#প্রেম_হয়ে_এলি_তুই
#লেখিকা : #ohona_akther
#পর্ব : ১২ ( প্রথম অংশ )
🚫 কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ ~
আরশ অবনিকে বলল তার বাবাকে বলে যাতে একটা গাড়ি ঠিক করে দিতে বাড়ি পৌঁছানোর জন্য। ওইদিন আরশের গাড়ির চাকাটা ফানচার হয়ে গিয়েছিল। রাস্তায় যে পরিমান কাঁদা সিএনজি বা বাইক হলে সুন্দর ভাবে এক সাইড দিয়ে যাওয়া যাবে। অবনি তার বাবাকে ব্যাপারটা জানিয়ে জামা কাপড় লাগেজে গুছিয়ে নিলো। কিছুক্ষণ পর আমজাদ আলম এসে আরশকে উদ্দেশ্য করে বলল –
” বাবা আমাদের এখানে তো ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িঁয়ে থাকলেও সিএনজি পাওয়া যায়না। তাই আমি একটা মোটরসাইকেলের ব্যবস্থা করে ফেলেছি। তবে মোটরসাইকেলটি একটু পুরোনো তবে একদম ঠিকঠাক মতোই চলে। ”
” ঠিক আছে সমস্যা নেই চলুন। ”
আরশ মোটরসাইকেল দেখতে গেলো আর অবনিকেও এগোতে বলল।
রুম থেকে বেরিয়ে আরশ আজমাদ আলম কে উদ্দেশ্য করে বলল-
” বাবা গাড়ি কোথায়? ”
আমজাদ আলম হাত দিয়ে উঠোনের দিকে ইশারা করে বলল-
” ওই যে এই মোটর সাইকেলটা । ”
আরশের তো এবার হাউমাউ করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। শেষ পর্যন্ত তার শশুর কিনা তার জন্য এইরকম একটা গাড়ি যোগাড় করলো! গাড়ির নাক মুখ কিছুই অবশিষ্ট নাই। একেবারে ১৯৮৯ সালের মোটরসাইকেল। পুরোনো গাড়ির কথা শুনে আরশ ভেবেছিলো একটু পুরোনো কিন্তু মোটরসাইকেলটি দেখার পর আরশের চক্ষু চড়কগাছ। এরকম গাড়ি নিয়ে যাওয়ার চেয়ে তো হেঁটে যাওয়া অনেক ভালো।
জামাইয়ের একরম হতভম্ব মুখ দেখে আমজাদ আলম বুঝতে পারলেন গাড়িটি তার পছন্দ হয়নি। তিনি তবুও সান্ত্বনা-স্বরুপ আরশকে বলল-
” বাবা গাড়িটি দেখতে এরকম হলেও খুবই ভালো সার্ভিস দেয়। ”
অবনির রুম থেকে বেরোতে বেরোতে মাঝে দিয়ে ফোঁড়ন কেটে বলল-
” একদম দারুণ সার্ভস দেয়। আপনি একেবারে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। অন্তত আপনার ওই নড়বড়ে গাড়ির মতো অর্ধেক রাস্তায় থেমে যাবেনা। ”
আরশ অবনির দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকাল। আর নিজে মনে মনে বলছে-
” গাড়ির যেই দশা দেখছি অর্ধেক রাস্তা পর্যন্ত যাওয়ার সৌভাগ্য কি আমার হবে! ”
আরশকে চুপ থাকতে দেখে আমজাদ আলম একটু আমতা আমতা করে বলল-
” জামাই বাবা তুমি কি এই গাড়িতে করে যেতে ইচ্ছুক নও? ”
শশুরের কথা শুনে আরশ স্বভাবসুলভ জোরপূর্বক হেসে জবাব দেয়-
” না না। ইট’স ওকে। আমরা এই গাড়িতে করেই যেতে পারবো। ”
জামাইয়ের কথা শুনে আমজাদ আলম একটু স্বস্তি পেলেন। অনেক কষ্টে পাশের বাসার ছেলেটার থেকে মোটরসাইকেলটি নিয়েছে। ছেলেটাও রাজু মেকানিক ওয়ার্কশপে নতুন জয়েন করেছে।
আমজাদ আলম আরশকে বলল-
” জামাই বাবা আমি ওয়ার্কশপে তোমার গাড়িটি ঠিক করে রেখে দিবো তুমি লোক পাঠিয়ে দিও। ”
আরশ বলল-
” বাবা আপনি কি আমাকে শুধু জামাই ভাবেন নাকি নিজের ছেলে ভাবেন? ”
আমজাদ আলম হেসে বললেন –
” শোনো ছেলের কথা। আমি তোমাকে আমার ছেলের মতোই ভাবি৷ ”
” আমি কালকে আপনার জন্য একটি নতুন বাইক কিনে পাঠাবো। বাইক কেনার কারন হচ্ছে যাতে কাঁদার মধ্যেও চলাচল করতে আপনার অসুবিধা না হয়। আপনি প্লিজ না করবেন না। ”
জামাইয়ের এমন কথা শুনে আমজাদ আলম মুগ্ধতার দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন। সাথে লজ্জাবোধ করলেন। আমজাদ আলমকে এরকম লজ্জা পেতে দেখে আরশ কোমল কন্ঠে বলল-
” আমি কিন্তু আপনাকে লজ্জায় পেলতে কথাটা বলিনি। আপনার ছেলে হয়ে বলছি। বাবা আমি আপনার জামাই নই আমি আপনার ছেলে। এরপরেও কি আপনার আমার দেওয়া জিনিস নিতে আপত্তি আছে? ”
আমজাদ আলম এবার স্বভাবসুলভ হেসে বলল-
” জামাই হিসেবে আপত্তি ছিল। কিন্তু ছেলে হয়ে যখন বলছো তাহলে আমার আর কোনো আপত্তি নেই । ”
” অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমি কতো খুশি হয়েছি আপনাকে জাস্ট বলে বোঝাতে পারবোনা। ”
আরশের কথায় অবনি মুগ্ধ হলো। নিজে নিজেই বলছে-
” মানুষটাকে যতো খারাপ ভেবেছিলাম তিনি ওতো টাও খারাপ নয়। কিছু কিছু আচরনে উনি সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। ”
আরশ মোবাইল নিয়ে তাদের ড্রাইভার রিয়াজকে কল জানিয়ে দিয়েছে রিজু অটো মোবাইল ওয়ার্কশপের ওখানে যেনো গাড়ি নিয়ে আসে। তাদের গাড়িটি নষ্ট হয়ে গেছে।
তারপর আমজাদ আলমের থেকে বিদায় নিয়ে তারা দুজন রওয়ানা দিলো। সাড়া রাস্তা আরশ আল্লাহ আল্লাহ জিকির করতে করতে গেলো। আর কিছুক্ষণ পর পর পেছনে তাকিয়ে দেখছে অবনি পেছনে আছে নাকি গাড়ির অর্ধেক ভেঙ্গে রাস্তাতেই রয়ে গেছে। রাস্তায় আরশকে দেখে অনেক মেয়েরা হাসাহাসি করছিল আর বলছিল ‘এতো হ্যান্ডসাম ছেলে কিনা টমটম গাড়ি চালাচ্ছে আহারে। ’ আবার কেউ কেউ বলাবলি করছে ‘ রসিক ভাতেও মরে, রসিক শীতেও মরে। ’
#চলবে