প্রেম_হয়ে_এলি_তুই #লেখিকা : #ohona_akther #পর্ব : ১৪

0
104

#প্রেম_হয়ে_এলি_তুই
#লেখিকা : #ohona_akther
#পর্ব : ১৪

🚫 কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ

অবনির চিৎকার শুনে জাহানারা খান আর মারিয়া দৌড়ে এলো কি হয়েছে জানার জন্য৷ কিন্তু এসে যা দেখলো তাতে দুজনই হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে বাদ নেই আরশও। হাসবে নাই বা কেনো! অবনিকে পুরো জোকারের মতো দেখাচ্ছে। পুরো মুখে পাউডার, চোখের উপর নিচে ভয়ংকর ভাবে কাজল দিয়ে আর্ট করা,ঠোঁটেও কাজল লেপ্টে আছে , নাকের ডগায়ও লিপস্টিক লাগানো, ঠোঁটের পাশে গালের মধ্যে কাজল দিয়ে বিড়ালের দাঁড়ির মতো আর্ট করা। সব মিলিয়ে অবনিকে জোকারের চেয়ে কোনো অংশে কম লাগছে। অবনি খুব রাগ হলো সবাইকে একরম হাসতে দেখে। জাহানারা খান কোনোমতে হাসি থামিয়ে বলল –

” মিষ্টি তোমার এই অবস্থা হলো কিভাবে! ”

আরশ ভাব লেস ভাবেই জবাব দিলো –
” কিভাবে আর হবে, আমিই এরকম করেছি। ”

অবনি রেগে চেঁচিয়ে বলল-
” কেনো করলেন আপনি এটা? দাদু তুমি এখনও চুপ করে থাকবে? তুমি যদি এর বিচার না করো তাহলে আমিও কিন্তু উনি ঘুমালে উনার চুল কেটে টাকলু বানিয়ে দিবো। ”

অবনির কথা শুনে আরশ ফিক করে হেসে দিল৷ আরশ ঠাট্টার স্বরে বলল-
” হা হা, তুমি আমার চুল কাটবে আর আমি কি তাকিয়ে থাকবো নাকি। আমিও তোমার চুল কেটে এলোকেশী পেত্নী থেকে নেড়া বউ বানিয়ে দিবো। ”

জাহানারা খান আরশের কান টেনে ধরে বলল-
” খুব বেশি বেড়ে গেছো তাইনা। আমার মিষ্টিকে জ্বালাতে খুব মজা লাগে। ”
.
” আহ দাদু লাগছে তো! কান ছাড়ো ব্যাথা পাচ্ছি তো। ”
.
” আগে মিষ্টিকে সরি বলো। ”
আরশ দাদুর থেকে কান ছাড়িয়ে বলল-
” অসম্ভব! ও আমার কাঁদা মাখা পিক তুলে রেখেছে। ওকে বলো এখনি ওর মেবাইলের পাসওয়ার্ড বলতে আমি নিজেই ডিলিট করবো। ”
.
অবনি বলল-
” অসম্ভব! ভেবেছিলাম একটু ভালো করে বললেই ডিলিট করে দিবো । কিন্তু আপনি যা করলেন তারপর তো ডিলিট করার প্রশ্নই আসেনা৷ ”
.
” ডিলিট না করলে তোমার এই জোকার মার্কা পিক আমি ভাইরাল করে দিবো। যদি নিজের ভালো চাও তো ভালোয় ভালোয় পাসওয়ার্ড বলে দাও। ”

” দিমু না। ”

” ওকে তাহলে আমি পিকটা ভাইরাল করে দিচ্ছি। ”

” আরেহ! পাসওয়ার্ড তো বললামই। আজব! ”

” কখন বললে তুমি? কই আমরা কেউই তো শুনতে পাইনি! ”

” আরে পাসওয়ার্ডই ‘ দিমু না ‘। ”

” হোয়াট? কতোটা ইস্টুপিট হলে একটা মানুষ একরম একটা পাসওয়ার্ড দিতে পারে! ”

” চুপ করুন। একদম আমাকে ইসটুপিড বলবেন না। আপনার থেকেও আমার ব্রেইন অনেক ভালো। ”

” হ্যাঁ তা তো দেখতেই পাচ্ছি। ”
.
” এক মিনিট আপনি আপনার পিক ডিলিট করছেন আর আমার পিকটা?”

” আমি তোমার মতো নই বুঝেছো? তোমার মতো এতো আজাইরা সময় নেই যে তোমার ওই জোকার মার্কা পিক মোবাইলে রাখবো। তোমার ওই জোকার মার্কা পিক যদি আমার গ্যালারিতে রাখি আমার গ্যালারির ইজ্জত ফালুদা হয়ে যাবে। ”
.
” কিহ তার মানে আপনি আমাকে বোকা বানালেন! ”
.
” আবারও হাসালে তুমি৷ তুমি ঠিক কবে ইন্টেলিজেন্স ছিলে! ”
আরশ একটু ভাবুক ভঙ্গিতে ব্যঙ্গ করে বলল-
” কই আমার তো মনে পড়ছে না। ”
.
” তা কেনো মনে পড়বে। মনে তো সব সয়তানি বুদ্ধিতে ভর্তি। এখন আমি মুখ পরিষ্কার করবো কিভাবে? ”

আরশ ভাব লেস ভাবে বলল-
” ভিম সাবান দিয়ে। ”
” হোয়াট? ”
” আরে এতো আশ্চর্য হওয়ার কি আছে! ভিম সাবান দিয়ে যদি পাতিলের কালি উঠে তাহলে তোমার মুখের কালি গুলোও উঠে যাবে। ”
.
জাহানারা খান বলল-
” দাদুভাই এই কাজটা কিন্তু তুমি মোটেও ঠিক করোনি৷ ”

” এছাড়া আমার আর কি করার ছিলো দাদু? ও যদি ভালোয় ভালোয় পিকটা সেদিন ডিলিট করে দিতো তাহলে আমাকে কষ্ট করে এসব করতে হতোনা। ওর ও এতো ভোগান্তিতে পড়তে হতোনা। তোমার মিষ্টিকে জানিয়ে দাও ভবিষ্যতে আর যেনো আমার পেছনে না লাগতে আসে৷ কথাটা বলে আরশ একটা ভাব নিয়ে সানগ্লাস চোখে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো।
.
অবনি বলল-
” দেখেছো দাদু, তোমার আদরের দাদুভাইয়ের বিহেভ দেখেছো? একে তো অন্যায় করেছে তার উপর কেমন ভাব দেখিয়ে চলে গেলো। ”
.
” রাগ করোনা মিষ্টি। দাদুভাই আসলে তোমাকে রাগানোর জন্যই এরকম করছে। ”
.
অবনি একটু অভিমানী সুরে বলল-
” হয়েছে হয়েছে নিজর দাদু ভাইয়ের হয়ে আর সাফাই গাইতে হবেনা। তুমি যে তোমার দাদু ভাইয়ের পক্ষেই কথা বলবে তা আমি জানতাম। আমাকে তো আর কেউ ভালোবাসে না যে আমার পক্ষ হয়ে কথা বলবে৷ ”

জাহানারা খান অবনির দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল-
” হয়েছে হয়েছে আর অভিমান করতে হবে না। আমি দুজনকেই ভালোবাসি। এখন চলো ফ্রেশ হতে হবে তো। অনেক কষ্টে অবনি মুখ পরিষ্কার করলো। অবনির ফর্সা মুখ একেবারে টমেটোর মতো লাল হয়ে গেছে।

★★★

সন্ধ্যার দিকে আরশ জাহানারা খান কে বলল-
” দাদু আমি আর বিদ্যুৎ একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি। ”
.
জাহানারা খান তাদের জিজ্ঞেস করলো –
” কোথায় যাবে দাদুভাই? ”
.
আরশ শীতল কণ্ঠে জবাব দিলো-
” দাদু একটু দিঘির পারে যাবো। ”
.
অবনি তখন সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছিল আর ওদের কথা শুনছিল। অবনি এসে বিদ্যুৎ কে বলল-
” ভাইয়া আমিও তোমাদের সাথে যাব। ”
.
অবনির কথা শুনে আরশ ঘাড় বাঁকিয়ে পেছন ফিরে বলল-
” তোমাকে যেতে হবে না। আমরা আমরা যাচ্ছি। আমাদের মাঝে তোমার কি কাজ?”
.
অবনি আরশের উপর রেগে আছে। তাই এমন ভাব করলো যেনো সে আরশের কথাটা শুনতেই পায়নি। অবনি আরশের থেকে মুখ ফিরিয়ে বিদ্যুৎতের দিকে তাকিয়ে বলল-
” ভাইয়া আমি তোমার সাথে যেতে চাইছি। তুমি কি আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবে? ”
অবনি এভাবে ইগনোর করায় আরশ অগ্নি দৃষ্টিতে বিদ্যুৎ আর অবনির দিকে তাকিয়ে আছে৷ হাতজোড়া অটোমেটিক মুষ্টিবদ্ধ হয়ে গেলো। চোখগুলো রাগে লাল হয়ে আছে৷ আরশ জোরে জোরে নিশ্বাস ছেড়ে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। বিদ্যুৎ আরশের দিকে তাকিয়ে খুব ভালোই বুঝতে পারছে আরশ রেগে গেছে৷ বিদ্যুৎ আরশের দিকে তাকিয়ে বোকা হেসে বলল-
” অবনি যখন যেতে চাইছে তুই আর আপত্তি করিসনা। ”
বিদ্যুৎ অবনিকে বলল-
” যা তুই রেডি হয়ে আয় । ”
.
বিদ্যুৎতের কথা শুনে অবনির চোখে মুখে খুশির ঝলক নেমে এলো। অবনি খুশি মনে পেছন ঘুরে পা বাড়ালো। অবনি আড় চোখে তাকিয়ে দেখেছে আরশ প্রচন্ড রেগে আছে কিন্তু অবনি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালো। আরশ সামনের দিকে ফিরেই হাতটা পেছনে বাড়িয়ে অবনির ডান হাতটি ধরে টেনে নিজের সামনে দাঁড় করিয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে ঝারি দিয়ে বলল-
” আমি কি তোমাকে যেতে বলেছি? আনসার মি ডেম ইট? ”
.
অবনি নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল-
” আশ্চর্য আপনি এতো রিয়্যাক্ট কেনো করছেন। হাত ছাড়ুন আমার লাগছে। ”
.
” আমাকে ইগনোর করার দুঃসাহস কোথা থেকে পাও তুমি। সুন্দর করে কথা বলছি তাও তোমার সহ্য হচ্ছেনা? সব সময় এরকম ভাব নাও যেনো তুমি সেলিব্রিটি কেউ! এখন তোমার সাথে কথা বলতে আমার পারমিশন লাগবে। নিজেকে কি মনে করো তুমি হ্যাঁ? অনেক স্মার্ট, স্ট্যান্ডার্ড? আমাকে কি মনে হয় তোমার? আমি ছ্যাচড়া যেভাবে খুশি ইগনোর করবে? শোনো তোমার মতো হাজারটা মেয়ে আমার পেছনে লাইন ধরে পড়ে থাকে শুধু মাত্র আমার সাথে একটু কথা বলার জন্য। আর সে জায়গায় তুমি আমাকে ইগনোর দেখাচ্ছো? ইগনোর দেখাতে হলেও নিজের স্ট্যান্ডার্ড দেখে তারপর দেখাতে হয় বুঝেছো? নিজের অবস্থানটা ভুলে যেওনা। আর আমার সাথে ইগনোর একদমই দেখাতে আসবেনা। আমি সেটা এলাউড করবোনা৷ মাইন্ড ইট। ”

আরশের কথা গুলো ধারালো ছুরির মতো অবনির বুকে গিয়ে বাঁধলো। অবনির ভেতরে ঝড় বয়ে চলেছে। আরশ যে এইভাবে অপমান করবে এটা অবনি ভাবতেও পারেনি৷ অবনির মনে আরশের প্রতি অভিমান জন্ম নিলো। চোখের কোনায় পানি জন্মে আছে৷ যেনো এখনি গড়িয়ে পড়বে। কোনোমতে আঁটকে রেখেছে পানিগুলো। তবুও অবাধ্য পানি বাঁধ ভেঙে টপ টপ করে অঝোর ধারায় গড়িয়ে পড়ছে৷ অবনির চোখে পানি দেখে আরশের রাগটা নিমিষেই হালকা হয়ে গেলো।
.
আরশকে এভাবে রেগে যেতে দেখে সবাই অবাক। আকবর খান পেশায় একজন এডভোকেট। একটা মামলার ঝামেলা মিটিয়েছে আজ। তাই গভীর ঘুমে মগ্ন হয়ে আছে। প্রিয়া খান পাশেই ছিল কিন্তু হঠাৎ আরশের এতো কড়া কন্ঠ শুনে প্রিয়া খান রুম থেকে বেরিয়ে উপর থেকে উঁকি দিয়ে কাহিনিটা কি তা বোঝার চেষ্টা করছে। জাহানারা খান এগিয়ে এসে আরশের হাত থেকে অবনির হাতটা ছাড়িয়ে নিলো। হাত ছাড়তেই অবনি দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরের দিকে চলে গেলো। প্রিয়া খানের কেনো জানি অবনির জন্য একটু খারাপ লাগা কাজ করলো। প্রিয়া খানের এই খারাপ লাগা কাজ করায় নিজেই একটু আশ্চর্য হয়ে গেলো৷ তার তো খুশি হওয়ার কথা তাহলে খুশি না হয়ে মেয়েটার জন্য খারাপ কেনো লাগছে! তিনি নিজেই নিজেকে এই বলে সান্ত্বনা দিলো মেয়েটার সাথে তো আমার শত্রুতা নেই। শুধুমাত্র চৈতী একটু সুখে থাকবে বলে এতো কিছু সেজন্যই হয়তো একটু খারাপ লাগছে।
.
এদিকে জাহানারা খান শক্ত কন্ঠে আরশকে বলল-
” এসব কি দাদুভাই? ছি ছি ছি! এই তুমি টাকে তো আমি চিনি না। অবনিকে এরকম জঘন্য কথাগুলো বলতে তোমার একবারও বিবেকে বাঁধলো না? এরকম আচরণ কি করে করলে তুমি মেয়েটার সাথে? এখন তো আমার নিজেরই নিজের প্রতি ঘৃনা হচ্ছে এই ভেবে আমি তোমাকে সঠিক শিক্ষাটা দিতে পারিনি। ”
কথাটা বলে জাহানারা খান গটগট পা চালিয়ে নিজের রুমের দিকে চলে গেলেন।
.
বিদ্যুৎ আরশের কাছে এসে আরশের কাঁধে হাত রেখে বলল-
” আই নো তুই কেনো এতোটা রেগে গেছিস। ছোটবেলা থেকে তোকে চিনি এটুকু বোঝার ক্ষমতা আমি রাখি। তবে আমি বলবো তোর ধারনা টুকু সম্পুর্ণ ভুল। তোর হয়তো মনে হচ্ছে অবনি তোর চেয়ে আমাকে একটু বেশিই প্রায়োরিটি দিচ্ছে। কিন্তু সত্যি এটাই যে, অবনি আর আমার সম্পর্কটা জাস্ট ভাই বোনের সম্পর্ক। এর বাইরে ওকে আমি অন্য কিছুই ভাবিনা৷ আর আমি যতোটুকু জানি অবনিও আমাকে ভাই ছাড়া অন্য কিছু ভাবেনা। তুই মেয়েটাকে অনেক বেশিই হার্ট করেছিস। দ্যাটস নট ফেয়ার। ”
কথাটা বলে বিদ্যুৎ চলে গেলো। আরশ বিদ্যুৎতের যাওয়ার পানে চেয়ে রইলো।

_________________

অবনি জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে। দৃষ্টি চাঁদের দিকে স্থির। চোখ ভিজে আছে৷ বারবার চোখ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। নিজে নিজেই ভাবছে কি এমন করেছি আমি যার জন্য উনি আমাকে নিজের স্ট্যান্ডার্ডটা দেখিয়ে দিলো৷ আমি তো শুধু একটু ঘুরতে যেতে চেয়েছিলাম। উনাকে ইগনোর করার আমি কে! আর ইগনোর করলেই কি না করলেই কি। উনার তাতে কি যায় আসে। অবনি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজেই নিজেকে বলছে-
” পৃথিবীতে সবাই মানুষকে টাকা দিয়ে মূল্যায়ন করে। আপনিও তার ব্যতিক্রম নন মিস্টার আরশ খান। ”
.
আরশ অবনির পেছনে এসে দাঁড়ালো। অনুতপ্ত স্বরে অবনিকে বলল-
” সরি। ”
অবনি চোখের পানিগুলো দ্রুত মুছে নিলো৷ এক পলক পেছনে তাকিয়ে আবারও সামনে মাথা ঘুরিয়ে নিয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে রইলো।
আরশ বেশ বুঝতে পারছে অবনিকে অনেক বেশিই কষ্ট দিয়ে ফেলেছে।
আরশ অবনির হাত ধরে অবনিকে নিজের দিকে ঘুরালো। অবনি ব্যাথায় ‘ আহ ‘ করে উঠলো। আরশ ওতোটা জোরে ধরেনি হাত৷ তবুও অবনিকে ব্যাথা পেতে দেখে নিজের হাতটা সরিয়ে দেখলো তখন হাতটা জোরে চেপে ধরায় রাত অসম্ভব লাল হয়ে আছে। যেনো টেকা দিলেই র’ক্ত গড়িয়ে পড়বে। দাগ পড়ে গেছে।
আরশ অনুতপ্ত কন্ঠে অবনিকে বলল-
” আম সরি অবনি৷ আম রিয়েলি সরি৷ ”
.
অবনি তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল-
” সরি! আপনি কেনো সরি বলবেন? তাও আবার আমার মতো একটা মেয়েকে যার কোনো স্ট্যান্ডার্ডই নেই। না না ইগনোর দেখাতেও যেমন স্ট্যান্ডার্ড লাগে। কারো থেকে সরি এক্সপেক্ট করতেও মিনিমাম স্ট্যান্ডার্ড প্রয়োজন। যেটা আমার নেই৷ দয়া করে সরি বলে আমার মতো গরিব ঘরের মেয়েকে লজ্জা দিবেন না প্লিজ। আমি জানি আমার আপনাকে রিকোয়েস্ট করার মতো সেই যোগ্যতা টুকুও নেই। তবুও বলছি প্লিজ দয়া করে সরি বলে আমাকে লজ্জিত করবেন না। ”
.
আরশ কানে হাত দিয়ে বলল-
” এই আমি কানে ধরলাম সত্যি বলছি আমি আর কখনো তোমাকে এভাবে হার্ট করবোনা৷ বিশ্বাস করো আমি তোমাকে এতোটা হার্ট করতে চাইনি। কিন্তু হঠাৎ কেনো যে মাথটা এরকম গরম হয়ে গেছিলো নিজেও জানিনা৷ ”
.
” গরম মাথা হলেও কথা গুলো কিন্তু একটাও ভুল বললেননি আপনি। প্রতিটি কথাই সত্যি ছিলো। ”
.
” প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও। তোমার যা শাস্তি দেওয়ার দাও তবুও এভাবে কষ্ট পেও না প্লিজ। তুমি যদি এভাবে কষ্ট পাও আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবোনা অবনি৷ এর জন্য যদি নিজের প্রান দিতে হয় আমি তাতেও রাজি৷ ”

কথাটা শুনে অবনির বুকে ধক করে উঠলো। সত্যিই যদি আরশ উল্টো পাল্টা কিছু করে বসে। অবনি তাই সব কষ্ট বিসর্জন দিয়ে বলল-
” আমি কষ্ট পাইনি। আপনার উপরও রেগে নেই৷ তবে ভবিষ্যৎ কাউকে কিছু বলতে ভেবে বলবেন। কাউকে কিছু বলার আগে একবার ভাববেন অপর পাশের মানুষটা কথা গুলো কিভাবে নিচ্ছে। তার জায়গায় নিজে থাকলে কি করতেন৷ ”
.
আরশ অবনির হাত জোড়া ধরে বলল-
” মানুষ মাত্রই ভুল হয় অবনি। আমিও নাহয় ভুলটা করে ফেলেছি। মানুষ যখন একের অধিক বার একই ভুল করে তখন সেটিকে অন্যায় হিসেবে গন্য করা হয়। আই প্রমিস এরকম ভুল আর কখনো হবেনা। স্মাইল? ”
.
আরশের কথায় অবনি মৃদু হাসি দিলো।
আরশ ফাস্টএইড বক্স নিয়ে অবনির হাতে মেডিসিন লাগিয়ে দিলো।
তারপর অবনিকে বলল-
” চলো আমরা দুজন ঘুরতে যাব। ”

অবনি বলল –
” নাহ, এখন আর যাওয়ার মোড নেই। ”

” এখনও রেগে আছো?”

” নাহ। ”

” তাহলে?”

” এমনিই ভালো লাগছেনা। ”

” তাহলে কি আমি ধরে নিবো তুমি এখনো রেগে আছো?”

” আচ্ছা ঠিক আছে আমি তৈরি হয়ে নিচ্ছি। ”
অবনির কথায় আরশ কিছুটা হালকা অনুভব করলো। এতক্ষণ পর্যন্ত অনুপাতের ভার বয়ে ছিল।

______________

রাতের আঁধার ল্যাম্পপোস্টের ঘোলাটে বাতির আলোয় দুজন দিঘির পারে হাঁটছে। রাস্তার পাশে সারিবদ্ধ গাছ। সো সো বাতাস বইছে৷ অন্যরকম একটা ভালোলাগা কাজ করছে অবনির। আরশ অবনির হাতে হাত রাখতে চেয়েও রাখলোনা। আরশ দুটো আইসক্রিম নিলো। একটা নিজের জন্য অন্যটা অবনির জন্য৷ অবনি আইসক্রিম খাচ্ছে আর সামনের দিকে হেঁটে চলেছে। আর এদিকে যে আরশ এক দৃষ্টিতে অবনির দিকে তাকিয়ে আছে সেদিকে অবনির খেয়ালই নেই। তারা দুজন একটি বেঞ্চিতে বসে প্রকৃতির মনোরম বাতাস উপভোগ করছে৷ তখন আরশ গান গাইতে শুরু করলো-

” তুমি থাকো দূরে আড়ালে,
বোঝনা কেনো যে আমায়।
কতো শত বাহানা,
একটু পাওয়ার আশায়।
তুমি একবার বলো যদি
আমি পাড়ি দিবো খড়স্রোতা নদী,
ভালোবাসা দিবো পুরোটাই।
আমি এমন একটা তুমি চাই,
এমন একটা তুমি চাই।
যে তুমিতে আমি ছাড়া,
অন্য কেউ নাই।

অবনি বিস্মিত দৃষ্টিতে আরশের দিকে রইলো৷ আরশ অবনির দিকে তাকালো অবনি তখনও আরশের দিকেই চেয়ে রইলো৷ অবনিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরশ বলল-

” এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? এরকম মন জুরানো পরিবেশে থাকলে আমার গান গাইতে ভালো লাগে৷ তাই একটুখানি গাইলাম। ”
.
আরশের কথায় অবনির ঘোর কাটে। অবনি চোখ নামিয়ে নিলো। অবনি চুপ করে আছে দেখে আরশ বলল-
” কি ব্যাপার কেমন গাইলাম বললে না তো? ”
.
” সুন্দর। ”

” শুধুই সুন্দর! ”
আরশের কথায় অবনি আবারও অবাক হয়ে আরশের দিকে তাকিয়ে রইলো।

#চলবে….

( ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। গঠন মূলক মন্তব্য চাই 🥹🤌)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here