প্রেম_হয়ে_এলি_তুই #লেখিকা : #Ohona_Akhter #পর্ব : ৬

0
123

#প্রেম_হয়ে_এলি_তুই
#লেখিকা : #Ohona_Akhter
#পর্ব : ৬

🚫 কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ ~

রুপা আর জিসানও এলো। অবনি রুপা আর জিসানের সাথে কথা বলছে। আরশ তার বন্ধুদের সাথে কথা বলছে।
জিসান অবনিকে বললো-

” তা অবনি, তলে তলে টেম্পু চালাও আমরা বললেই হরতাল! ”

” ওই এসব ব’স্তা পঁ’চা কথা বলবি না একদম৷ ”

রুপা বললো-
” আমি বাতাসে কেমন প্রেম প্রেম গ’ন্ধ পাচ্ছি। ভেতরে ভেতরে এতো কিছু অথচ আমাদের জানাওনি! ”

” এই তোরা থামবি? বিয়েটা একটা এক্সিডেন্টে হয়েছে কিন্তু আমাদের মাঝে স্বামী স্ত্রী’র মতো সম্পর্ক নেই। টম এন্ড জেরীর মতো সম্পর্ক বুঝেছিস। ”

জিসান বললো-
” থাক থাক! আমাদের আর অতো বোঝাতে হবেনা৷ আমরা সব বুঝি। কিন্তু কথা হলো আমাদের ট্রিট যেনো পেয়ে যাই। আর তোর বরকে বলিস আমাদের প্রমোশনটা যেনো দ্রুত করে। ”

” প্রমোশন! যেই বেডার অফিসে আমারই জায়গা হলো না ওই বেডা আমার কথায় তোদের প্রমোশন করবে বলে তোর মনে হয়? ”

” তখন তো তুই সামান্য এমপ্লয় ছিলি এখন তো তার একমাত্র বউ এখন বললে ঠিকই শুনবে। ”

” বউ নয় ছাই। না উনি আমাকে বউ বলে মানে আর না আমি উনাকে বর বলে মানি৷ ”

” ট্রিট কিন্তু চাই আমাদের৷ ”

” শোন, দাওয়াত পেয়েছিস সেটাই অনেক ওসব ট্রিট প্রিট দিতে পাড়বোনা৷ ”

” এইই কি বললি? ট্রিট দিবিনা মানে? তুই যদি আমাদের ট্রিট না দিস তাহলে এমন অভিশাপ দিবো না যে…..”

” থাক থাক আর বলতে হবেনা। ট্রিট সময় মতো পেয়ে যাবি যত্তসব পেটুকের দল। ”

তখন হঠাৎ একটা সাউন্ড এলো ~
” লেডিস এন্ড জেন্টলম্যান আপনার জানেন নিশ্চয়ই আজকের এই ফাংশন শুধু মাত্র আমাদের বিখ্যাত বিজনেসম্যান আরশ খান আর তার ওয়াইফের জন্য। তাদের জন্য এতো আয়োজন আর আমরা তাদের একটি গান শুনবোনা তা’কি হয়! তাই এখন আপনাদেরকে সামনে গান গাইবে আরশ আর অবনি। আর আপনারা তো জানেনই আপনাদের আরশ খান সবকিছুতেই অলরাউন্ডার কিন্তু তার ওয়াইফের গুন সম্পর্কে তো আপনাদের কোনো ধরনাই নেই তাই-না! তাই আমি চাই শুধু আরশ খানের ব্যপারে জানলে তো চলবে না তার বউয়ের গুন সম্পর্কেও তো একটু ধারনা হওয়া দরকার আপনাদের। কি বলেন সবাই? ”
সবাই হ্যাঁ সূচক সম্মতি দিলো।

এতোক্ষণ একটা মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে চৈতী কথাগুলো বলছিলো৷ মূলত এটা চৈতীর একটা প্ল্যান যাতে গান গাইতে না পেরে অবনি সকলের সামনে অপ’দ’স্ত হয়।
এদিকে চৈতীর কথা শুনে জিসান আর রুপা বললো-
” কে রে এই মেয়ে? এভাবে তোর গান গাওয়ার কথা সবার সামনে বলে দিলো একবারও তোর মতামত জানতে চাইলোনা তুই গাইতে পারিস কি’না!”

” তা কেনো জিজ্ঞেস করতে যাবে, ওতো চাইছেই আমি গান গাইতে না পেরে সবার সামনে অপদ’স্ত হই। ”

” মানে?”

” মানেটা পড়ে বলবো। এখন একটু তাকে চমক লাগিয়ে আসি। ”

” কি বলছিস? তুই কি কখনোও গান গেয়েছিস না-কি! আচমকা কি করে গান গাইবি? ”

” আরে দেখ না কি হয়। ও যদি বুনো ওল হয় আমি হবো বাঘা তেতুঁল। ”

কথাটা বলে অবনি আরশের কাছে গিয়ে বললো –
” কি হলো চলুন! গান গাইতে হবে না আমাদের। ”
কথাটা বলে আরশকে চোখ মারলো। অবনির এমন কাজে আরশ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। চৈতী একটা গিটার আরশের হাতে ধরিয়ে দিলো। আরশ অবনির দিকে এক পলক তাকিয়ে গিটারের সরু তুললো।

অবনিকে এরকম স্ট্রংলি থাকতে দেখে প্রিয়া খান বললো-
” কিরে এই মেয়ের মাঝে তো কোনো নার্ভাস ফিল হতে দেখছিনা। কেমন সহসা চলে এলো গান গাইতে দেখেছিস!”

” কাম অন খালামনি। গান গাইতে ঢেং ঢেং করে চলে আসলেই গান গাওয়া যায় নাকি? তোমার মনে হয় ওই ক্ষে’ত মেয়েটা আরশের সাথে গান গাইতে পারবে! গান গাইতেও যোগ্যতা লাগে বুঝেছো?”

তখন অবনি গেয়ে উঠলো-

গান 🎶

#প্রেম_হয়ে_এলি_তুই
সাজালি আমার ভূবন। ( অবনি )

সুখের পালকে ছড়িয়ে দিলি
ছায়ার মতোন। ( আরশ )

তোকে পেলে সবই ভুলে
হৃদয়ে তুলে রাখবো। ( অবনি )

এতো সুখে যেনো আমি ম’রে যাবোওও…. মরে যাবো।
প্রেমে প্রেমে তোকে জড়াবোওও..
জড়াবো। ( আরশ )

এতো সুখে যেনো আমি ম’রে
যাবোওও.. মরে যাবো।
প্রেমে প্রেমে তোকে জড়াবোওও…
জড়াবো৷ ( অবনি )

[ বাকিটা নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন। ]

গান শে’ষে হাত তালি দিলো।
ওদের গান শুনে তো চৈতী হিংসায় জ্বলে পুড়ে মরছে। প্রিয়া খান বললো-

” কিরে তুই না বললি ক্ষে’ত মেয়েটা গাইতে পারবেনা। এখন তো আরো বেশি করে সবার দৃষ্টি আকর্ষন করে নিলো। সবাই কিরকম বাহ বাহ দিচ্ছে! ”

” সেটাই তো দেখছি তুমি চি’ন্তা দেখো আমি কি করি। এবার এমন ফ’ন্দি আঁ’ট’বো ও সেটা কল্পনাও করতে পারবেনা। ”

চৈতী গিয়ে অবনিকে জড়িয়ে ধরে বললো-
” খুব সুন্দর গেয়েছো ভাবি। আমি তো জাস্ট কল্পনাই করতে পারছিনা! ”

” হ্যাঁ! আমি সব সময় কল্পনার বাইরের জিনিসটাই করি যা অনেকে ভাবতেও পারে না। ”

বিনিময়ে চৈতী জো’রপূর্বক হেসে দিলো আর মনে মনে বলছে হাসো হাসো খুব ভালো করে হেসে নাও। একটু পর তো লজ্জায় আর চোখও দেখাতে পারবেনা। মনে মনে কথাটা বলে চৈতী একটা সয়তানি হাসি দিলো।
চৈতী পুনরায় মাইক্রোফ হাতে নিয়ে বললো-
” আপনারা সবাই তাদের ডুয়েট গান শুনেছেন। নিশ্চয়ই গানটি আপনাদের মন ছুঁয়ে গেছে? আমার কিন্তু খুব ভালো লেগেছে। তাই আমি চাই অবনি এবার আমাদের একটা একক ডান্স পরিবেশন করে দেখাক৷ ”

চৈতীর কথা শুনে জাহানারা খান এগিয়ে এসে বললো-

” এখানে কোনো ডান্স কম্পিটিশন চলছেনা যে অবনি নাচে গেয়ে সবাইকে দেখাবে। অবনি নতুন বউ কোনো নৃত্য পরিবেশক নয় যে সবাইকে নে’চে দেখাবে। গান দু’জনকে গাইতে বলেছিলে তাই আমি আর শব্দ করিনি। তার মানে এই নয় যে অবনি সবাইকে নেচে দেখাবে। ”

” দাদু তুমি এতো রিয়্যাক্ট কেনো করছো আমি তো জাস্ট অবনির গুন গুলো সবার সামনে প্রেজেন্ট করতে চাইছি। ”

জাহানারা খান হাত উঠিয়ে বললো-
” থাক! তোমাকে এতো অবনির গুন গুলো তুলে ধরতে হবেনা৷ গুন দেখানোর ধরকার হলে নাচ গান ছাড়াও অনেক কিছু দিয়ে দেখানো যায় আর তা হলো সুন্দর আচরণ, যা অবনির রয়েছে নতুন করে কোনো গুন তুলে ধরার দরকার নেই। ”

জাহানারা খানের কথায় চৈতীর মুখে ঝামা ঘ’ষে গেলো। অবনি এসে বললো-
” থাকনা দাদু, আমার একটা মাত্র ননদিনীর আবদার আমি ফেলি কি করে ওর যখন আমার নাচ দেখার এতো শখ জেগেছে তাহলে একটু নেচেই দেখাই। গান যখন গেয়েছি নাচতেও পারবো। কথায় আছেনা ‘ যে রাঁধে সে চুলও
বাঁধে ‘। ”

অবনির কথা শুনে চৈতীর মনটা খুশিতে নেচে উঠলো৷ আর মনে মনে বলছে –
” ইয়াহ! ঘুঘু তো দেখছি জায়গা মতো ফাঁ’দে পা দিয়েছে। যাও যাও ভালো মতো নাচ। একটু পর দেখবো তোমার এতো বড় বড় কথা কই যায়। ”

চৈতী সাউন্ড বক্সে গান চালু করে দিলো।

hum tere bin ab rah nahin sakte….

গানটির তালে তালে অবনি আরশের চারপাশে নাচছে৷ কিন্তু কিছুক্ষণ পর অবনি অনুভব করলো তার লেহেঙ্গার ব্লাউজ পেছন থেকে ছি’ড়ে আসছে। কিন্তু ব্যপারটা এমন এক পর্যায়ে যেখানে অবনি না পারছে নাচ থামাতে আর না পারছে কিছু করতে৷ অবনির বুকের ভেতর ধুকপুক শুরু হয়ে গেলো মা’ন হারানোর ভ’য়ে অবনি ভাবতেই পারছেনা এমনটা কি করে হলো। মূলত যখন চৈতী অবনিকে জড়িয়ে ধরেছিলো তখনই ব্লে*ড দিয়ে অবনির ব্লাউজ অনেকটা ছিঁ*ড়ে দিয়েছিলো। যার ফলে ধীরে ধীরে অবনির ব্লাউজটি অনেকটা ফাঁ*ক হয়ে গেলো অবশেষে পুরোটাই ছিঁ*ড়ে গেলো। অবনি সাথে সাথে নাচ থামিয়ে ফেললো। ব্যপারটি কারো চোখে পড়ার আগেই আরশ যেহেতু অবনির কাছেই ছিলো তাই দ্রুত নিজের কোটটি খু’লে অবনির গায়ে জড়িয়ে ধিলো। আকষ্মিক ঘটনায় সকলেই ভ’র’কে গেলো। চৈতী তো হ্যাভি খুশি হয়েছিল কিন্তু আরশের কারণে তার মুখের হাসিটা মুহূর্তেই মলিন হয়ে গেলো৷ আরশ সবাইকে ‘ এক্সকিউজ মি! ‘ বলে রুমের দিকে নিয়ে গেলো। তারা যেতেই জাহানারা খান চৈতীকে চোখ রা’ঙ্গি’য়ে বললো-
” তোমাকে আমি নিষেধ করেছিলাম এসব নাচানাচি বাদ দিতে। ”

” আশ্চর্য! দাদু তুমি আমাকে কেনো ব্লে’ম করছো? আমি কি অবনিকে নাচার জন্য বাধ্য করেছিলাম? ও নিজেই তো নাচতে নাচতে নাচার জন্য রাজি হয়ে গেলো। এতে আমার দো’ষটা কোথায়! সব কিছুতেই আমার উপর আঙ্গুল তোলাটা তোমার হেভিট হয়ে গেছে। ”

” চুপ একদম চুপ৷ আবার বড় বড় কথা বলছো? তোমরা যে কেনো এমনটা করছো আমি বুঝি না ভেবেছো? ভুলে যেও না আমি পেশায় একজন জাজ৷ ”

চৈতী আর বেশি কথা বাড়ালোনা যদি আবার ধরা পড়ে যায় সেই ভ’য়ে।

অবনিকে রুমে এনে আরশ ইচ্ছে মতো জা’রি দিলো।
” এই মেয়ে স’ম’স্যা কি তোমার? সবস সময় নিজের জে’দকেই প্রাধান্য দাও? কেনো বলো তো? সব সময় নিজেকে জিততেই হবে? দাদু তো চৈতীকে না করেই দিয়েছিলো তারপরও কেনো নাচতে গিয়েছিলে? এখন যদি আমি সেখানে উপস্থিত না থাকতাম তাহলে কি হতো বলোতো? ড্রেসটা ভালো ভাবে চেক করে পড়তে পারোনি? এখন তো সবাই ভাববে আমিই টাকা বাঁচানোর জন্য তোমাকে নরমাল ড্রেস কিনে দিয়েছি৷ সত্যি ইউ আর জাস্ট ইম্পসিবল! ”

” বিশ্বাস করুন আমি ড্রেসটা ভালো করে চেক করেই পড়েছিলাম৷ কিন্তু হঠাৎ এমনটা কি করে হলো!”

” হ্যাঁ তুমি দেখেই পড়েছিলে আমিই হিংসে করে ছিঁ*ড়ে রেখে দিয়েছিলাম। ”

” একদম বা*জে কথা বলবেন না। আমি কি একবারও তা বলেছি নাকি? ”

” তা বলার আর কি বাকি রেখেছো? তুমি ড্রেসটি দেখেই পড়েছিলে তারমানে কেউ ইচ্ছে করেই তোমার ড্রেসটা ছিঁ*ড়ে দিয়েছে৷ ঘরে তো তুমি আর আমি ছাড়া অন্য কেউ নেই তাই না। তারমানে তুমি বোঝাতে চাইছো আমিই এরকম করেছি! ”

” দূরর! আপনার সাথে কথা বলাটাই বেকার। ”

” চুপ একদম চুপ। দ্রুত গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে এসো। ইস্টুপিট গার্ল! ”
কথাটা বলে আরশ রুম থেকে বেরিয়ে গেলো৷ তারপর গেস্টদের বিদায় করে রুমে এসে বিছানায় পিঠ এলিয়ে দিলো। অবনি ড্রেস চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো।

অবনি ধীর পায়ে আরশের কাছে এগিয়ে গেলো। তারপর আরশকে বললো-

” আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আজকে আপনি আমার সম্মান বাঁচিয়েছেন। ”

অবনির কথায় আরশ উঠে বসে বললো-
” শোনো এতে করে এতো প্রাউড ফিল করার কিছু নেই বুঝেছো? তোমার জায়গায় অন্য কেউ আমার বউ হলে আমি সেটাই করতাম। এরজন্য ভেবোনা আমি তোমাকে বউ বলে মেনে নিয়েছি। তোমার মতো গু*ন্ডি মেয়েকে আমি কখনোও বউ বলে মানবো না গট ইট। ”

” আরেহ! আপনি তো ভা’রি অদ্ভুত মানুষ। পুরোই গিরগিটির মতো। রুপ বদলাতে এক সেকেন্ডও সময় লাগেনা। বাই দ্যা ওয়ে আপনার কি মনে হয় আমি আপনাকে স্বামী বলে মেনে নিয়েছি! লাইক সিরিয়াসলি? আপনি যদি ভেবে থাকেন আমি আপনাকে স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছি তাহলে আপনি ভু’ল করছেন। তেমনটা কখনোই হবে না। ”

” এই শোনো, তোমার মতো জং*লী মেয়ের কাছ থেকে আমি তা কখনো আশাও করিনা। ”

” কি বললেন? আমি জং*লী! আমি যদি জং*লী হই আপনি হলেন একটা বন মানুষ। ”

” চুপ একদম আমার সাথে কথা বলতে আসবে না৷ ”

” এ্যাহ! কেমন লাটসাহেব এসেছেন কথা না বলে কি উপায় আছে! আমার কি ঠে’কা পড়েছে আপনার সাথে কথা বলতে যাবো। আপনিও আমার সাথে একদম কথা বলতে আসবেন না বলে দিলাম। ”

” দেখা যাবে কে কার সাথে আগে কথা বলে। ” কথাটা বলে আরশ ব্ল্যাঙ্কেট গায়ে জড়িয়ে উ’ল্টো পাশ হয়ে শুয়ে পড়লো। ”

এদিকে চৈতী আর প্রিয়া খান তাদের রুমের বাইরে একটি সা*প হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

” চৈতী মা তুই সত্যি ভেবে বলছিস তো? এই সা*পটা আবার আমার বাবুনকে কা*ম*ড়ে দিবে নাতো!”

” উফফ খালা মনি! কতো বার বলবো এটা মন্ত্রপুতো সাপ। আমি সাপটিকে অবনির জামার গ্রান শুঁ’কি’য়ে দিয়েছি। সা*পু*ড়ে বলে দিয়েছে সা*প*টিকে জামার গ্রান শুঁ*কি*য়ে দিতে পাড়লেই সে নিজে থেকে ওই মানুষকে চিনে নিবে। এবার এই রাতই হবে অবনির শেষ রাত। কথাটা বলে সা*প*টিকে আরশ আর অবনির রুমে দিকে ছেড়ে দিলো।
সাপটি গুরগুর করে আরশের ব্ল্যাঙ্কেটের ভেতর ঢুকে পড়লো। আর অবনি বিছানার পাশে নিচে ফ্লো*রে*র এক কোনে বসে ভাবছে কিভাবে আরশকে জানাবে ওই চৈতী মেয়েটা ভালো নয় ও সবটা জেনে গেছে। তাছাড়া যদি জানায়ও তার কাছে তো উপযুক্ত কোনো প্রমান নেই। প্রমান ছা’ড়া কাউকে কিভাবে বিশ্বাস করাবে এসব!
আরশ মাত্রই শুয়েছিল রাতে ঠিক মতো ঘুম হয়নি তাই। কিন্তু এর মধ্যে শুরু হয়ে গেলো ফোঁ’স ফোঁ’স আওয়াজ। আরশের এবার মেজাজটা পুরোপুরি খারাপ হয়ে গেলো। আরশ মাথাটা একটু উঁচু করে অবনিকে বললো –

” এই তোমার সমস্যাটা কোথায় হ্যাঁ? তুমি কি প্ল্যান করেই এসেছো যে আমাকে শান্তিতে ঘুমাতে দিবে না? রাতেও তোমার জন্য আমার ঠিকমতো ঘুম হয়নি৷ সকালবেলাও ঘুমটা ভে*ঙ্গে দিলে! এখন একটু ঘুমাতে চাইছি তাও তোমার সহ্য হচ্ছে না?”

আরশের কথা শুনে অবনির মেজাজ পুরোপুরি গ’র’ম হয়ে গেলো।

” এই কি আবোল তাবোল বকছেন হ্যাঁ! আমি আবার আপনাকে কি করলাম? আমি তো চুপচাপ বসে আছি। তাও আবার আপনার আশে পাশেও আসিনি তারপরও ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছেন কেনো? আমার তো মনে হচ্ছে আপনিই প্ল্যান করে নিয়েছেন আমার সাথে ঝগড়া করবেন বলে। তাই একটার পর একটা ইস্যু খুঁজছেন। ”

” একদম বা’জে কথা বলবেনা। তুমি সা*পে*র মতো ফোঁ’স ফোঁ’স করে শ্বাস নিচ্ছো কেনো? তুমি কি ভেবেছিলে এসব করে আমাকে ভ’য় দেখাবে আর আমি ভ’য় পেয়ে যাবো? শোনো আরশ খান এসবে ভ’য় পায় না বুঝেছো? তুমি কি ভেবেছিলে আমি বুঝতে পারবোনা? আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছি তুমি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই এমন করছো। ”

” এই আপনার মাথাটা কি পুরোপুরি খারাপ হয়ে গেছে? আমি কেনো সা*পে*র মতো ফোঁ’স ফোঁ’স করতে যাবো? কোনো সুস্থ মানুষ সা*পে*র মতো ফোঁ’স ফোঁ’স করে নাকি৷ আজব এক মানুষ তো আপনি!”

আরশ এবার ব্ল্যাঙ্কেট সরাতে সরাতে বললো-
” তো কি আমি ফোঁ….”
আর কিছু বলার আগেই আরশের চক্ষু চ’ড়’ক’গাছ। আরশ লাফিয়ে গিয়ে পড়লো অবনির গায়ে। আকস্মিক ঘটনায় অবনি হতভম্ব হয়ে গেলো। অবনি ধা*ক্কা দিয়ে আরশকে সরিয়ে দিলো। আরশ তবুও অবনিকে বার বার জড়িয়ে ধরছে।

” ছাড়ুন আমাকে, কি ধরনের অসভ্যতা এসব! ছাড়ুন বলছি! আরে কি আশ্চর্য আপনি বার বার আমাকে ঝাপটে ধরছেন কেনো! ”

” স স স….”

” আরে কি স স স করছেন। এই আপনার মতলব কিন্তু ভালো ঠে*ক*ছে না। নাটক করার জায়গা পান না তাইনা৷ অজুহাত দেখিয়ে আমাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করছেন? ছি ছি ছি! আপনার ক্যরেক্টার এতোটা খারাপ আমার জানা ছিলো না! এমন ভাব করছেন যেনো ভুত দেখেছেন। সরে যান নাহলে কিন্তু আমি চেঁচাবো। ”

” প্লিজ প্লিজ পায়ে পড়ি তোমার কথাটা তো শুনবে। ”

” আমি তো শুনতেই চাইছি! কি এমন দেখলেন যে ঝগড়া ছেড়ে এখন গায়ে পড়া শুরু করে দিয়েছেন৷ ”

” স স সা’প সা’প। ”

” কিহ! এখানে সা’প আসবে কোথা থেকে৷ ই*য়া*র্কি হচ্ছে আমার সাথে? ”

” আরে আমি সত্যি বলছি ওই দেখো। ”
আরশের ইশারা অনুযায়ী অবনি তাকাতেই ভ’য়ে চু*প*সে গেলো। বিছানার উপর সা*প*টি বালিশে চা*পা পড়ে আছে আর লে’জ না*ড়*ছে। এবার আরশ আর অবনি দুজন একসাথে সা’প সা’প বলে চেঁচাতে শুরু করলো।
আরশ দরজা খুললো কিন্তু দরজার বাইরে থেকে লক৷ আরশ বললো-

” শিট! দরজাটা কে বাইরে থেকে লক করলো! ” বিরক্ততে দরজায় লাথি মারলো।

অবনি দরজাতে ধা’ক্কা মে’রে বললো-

” প্লিজ কেউ দরজাটা খোলো। দরজাটা খোলো কেউ। ”
কিন্তু কেউ সাড়া দিচ্ছে না। চৈতী বাইরে থেকে ঠোঁট চেপে হাসছে। এদিকে প্রিয়া খান তো চিন্তায় শে*ষ তার উদ্দেশ্য হলো অবনিকে শে’ষ করা। কিন্তু অবনিকে মারতে গিয়ে যদি নিজের প্রান প্রিয় ছেলেটার কিছু হয়ে যায়। প্রিয়া খান আবার একটু ভ্যাবলা টাইপের মানুষ। যাকে মন থেকে আপন মনে করে তার সব কথাই অন্ধের মতো বিশ্বাস করে নেয়। আর চৈতী ঠিক সেই সুযোগটাকেই কাজে লাগায়। মূলত চৈতীর মূল উদ্দেশ্য খান বাড়ির সম্পত্তির মালিক হওয়া৷
এদিকে আরশও দরজা ধা’ক্কা দিয়ে বলছে –
” মম বাবা দরজাটা খোলো রুমের ভে’ত’র সা’প ঢুকেছে। ”
কারো কোনো শব্দ না পেয়ে অবনি বললো-
” এবার কি হবে? সা’প’টা যদি চা’পা থেকে বেরিয়ে আসে! ”

” কি আর হবে ম’র’লে দুজন একসাথেই মরবো। ”

” আপনি কেনো মরতে যাবেন মরলে আমিই মরবো। ”

” বললাম তো দুজন একসাথে মরবো। ”

” নাহ! মরলে আমিই মরবো। ”

” এই সব সময় অকারণে ঝগড়া করাটা তোমার হেভিট হয়ে গেছে। একটা মানুষ কত্তো লেভেলের ইস্টুপিট হলে এইরকম পরিস্থিতিতেও ঝগড়া করতে পারে! সা’প কি আমার মামা লাগে যে তোমাকে মারবে আর আমাকে বাঁচিয়ে রাখবে! ইডিয়ট কোথাকার। ”

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here