকে দু’দিকে নিয়ে গেলো। একজনকে করে দিলো পথের ভিখারি আর অন্যজনকে বানিয়ে দিলো কোটিপতি। আমজাদ আলম আর হাসান চৌধুরী বাল্যকালের বন্ধু। কিন্তু এরই মাঝে বহুবছর তাদের মাঝে কোনো কথা হয়নি। একদিন হাসান চৌধুরী রিজু অটো মোবাইল ফোন ওয়ার্কশপে গিয়েছিল গাড়ির ঠিক করার টাকা দিতে। আমজাদ আলম হাসান চৌধুরীর কাছে গিয়ে বলল-
” স্যার আপনার সব গুলো গাড়ি রেডি। আপনি চেক করে নিতে পারেন।”
কথাটা বলে সামনে তাকাতেই দুজন দুজনকে দেখে চমকে যায়।

হাসান চৌধুরী অবাক হয়ে বলে-
” আমজাদ না? ”
“ আমি আমজাদ। আপনি হাসান না? না মানে আপনার নাম? ”
“ আমি হাসান তোর বন্ধু হাসান। ”
কথাটা বলে আমজাদ আলমকে জড়িয়ে ধরলো। আমজাদ আলম হাসান চৌধুরীকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বললো-
“ আপনার জামাকাপড়ে ময়লা লেগে যাবে। ”

“ কি আপনি আপনি করছিস? আমাকে আবার কবে থেকে আপনি বলার শুরু করেছিস হ্যাঁ? জামাকাপড়ে ময়লা হোক! মন তো ময়লা হবেনা। ”
কথাটা বলে হাসান চৌধুরী আমজাদ আলমকে বুকে টেনে নিলেন।

“ আরে কি করছিস? লোকে দেখলে কি বলবে? ”

“ লোকে দেখলে বলবে এক বন্ধু তার আরেক বন্ধুকে যথাযথ মর্যাদা দিচ্ছে। কিন্তু তুই এইভাবে এই অবস্থায় কেনো বন্ধু? ”

“ আমাদের জীবনে মাঝে মাঝে এমন অপ্রত্যাশিত কিছু থাকে যা আমাদের ভাবনার বাইরে আমারও তাই হয়েছে। সবই আল্লাহর ইচ্ছা৷ ”

“ হ্যাঁ কিন্তু তোর এরকম অবস্থা কি করে হলো বন্ধু! ”

“ তোর মনে নেই তোকে বলেছিলাম না আমার যাবতীয় সহায় সম্পত্তি সব বন্ধক রেখে আমি ব্যাংক থেকে ৪০০ কোটি টাকা লোন নিয়েছিলাম জাহাজ কিনতে। জাহাজ কিনেছিলাম ঠিকই কিন্তু আসার পথে জাহাজটি ডুবে যায়। সেই সাথে ডুবে যায় আমার সব স্বপ্ন একমুহূর্তে আমি পথের ফকির হয়ে যাই। দেনার দায়ে আমার জেল হয়ে যায়। জেল থেকে বেরিয়ে ভেবেছিলাম তোর কাছে আসবো। কিন্তু…

“ কিন্তু কী?”

“ আমেনার হার্ট অ্যাটাক হয়। আমেনা মারা যাওয়ার পূর্বে একটি কন্যাসন্তান জন্ম দিয়ে যায়। ”

“ তোর মেয়ে হয়েছে? কোথায় তোর মেয়ে? ”

“ আছে অনেক কষ্টে মেয়েকে পড়াশোনা করিয়েছি। মেয়েটা চাকরির পর আমার কষ্ট কিছুটা কমেছিলো কিন্তু কিছুদিন আগে চাকরিটা ছেড়ে চলে আসে। ”

“ বলছিস কিরে! তুই আমার কাছে এলিনা কেনো? ”

“ এসেছিলাম। কিন্তু তোর সেই ঠিকানায় তোকে পেলাম না। ”

“ হ্যাঁ ঠিকানা পরিবর্তন করে চলে গেলাম চট্টগ্রামে। সেখান থেকে ডানমন্ডি, বনানী আর গুলশান নিজের বাড়ি। ”

“ চৌধুরী গ্রুপ অব কোম্পানির নাম শুনেছিলাম। কিন্তু মালিক যে তুই তা ভাবতে পারিনি। ”

“ হ্যাঁ এখন তুই আর আমার পার্টনার হয়ে আমার সাথে ব্যবসা করবি। ”

“ সরি আই ডোন্ট নিড ইউর হেল্প। ”

“ বাট হোয়াই? এম আই নট ইউর ফ্রেন্ড?”

“ ইয়েস, উইথ এ্যা বোথ অব ফ্রেন্ড। বাট, বন্ধু শুধু বন্ধু হয়ে থাকলেই সম্পর্ক মজবুত থাকে নাহলে ফাটল ধরে যায়। ”

“ তোর সাথে কথা বলে পারা যাবে না। তবে হ্যাঁ তোর মেয়েকে আমার অফিসে চাকরি দিতে চাই এই ব্যপারে তুই আমাকে না করতে পারবিনা। ”

“ আচ্ছা ঠিক আছে৷ আমার ব্যপারে তো সবই বললাম তোকে কিন্তু তোর ব্যপারে তো কিছুই জানা হলো না৷ ”
“ আমার যা কিছু আজ দেখছিস সবই তোর দান। ”

” কি আবোল তাবোল বকছিস? ”

“ আমি ঠিকই বলছি। সে এক বিশাল কাহিনি। অভাব অনটনে সংগ্রাম করতে করতে একটা সময় রাহেলার শরীরে অনেক বড় অসুখ জন্মে যায়। টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে পারিনি। বাধ্য হয়ে তোর দেওয়া ডায়মন্ডের রিংটা বিক্রি করে দিলাম আর মনে মনে তোর থেকে ক্ষমা চেয়ে নিলাম। কিন্তু যতোক্ষণে টাকা যোগাড় করলাম ততক্ষণে রাহেলার শেষ সময় চলে এসেছে। তারপর সেই টাকা গুলো দিয়ে আমি ছোট্ট একটা ব্যবসা শুরু করি। এভাবেই ধীরে ধীরে আজ আমি এই পর্যায়ে এসেছি। সেজন্যই তো বললাম আমার সব কিছুর পেছনে রয়েছে তোর অবদান। ”

“ না বন্ধু আমি তোকে ডায়মন্ডের রিং উপহার দিয়েছি মাত্র। সবকিছুর পেছনে রয়েছে তোর কঠোর পরিশ্রম আর সাধনা। আজকের পর থেকে আর কাউকে বলবিনা আমার টাকা দিয়ে তুই উন্নত করেছিস৷ ”

“ আচ্ছা ঠিক আছে। ভালোই হয়েছে তোর সাথে এই মুহুর্তে আমার দেখা হলো। কতো যে সন্ধান করেছিলাম তোর কিন্তু কোথাও তোর খোঁজ মেলেনি। অবশেষে তোকে পেয়েই গেলাম। আগামী মাসের পনের তারিখ আমার মেয়ে শিলার বিয়ে৷ ”

“ কি বলছিস, সেদিনের ছোট্ট শিলা আজ অনেক বড় হয়ে গেছে নারে!”

“ হ্যাঁ, সময় চলমান কোনো কিছুই থেমে থাকেনা। তুই আর তোর মেয়ে কিন্তু এক সপ্তাহ আগেই চলে আসবি। আর আজকে তুই আমার বাড়িতে যাবি আমি তোর বাড়িতে যাবো। ”
কথাটা বলে দুই বন্ধু হেসে দিলো।
এরপর অবনি হাসান চৌধুরীর কোম্পানিতে জয়েন করে। দেখতে দেখতে শিলার বিয়ের ডেট চলে আসে। সবকিছু ঠিকঠাক মতোই চলছিলো। কিন্তু যতো বিপত্তি সৃষ্টি হয় বিয়ের আগ মুহুর্ত৷ হাসান চৌধুরী শিলার রুমে গিয়ে দেখে পুরো রুম ফাঁকা শিলা বাড়িতেও নেই৷ বিছানার উপর একটা কাগজ তার উপর কলম রাখা আছে৷ হাসান চৌধুরী কাগজটি হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করলেন –

প্রিয় বাবা,

আমার সালাম নিবে। আমি জানি আজকে আমি কতোটা জঘন্য একটা কাজ করছি। তুমি আমাকে ছোট থেকে ভালোবাসা দিয়ে বড় করেছো কিন্তু আমি তার মান রাখিনি৷ কিন্তু এছাড়া আমার আর কিছুই করার ছিলোনা। নিজের বিজনেসে সফলতার জন্য খান গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির মালিক আরশ খানের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছো৷ কিন্তু একবারও জানতে চেয়েছো আমি বিয়েতে রাজি কি’না? আমি তো তাদের সামনেই যেতে চাইনি৷ তুমি আমাকে বলেছিলে জাস্ট ওদের সামনে যাবো আর কিছু না, কিন্তু তুমি কথা রাখোনি তুমি সরাসরি ওদের কথা দিয়ে ফেললে। তাই বাধ্য হয়ে আমাকে পালিয়ে যেতে হলো।

ইতি,
তোমার মেয়ে শিলা

বিয়ের আগমুহূর্তে এরকম চিঠি হাতে পেয়ে হাসান চৌধুরী হার্ট অ্যাটাক করার মতো অবস্থা। সম্মান হারানোর ভয় ঘিরে ধরে তাকে। এদিকে শোনা যাচ্ছে মেয়েরা সব ” বর এসেছে বর এসেছে ” বলে গেইটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পরপর চারটি গাড়ি সমতালে এসে থামলো চৌধুরী ভিলা সামনে। চারপাশে হইচই শুরু হয়ে গেছে। নানান বাহারি ফুলে সাজানো অসাধারণ গাড়ি থেকে নেমে এলো আরশ খান। এদিকে হাসান চৌধুরী ঘেমে একাকার। রুমে এসি চালু তবুও শরীর থেকে বৃষ্টির মতো ঘাম ঝড়ছে। হাত পা তরিৎ গতিতে কাঁপছে। এদিকে আমজাদ হাসান চৌধুরীকে খুঁজতে খুঁজতে দেখতে পেলো শিলার রুমে বিছানার পাশে ফ্লোরে এক হাতে একটি কাগজ আর অন্য হাত মাথায় দিয়ে বসে আছে হাসান চৌধুরী। বন্ধুকে এরকম বিদ্ধস্থ অবস্থায় দেখে আমজাদ আলম দৌড়ে গিয়ে হাসান চৌধুরীকে ধরে দাঁড় করিয়ে বলল-

“ কিরে হাসান শরীর খারাপ লাগছে? ”
হাসান চৌধুরী হাত দিয়ে ইশারা করে দেখালো তিনি পানি খাবে। আজমাদ আলম দ্রুত টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা এনে নিজ হাতে হাসান চৌধুরীকে খাইয়ে দিলো।

“ কিরে কি হয়েছে এবার বল আমায়? ”

হাসান চৌধুরী আমজাদের হাতটা নিজের মাথায় রেখে বললো-
“ বন্ধু আমাকে কথা দে আমি যা বলবো তাতে তুই কোনো আপত্তি করবিনা। আজ আমি তোর কাছে একটি মূল্যবান জিনিস চাইবো তুই প্লিজ আমাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিস না। তুই যদি আমাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিস তাহলে আমার মৃত্যু ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। ”

“ আচ্ছা ঠিক আছে তুই শান্ত হয়ে বস। আগে তো বল আমি তোকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি৷ তুই তো জানিস দেওয়ার মতো আমার আজ আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। ”

“ আছে। ”

হাসান চৌধুরীর কথা শুনে আমজাদ আলম অবাক হয়ে বললেন –
“ আছে? কিন্তু কি? ”

“ তোর মেয়ে। ”

“ আমার মেয়ে! ”

“ হ্যাঁ বন্ধু তোর মেয়ে। বন্ধু শিলা পালিয়ে গেছে যাওয়ার আগে এই চিঠিটা বিছানার উপর রেখে গেছে এই দেখ। ”
আমজাদের হাতে চিঠিটা দিলো। চিঠিটি পড়ে আমজাদের কপালেও চিন্তার ভাজঁ পড়লো। হাসান চৌধুরী আমজাদের হাত ধরে বলল-

“ এখন আমার মান সম্মান সব নির্ভর করছে তোর উপর আমজাদ। এজীবনে আমার সব বিপদে তোর দ্বারাই প্রতিবার বেঁচে গেছি। এই যাত্রায়ও বাঁচিয়ে দে-না বন্ধু। বর যাত্রীরা চলে এসেছে। এখন যদি জানতে পারে পাত্রী নেই তাহলে অপমান আর অসম্মানে আমার মৃত্যু ছাড়া উপায় থাকবে না। ”

“ কিন্তু… ”

“ কোনো কিন্তু নয়৷ আমি তোর হাত জোর করে রিকোয়েস্ট করছি তুই আর আপত্তি করিসনা। ”

“ বেশ, আমি অবনির সাথে কথা
বলছি। ”
কথাটা বলে আমজাদ আলম অবনির রুমের দিকে গেল। অবনি রুম থেকে বের হয়নি। এতো মানুষ জনের ভিতরে থাকতে তার ভালো লাগেনা। তাই নিরিবিলি একা রুমে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছে। হেডফোন কানে গুঁজে গান শুনছিলো অবনি। রুমে তার বাবার আগমন দেখে কান থেকে হেডফোন সরিয়ে বলল –

“ কি হয়েছে বাবা? তোমায় এতো চিন্তিত লাগছে কেনো? সবকিছু ঠিক আছে তো? ”

“ মারে এ জীবনে তোর উপর কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিইনি কিন্তু আজ তোর কাছে আমি বাবা হয়ে একটা জিনিস ভিক্ষা চাইবো কথা দে তুই আমাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিবি না। ”

“ ছি ছি! তুমি এভাবে কেনো বলছো? বাবা আজ পর্যন্ত তোমার কোনো আদেশ অমান্য করতে দেখেছো আমায়।? ”

“ তাহলে দ্রুত বিয়ের জন্য তৈরি হয়ে
নে। ”

“ বিয়ে!”
“ হ্যাঁ বিয়ে, শিলা বিয়ের আসর ছেড়ে পালিয়ে গেছে। দেখ মা এতে তোর হাসান আঙ্কেলের সম্মান জড়িয়ে আছে। আমি বন্ধু হয়ে আমার প্রানপ্রিয় বন্ধুর অসম্মান কিছুতেই সহ্য করতে পারবোনা। তুই প্লিজ অমত করিসনা। ”

“ অসম্ভব বাবা। তুমি শুধু তোমার বন্ধুর দিকটা দেখছো? শিলা আপু পালিয়েছে বলে কি আমাকেই বিয়েটা করতে হবে? আমি কি শিলা আপুকে পালাতে বলেছিলাম? চেনা নেই জানা নেই একটা অচেনা অজানা ছেলেকে আমি কি করে বিয়ে করবো? তার উপর তারা তো শিলা আপুকে পছন্দ করেছে আমাকে নয়। হাসান আঙ্কেল এতো বড়লোক তার মেয়েকে নিশ্চয়ই যেনো তেনো ঘরে বিয়ে দিবেনা। তোমার মনে হয় আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের সাথে তারা আত্নীয়তা করবে? তাছাড়া আমারও তো পছন্দ অপছন্দ বলে কিছু আছে বাবা! এটা বিয়ে কোনো ছেলে খেলা নয়। ”

“ আমার বন্ধুর সম্মানের চেয়ে এখন তোর পছন্দ অপছন্দ বড় হয়ে গেছে! এই শিক্ষা দিয়েছি আমি তোকে? আজ যদি অপমান অসম্মান সহ্য করতে না পেরে আমার বন্ধুর ভালো মন্দ কিছু হয়ে যায় আমি কিন্তু তোকে কখনো ক্ষমা করবোনা। অনেক আশা নিয়ে তোর কাছে এসেছিলাম কিন্তু আমার বোঝা উচিৎ ছিল তুই এখন আর ছোট নেই, নিজে পছন্দ করার মতো বয়স হয়ে গেছে তোর। ”

বাবার কথা শুনে অবনিরও বিবেকে বাঁধলো যে মানুষটার মন এতো ভালো। তাকে চাকরি দিয়েছে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসা দিয়েছে, কর্মচারির চোখে কখনো দেখেনি তার এতো বড় অসম্মান কি করে হতে দিবে সে? অবনির বাবা হাতাশা গ্রস্থ হয়ে ব্যর্থতার নিয়ে রুম থেকে চলে যাচ্ছিল। সবকিছু বিবেচনা করে অবনি পেছন থেকে বলল-
“ বাবা আগে তুমি ছেলে পক্ষের সাথে আঙ্কেল কে কথা বলতে বলো। তাদের যদি আপত্তি না থাকে তাহলে আমারও আপত্তি নেই। ”
অবনির কথা শুনে তার বাবার চোখে মুখে খুশির ঝলক দেখা দিলো। তিনি দ্রুত পায়ে মেয়ের কাছে এগিয়ে এসে বললেন –

“ সত্যি বলছিস মা? তুই সত্যি বিয়েতে রাজি? ”
বাবার কথায় অবনি মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বোঝায়।
“ আমি জানতাম তুই কখনো আমার কথা অমান্য করবি না। আমি এখনি হাসানের সাথে কথা বলছি। ”

#প্রেম_হয়ে_এলি_তুই
#লেখিকা : #Ohona_Akther
#সূচনা_পর্ব

চলবে…….

( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here