#প্রেম_হয়ে_এলি_তুই
#লেখিকা : #ohona_akther
#পর্ব : ১৫
🚫 কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ
” দাদু প্লিজ এভাবে মুখ ভার করে রেখোনা। বললাম তো এরকম বিহেভ আর কখনো করবোনা প্রমিস। ”
.
” এবারের মতো ক্ষমা করলাম তবে ভবিষ্যতে কিন্তু আর ক্ষমা করবোনা। ”
.
খাবার শেষ করে অবনি আর আরশ বেরিয়ে পড়লো অফিসের উদ্দেশ্যে। অবনির আজ অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে। কতোদিন পর আবারও সেই চেনা পরিবেশ। রুপা, জিসান ওদের সাথেও মজা করতে পারবে। আধঘন্টার মধ্যেই তারা অফিসে এসে পৌঁছালো। অফিসে প্রবেশ করতেই সবাই আরশকে সালাম দিলো।আরশ নিজের কেবিনে চলে গেলো। আরশ আদেশকে ডেকে বলল অবনিকে ওর কেবিনে নিয়ে যেতে। আরশের কথায় অবনি বলল-
” আদেশ কেনো? আপনি নিয়ে গেলে প্রবলেম কোথায়? ”
.
আরশ হাতের কলমটা সুক্ষ্ম হাতে ধরে বলল-
” অবনি আপনি মনে হয় ভুলে যাচ্ছেন আমি আপনার অফিসের বস। পিয়নও নই বডিগার্ডও নই। আপনি আদেশের সাথে যান ও আপনাকে নিয়ে যাবে। ”
.
আরশের কথা শুনে অবনি তো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। নিজে নিজেই বলছে-
” আরহ! এ লোক তো দেখি গিরগিটির চেয়েও ভয়ংকর! রুপ বদলাতে এক সেকেন্ডও সময় লাগেনা। কালকে কতো ভালো ভালো কথা বলছিলো আর আজ মুহূর্তেই রুপ বদলে গেলো। একেবারে তুমি থেকে আপনি! আবারও ব্যাটার ভেতরের সয়তানি আত্নাটা বেরিয়ে আসছে। ”
.
অবনিকে এরকম ভ্যাবলার মতো চেয়ে থাকতে দেখে আরশ বলল-
” কি ব্যাপার! আপনি এখনো কেনো দাঁড়িয়ে আছেন? ”
.
আরশের কথায় অবনির ধ্যান ভাঙ্গে। অবনি বলল-
” এভাবে চেঁচাচ্ছেন কেনো? আপনার এখানে বসে থাকবো নাকি আমি? ”
.
” অবনি আপনি মে বি ভুলে যাচ্ছেন আমি আপনার বস। আর বসের সাথে কিভাবে বিহেভ করতে হয় তা নিশ্চয়ই জানা আছে আপনার। আর যেহেতু আমি আপনার বস সো আমাকে স্যার বলেই সম্বোধন করবেন। ওকে? ”
.
অবনি দাঁতে দাঁত চেপে বলল –
” জ্বী স্যার। ”
কথাটা বলে আর এক সেকেন্ডও অপেক্ষা করলোনা। সোজা বেরিয়ে গেলো। আদেশও অবনির সাথে বেরিয়ে গেলো। আদেশ হচ্ছে আরশের অফিসের পিয়ন৷
অবনি যেতেই আরশ ঠোঁট চেপে হাসলো। আরশ নিজে নিজেই বলছে-
” মিসেস খান আপনার সাথে ঝগড়া করতেই আমার বেশি ভালোলাগে৷ আপনার বোকা বোকা কথাগুলো একটু বেশিই ভালো লাগে৷ ”
তারপর আরশ কাজে মন দিলো।
.
এদিকে আদেশ অবনিকে তার কেবিন দেখিয়ে দিয়ে চলে গেলো। অবনি নিজের চেয়ার বসলো। চেয়ার ঘুরতে দেখে অবনি বলল-
” আরে বাহ! এতো দেখছি ঘুরে। ওই বজ্জাত বস আমাকে অফিস থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল। আর এখন নিয়তি আবারও আমাকে এই অফিসেই ফিরিয়ে আনলো তাও আবার জিএম হিসেবে। একেই বলে কপাল। নাহ বেশি খুশি হোস না অবনি। ওই ব্যাটা গিরগিটির চেয়েও ভয়ংকর। কখন আবার তোর কোন ভুল খুঁজতে লেগে যাবে কে জানে। অবনি চেয়ারে মাথা এলিয়ে অফিস ছেড়ে চলে যাওয়ার দিনের কথা মনে করছিলো।
ফ্লাশব্যাক –
অবনির স্কুল লাইফের বেস্টি আনিকার জন্মদিনে গিয়েছিল অবনি। বার্থডে উপলক্ষে আনিকা পার্টি রেখেছিল। তাদের স্কুলের কয়েকজনই এসেছিল। সবাই একসাথে হই হুল্লোড় করছিল। নানা রকম ব্যস্ততায় কারো সাথে কারো দেখা সাক্ষাৎ হয়নি। বহুবছর পর একে অপরের দেখা পেয়ে নানা গল্পে মেতে উঠেছে সবাই। শুধুমাত্র অবনির মনে টেনশন কখন বাড়ি যাবে। অবনি আনিকাকে এক কোনে ডেকে এনে বলল-
” দোস্ত আমার বাড়ি ফিরতে হবেরে। ”
.
অবনির কথা শুনে আনিকা আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলো –
” কেনো বাড়ি ফিরবি? তুইনা বললি আজ আমাদের বাড়ি থাকবি? দেখ তোর জন্য কিন্তু রিমি, জুহি এরা থাকার প্রিপারেশন নিয়ে এসেছে। এখন তুই যদি চলে যাস ওরা খুব রেগে যাবে। তাছাড়া আমারও ভালো লাগবে না। ”
.
” আমি বুঝতে পারছি দোস্ত! কিন্তু কি করবো বল? থাকবো তো বলেছিলাম একসপ্তাহ আগে৷ কিন্তু কালকে আমার অফিস আছে৷ ”
.
” কিইই? কালকে তো শনিবার অফ ডে। অফ ডে তে কেউ অফিস করে? ”
.
” আমার যেই বস? এমপ্লয়রা যে একটু শান্তিতে থাকবে এটা তো তার সহ্যই হয়না। পারেনা যেনো ত্রিশদিনই খোলা রাখে। আর আমার দোষ খুঁজে বের করতে তো এক্সট্রা দুই চোখ লাগিয়ে রাখে৷ ”
.
” কি বলিস? আচ্ছা তোর বস কি একটু বুড়ো টাইপের? ”
.
” আরে নাহ! আমার বস হচ্ছে ইয়াং, হ্যান্ডসাম, স্মার্ট আর চুতিয়া টাইপের লোক। উনি মনে কর শান্ত কন্ঠে হেসে হেসে এমন ভাবে কথা বলবে যেনো মনে হবে সুই দিয়ে সেলাই করছে৷ আর সারাক্ষণ এমন একটা মুড নিয়ে থাকবে যেনো তিনি কোনো সিনেমার হিরো৷ তুই তো জানিস আমার রাতে ঘুমাতে হয়। রাতে ঘুমাতে না পারলে তো দিনে কোনো কাজই করতে পারবোনা। ”
.
” তোর বসকে বলনা যে তোর বান্ধবীর বার্থডে তে এসেছিস তাই কালকে অফিস যেতে পারবিনা। ”
.
” আমার যেই বস এখন যদি বলি যে স্যার আমার বান্ধবীর বার্থডে পার্টি আছে আমি অফিস আসতে পারবোনা উনি বলবেন তাহলে আর জব করতে হবে না বাড়ি গিয়ে ওইসব পার্টই করো। তখন তুই আমাকে চাকরি দিবি? ”
.
” দিবো তো৷ ”
.
” কি চাকরি দিবি! ”
আনিকা হেসে বলল-
” ঘুম। ”
আনিকার কথা শুনে অবনি আনিকার কান টেনে বলল-
” তুইও আমায় নিয়ে মজা নিচ্ছিস তাইনা? ”
.
আরে কান ছাড়৷ আমার কানটা কি ছিঁড়ে ফেলবি নাকি।
” আমি আরো ভাবছিলাম আজকে আমরা নাচ গান করবো। তোকে গান শিখাবো। ”
অবনির আবার গান শেখার খুব ইচ্ছে ছিল। আনিকা খুব ভালো গান গাইতে পারতো। আনিকা বলেছিলো অবনিকে শিখাবে কিন্তু সময়ের জন্য কখনোও শিখে ওঠা হয়নি৷ কলেজ, ভার্সিটি সময় পড়াশোনা আর পড়ে তো এই বজ্জাত বসের অফিসে জব৷ নিজের ইচ্ছেটা তাই চাপা পরে রইলো। আজ যখন সুযোগ পেয়েছে তাই অবনি কৌতুহল হয়ে বলল-
” সত্যি বলছিস? তাহলে আমি থাকবো৷ তবে বেশি রাত জাগতে পারবোনা। ”
.
” ওকে ডান। ”
তারপর সকলে নাচ গান আনন্দে মেতে ছিল। সবাই মিলে হরর মুভি দেখছিল। ভুত দেখে সবাই মুভি দেখা বাদ দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো শুধুমাত্র অবনি ছাড়া। অবনির কাছে হরর মুভি ভেরি ইন্টারেস্টিং লাগে। সারারাত অবনি ঘুমাতে পারেনি। সকালে ফজর নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে পড়লো। আনিকা আটটার দিকে অবনিকে ঘুম থেকে জাগানোর জন্য ডাকছে কিন্তু অবনির কোনো সাড়া শব্দ নেই। গভীর ঘুমে মগ্ন হয়ে আছে অবনি। এদিকে সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। অবনিকে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন দেখে আনিকা উপায় না পেয়ে অবনির কানের কাছে গিয়ে বলল-
” অবনি তোর বস এসেছে৷ ”
কথাটা বলতেই অবনি ধরপড়িয়ে উঠে বলল-
” কই কই? ”
অবনির এমন কান্ডে আনিকা হাসতে হাসতে মরি মরি অবস্থা। অবনির আর বুঝতে বাকি রইলোনা আনিকা তার সাথে মজা নিয়েছে। অবনি বালিশ দিয়ে আনিকা কে মারতে শুরু করলো।
.
” আরে থাম থাম। আমাকে মারছিস কেনো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখ কয়টা বাজে। অফিস যাবিনা? ”
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অবনি শকট। অবনি মাথায় হাত দিয়ে বলল-
” হায় হায়! এতোটা সময় পেরিয়ে গেছে আর তুই আমাকে এখন বলছিস? অবনি দ্রুত রেডি হয়ে অফিসের দিকে রওয়ানা দিলো।
অফিসে এসে অবনি তো ঘুমের জন্য চোখই মেলতে পারছেনা। অবনিকে ঘুমে এরকম ঝিমুতে দেখে রুপা আর জিসান হাসাহাসি করছিল।
আদেশ এসে জিসান আর রুপাকে কফি দিলো। তারপর অবনির দিকে ফিরে বলল-
” মেডাম আপনের কি ঘুম পাইতাছে? কোনো সমস্যা নাই। মুই আপনের লাইগ্যা কফি বানাইয়্যা আনতাছি। ”
আদেশের কথা শুনে জিসান ঠাট্টার স্বরে বলল-
” আরে কফি দিলে তো হবেনা। তুমি বরং মেডামকে একটু বিছানার ব্যবস্থা করে দাও৷ বালিশ তো নিজেই সাথে করে নিয়ে এসেছে। ”
কথাটা বলে তারা আবারও হাসি দিলো।
.
আদেশ বলল-
” আদেশ করেন যাহা মোর গুরুজনে আমি যেনো সেই কাজ করি ভালো মনে। মোর মায়ের এই কবিতাটাডা খুব পছন্দ ছিলো হেল্লাইগা মোর নাম রাখছিল আদেশ। মেডামরে দেইখা মোর মায়ের কথা মনে পইড়া গেলো। ”
আদেশ অবনির কাছে গিয়ে বলল-
” মেডাম মুই যখন ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিছিলাম মোর এমন ঘুম আইতো! মোর মায়ে মোর চুল গুলি দড়ি দিয়া ফ্যানের লগে বাইন্ধা দিছিলো। মুই কি আপনার চুলও ফ্যানের লগে বাইন্ধা দিমু? ”
.
আদেশের কথা শুনে জিসান আর রুপা আবারও হেসে দিলো। অবনি আদেশের দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকাতেই আদেশ বোকা হেসে বলল-
” মেডাম মুই আমনের লাইয়্যা ব্ল্যাক কফি লইয়্যা আনতেছি। ”
কথাটা বলেই আদেশ চলে গেলো কফি আনতে। অবনি আবারও ঘুমিয়ে পড়লো। জিসান আর রুপা কফি নিয়ে ছাদের দিকে গেলো। এদিকে আরশ যাওয়ার পথে চোখ পড়লো অবনির দিকে। অবনি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আরশ টেবিলের উপর হাত দিয়ে একটা বারি দিতেই অবনি ঘুম ঘুম চোখে ভ্রু কুঁচকে মাথা তুলে বলল-
” আদেশ তুমি বার বার আমার ঘুমে ডিস্টার্ব……. ”
এটুকু বলে সামনে তাকাতেই অবনি ভয়ে মুখ চুপসে গেলো।
অবনি দ্রুত চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।
” সসরি স্যার। ”
.
ইট’স ওকে ইট’স ওকে৷ আরশ অবনির মাথায় দেওয়া বালিশটা হাতে নিয়ে বলল-
” ওয়াও ফ্যানটাস্টিক! বালিশও আছে দেখছি। ”
আদেশ তখন হাতে করে কফি নিয়ে আসলো। আরশ আদেশকে বলল-
” আদেশ অফিসে বালিশ আসলো কিভাবে। ”
.
” স্যার মেডাম আসার সময় লইয়্যা আইছে। ”
.
আরশ হেসে বলল-
” ওয়াও! গুড জব। ”
” সরি স্যার।
” না না ইট’স ওকে। ডোন্ট সে সরি। সরি বলার কোনো প্রয়োজন নেই। সরি বলার কোনো প্রয়োজনই নেই। আপনার চেহারা টাতে বড় করে লেখা আছে আম সরি স্যার। ডোন্ট বি সরি। আম সরি যে আপনার এতো সুন্দর শান্তির ঘুমটা ভাঙ্গিয়ে দিলাম। ”
.
অবনি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল-
” সরি স্যার আর একরম হবেনা৷ ”
.
” আহা আপনি বার বার সরি কেনো বলছেন? আপনি তো কোনো দোষ করেননি৷ রাতে ঘুম ঠিক মতো হয়নি তাইনা? ”
.
” অল্প হয়েছিল। ”
” ইট’স ওকে, ইট’স ওকে । আই ক্যান আন্ডারস্ট্যান্ড। ”
আদেশ অবনির দিকে কফি কাপ এগিয়ে দিলো। আরশ কাপটি নিয়ে নিলো।
” নো নো আদেশ। অবনিকে কফি দিলে তো হবেনা ওর ঘুমের প্রয়োজন। এই ঘুম কফি খেলেও যাবেনা৷”
আরশ অবনির দিকে বালিশ এগিয়ে দিয়ে বলল-
” প্লিজ টেইক ইট, টেইক ইট। যান বাড়িতে একেবারের জন্য চলে যান। বাড়ি গিয়ে আরাম করে ঘুমান। ”
.
” সরি স্যার এরকম ভুল আর হবেনা। আমি আর কখনো ঘুমাবো না। স্যার দরকার পড়লে আমি বাসায়ও জীবনে ঘুমাবোনা। ”
.
আরশ চেঁচিয়ে জোরে বলল-
” গেট আউট। ”
আওয়াজটা এতো জোরে ছিল যে সবাই ভয়ে কেঁপে উঠলো।
রাগে দুঃখে লজ্জায় অবনি অফিস থেকে বেরিয়ে গেলো৷ অবনিকে অফিসের বাইরে গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিসান বলল-
” কি ব্যাপার তুই এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? ”
.
” আমি আর এই অফিসে কাজ করবোনা। ”
.
” মানে কি? সামান্য একটু বকা খেয়েছিস বলে অফিস থেকেই চলে যাবি? ব্যাপারটা বোকামি হয়ে যাচ্ছে না? ”
.
” কি বললি তুই? তোর কাছে সামান্য একটু মনে হয়? তোকে তো বলে নাই বলছে তো আমাকে। যেভাবে অফিসের সবার সামনে অপমান করলো তারপর আর এই অফিসে থাকা উচিত বলে তোর মনে হয়?”
.
” দেখ স্যার তো ভুল কিছু বলেনি তাইনা। তুই কাজ না করে বসে বসে ঘুমাচ্ছিস। সেজন্যই একটু…..”
.
” থাক! তোর আর স্যারের হয়ে চামচামি করতে হবেনা। তুই যা, গিয়ে তোর স্যারের পা টিপে দে, স্যারের পেছন পেছন তেলের গ্যালেন নিয়ে হাটঁ আমি গেলাম। ”
কথাটা বলে অবনি সেই যে এলো আর ফিরে গেলোনা।
বর্তমান ~
পুরোনো দিনের কথা ভাবতে ভাবতে অবনির চোখে ঘুম নেমে এলো। আরশ অবনির কেবিনের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলো কিছু একটা ভেবে পেছনে ব্যাক করে অবনির কেবিনের দিকে উঁকি দিলো। দেখলো অবনি ঘুমিয়ে আছে। আরশ কপালে হাত রেখে বলল-
” হায়রে ঘুমের রানী! ঘুম নিয়ে অফিস ছেড়ে গেলে আবার ঘুম দিয়েই অফিস শুরু করলে! ”
আরশ অবনির দিকে এগিয়ে গেলো।
”মিসেস অবনি৷ মিসেস অবনি। ”
অবনি ঘুমের ঘোরে চোখ পিটপিট করে খুলে ‘ হুমম ‘ বলে যেইনা দেখলো আরশ দাঁড়িয়ে আছে ওমনি তড়িঘড়ি করে উঠতে গিয়ে চেয়ার থেকে ধপাস করে নিচে পড়ে গেলো।
আকস্মিক ঘটনায় আরশ হতভম্ব হয়ে গেলো।
আরশ ফিক করে হেসে দিলো। আরশকে হাসতে দেখে অবনি বলল-
” আপনি তো পুরোই সয়তান একটা লোক! আমি পড়ে গেলাম আর আপনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছেন? ”
.
আরশ কোনোমতে হাসি থামিয়ে অবনির দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। অবনি কোনোমতে উঠে দাঁড়ালো।
.
” তুমি এতো তড়িঘড়ি করে উঠতে গেলে কেনো? ”
.
” আপনার জন্যই তো। আপনার তো অফিসে আর কোনো কাজ থাকেনা আমার দোষ খোঁজা ছাড়া৷ ”
.
” অফিসের মধ্যে ঘুমানোটা কি অন্যায় নয়? আপনাকে বললাম না অফিসে আমি আপনার বস তাই স্যার বলেই সম্বোধন করবে। ”
.
” জ্বী স্যার। সরি স্যার। ”
” ইট’স ওকে। তা কাজকর্ম ছেড়ে ঘুমাচ্ছিলেন কেনো? এটা কি আপনার কাজ? ”
” জ্বী না স্যার। সরি আসলে একটু বেখেয়ালি চিলাম তো তাই…..”
” হ্যাঁ আপনি তো ভাবনার রানী সারাক্ষণ ভাবনার জগৎ এই থাকেন। ”
আরশ আদেশকে ডাক দিয়ে বলল-
” আদেশ ফাইল গুলো নিয়ে আসো। ”
আরশের কথানুযায়ী আদেশ একগাদা ফাইল এনে টেবিলের উপর রাখলো।
” ফাইলগুলো ভালোভাবে চেক করবেন৷ কোনো ভুল যাতে না থাকে। লাঞ্চ টাইমের পর ফাইল নিয়ে আমার কেবিনে যাবেন আমি দেখবো। ”
কথাটা বলেই আরশ বেরিয়ে যাচ্ছিলো।
.
অবনি পেছন থেকে বলল-
” হোয়াট? এতোগুলো ফাইল আমি এতো অল্প সময়ে কি করে চেক করবো!”
আরশ ঘাড় বাঁকিয়ে পেছন ফিরে বলল-
” আপনার কাজ আপনি করবেন। কিভাবে করবেন সেটা একান্তই আপনার ব্যাপার। ”
” স্যার আপনি কখনো মাসুম বাচ্চাদের কেউ মারতে দেখছেন? ”
আরশ আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেসুক ভঙ্গিতে বলল-
” এখানে মাসুম বাচ্চা এলো কোথা থেকে? ”
” স্যার আমিই হচ্ছি সেই মাসুম বাচ্চা। দয়া করে আমাকে মারবেন না। ”
” আশ্চর্য আপনাকে কে মারছে? আর কি বললেন আপনি মাসুম বাচ্চা! ”
আরশ হেসে বলল-
”কয়দিন পর বাচ্চার মা হবে সে নাকি মাসুম বাচ্চা। ”
” জ্বি না স্যার ভুল বললেন। আমি চিরকুমারীই থাকবো সো আমি মাসুম বাচ্চার মতোই।স্যার এতোগুলো ফাইল আমি এতো অল্প সময়ের মধ্যে চেক করতে পারবোনা। মিনিমাম একদিন সময় লাগবে। এতো স্বল্প সময়ে এতোগুলো ফাইল চেক করতে গেলে আমি তো নাই হয়ে যাবো। ”
” আপনি কখনোও পিঁপড়া দেখেছন? ”
” জ্বি স্যার। ”
” পিঁপড়া তার ওজনের চেয়েও অনেক বেশি ওজন ক্যারি করতে পারে। ”
” স্যার আনফরচুনেন্টলি আমি তো পিঁপড়া না৷ ”
” রাইট! আপনি তো মাসুম বাচ্চা! আপনাকে তো মারা যাবেনা। ”
” জ্বি স্যার। ”
” তাহলে একটা কাজ করুন। ”
” কি কাজ স্যার? ”
” সোজা বাড়ি চলে যান। ”
” কেনো? ”
” আপনাকে আর অফিস আসতে হবেনা। ”
” স্যার আপনি আমাকে অফিস থেকে বলছেন! এর আগেও আপনি আমাকে অফিস থেকে বের করে দিয়েছিলেন। তখন হয়তো আমি আপনার অফিসের জুনিয়র এমপ্লয় ছিলাম। কিন্তু এখন তো আমি আপনার…… ”
এটুকু বলে অবনি থেমে গেলো। আরশ জিজ্ঞেসুক দৃষ্টিতে বলল-
” এখন তুমি আমার কি! ”
অবনি থতমত খেয়ে বলল-
” ননা ককিছু না। ”
” ওকে! কিছু হলে তারপরও ভেবে দেখতাম। কিছু না যখন বলছেন তখন আর কি! কাজে মন দিন ফাস্ট। ”
কথাটা বলে আরশ ঠোঁট কা’ম’ড়ে হাসলো। তারপর সানগ্লাস চোখে দিয়ে অবনির কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো।
এদিকে বেচারা অবনি বসে বসে ফাইল চেক করছে। বেশ কয়েকটা ফাইল চেক করার পর অবনি চেয়ার ছেড়ে উঠলো। কোমড় ব্যাথা হয়ে গেছে অবনির। মনে মনে আরশকে অনেক বকাঝকা করলো। অবনি কেবিন থেকে বেরিয়ে রুপা আর জিসানের কাছে গেলো। জিসান আর রুপা বলল-
” বাবাহ! মেডাম দেখছি বড় চেয়ারে বসে আমাদের ভুলেই গেছে। একবারের জন্যও দেখা যায়নি। ”
অবনি বলল-
” একদম বাজে কথা বলবিনা। আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম আর তারপর ওই বজ্জাত বস একগাদা ফাইল এনে দিয়ে বললো এগুলো চেক করে লাঞ্চ টাইমের পর উনার কেবিনে যেতে। ”
” হুমম বুজলাম। কিন্তু তুই তো এখন স্যারের বউ! এখনও এতো কাজ করতে হচ্ছে? ”
” বউ না ছাই! শালা নিরামিষ। আস্ত একটা সয়তান। মনে কোনো দয়া মায়া নাই৷ ইচ্ছে তো করছে….. ”
আর কিছু বলার আগে রুপা অবনির মুখে পাউরুটি পুড়ে দিলো। রুপার এমন কাজে অবনি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।
পেছন থেকে শব্দ এলো –
” তো আর কি কি ইচ্ছে করছে শুনি? ”
আরশের গলা শুনে অবনির চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। অবনি বুঝতে পারলো রুপা কেনো তার মুখে পাউরুটি পুড়ে দিলো। আরশ আবারও কিছু বলতে যাবে তার আগেই দেখলো অফিসের ভেতর একটি মর্ডান ড্রেস পড়া মেয়ে প্রবেশ করলো। মেয়েটি মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক মেঘনা শিকদার।
আরশ সেদিক টায় এগিয়ে গেলো মেঘনা গ্রুপের সাথে একটা প্রজেক্ট নিয়ে ডিল করবে বলে।মেঘনা আরশের সাথে হাত মিলিয়ে আরশকে জড়িয়ে ধরে বলল-
” হ্যালো মিস্টার খান! ইউ আর লুকিং সো প্রীটি। নাইস টু মিট ইউ৷ ”
এদিকে মেয়েটা আরশকে এরকম জড়িয়ে ধরায় অবনির খুব রাগ হলো। অবনি জিসান আর রুপাকে বলছে-
” দেখেছিস মেয়েটা কিরকম নির্লজ্জ বেহায়া। আমার বর কে কিভাবে ঝাপটে ধরলো। আবার হেসে হেসে কথা বলছে। এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেনো জীবনে কোনো ছেলে দেখেনি। ইচ্ছে তো করছে একেবারে গিয়ে টেনে সামনে দাঁড় করিয়ে ঠাস ঠাস করে গালে দুইটা থাপ্পড় বসিয়ে দিই। পোশাকের কি অবস্থা ছিহ! ”
.
অবনিকে এরকম রিয়্যাক্ট করতে দেখে জিসান বলল-
” বাই এনি চান্স আর ইউ জেলাস? ”
জিসানের কথা শুনে অবনির হুশ ফিরলো। অবনি থতমত খেয়ে বলল-
” ধ্যাত আমি কেনো জেলাস ফিল করবো। যতো যাই হোক উনি তো আমার হাসবেন্ড তাইনা? আমি উনার বউ হয়ে কি করে অন্য একটা মেয়ের সাথে উনাকে এলাও করি বলতো। ”
জিসান মাথা নেড়ে বলল-
” হ্যাঁ গুড জব। তো এখন কি করবি? ”
” ওয়েট। ”
মেঘনা আরশকে বলল –
” তা মিস্টার খান আমাকে কি আপনার অফিসটা একটু ঘুরে দেখাবেন? ”
আরশ আদেশকে ডেকে বলল –
” মিস মেঘনাকে অফিসটা ঘুরে দেখাও। ”
মেঘনা আপত্তিস্বরে বলল-
” নো মিস্টার খান আমি আপনার সাথেই ঘুরতে চাই। ”
ডিলটা খুব ইম্পর্ট্যান্ট তাই আরশ বলল-
” আপনি সামনে চলুন আমি আসছি। ”
মূলত আরশ মেঘনার থেকে দূরত্ব বজায় রাখার জন্যই একটু পর যেতে চাইছে। ”
এদিকে অবনি মেঘনার চলার পথে কলার খোসা ফেলে রেখেছে যাতে মেঘনা পিছলে পড়ে। সত্যিই তাই হলো মেঘনা ধপাস করে পা পিছলে নিচে পড়ে গেলো। আরশ দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে মেঘনাকে দাঁড় করালো।
অবনি তো বেশ খুশি হয়েছে। আরশ রেগে আদেশ কে বলল-
” এখানে কলার খোসা কে ফেলেছে? ”
আদেশ মাথ নিচু করে বলল-
” স্যার মেডাম ফালাইছিলো। ”
আরশ অবনির দিকে একবার কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে মেঘনাকে বলল-
” আম সরি। আম রিয়েলি সরি ফর দ্যাট সিচুয়েশন। ”
এভাবে সবার সামনে পড়ে যাওয়ায় মেঘনা লজ্জাবোধ করলো সেই সাথে রাগও হলো। কিন্তু আরশের দিকে চেয়ে আর শব্দ করলো না। মেঘনা নিজেকে সামলে বলল-
” ইট’স ওকে, আম ফাইন। ”
আরশ অবনির দিকে এক পলক তাকিয়ে বলল-
” পরে একসময় অফিস দেখবেন এখন চলুন আমরা রেস্টুরেন্টে বসে কথা বলি। ”
” ইয়াহ শিওর। ”
রেস্টুরেন্টে বসে কথা বলবে শুনে অবনি হতভম্ব হলো। তারপর জিসান আর রুপাকে বলল-
” এই তোরা না আমার থেকে ট্রিট চেয়েছিলি? চল আজকে তোদের ট্রিট দিবো। ”
অবনির কথা শুনে জিসান আর রুপা একে অপরের মুখ চেয়ে অবাক হয়ে বলল-
” এই তোর শরীর ঠিক আছে তো? না মানে নিজে থেকে ট্রিট দিতে চাইছস! ”
অবনি কড়া দৃষ্টিতে তাকাতেই দুজন একসাথে বলল-
” চল চল যাওয়া যাক। ”
আরশ যেই রেস্টুরেন্টে গিয়েছে তারাও সেই রেস্টুরেন্টে গেছে। অবনি কান পেতে শোনার চেষ্টা করছে তাদের মধ্যে কি কথা হচ্ছে৷ আর এদিকে রুপা আর জিসান নিজেদের পেটে ইচ্ছে মতো খবার পুড়ছে৷ এরকম সুযোগ খুব একটা পাওয়া যায়না তাই সুযোগটাকে কাজে লাগাচ্ছে। অবনি শুনতে পেলো মেঘনা আরশকে নিজের নাম্বার নিতে বলছে। অবনি দ্রুত টেবিল থেকে একটা টিস্যু নিয়ে নাম্বারটি লিখে নিলো। তারপর টিস্যুটি রেখে অবনি বলল-
” তোরা খা আমি একটু আসছি। ”
কিছুক্ষণ পর অবনি এসে বসলো। রুপা জিজ্ঞেস করলো নাম্বারটা নিয়েছিস?
অবনি বলল-
” আরে হ্যাঁ এই যে… ”
বলে তাকিয়ে দেখলো টিস্যুটি নেই। অবনি বলল-
” কিরে এখানে যে টিস্যু ছিল সেটা কোথায়? ”
অবনির কথা শুনে জিসান ভরকে গেলো। জিসানের চুপসে যাওয়া মুখ দেখে অবনি বলল-
” মুডুর বাচ্চা সত্যি করে বল টিস্যু কোথায়। তোর মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে তুই কিছু জানিস। এই তুই আবার খাবারের সাথে টিস্যু খেয়ে ফেলিসনি তো! সত্যি করে বল তুই যেই পেটুক তোর উপর কোনো ভরসা নেই। ”
” দোস্ত হয়েছে কি আসলে আমার খুব সর্দি পেয়েছিলো। হাতের কাছে টিস্যু দেখে আমি নাক পরিষ্কার করে ফেলেছি। যথা সম্ভব ওটাই তোর নাম্বার ওয়ালা টিস্যু ছিল। ”
জিসানের কথা শুনে তো অবনি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। সে এতো কষ্ট করে টিস্যুর মধ্যে নাম্বারটা লিখলো আর এই ছেলে কিনা টিস্যুটি দিয়ে সর্দি মুছে নিলো।
অবনি রেগে বলল-
” হারামি তুই আর টিস্যু ফেলিনা সর্দি পরিষ্কার করতে! ”
কথাটা বলে অবনি জিসানকে দৌড়াতে শুরু করলো। ওমনি অবনি কারো সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যেতে নিলে একটি বলিষ্ঠ হাত তাকে আগলে নিলো।
#চলবে……
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠনমূলক মন্তব্য চাই কিন্তু 🥹🫰🦋)