#প্রেম_হয়ে_এলি_তুই
#লেখিকা : #ohona_akther
#পর্ব ( ২ )
🚫 কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ ~
হাসান চৌধুরী জাহানারা খানের সাথে কথা বলার জন্য আলাদাভাবে ডেকে আনলেন। কারন খান ভবনে জাহানারা খানের কথাই শেষ কথা। জাহানারা খান খুবই বিচক্ষণ ও একরোখা একজন মানুষ। ছেলের কথায় আর হাসান চৌধুরীর ব্যবহারে শিলাকে পছন্দ করেছিলেন।
“ কি ব্যপার হাসান! তুমি কী এমন বলবে যার জন্য আমাকে এভাবে ডেকে আনলে?”
“ আসলে কীভাবে যে কথাটা বলি আপনাকে। ”
“ তুমি নিঃসংকোচে বলতে পারো। ”
“ মিসেস খান আসলে আমার মেয়ে মানে শিলা নেই৷ ”
হাসান চৌধুরীর কথায় জাহানারা খান বিস্মিত হয়ে বললো-
“ নেই মানে!”
হাসান চৌধুরী মাথা নিচু করে বললো-
“ জ্বী ও পালিয়ে গেছে। ”
কথা শুনে জাহানারা খানের অবস্থা যেনো বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো।
“ ইয়ার্কি হচ্ছে আমার সাথে? ”
“ ছি ছি! মিসেস খান আপনার সাথে আমি কেনো ইয়ার্কি করতে যাবো। ”
জাহানারা খান রুক্ষ কন্ঠে বললেন-
“ তাহলে তুমি কি চাইছো আমি এখন বরযাত্রী নিয়ে শূন্য হাতে ফিরে যাবো? আমার নাতী বিয়েই করতে চায়নি শুধুমাত্র আমার কথায় মত দিয়েছে। আর সেই জায়গায় এখন যদি জানতে পারে আপনার মেয়ে পালিয়ে গেছে ও কি পরিমাণ রেগে যাবে তার ধারনা আছে আপনার? এই বিয়ের সাথে খান বাড়ির মান সম্মান জড়িয়ে আছে। ”
“ না না মিসেস খান আপনাকে শূন্য হাতে ফিরতে হবে না। ”
“ মানে? কি বলতে চাও পরিষ্কার করে বলো।”
জাহানারা খান শক্ত কন্ঠে কথাটি বললেন।
“ আমার বন্ধুর একমাত্র মেয়ে অবনিকা। উচ্চশিক্ষিত, রূপবতী এবং গুণবতী। আচার ব্যবহারও মনোমুগ্ধকর। শুধু আর্থিক দিক থেকে অতোটা প্রভাবশালী নয়। একটা সময় অনেক বিত্তশালী ছিলো কিন্তু একটা এক্সিডেন্টে সর্বহারা হয়ে গেছে। ”
জাহানারা খান আগের ন্যায় গম্ভীর কণ্ঠে উত্তেজিত হয়ে বললেন –
“ মানে তুমি বলতে চাইছো আমি এখন আমার নাতীকে গিয়ে বলি তার বিয়ের কনে পাল্টে গেছে? ”
হাসান চৌধুরী আমতা আমতা করে বললো-
“ মিসেস খান আমি আপনাদের ভালোর কথা ভেবেই বলছি। এতে আমাদের দুই পরিবারেরই সম্মান বাঁচবে। বিশ্বাস করুন আমি দুর স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি আমার মেয়ে এমন একটা কাজ করবে। আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি সমস্ত মেহমানের আপ্যায়ন আমার বাড়িতেই হবে৷ আপ্যায়নে কোনো ত্রুটি থাকবেনা। আপনি শুধু একটি বার মেয়েটিকে দেখুন৷ আমার বিশ্বাস আপনি মেয়েটাকে দেখলে কিছুতেই না করতে পারবেন না। ”
সবকিছু বিবেচনা করে জাহানারা খান বললেন –
“ বেশ, আমি মেয়েকে দেখবো। ”
জাহানারা খানের কথা শুনে হাসান চৌধুরী একটু সস্থি পেলেন। তারপর দুজন অবনির রুমে প্রবেশ করলো। অবনি এতোক্ষণ বাইরের সব কথাই আড়িঁ পেতে শুনেছে। উনারা রুমের দিকে এগোচ্ছে শুনে দ্রুত নিজেকে সামলে নিলো। রুমে প্রবেশ করার পর জাহানারা খান আর অবনি দুজনই দুজনকে দেখে চমকে গেল। কারন পূর্বেও তাদের একবার দেখা হয়েছিলো।
কয়েকমাস আগে জাহানারা খান রাস্তার এপাশ থেকে ওপাশে যেতে নিলে হঠাৎ একটা গাড়ি তার সামনে চলে আসে। একটি মেয়ে তাকে বাঁচাতে চেয়েও শেষ রক্ষা হলো না। জাহানারা খানের শরীর র’ক্তা’ক্ত হয়ে গেলো। চোখ বন্ধ হয়ে আসার আগে মেয়েটির মুখ ঝাপসা ভাবে দেখেছিলো তিনি। জাহানারা খানের এক্সিডেন্ট দেখে তার ড্রাইভার আর অবনি মিলে দ্রুত হসপিটালে নিয়ে যায়। জাহানারা খানের যখন জ্ঞান ফিরে তখন চারপাশে নিজের পরিচিত সকলের মুখ দেখলেও কাঙ্ক্ষিত মুখটি দেখতে ফেলো না। সকলের চোখে পানি। শুধু মাত্র প্রিয়া খানের চোখে কোনো পানি ছিলো না। প্রিয়া খান আরশের মা। কিন্তু তিনি জাহানারা খান কে মোটেও সহ্য করতে পারে না। তার ধারনা জাহানারা খান তার সহজ সরল ছেলেটার ব্রেইন ওয়াশ করে দিয়েছে। তার একমাত্র ছেলেকে আর স্বামীকে নিজের হাতের পুতুল বানিয়ে রেখেছে। কিন্তু সরাসরি কখনো কিছু বলার সাহস হয়নি। কারন প্রিয়া খান ছিলো গরিব ঘরের মেয়ে। প্রিয়া খান আর আকবর খানের প্রেমের বিয়ে ছিলো। খান ভবনে এর আগে কেউ প্রেমের বিয়ে করেনি। এটাই ছিলো খান ভবনের ঐতিহ্য। কিন্তু একমাত্র ছেলে যখন বিয়ে করে সদর দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো জাহানারা খান একমাত্র ছেলের মুখের দিকে চেয়ে পুরোনো ঐতিহ্য ভেঙ্গে তাদের বরন করে ঘরে তোলে এতে করে আকবরের তার মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা হাজার গুন বেড়ে যায়। আজ পর্যন্ত মায়ের কোনো কথাই আর অমান্য করেনি। কিন্তু প্রিয়া খানের চলাফেরা কখনোই জাহানারা খানের পছন্দ ছিলো না। প্রিয়া খান সব সময় নিজের রুপচর্চা নিয়ে বিজি থাকতো। তার যে একটা ছেলে ছিল সে যেনো তা ভুলেই গিয়েছিল। জাহানারা খান আরশকে নিজের আদর্শে বড় করে তোলে৷ নিজের ছায়া সঙ্গীর ন্যায় বড় হয় আরশ। তাই তো আরশ তার দাদুর কোনো আদেশই অমান্য করেনা। আর ঠিক এই জিনিসটাই প্রিয়া খান সহ্য করতে পারেনা।
হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে জাহানারা খান। পাশেই আরশ জাহানারা খানের হাত ধরে চোখের পানি মুছে বললো-
“ জানেমান তুমি ঠিক আছো? কিভাবে এরকম হলো তোমার? এতোটা কেয়ারলেস কেনো তুমি? তুমি কি চাও কাজকর্ম সব ছেড়ে এখন আমি তোমার চিন্তায় মগ্ন থাকি? আজ যদি তোমার কিছু একটা হয়ে যেতো তখন আমার কি হতো?”
জাহানারা খান আরশের গালে হাত দিয়ে বললো-
“ শান্ত হও দাদুভাই। আমার কিছু হয়নি। এই-যে আমি একদম ঠিক আছি। ”
“ হ্যাঁ কতোটা ঠিক আছো তা আমি দেখতেই পাচ্ছি। এরপর থেকে যদি বেখেয়ালি চলো তাহলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবেনা এই বলে দিলাম। ”
নাতির মুখে এমন দ্বারা হুমকি শুনে জাহানারা খান হেসে দিলো।
জাহানারা খান নার্সকে উদ্দেশ্য করে বললেন-
“ এই যে মিস, একটা মেয়ে আমাকে নিয়ে এসেছিল না? ওই মেয়েটি কি চলে গেছে?”
“ জ্বী মেডাম উনিই তো আপনাকে ব্লাড দিয়ে বাঁচিয়েছে। সত্যিই এ যুগে এমন মানুষ পাওয়া বড্ড কঠিন। উনার ব্লাড গ্রুপ আর আপনার ব্লাডগ্রুপ একই। তখন যদি উনি আপনাকে ব্লাড দিয়ে না বাঁচাতেন আর সঠিক সময়ে হসপিটালে না আনতেন তাহলে কি যে হতো! উনি বেশ কিছুক্ষণ আপনার কাছে ছিলো। যখন জানতে পাড়লো আপনি বিপদমুক্ত তখন আর অপেক্ষা না করে চলে গেছে। ”
নার্সের কথা শুনে আরশ মনে মনে বললো-
“ জানিনা কে তুমি? তবে একটা ধন্যবাদ তোমার প্রাপ্য ছিলো। ”
জাহানারা খান অবাক হয়ে গেলো মেয়েটির নীতিবান দিক দেখে। যে তাকে নিজের শরীরের র’ক্ত দিয়ে বাঁচালো অথচ বিনিময়ে কিছুই নিলো না। তিনি ড্রাইভারকেও অনেক বকাবকি করছে কেনো মেয়েটির কোনো এড্রেস রাখলোনা। আর মনে মনে একটা আক্ষেপ রয়েই গেলো।
“ ইশশ যদি এই মেয়েকেই আমার নাতবৌ করে খান ভবনে আনতে পারতাম। কিন্তু কি আর করার এতো বড় শহরে এতো মানুষের ভিড়ে কোথায় খুঁজে পাবে ওই মেয়েকে। কিন্তু নিয়তি আজ আবারও মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে তাদের। অবনিকে দেখে জাহানারা খান বেশ খুশি হয়ে গেলেন। এতোক্ষণ মুখে রাগ আর গম্ভীরতা থাকলেও অবনিকে দেখে মনটা উৎফুল্ল হয়ে উঠলো। তিনি মনে মনে শিলাকে অনেক দোয়া করলেন। কারন, শিলা পালিয়ে যাওয়াতেই তার মনের বাসনা পূর্ণ হবে আজ।
অবনির কথায় ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে আসে জাহানারা খান।
“ আপনি? ”
জাহানারা খান অবনির দিকে এগিয়ে আসলো। অবনি জাহানারা খানের পা ছুঁয়ে সালাম করলো। জাহানারা খান তার এমন কাজে মুগ্ধ হয়ে মাথায় হাত দিয়ে মাথা মুছে দোয়া করে দিলো।
“ কেমন আছেন আপনি? শরীর ভালো আছে আপনার? ”
“ ভালো ছিলোনা। তোমাকে দেখার পর ভালো হয়ে গেছে৷ সেদিন কেনো দেখা না করে চলে গিয়েছিলে? আমি তোমাকে কতোই না খুঁজেছিলাম। ”
জাহানারা খানের কথায় অবনি শুধু একটা ছোট্ট হাসি উপহার দিলো।
“ তোমার নাম কি হবু নাতবৌ। ”
নাতবৌ কথাটা শুনে অবনি চমকে তাকালো সাথে লজ্জাও পেলো।
“ অবনিকা অবন্তী। ”
“ বাহ ভারী মিষ্টি নাম। কিন্তু আমি তোমাকে মিষ্টি বলেই ডাকবো কেমন? ”
“ জ্বী আচ্ছা। ”
তাদের এরকম সাবলীল ভাবে কথা বলতে দেখে হাসান চৌধুরী অবাক হয়ে বললেন-
“ আপনি ওকে চিনেন? ”
“ হ্যাঁ খুব ভালো করেই চিনি৷ হাসান সাহেব এই বিয়েতে আমার কোনো আপত্তি নেই আপনি মিষ্টি কে তৈরি করে দিন। ”
জাহানারা খান প্রিয়া খান আর আকবর খান কে ডেকে সবটা বললো। সব শুনে প্রিয়া খান বললেন –
“ অসম্ভব! আমি কিছুতেই এরকম মিডেল ক্লাস মেয়ের সাথে আমার ছেলের বিয়ে দিবো না৷ ”
আকবর খান বললো-
“ মা আমি তোমার সব সিদ্ধান্তকেই যথেষ্ট শ্রদ্ধা করি। কিন্তু তাই বলে একজন মিস্ত্রির মেয়েকে খান বাড়ির পুত্রবধু বানিয়ে নেওয়াটা কি ঠিক হবে? ”
“ আমি জাস্ট তোমাদের আমার মতামত টুকু জানিয়েছি। তোমাদের কাছ থেকে মতামত জানতে চাইনি। আর যদি ঠিক ভুল বিচার করতেই হয় তো প্রিয়া কেমন পরিবার থেকে এসেছে তা নিশ্চয়ই নতুন করে মনে করিয়ে দিতে হবে না। কথাটা শুনে দুজনের মুখটা চুপসে গেলো। কিন্তু প্রিয়া খান দমে যাওয়ার পাত্রী নন। তিনি বললেন –
“ তা না হয় মেনে নিলাম শাশুড়ী মা। কিন্তু আপনার নাতির মত আছে কিনা সেটাও তো আপনার দেখা দরকার তাইনা!”
কথাটা প্রিয়া খান বুদ্ধি খাঁটিয়ে বললো কারন তার ধারনা মেয়ের বাবা একজন মিস্ত্রি আর একটা মিডেল ক্লাসের মেয়েকে নিশ্চয়ই আরশ কখনো নিজের বৌ বানাতে চাইবেনা৷ প্রিয়া খানের কথা প্রতি উত্তরে জাহানারা খান চওড়া হয়ে জবাব দিলো-
“ আমার নাতির সাথে আমি কথা বলে নিবো৷ তা নিয়ে তোমায় ভাবতে হবেনা৷ কথাটা বলে জাহানারা খান পা বাড়ালো উদ্দেশ্য আরশের কাছে যাওয়া। তিনি যেতেই প্রিয়া খান মনে মনে বললো-
“ যান যান! এবার যখন আরশ দেখবে তার প্রান প্রিয় জানেমান একটা মিস্ত্রির মেয়েকে তার মতো টপ বিজনেসম্যানের বউ বানাতে চায় তখন নিশ্চয়ই জানেমান তো দূরের কথা দু চোখেও ওই জাহানারা খান কে সহ্য করতে পারবে না। ”
ব্যপারটা ভাবতেই প্রিয়া খানের মনটা খুশিতে নেচে উঠলো।
★★★★
“ হোয়াট দ্যা হেল দাদু? মাথা ঠিক আছে তোমার? একজন মিস্ত্রি মেয়ে হবে আমার ওয়াইফ! দাদু সোসাইটিতে আমার একটা রেপুটেশন আছে৷ আমার মতো একজন টপ বিজনেসম্যান কি’না শেষে একটা মিস্ত্রি মেয়েকে বিয়ে করবে? দাদু আমি শুরু থেকেই বিয়েটা করতে চাইনি শুধুমাত্র তোমার ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলের কারনে বিয়েতে মত দিয়েছি। তারমানে এই নয় যাকে তাকে বিয়ে করে ফেলবো। আই জাস্ট আই ডিন্ট এক্সপেক্ট দিস ফ্রম ইউ। ”
“ দাদুভাই! কি তখন থেকে মিস্ত্রি মেয়ে মিস্ত্রি মেয়ে করছো? এই আদর্শ শিখিয়েছি আমি তোমায়? মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখতে শিখো দাদুভাই। আর তুমি কি বলতে চাইছো? যে মেয়েটা তোমার দাদুর প্রান বাঁচিয়েছে তাকে আমি এখন বলবো তুমি সাজঁ বন্ধ করো আমার দাদুভাই এই বিয়েতে মত নেই? আমি ওদের কথা দিয়েছি দাদুভাই। আমি কিছুতেই ওয়াদা ভঙ্গ করতে পারবোনা। ”
“ দাদু প্লিজ। ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড! ও তোমার প্রান বাঁচিয়েছে মানলাম এরজন্য আমি তার কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকবো৷ কিন্তু তাই বলে বিয়ে! ইট’স নট পসিবল দাদু। তোমার তাদের কথা দেওয়ার আগে আমার মতামত নেওয়া প্রয়োজন ছিলো। ”
“ দাদুভাই আমি যখন একবার কথা দিয়েই ফেলেছি আমি আমার কথা ফিরিয়ে নিতে পারবোনা৷ আজ তুমি বিয়েতে মত দিবে আর নাহয় আমার মরা মুখ দেখবে৷ যার জন্য আমি নতুন জীবন ফিরে পেয়েছি তাকেই যদি আজ অসম্মানিত করি তাহলে এই বেঁচে থাকার কোনো মূল্যই থাকবেনা আমার কাছে। ”
“ দাদু! ”
“ হ্যাঁ দাদুভাই এটাই আমার শেষ কথা এবার তুমিই ডিসিশন নাও তুমি কোনটা বেছে নিবে। তবে মনে রেখো তোমার দাদুর কিন্তু এক জবান এবং একরোখা মানুষ। একবার যা বলে তাই করে তাই আমি আশা করছি তুমি সঠিক সিদ্ধান্তটিই নিবে। ”
আরশ বাধ্য হয়ে বিয়েতে মত দিলো। কারন এছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না। বিছানায় বসে ঘটে যাওয়া কাহিনি গুলো ভাবছিলো অবনি। দরজা খোলার শব্দে ধ্যান ভাঙ্গে তার। অবনি লম্বা ঘোমটা টেনে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। কারন সে আরশকে বুঝতে দিতে চায় না পাত্র যে আরশ ছিলো সেটা সে আগেই জানতে পেরেছে সে প্ল্যান করে নিয়েছে এমন অভিনয় করবে যেনো সে জানতোই না আরশের সাথে তার বিয়ে হয়েছে।
অবনি আরশের দিকে এগিয়ে গিয়ে মাথায় নিচু করে হাত বাড়াতেই আরশ বললো-
“ এই থাক থাক আমাকে পা ছুঁয়ে সালাম করতে হবেনা৷ ”
কিন্তু আরশকে অবাক করে অবনি একটা গোলাপ ফুল ফ্লোর থেকে তুলে নিলো। আরশ তো টাস্কি খেয়ে গেলো। কত্তো বড় সাহস এই মেয়ের এতো বড় অপমান করলো তাকে? আরশ ভেবেছিলো মেয়েটি তাকে সালাম করবে কিন্তু তা না করে ফ্লোর থেকে একটা গোলাপ ফুল তুলে নিলো! রুমে কি গোলাপ ফুলের অভাব ছিলো যে এখান থেকেই নিতে হবে? আস্ত বে’য়াদব মেয়েতো ম্যানার্স জানে না? কে শিখিয়েছে এই মেয়েকে বিয়ের প্রথম রাতে স্বামীর পা ধরে সালাম না করে ফুল তোলা! দাদুর কথা অনুযায়ী যেইনা একটু মানিয়ে নিতে চেয়েছিলো কিন্তু এই মেয়ে তো তার মেজাজটাই খারাপ করে দিলো।
মূলত অবনি আগে থেকেই দরজার সামনের দিকে সিরিয়ালে অনেক গুলো গোলাপ ফুল রেখে দিয়েছিলো যাতে আরশকে এই ভাবে জব্দ করতে পারে।
অবনি তো খুব ভালোই বুঝতে পারছে তার প্ল্যান কাজে দিয়েছে কিন্তু লম্বা এক ঘোমটার কারনে বেচারার চাঁদ মাখা মুখটায় অমাবস্যার আধার নামলে কেমন দেখায় তা দেখতে পারছেনা। তাই আত্মাটা পুরোপুরি শান্তি পাচ্ছে না। মেঝেতে ঝুঁকেই অযুহাত দেখিয়ে এখনো ফুলগুলো তুলছে অবনি যা দেখে আরশের মেজাজ আরোও খারাপ হয়ে গেলো। আরশ এতোক্ষণ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে ছিলো হয়তো সালামটা পাবে এই আশায় কিন্তু সেগুরে বালি। আরশ আর মেজাজ কন্ট্রোল করে না রাখতে পেরে বলেই দিলো-
“ এই মেয়ে তুমি আমাকে সালাম না করে ফ্লোর থেকে ফুল তুলছো কেনো?”
কিন্তু আরশের কোনো কথাই অবনির যেনো কানেই পৌঁছাচ্ছে না। আরশ এবার রেগে যেইনা অবনির হাত ধরে টেনে সামনে দাঁড় করালো ওমনি অবনির মাথা থেকে ঘোমটা টা সরে গেলো। অবনির চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম। অবনি চোখ খিঁচে বন্ধ করে রাখে। তারপর একচোখ খুলে যখন দেখলো আরশ ওর দিকে তাকিয়ে আছে তখন পুরো চোখ খুলে ফেললো। আর মনে মনে ভেবে নিলো সে ভয় পাবেনা। সময় এসে গেছে নিজের প্রতি করা অপমানের উপযুক্ত জবাব দেওয়ার। সে আরশকে বোঝাবে অবনি কি জিনিস।
আরশ তো পুরোই শকট অবনি কে দেখে শেষে কিনা এমন একটা মেয়েকেই তার দাদুর পছন্দ করলো!
অবনি আর আরশ দুজন একসাথে বলে উঠলো –
“ তুমি?”
“ আপনি! ”
#চলবে….
(( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠনমূলক মন্তব্য চাই। সবাই পেইজটি ফলো করে রাখবেন৷ সবার বেশি বেশি সাপোর্ট পেলে পরবর্তী পর্ব খুব তাড়াতাড়ি দিয়ে দিবো।))