#প্রেম_হয়ে_এলি_তুই
#লেখিকা : #ohona_akther
#পর্ব : ৯ ( প্রথম অংশ )
🚫 কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ ~
অবনি ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেলো। মাঝরাতে মনে হলো কেউ তার মুখের উপর ঝুঁকে আছে। লোকটির ঘনঘন নেয়া গরম নিশ্বাস অবনির মুখের উপর পড়ছে৷ অবনি অনুভব করলো কেউ তার কপালে উষ্ণ ছোঁয়া দিল। অবনি লোকটিকে ধাক্কা দিয়ে কে কে বলে উঠলো। অবনির কথা শুনে আরশ উঠে লাইট অন করল।
” কি হয়েছে মাঝরাতে এরকম চিল্লাচ্ছো কেনো?”
” কককে যেনো আমাদের রুমে এসেছিল। ”
” হোয়াট?”
” হহহ্যাঁ আআমি ঠিক বলছি। কেউ এসেছিল। ”
অবনিকে এরকম ভয় পেতে দেখে আরশ অবনির দিকে একগ্লাস পানি এগিয়ে দিলো। পানি শেষ করার পর আরশ বলল-
” কি হয়েছে বলোতো? ”
” কেউ একজন রুমে এসেছিল। আমার কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো৷ তারপর আমি ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম। ”
” কেউ যদি আমাদের রুমে আসে তাহলে যাবে কোন জায়গা দিয়ে ইডিয়ট! ”
” আরে আমি সত্যি বলছি কেউ সত্যিই ছিল। ”
আরশ এবার অবনিকে ভয় লাগানোর জন্য বলল-
” অবনি আমার কি মনে হয় জানো! তোমার এক্স বয়ফ্রেন্ডকে তুমি ছ্যাকা দিয়ে বিয়ে করে ফেলেছ তো তাই তোমার এক্স বয়ফ্রেন্ড হয়তো দুঃখে কষ্টে সুইসাইড করে এখন ভুত হয়ে তোমার কাছে ফিরে এসেছে। ”
আরশের কথা শুনে অবনির এতোক্ষণের ভয় উড়ে গিয়ে বিরক্তিকর মুখ ধারণ করল। অবনি আরশকে বলল-
” এই একদম আজে-বাজে কথা বলবেন না। আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড কোনো কালেই ছিলনা যে তাকে আত্মা হয়ে আমার কাছে ফিরে আসতে হবে৷ ”
” তা অবশ্য ঠিক। তোমার মতো ঝগড়ুটে মেয়ের সাথে কে-ইবা প্রেম করতে চাইবে! ”
” আমি মোটেও ঝগড়ুটে নই অন্তত আপনার মতো তো না-ই। ”
” হয়েছে হয়েছে। অনেক রাত হয়েছে এবার আমাকে ঘুমাতে হবে। তুমি বরং নিজে নিজেই তোমার প্রেমিক পুরুষকে খুঁজে বের করো। ”
” এই কি বললেন আপনি ? আমার প্রেমিক পুরুষ মানে৷ ”
” না কিছু না৷ আমি ঘুমাচ্ছি আমাকে একদম ডিস্টার্ব করবেনা। ”
কথাটা বলে আরশ ব্ল্যাঙ্কেটটা গায়ে জড়িয়ে নিলো৷
আরশ ঘুমিয়ে পড়লেও অবনি ঘুমাতে পাড়ছেনা। তারমনে ঘুরপাক খাচ্ছে এটা কি স্বপ্ন ছিল নাকি সত্যি! অবনি নিজে নিজেই মনে মনে বলছে –
” আমি তো স্পষ্ট লোকটিকে ধাক্কা দিয়েছিলাম। মনে হলো তো সত্যিই কেউ ছিল। কিন্তু কে? আর এতো অল্প সময়ের মধ্যে পালালোই বা কি করে! আচ্ছা বাই এনি চান্স লোকটা উনি নয়তো? ছি ছি না না, এটা সম্ভব না। উনার মতো মানুষ এরকমটা কল্পনাতেও আনতে পারেনা। তাছাড়া আমি তো উনার বিয়ে করা বউ, তাহলে কি সত্যিই এটা আমার দুঃস্বপ্ন ছিল! ”
এসব ভাবতে ভাবতে অবনি ঘুমিয়ে গেলো।
সকালবেলা অবনি ঘুম থেকে উঠে পাশে ফিরে দেখে আরশ নেই৷ অবনি বিছানা থেকে উঠে জানালা খুলে দিলো। জানালা দিয়ে রুমের ভেতর সকালের মিষ্টি রোদ ছড়িয়ে পড়েছে। অবনি বেশ কিছুক্ষণ মিষ্টি রোদ উপভোগ করে ফ্রেশ হয়ে নিচে যাওয়ার জন্য রুম থেকে যেই না পা বাড়ালো ওমনি করো সাথে ধাক্কা খেয়ে ধপ করে পড়ে গেলো।
” ও বাবা গো, আমার কোমড়টা শেষ। মনে তো হয়না আর জীবনে উঠে দাঁড়াতে পারবো৷ ”
আরশ অবনিকে ধরে দাঁড় করিয়ে বলল-
” বেশি ব্যাথা লেগেছে তোমার? ”
অবনির কাছে আরশের এই কথাটা যেনো আগুনের মধ্যে ঘি ঢালার মতো৷
” অদ্ভুত মানুষ তো আপনি! আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে যেখানে সরি বলবেন তা না করে আপনি বলছেন বেশি ব্যাথা লেগেছে তোমার! এতো জোরে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলে ব্যাথা লাগবেনা তো কি আরাম লাগবে? চোখ কি পেছনে রেখে হাঁটেন নাকি? ”
” অদ্ভুত আমি নই তুমি৷ আমি সরি বললেও তোমার সমস্যা না বললেও সমস্যা! আমি না হয় চোখ পেছনে রেখে হেঁটেছিলাম, তুমি তো নিশ্চয়ই চোখ গুলো সামনে রেখেই হাঁটছিলে। তুমি পড়ে গেলে কিভাবে! নিজে দেখে চলতে পারোনা? ”
” একে তো আমাকে ইচ্ছে করে ফেলেই দিয়েছেন তার উপর আবার তর্কও করছেন দেখছি! ”
” শাট আপ! ইডিয়ট, আমি তোমাকে ঘুম থেকে জাগানোর জন্য উপরে এসেছি। পরে পরে তো শুধু ঘুমাচ্ছিলে। কোনো কাজই তো ঠিকমতো করতে পারোনা। পারো শুধু পরে পরে ঘুমাতে। এখন নিচে চলো নাস্তা করতে হবে। ”
” আপনি কি আমাকে খোঁটা দিলেন?”
” সেটা বোঝার মতো নলেজ কি তোমার আছে? এখন এতো তর্ক না করে নিচে চলো। সবাই তোমার মতো ঘুমের রানী না৷ ”
★★★
ডাইনিং টেবিলে সবাই নাস্তা করছে। অবনি জাহানারা খান কে উদ্দেশ্য করে বলল-
” দাদু একটা কথা বলার ছিল। ”
” কি কথা মিষ্টি? ”
” আসলে, তুমি কিছু মনে করবে না তো। ”
” না তুমি নিরদ্বিধায় বলো। ”
” দাদু আসলে বাবা তো একা মানুষ, এই বয়সে আর কতো কষ্ট করবে তাই আমি আবারও জব করতে চাইছি। ”
” মিষ্টি তুমি চাইলে আমি তোমার বাবার জন্য প্রতিমাসে টাকা পাঠিয়ে দিবো। ”
” না দাদু। এটা আমার আত্মসম্মানে লাগবে। আমি শশুর বাড়ির টাকা বাবাকে দিতে চাইনা। নিজের উপার্জিত টাকা দিতে চাই। তাছাড়া আমি দিতে চাইলেও বাবা কখনো আমার শশুর বাড়ির টাকা নিবে না। ”
অবনির কথা শুনে প্রিয়া খান বলল-
” ঢং দেখে বাঁচি না। তুমিও তো এখন আমাদের বাড়িরই বউ তা তোমার বাবা আমাদের বাড়ির টাকা নিবে না তো তোমার টাকা নিবে কিভাবে? শোন মেয়ে খান বাড়ির বৌয়েরা জব করেনা। আর বাইরে গিয়ে ঢেং ঢেং করে ঘুরে বেড়ায় না বুঝেছ? ”
প্রিয়া খানের কথায় জাহানারা খান চোখ রাঙিয়ে শক্ত কন্ঠে বললেন –
” প্রিয়া! কথা বলতে সাবধানে বলবে। মিষ্টি অন্য মানুষদের মতো নির্লজ্জ্ব নয় যে আরেকজনের টাকায় নিজের পরিবার চালাবে। ওর যথেষ্ট আত্মসম্মানবোধ রয়েছে। যেটা এবাড়িতে অনেকের মাঝেই নেই। ”
” শাশুড়ী মা আপনি কি কোনোভাবে কথাটা আমাকে ইঙ্গিত করে বলেছেন! ”
” ওই দেখ পড়লো কথা সবার মাঝে,
যার কথা তার প্রানে বাজে। যাই হোক, তুমি যে বললে খান বাড়ির বৌয়েরা জব করেনা। তো এই নিয়ম কি তুমি তৈরি করেছিলে? নিজে জব করোনা বলে কি সবাই অন্যকেও করতে দিবেনা নাকি? তুমি মনে হয় ভুলে যাচ্ছ আমি এখনো একজন জাজ। তুমি কি বলতে চাইছো আমি এই বাড়ির বউ নই?”
” শাশুড়ী মা আপনি জব করেন সেটা আপনার বিষয়। কিন্তু আমি চাইনা আমার পুত্রবধু ঘরের বাইরে বের
হোক। ”
” ও কি করবে না করে সেটা ডিসিশন নেওয়ার তুমি কে? মিষ্টি জব করবে আর সেটা আমাদের অফিসেই করবে। মিষ্টি আমাদের অফিসের জিএম এর চেয়ারে বসবে। ”
অবনি জিএম এর চেয়ারে বসবে শুনে আরশের কাশি উঠে গেলো৷
#চলবে….