#প্রেম_হয়ে_এলি_তুই
#লেখিকা : #ohona_akther
#পর্ব : ( ৩ )
🚫 কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ ~
আরশ পাশে ফিরে কপালে হাত দিয়ে বললো –
“ ওহ শিট! শেষ পর্যন্ত তোমার মতো একটা ইস্টুপিট আমার বউ! এমন জানলে আমি জীবনেও কবুল বলতাম না। ”
“ আপনার মতো একটা অসভ্য বজ্জাত রাক্ষসের সাথে আমার বিয়ে হলো? জীবনে কি এমন পাপ করলাম যে আপনাকেই আমার বর হতে হলো। যদি জানতাম আপনিই আমার বর আমি তো মরে গেলেও কবুল বলতাম না। ”
“ হাউ ডেয়ার ইউ? এই তোমার সাহস কিভাবে হয় আমার সাথে এভাবে কথা বলার? যেখানে আরশ খানের সামনে দাঁড়িয়ে সবাই কথা বলতেই ভয় পায় সেখানে তুমি আমাকে এভাবে ইনসাল্ট করছো! তোমার স্পর্দা দেখে আমি জাস্ট অবাক হয়ে যাই। তোমার তো রাজ কপাল যে খান বাড়ির বউ হয়ে এসেছো৷ মাঝে দিয়ে আমার কপালটা পুড়লো। ”
“ প্রথমত সাহসের কথা আসছে কোথা থেকে আমি তো সেটাই বুঝতে পারছিনা। শুনুন আপনি আমার এক্স বস ওকে? বস ছিলেন অতীত হয়ে গেছে সেটা। বর্তমানে তো আর বস নন তাইনা! সো আপনাকে ভয় পাওয়ার প্রশ্নই আসে না। দ্বিতীয় কথা হলো কি বললেন আপনি? আমার রাজ কপাল হাউ ফানি! আপনার মনে একবারও প্রশ্ন জাগলো না আমার ভাগ্য কত্তো লেভেলের খারাপ হলে আপনার মতো ‘খাড়ুস’ কে বিয়ে করতে হলো শেষ পর্যন্ত! আর আপনি এরকম ভাবে আরশ খান আরশ খান বলে লাফাচ্ছেন মনে তো হচ্ছে আপনার নাম আরশ খান নয় শাহরুখ খান। ”
“ শাহরুখ খান না হলেও তার চেয়ে কমও কিন্তু নই। নাহলে তো আর আমাকে পটানোর জন্য কফি বানিয়ে নিতে না তাইনা মিস সরি সরি এখন তো আপনি মিস নন মিসেস খন৷ ”
কথাটা শুনে অবনি খুব ভালো করেই বুঝতে পারেছে আরশ তাকে আবারও ইনডিরেক্টলি ইনসাল্ট করছে। মনে মনে ভাবছে সব হয়েছে ওই মাথা মোটা রুপার বুদ্ধিতে বুদ্ধি তো নয় যতোসব কু বুদ্ধি। রুপা আর জিসান অবনির বেস্টফ্রেন্ড। তিনজন একই অফিসে জব করতো। অবনি সব সময় কাজের মাঝে একটা না একটা ভুল করেই যেতো আরশ এজন্যই অবনিকে নানারকম ভাবে সবার সামনে অপমান করতো।
একদিন অবনি অফিসে এসে বসতে না বসতে আরশ বললো-
“ মিস অবনি সমস্যা কি আপনার? ”
“ ককই স্যার কোনো সমস্যা নেই তো। ”
“ প্রত্যেকটা দিন আপনি লেট করে আসেন তারপরও বলছেন কোনো সমস্যা নেই! তারমধ্যে প্রতিটা ফাইলের মধ্যে কোনো না কোনো ভুল করেই রেখেছেন৷ একটা ফাইলও আপনি ঠিকঠাক করছেন না। আমি তো বুঝতেই পারছিনা আপনি কাজকে পছন্দ করছেন না নাকি কাজ আপনাকে পছন্দ করছেনা!”
“ সরি স্যার। আর ভুল হবে না। এবার থেকে প্রতিটা কাজ ঠিকঠাক মতোই করবো। ”
“ সরি! আর কতোদিন পর্যন্ত সরি বললে আপনার সরি বলাটা সার্থক হবে? ডেইলি ১০০০ বার সরি বলেন তারপরও যেই লাউ সেই কদু। ”
“ স্যার এবারই শেষ সরি। ”
“ জাস্ট ইম্পসিবল! ” কথাটা বলে আরশ চলে যায়। আরশ যেতেই অবনি বললো-
“ দেখেছিস কত্তো বড় অসভ্য লোক এসে বসতে না বসতেই ওয়াজ করা শুরু করে দিয়েছে। ”
জিসান মজা করার জন্য বললো-
“ ঠিকই তো বলেছে। স্যার যে তোর চাকরিটা বাঁচিয়ে রেখেছে এইটাই তো তোর পরম সৌভাগ্য। ”
“ তোর মতো বন্ধুর চেয়ে দশটা শত্রু থাকা অনেক ভালো। তুই আর আমার সাথে কথা বলতে আসবিনা। ”
“ তাহলে তো ভালোই হবে। রোজ রোজ তোর প্যারা থেকে বেঁচে যাবো। তুই আমাকে যেই প্যারা দিস আমার গার্লফ্রেন্ডও আমাকে এতো প্যারা দেয়না৷ ”
” এই কি বললি তুই? সামান্য একটু কাজে হেল্প করতে বলি আর ওমনি এটা প্যারা হয়ে গেলো তোর কাছে? ”
রুপা ওদের ঝগড়া করতে দেখে বললো-
“ এই তোরা থামবি! এভাবে বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করছিস কেনো? ”
রুপার কথায় অবনি বললো-
“ আমি ঝগড়া করছি! ঝগড়া তো করছে ওই জিসানের বাচ্চা। আমি মরি আমার জ্বালায় আর এই বেয়াদবটা ওই বজ্জাত বসের হয়ে চামচামি করতে আসছে। তোরা জানিস খাড়ুসটা এখন আমার স্বপ্নেও আসা শুরু করছে। ”
অবনির কথা শুনে রুপা আর জিসান বলল-
“ কিইইই!”
“ হ্যঁ রে সত্যি বলছি। এই বসটা যেদিন থেকে আমার জীবনে এসেছে সেদিন থেকেই আমার জীবনটা তেজপাতা হয়ে গেছে৷ আমি যেটাই করি সেটাই সমস্যা। এটা করছো কেনো এটাতে মিস্টেক! ওটা করছো কেনো ওটাতে মিস্টেক ! আমার সব কিছুতেই ভুল খুঁজে পায় উনি৷ এমনকি স্বপ্নের ঘরে দেখি ওই বজ্জাত বস আমার চুলের মুঠিটা অবনি রুপার চুল ধরে এমন জোরে টেনে ধরে বলল-
এভাবে ধরে আমাকে এমন জোরে ছুঁড়ে মারলো আমার ঘুমটাই ভেঙ্গে গেলো শুধু তাই নয় চোখ মেলে দেখি আমি খাটের নিচে পড়ে আছি!”
রুপা বলল-
“ আরে তুই কি এখন আমার চুল ছিড়ে ফেলবি নাকি?”
রুপার কথায় অবনির হুশ ফিরলো। অবনি তাতক্ষনাত রুপার চুল থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে বললো-
“ সরি সরি সরি! আসলে ওই বজ্জাত বস স্বপ্নে যেভাবে আমার চুল ধরে টানতে ছিলো আমি জাস্ট তোকে সেটা প্রেক্টিক্যালি দেখাইলাম। আমার কি ইচ্ছে আছে জানস, উনি যেভাবে আমার স্বপ্নে এসে আমাকে খাট থেকে নিচে ফেলে দিলো ঠিক তেমনি আমিও একদিন উনার স্বপ্নে যাবো। আর স্বপ্নের মধ্যে উনার চুলের মুঠি ধরে ঘুরাতে ঘুরাতে……
রুপা আর জিসান অবনিকে ইশারা করে বলছে-
“ পেছনে পেছনে। ”
“ আরে পেছন থেকেই তো উনার চুল গুলো তো বড় তাইনা। ”
জিসান বলল-
“ হ্যাঁ আগে পেছনে…”
পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে অবনি বললো-
“ আরে তুই আগে আমার ইচ্ছেটা শোন উনি তো স্বপ্নের মধ্যে আমার চুলের মুঠি ধরে ফ্লোরে ফেলেছিলো আর আমি উনার চুলের মুঠি ধরে ডিরেক্ট বাংলাদেশের বাইরে পাঠিয়ে দিবো। ”
কথাটা বলে পাশে ফিরতেই আরশকে দেখে অবনির কলিজা কেঁপে উঠল।
সবাই একসাথে আরশকে ” সরি স্যার ” বলল। আরশ হাতের ইশারায় জিসান আর রুপাকে বসতে বলল।
“ মিস অবনি, কি যেনো বলছিলেন আপনি? চুপ হয়ে গেলেন কেনো! বলুন আমিও একটু আপনার স্বপ্ন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চাই। কি ব্যপার আপনি চুপ করে আছেন কেনো? আমি আসার সাথে সাথে আপনার স্বপ্নও কি ঘুরতে ঘুরতে বাংলাদেশের বাইরে চলে গেছে?”
“ সসরি স্যার। স্যার আমার চাকরিটা কি আছে না গেছে? ”
অবনির কথায় আরশ প্রতিউত্তর না করে সবাইকে কনফারেন্স রুমে আসতে বলে চলে গেলো। মূলত আরশ তখন একটু সামনে এগিয়ে আবার ব্যাক করেছিলো ওদের কনফারেন্স রুমে ডাকার জন্য। কিন্তু এসে যা শুনলো তাতে সে হাসবে নাকি কাঁদবে সেটাই বুঝে উঠতে পারছেনা।
“ দোস্ত আমার চাকরিটা বাঁচা প্লিজ। ”
“ আরে ধূত। তোর জন্য সব সময় আমরা ফেঁসে যাই। ”
তারপর তারা কনফারেন্স রুমে যায়। একটা নতুন প্রজেক্ট নিয়ে আলোচনা শেষে আরশ হাতে একটা কলম ঘুরাতে ঘুরাতে বলল-
“ মিস্টার জিসান, যখন আপনি কাজ করেন আপনার পাশে যদি একটা ফাটা স্পিকার বাজতে থাকে তখন আপনি কিভাবে কাজ করবেন?”
“ কেনো স্যার কানে তুলো গুঁজে নিবো। ”
“ নো নো নো! ইট’স রং ডিসিশন মিস্টার জিসান। কানে তুলো গুঁজে বসে থাকলে তো হবেনা। আপনার উচিৎ শব্দটা যেখানে থেকে আসছে সেখানে তাতক্ষনাত টেপ মেরে দেওয়া। ”
“ তা কিভাবে সম্ভব স্যার! আওয়াজটা যদি কোনো মাইক থেকে আসে সেখানে কি করে টেপ মারবো। ”
“ সম্ভব জিসান সবই সম্ভব। আপনি একটু চোখ কান খোলা রাখলে আশে পাশেই টেপ লাগানোর মতো মাইক পেয়ে যাবেন। ”
কথাটা অবনির দিকে তাকিয়েই বললো। অবনির বুঝতে বাকি রইলোনা কথাটা আরশ তাকে উদ্দেশ্য করেই বলেছে। অবনি জিসানের কানের কাছে ফিসফিস করে বললো-
“ স্যার কথাটা আমাকে উদ্দেশ্য করেই বলেছে তাই নারে? ”
জিসান আরশের দিকে তাকিয়ে হালকা বোকা হেসে দাঁত চেপে আস্তে করে বললো-
“ চুপ থাক তোর দুটো পায়ে পড়ি। ”
কনফারেন্স রুম থেকে এসে অবনি রুপাকে বললো-
“ দোস্ত এসব প্রজেক্ট নিয়ে কোনো আইডিয়াই তো আমার মাথায় আসতেছে না। এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে আমার মাথাটা শেষ। তার মধ্যে চব্বিশ ঘণ্টা ভয়ে থাকি কখন এই বজ্জাত বস কোন নালিশ নিয়ে আসে।”
“ তুই বরং একটা কাজ কর। কোনোভাবে স্যারকে পটানোর চেষ্টা কর। তাহলে তো রাজাও তোর রাজ্যও তোর। ”
“ বললেই হলো! এতে করে স্যার যদি রেগে আমাকে অফিস থেকে বের করে দেয়! ”
“ আরে কিছুই হবেনা। তুই জাস্ট একটু সেজেগুজে কফি বানিয়ে স্যারের জন্য নিয়ে যাবি তারপর স্যারের সাথে ভাব করে নিবি। ”
“ সত্যি বলছিস! এমন করলে সত্যি কাজ হবে?”
“ আরে হ্যাঁ রে বাবা। আমি সিনেমাতেও এরকম অনেক কাহিনী দেখেছি। সেজন্যই তো তোকে বুদ্ধিটা দিলাম। ”
“ ঠিক আছে তুই যখন বলছিস তাহলে একটু ট্রাই করে দেখি। ”
পরদিন আরশ তার চেয়ারে বসে ফাইল চেক করছিলো কিন্তু অবনি কোনো পারমিশন ছাড়াই তার কেবিনে ঢুকতেই অবাক হয়ে বললো-
“ কি ব্যপার মিস অবনি! আপনি কোনো পারমিশন ছাড়াই এভাবে আমার কেবিনে চলে আসলেন কেনো?”
অবনি একটু এগিয়ে গিয়ে বললো-
“ স্যার আপনার কফি। ”
“ কি ব্যপার আপনি এরকম বেঁকে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো সমস্যা কি? ”
অবনি থতমত খেয়ে বললো-
“ কিছু না স্যার কোমড়া একটু ব্যথা করছিলো তাই।”
“ কি বলেন! এতো অল্প বয়সেই বুড়ো হওয়ার আভাস পাচ্ছেন! আর আমার জানেমান এখনো স্ট্রং বিউটিফুল লেডি। ”
বুড়ি হওয়ার কথা শুনে অবনির একটু রাগ হলো কারন সে-তো একটু স্টাইলিশ হয়ে দাঁড়াতে চেয়েছিলো। কিন্তু শেষের কথাটা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। অবনি তড়িৎ গতিতে জিজ্ঞেস করলো –
“ আপনার জানেমান মানে! আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে?”
“ নাহ! আমার দাদুই আমার একমাত্র জানেমান। ”
দাদুর কথা শুনে অবনি একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো-
“ ও আচ্ছা তাই বলুন। ”
অবনি একটু আমতা আমতা করে বললো-
“ স্যার আপনার কি গার্লফ্রেন্ড আছে?”
“ ওয়াট দ্যা। ” দাঁতে দাঁত চেপে কথাটা বললো আরশ।
অবনি বোকা বোকা হেসে বললো-
“ নেই তাইনা? আমারও কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই৷ ”
অবনির কথা শুনে আরশের আর বুঝতে বাকি রইলোনা অবনি কি মিন করতে চাইছে। আরশ বললো-
“ মিস অবনি। ”
“ জ্বী স্যার। ”
“ তামান্নাকে চিনেন নিশ্চয়ই? ”
“ কোন তামান্না স্যার?”
“ আমার PA ছিলো। ”
“ ও হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে। ”
“ ও কিন্তু আমার প্রেমে পড়েছিলো। একেবারে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। তারপর… ”
“ থাক থাক! আর বলতে হবে না । আমি বুঝে গেছি। ” বোকা হসি দিয়ে কথাটা বললো অবনি৷
“ গুড! আপনি এবার আসতে পারেন প্লিজ। ” বলে অবনিকে দরজাটা দেখিয়ে দিলো।
অবনি লজ্জা পেয়ে গেলো আর মনে মনে রাগ হলো রুপার উপর। যাওয়ার সময় আরশ পেছন থেকে ডেকে বললো-
“ যাওয়ার আগে কফিটা রেখে যান। ”
অবনি একপ্রকার ইচ্ছে করেই পড়ে যাওয়ার ভান করে আরশের গায়ে কফি ঢেলে দিলো। ”
” সরি সরি সরি, স্যার আমি সত্যিই আপনার গায়ে কফি ফেলতে চাইনি। ”
আরশ রাগী দৃষ্টিতে অবনির দিকে তাকিয়ে বললো-
“ গেট লস্ট। ”
“ কিন্তু স্যার….”
“ আই সে গেট লস্ট। ” আরশের রাগ দেখে অবনি দ্রুত চলে আসে।
★★★
বর্তমান –
আরশের ডাকে ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসে অবনি।
“ বাব্বাহ! মিসেস খান আপনি তো দেখছি ভাবনার রাজ্যে হারিয়ে গেলেন। ও আচ্ছা মনে করার চেষ্টা করছেন নিশ্চয়ই। ঠিক আছে আমিও একটু সাহায্য করি আপনাকে। মেরুন কালারের টপস পড়ে জোকারের মতো সেজেগুজে আমার সামনে এসেছেন মনে আছে নিশ্চয়ই! ”
“ এই একদম বাজে কথা বলবেন না। আপনার মতো একটা লোকের প্রেমে পড়বো আমি! আমি কেনো কোনো পা’গলও আপনার প্রেমে পড়তে চাইবেনা। আর আমি কেনো আপনাকে পটাতে চাইবো। আমি জাস্ট আপনাকে বলেছিলাম আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে কিনা। তারমানেই কি আমি আপনার প্রেমে পড়ে গেলাম! আমার তো মনে হচ্ছে আপনিই আমার প্রেমে পড়েছিলেন তাই আমি কিরকম জামা পড়েছি কোন কালার পড়েছি সব মনে রেখে দিয়েছেন। ”
“ হা হা হা। নাইস জোকস৷ প্রেমে পড়বো তাও আবার তোমার! সত্যিই ইউ আর সো ফানি গার্ল। তুৃমি যেভাবে জোকারের মতো সঙ সেজে আমার সামনে গিয়েছিলে আমি কেনো যেকেউই তোমার ওই অস্কার প্রাপ্ত সাজ সাত জন্মেও ভুলতে পারবেনা। আর এতো কথা কিভাবে বলতে পারো তুমি! মনে তো হচ্ছে কোনো স্বৈরাচার শাসকের অধীনে ছিলে নতুন করে বাক স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছো! ”
“ এক্সাক্টলি তাই! স্বৈরাচার শাসকের অধীনেই ছিলাম। আর সেই স্বৈরাচার শাসক হলেন আপনি। ”
“ তোমার সাথে তার্ক করার কোনো ইচ্ছেই আমার নেই বুঝেছো?”
“ আপনার সাথে তর্ক করারও কোনো ইচ্ছে আমার নেই বুজেছেন আপনি। আমার ঘুম পাচ্ছে গুড নাইট। ”
“ গুড নাইট! তোমার মতো একটা মেয়ে যার জীবনে থাকে তার রাত শুভ হয় কি করে! আজ থেকে প্রতিটি রাতই আমার অশুভ কাটবে। ” কথাটা বলে আরশ ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
আরশ ওয়াশরুম থেকে বের হলে অবনি বললো-
“ আমি কি পড়বো?”
“ কাবার্ডে শাড়ি রাখা আছে। দাদু আমার শত্রুর জন্য অতি যত্ন করে কতোগুলো শাড়ি রেখে দিয়েছে। ”
“ শাড়ি! আমি তো শাড়ি পড়তে জানি না। ”
“ কেনো? তুমি নাকি গুনবতী রূপবতী। দাদুর কথা শুনে তো আমি নিজেই ইমাজিন করছিলাম কতো জানি রুপবতী আর গুনোবতী আমার বউ! শেষে কিনা তোমার মতো একটা ঢেড়শ আমার বউ! জীবনে শত্রুকেও উপদেশ দিবো যাতে না দেখে কখনো বিয়ে না করে। তুমি আমার বউ এটা যদি আমার অফিসের সবাই জানে লজ্জায় তো আমার নাক কা’টা যাবে। ”
“ তাহলে তো ভালোই হবে। আমার তো জাস্ট ইমাজিন করতে ইচ্ছে করছে যখন আপনার নাক থাকবেনা তখন আপনাকে দেখতে ঠিক কেমন লাগবে! আ’ম সো এক্সাইটেড। ”
” জাস্ট সাট আপ। স্টুপিডের মতো কথা না বলে গিয়ে চেঞ্জ করে এসো। ”
অবনি ওয়াশরুমে চলে গেলো। আরশ বিছানায় পিঠ এলিয়ে দিলো। কিছুক্ষণ পর অবনি শাড়ি পড়ে বেরিয়ে এলো। ওয়াশরুমের দরজা খোলাতে আরশ সেদিকে তাকায়। অবনির দিকে তাকিয়ে আরশ হাসতে হাসতে শেষ।
“ কি হয়েছে আপনি এরকম ভুতের মতো হো হো করে হাসছেন কেনো। এতো রাতে কি আপনাকে ভুতে ধরেছে নাকি! ”
আরশ কোনো রকম হাসি থামিয়ে বললো-
“ তোমার মতো পেত্নী যার ঘাড়ে চেপে আছে তার আর নতুন করে ভুতে ধরার প্রয়োজন পড়বে না। বিশ্বাস করো তোমাকে এতো ভয়ংকর লাগছে যে একটা ভুতও তোমাকে দেখলে ভয়ে পালিয়ে যাবে। ” কথাটা বলে আরশ আবারও হাসি শুরু করে দিলো। অবনি সোফার কুশন গুলো আরশের দিকে ছুড়ে মারলো।
অবনি আরশকে বললো-
“ আমি কোথায় ঘুমাবো?”
“ যদি নিজেকে বাংলা সিনেমার নাইকা ভাবো তাহলে ফ্লোরে বিশাল জায়গা পড়ে আছে শুয়ে পড়ো। অথবা সোফা খালি পড়ে আছে সেখানেও ঘুমাতে পারো আর যদি নিজেকে সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ মনে করো তাহলে বিছানায় অনেক জায়গা পড়ে আছে। পাশেই ঘুমাতে পারো। ” কথাটা বলে আরশ নিজের মতো করে ঘুমিয়ে পড়লো।
অবনির ফ্লোরে অর সোফায় ঘুমানোর অভ্যাস নেই আর ঢং করে নিজে কষ্ট পাওয়ার মানেই হয়না তাই আরশের পাশেই গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়লো।
কিছু অবনির একটা অভ্যাস আছে হাত পা ছড়াছড়ি করা। অবনি নিজের পা গুলো বার বার আরশের গায়ে তুলে দিচ্ছে। আরশ বার বার নামিয়ে দিচ্ছে কিন্তু অবনি বার বার একই কাজ করছে। তাই আরশ খাটের কিনারায় চলে এলো কিন্তু তাতেও রক্ষা মিললো না। অবনি পুরোটা খাট দখল করে নিলো আর ফল স্বরুপ আরশ ধপ করে ফ্লোরে পড়ে গেলো। ফ্লোরে কিছু পড়ার শব্দে অবনি চোখ মেলে তাকালো। কিন্তু তাকিয়ে যা দেখলো তাতে অবনির হাসিই থামছেনা। অবনিকে এরকম হাসতে দেখে আরশের মেজাজটা আরোও খারাপ হয়ে গেলো। তাকে বিছানা থেকে ফ্লোরে ফেলে দিলো। যেখানে তাকে টেনে উপরে তুলবে তা না করে পা’গলের মতো হেসেই যাচ্ছে।
অবনি কোনো মতে হাসি থামিয়ে বললো-
“ একি আপনি নিচে কি করছেন? যুদ্ধ করতে নেমেছিলেন বুঝি!”
“ স্টপ দিস ননসেন্স! যুদ্ধ আমি নই তুমি করছিলে৷ সারা বিছানায় এমনভাবে হাত পা ছড়াছড়ি করছিলে যেনো তুমি কোনো বিছানা নয় পুকুরের মধ্যে মাছ ধরতে নেমেছিলে। ”
#চলবে….
( ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। গঠনমূলক মন্তব্য চাই… ধন্যবাদ 💞)