প্রেম_হয়ে_এলি_তুই #লেখিকা :#ohona_akther #পর্ব : ১৬

0
93

#প্রেম_হয়ে_এলি_তুই
#লেখিকা :#ohona_akther
#পর্ব : ১৬

🚫 কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ

” এই মেয়ে দেখে চলতে পারোনা। এখনিই তো পড়ে যাচ্ছিলে । এখানে কি করছো? বাই এনি চান্স তুমি কি আমায় ফলো করছিলে? ”
.
অবনি থতমত খেয়ে বলল-
” আআমি কেনো আপনাকে ফলো ককরতে যাবো৷ আমি তো জিসান আর রুপাকে ট্রিট দিতে এখানে এসেছি৷ ”
.
” ও তাই? তো অফিসের পাশের রেস্টুরেন্টে ট্রিট দেওয়া যেতোনা! একেবারে এই রেস্টুরেন্টেই আসতে হলো? ”
.
” হ্যাঁ এখানেই আসতে হলো। কারণ ওরা এখানেই আসতে চেয়েছে। ”
তখন রুপাও এগিয়ে আসলো। আরশ রুপাকে বলল-
” মিস রুপা আপনি কি অবনিকে এই রেস্টুরেন্টে ট্রিট দিতে বলেছিলেন? ”
.
রুপা গড়গড় করে বলে দিলো-
” জ্বি না স্যার। অবনিই বলল আমাদের ট্রিট দিবে৷ আমরা তো অফিসের পাশের রেস্টুরেন্টেই যেতে চেয়েছিলাম অবনিই আমাদের এই রেস্টুরেন্টে নিয়ে আসলো। ”
.
আরশ হেসে বলল-
” ওয়াও ভেরি গুড। তা আপনারা কখন এসেছিলেন রেস্টুরেন্টে? ”
.
” আপনি আসার পরপরই। ”
.
” বাহ! ধন্যবাদ। আপনি যান আমরা আসছি। ”
.
” ওকে স্যার। ”
যাওয়ার সময় রুপা অবনিকে চোখ মেরে চলে গেলো। অবনির তো ইচ্ছে করছে রুপার চুল ছিঁড়ে টাকলা বানিয়ে দিতে। অবনি মনে মনে বলছে-

” কত্তবড় বেয়াদব বন্ধু আমার কপালে জুটলো। এরা তো শত্রুর চাইতেও খারাপ! এতোক্ষণ ধরে হাত ডুবিয়ে পেট পুরিয়ে ক্রেডিট এর পরিবর্তে বাঁ’শ দিয়ে গেলো। ছি ছি ছি! কি একটা বেইজ্জতিকর পরিস্থিতিরে বাবা! ”

আরশ অবনির সামনে তুড়ি বাজাতেই অবনির ধ্যান ভাঙ্গলো। আরশ ঠাট্টা ভঙ্গিতে বলল-
” তো মিসেস খান? ওরা তো এখানে আসতে চায়নি আপনিই এনেছেন। আপনার সামনেই বলে গেলো৷ তাহলে কি আমি ধরে নিবো আপনি আমাকেই ফলো করছিলেন? ”
.
অবনি তোতলিয়ে বলল-
” মমোটেই না! আআমার মনে হচ্ছিলো এখানের খখাবারটা ভভালো৷ সসেজন্যই….”
.
আরশ অবনিকে থামিয়ে হেসে হেসে বলল-
” হয়েছে হয়েছে আর কষ্ট করে বলতে হবেনা। আমি বুঝতে পেরেছি। তোমার কথা বলতে যতোটা কষ্ট হচ্ছে একটা নবজাতক বাচ্চা প্রথমবার কথা বলতেও এতো কষ্ট হয়না। ”

অবনি সেই লেভেলের লজ্জা পেয়ে গেলো। কিছু বলার মুখও নেই। থাকবেই বা কি করে বাঁশকে যতোই হাঁস বলে দাবি করুক বাঁশ তো আর হাঁস হয়ে যাবেনা। ওর প্রান প্রিয় বান্ধবীই তো তাকে সাইলেন্ট বাঁশ দিয়ে গেলো।

দুজন অফিসে চলে এলো। আরশ অবনিকে বলছে ফাইল নিয়ে তার কেবিনের আসতে।
কিছুক্ষণ পর অবনি আরশের রুমে এসে বলল-
” স্যার ফাইল। ”
আরশ অবনিকে বলল-
” মিসেস অবনি বসের রুমে ঢুকতে যে পারমিশন প্রয়োজন এটা কি আপনাকে বার বার বলে দিতে হবে৷ ”
.
” সরি স্যার। আমি কি এখন বাইরে গিয়ে আবার পারমিশন নিয়ে আসবো? ”

” নাহ প্রয়োজন নেই। এখন তো চলেই এসেছেন তবে নেক্সট টাইম থেকে পারমিশন নিয়ে তারপর আসবেন। ”

” জ্বি স্যার। ”

” দিন ফাইল এদিকে দিন। ”

অবনি আরশের দিকে ফাইল এগিয়ে দিলো। আরশ ফাইল গুলো চেক করে বলল-
” আপনাকে তো আমি এই কয়টা ফাইল দিইনি! বাকি ফাইল গুলো কোথায়? ”

” স্যার বেশকিছু ফাইল ওখানে পুরোনো অপ্রয়োজনীয় তাই সেগুলো চেক করার প্রয়োজন মনে করিনি৷ ”

” কোনটা প্রয়োজনীয় আর কোনটা অপ্রয়োজনীয় সেটা কি আমার আপনার থেকে শিখতে হবে? ”

” জ্বি না স্যার। ”

” সবগুলো ফাইল চেক করে দিন
কুইক। ”

” স্যার একটু পর তো অফিস ছুটি হয়ে যাবে। এখন কিভাবে সম্ভব! ”

আরশ কিছু ভেবে বলল –
” তাহলে আমি আদেশ কে দিয়ে আরো কিছু ফাইল পাঠিয়ে দিচ্ছি। বাসায় গিয়ে চেক করে কালকে দেখাবেন৷ আর এখন যেটুকু সময় আছে কিছু ফাইল চেক করে রাখতে পারেন৷ এতে আপনারই সুবিধা হবে। ”

” কিহ! এতোগুলো ফাইল বাকি রয়েছে তার উপর আরোও ফাইল! আপনি কিন্তু এবার বেশি বেশি করছেন৷ ”

” অবনি, আপনি জানেন আমি বেশি কথা বলা পছন্দ করিনা সো গেট লস্ট। নিজের কেবিনে গিয়ে কাজে লেগে পড়ুন। ”
অবনি রাগে কটমট করতে করতে বেরিয়ে গেলো। অবনি যেতেই আরশ ফিক করে হেসে দিলো।

রুপা ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছিলো অবনিকে আসতে দেখে আবার দ্রুত গতিতে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো। কারন অবনি তাকে হাতের কাছে পেলে অবস্থা খারাপ করে ফেলবে। কারন যেকোনো সিচুয়েশনে প্রথম দিকে যেরকম রাগ থাকে পরে একটু হলেও রাগ হালকা হয়ে যায়। তাই রুপা এই মুহূর্তে অবনির সামনে পড়তে চায় না।

অবনি এসে জিসানকে জিজ্ঞেস করলো-
” এই রুপা কইরে? ”

জিসান আশ্চর্য হয়ে বলল-
” অদ্ভুত ব্যাপার! রুপা কই সেটা আমাকে কেনো জিজ্ঞেস করছিস। এমন ভাব করছিস যেনো ও আমার গার্লফ্রেন্ড এখন ও কোথায় যাচ্ছে না যাচ্ছে আমাকে সেই খেয়াল রাখতে হবে। ”

” আরে আমি সেটা কখন বললাম। ঠাকুর ঘরে কে রে?
আমি কলা খাই না।
তোর অবস্থা তো দেখছি সেরকম৷ বাই এনি চান্স তোরা কি ডুবে ডুবে জল খাচ্ছিস? ”

জিসান চেয়ার ছেড়ে উঠে বলল-
” এএই এবার কিন্তু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে। তোদের মতো ডাইনি মেয়েদের সাথে ঝগড়া করা যায় ওইসব প্রেম ভালোবাসার কথা ভাবা বিলাসিতা। ”

” এই একদম ডাইনি বলবিনা। তুই তো একটা শাঁখচুন্না। ”

” এই তুই হচ্ছিস আরেক ডাইনি। মুখ থেকে কথা না পড়তেই ঝগড়া করিস। তোর সাথে থেকেই ওই রুপাও ডাইনি হয়ে গেছে। বেচারা স্যারের যে কি করুন দশা সেটা ভেবেই আমার কষ্ট হচ্ছে। স্যারের জন্য এক বালতি সমবেদনা, তোর মতো একটা পা’গ’ল কে বিয়ে করায় স্যারের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। ”

” শোন তোর স্যারের তো রাজ কপাল যে আমার মতো একটা মেয়েকে বউ হিসেবে পেয়েছে। তুই বরং নিজেকে নিয়ে ভাব৷ আমি যা দেখছি তোর তো প্রেমের রাশিও মন্দা। চেহারার যেই দশা এই জীবনে মেয়ে তো দূরের কথা আশি বছরের বুড়ি কপালে আছে বলেও মনে হচ্ছে না। আর তোর সাথে ঝগড়া করার কোনো ইচ্ছেই আমার নেই বুঝেছিস আমার অনেক কাজ পরে আছে। বাই। ”
কথাটা বলে অবনি মুখ বাঁকিয়ে চলে গেলো৷

জিসান অবনির যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে বলল-
” কি বলে গেলো অবনি। আমাকে কি সত্যিই খারাপ দেখাচ্ছে! ”

জিসান দৌড়ে বেসিনের সামনে গেলো নিজের চেহারা দেখতে। রুপা আসতেই জিসান বলল-
” এই রুপা আমাকে তোর কেমন
লাগে? ”

জিসানের কথায় রুপা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।
” এটা আবার কেমন প্রশ্ন? ”

” অবনি বলল আমার নাকি চেহারা খারাপ৷ তুই বল আমার চেহারা কি সত্যিই খারাপ? আমি কি সত্যিই বউ পাবোনা? ”

জিসানের কথা শুনে রুপা অট্টহাসি হেসে বলল-
” তোর কথা শুনে আমার সত্যিই খুব মায়া লাগছেরে। একটা মানুষ কত্তো লেভেলের সিরিয়াস হলে আয়নাতে নিজের চেহারা দেখতে চলে আসে তোকে না দেখলে বুঝতেই পারতামনা। ”

” আরে আশ্চর্য আমি কি ফান করার জন্য বলেছি নাকি! আ’ম সিরিয়াল। ”

” এখন কি করবো বল! তোকে যদি বলি তোকে আশি বছরের বুইড়ার মতো লাগে তুই তো রাতে ঘুমের ঘরে হার্ট অ্যাটাক করে মারা যাবি। ”

” একদম বাজে কথা বলবিনা। আমি জানি আমি যথেষ্ট ইয়াং, হ্যান্ডসাম একটা ছেলে৷ তুই ডাইনির কারনেই তো আমি একটা প্রেমও করতে পারলাম না। আর এদিকে ওই অবনির বাচ্চা বলে আমার নাকি প্রেমের রাশি মন্দা। ”

__________________

বিকেল বেলা অফিস শেষে অবনি আর আরশ একসাথে বাসায় ফিরে এলো। অবনি ফ্রেশ হয়ে বের হওয়ার পর আরশ ওয়াশরুমে গেলো ফ্রেশ হওয়ার জন্য। বেশ কিছুক্ষণ পর আরশের মোবাইলে কল এলো আরশ ওয়াশরুমে থাকায় অবনি ফোনটি হাতে নিলো। স্কিনে মেঘনা নামটি দেখে অবনির ভ্রু কুঁচকে এলো।
” আস্ত বেহায়া মেয়ে তো! বাসায় আসতে না আসতে কল দিয়ে বসলো। ”
অবনি কলটি রিসিভ করে। কলটি রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে শোনা যাচ্ছে –
” হ্যালো মিস্টার খান। কেমন আছেন আপনি? আপনাকে দেখার পর থেকে কেনো জানি কোনো কাজেই মন বসাতে পারছিনা৷ আপনি কিন্তু দেখতে অনেক সুন্দর৷ আমি তো একেবারে আপনাকে দেখে ফিদা হয়ে গেছি। ”

মেঘনার কথা শুনে অবনির মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো৷ অবনি রেগে শক্ত কন্ঠে বলল-
” এই মহিলা আপনি এতো বেহায়া গায়ে পড়া টাইপের কেনো হ্যাঁ? লজ্জা করেনা ছেলেদের গায়ে পড়তে? আবার সবার সামনে ছোট ছোট ড্রেসও পড়েন ছিহ! ছোট ড্রেস পড়ছেন আপনি অথচ আমারই লজ্জা লাগছে। আবার একটা মেয়ে হয়ে ছ্যাচঁড়ার নতো একটা ছেলেকে কল দিয়ে এসব বলতে লজ্জা করেনা?”

” এই মেয়ে তুমি কে? হাউ ডেয়ার ইউ? আমি আরশকে কল দিয়ে ওকে? তোমার মতো ক্ষেত মেয়ের সাথে কথা বলার রুচি আমার নেই। ওসবকে ছোট ড্রেস বলেনা মর্ডান ড্রেস বলে বুঝেছো? তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে জীবনে মর্ডান ড্রেস পড়ার ক্ষমতাও হয়নি৷ এর দাম সম্পর্কে ধারণা আছে তোমার? আর আমি আরশকে কল দিবো কি দিবো না তা বলার তুমি কে? হু দ্যা হেল আর ইউ? তোমার মতো ফালতু মেয়ের সাথে কথা বাড়াতে চাইছিনা। ফোনটা আরশকে দাও আমি যা বলার ওকেই বলবো। ”

” আপনার স্পর্দা দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি! আপনার মনে হয় আমি আমার হাসবেন্ডকে আপনার মতো ডাইনি মহিলার হাতে তুলে দিবো? আর রইলো রুচির কথা শুনুন আমার হাসবেন্ডের রুচির অকাল পড়েনি যে ঘরে আমার মতো সুন্দরী বউ রেখে আপনার মতো একটা নির্লজ্জ মেয়ের সাথে প্রেম আলাপ করবে। নেক্সট টাইম যদি আর কল দিয়েছেন তো আমি আপনাকে চুল কেটে টাক মাথায় কালি মাখিয়ে পুরো রাস্তায় যদি না মাখিয়েছি তো আমার নামও অবনিকা অবন্তী নয়। নির্লজ্জ বেহায়া মেয়ে কোথাকার। আরেকজনের জামাই নিয়ে টানাটানি করিস। প্রেমে পড়ার আগে যাচাই করতে পারিস না লোকটা বিবাহিত কিনা। আর যেনো ভুলেও তোর মোবাইলে কল দিতে না দেখি। তোর সাথে আমাদের কোম্পানির ডিল কেন্সেল। ”

কথাটা বলে অবনি কল কেটে দিলো।
আর নিজে নিজেই বলছে-
” কি বেহায়া মেয়েরে বাবা! একেবারে জন্মের শিক্ষা দিয়েছি। জীবনে আর কোনো অবিবাহিত ছেলের দিকেও ফিরে তাকাবেনা। ”
বলে পেছনে ফিরতেই দেখলো আরশ ভ্যাবলার মতো তার দিকে চেয়ে আছে। অবনির কথা শুনে আরশ হতভম্ব হয়ে গেলো। আরশ শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে সামনের দিকে এগোচ্ছে। আরশকে এভাবে এগোতে দেখে অবনি ভয়ে পিছিয়ে গেলো। অবনির বুকের ভেতর ধুকপুক করছে। অবনি পিছিয়ে যাচ্ছে আরশ ততো এগিয়ে যাচ্ছে। অবনি পেছাতে পেছাতে আয়নার কাছে চলে এসেছে। আরশ অবনিকে পাশ কাটিয়ে আয়নায় গিয়ে দাঁড়ালো। আরশের এমন কাজে বেচারা অবনি লজ্জা পেয়ে গেলো। আরশ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অবনিকে রাগানোর জন্য বলল-
” এটা কি করলে তুমি? মেঘনাকে বকাঝকা কেনো করলে? মেয়েটা কতো সুন্দর ছিলো! আমি তো প্রেমেই পড়ে গেছি। এত্তো কিউট মেয়ে আমি জিবনেও দেখিনি। এমন একটা মেয়েকেই তো আমি বউ হিসেবে চেয়েছিলাম। পেয়েও গেছিলাম আর তুমি কিনা আমার প্রেমটা শুরু হওয়ার আগেই শেষ করে দিলে? ”

অবনি বলল-
” ওওও আচ্ছা আচ্ছা। মনের মধ্যে এই সয়তানি পুষে রেখেছেন তাইনা। এজন্যই তো বলি একটা বাইরের মেয়ে এতো গায়ে পড়ার সাহস পায় কি করে! আপনি তো বারি অসভ্য লোক। ছি ছি! আপনার চরিত্র যে সমস্যা আগে তো জানতামই না। দেখে তো মনে হতো মেয়ে দেখলে এলার্জি আপনার। ভেতরে ভেতরে এই ছিল আপনার মনে! লজ্জা করে না ঘরে বউ রেখে বাইরের মেয়েদের দিকে নজর দিতে। তাও আবার এরকম নির্লজ্জ একটা মেয়ের দিকে ছিহ! আপনার রুচি এতো খারাপ আমার জানা ছিলোনা। ”

আরশ কোনো কথা না বলে অবনির দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলো। অবনি আশ্চর্য হয়ে বলল-
” কি ব্যাপার আপনি আমাকে পানি কেনো দিচ্ছেন? ”

” যেভাবে কথা বলছো মনে হচ্ছে তোমার গলা শুকিয়ে গেছে পানি খেয়ে নাও। ”

” আমার পানি খাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই৷আপনি পানি খেয়ে নিন। এতে যদি আপনার রুচি ঠিক হয়। ”

” আর ইউ জেলাস? ”

” আমি কেনো জেলাস হতে যাবো হুমম? নেহাৎ মেয়েটা নির্লজ্জ বলে নাহলে আপনি কোন মেয়ের সাথে কি করবেন না করবেন তাতে আমার কি! ”

” তাই! তাহলে একটা সভ্য মেয়ের সাথে প্রেম করি কি বলো? ”

অবনি চমকিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে মুহূর্তেই চোয়াল শক্ত করে বলল-
” করুন না! আমি কি বাঁধা দিয়েছি নাকি? আমি শুধু দাদুকে বলবো তোমার দাদুভাই অন্য একটা মেয়ের সাথে প্রেমালাপ করছে। ”
কথাটা বলে অবনি গাল ফুলিয়ে ফাইল চেক করতে বসে পড়লো।
আরশ সেদিকে না তাকিয়ে বিছানায় ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়লো। এদিকে আরশের এমন কাজে অবনির রাগ যেনো দ্বিগুণ বেড়ে গেলো।

” কি অসভ্য লোকরে বাবা! আমি যে রেগে আছি উনি কি বুঝতে পারছে না নাকি! যেখানে আমার রাগ ভাঙ্গাবে তা না করে কেমন ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আছে যত্তসব। ”

এদিকে আরশ আড় চোখে বার বার অবনির দিকে তাকাচ্ছে। অবনিকে রাগতে দেখে আরশ বেশ মজা পাচ্ছে। কিন্তু এমন একটা ভান করে আছে যেনো সে গভীর মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে। কিছুক্ষণ পর আরশ অবনিকে বলল-
” অবনি আমার জন্য একটু চিকেন স্যুপ বানিয়ে আনো তো। ”

অবনি মুখ ফুলিয়ে বলল-
” আমি পারবোনা। নিজে গিয়ে বানিয়ে আনুন আর নাহলে মারিয়া কে বললেই হয়। ”

” আমি তোমাকে বলেছি আনতে। মারিয়াকে তো বলিনি। ”

” আমার কাজ আছে আমি
পাড়বোনা। ”

” ঠিক আছে। না পাড়লে কি আর করার। আমি মেঘনা কে কল দিয়ে বলছি আমার জন্য যেনো নিজ হাতে স্যুপ বানিয়ে আনে । সেই সাথে এটাও বলবো যে আসলে তখন যে ফোন ধরেছিল ও জাস্ট আমার নাম মাত্র বউ। তুমি প্লিজ ওর কথায় আমার উপর রেগে থেকো না। দেখবে কথাটা শুনলে ও……”

অবনির রাগে কপালে কয়েক ভাজ পড়লো। অবনি রাগে কটমট করতে করতে আরশকে আর কিছু বলতে না দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল-
” আমিই বানিয়ে আনছি। এতো রঙ্গ লীলা দেখার শখ নেই আমার! ”
কথাটা বলেই অবনি রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলো। অবনি যেতেই আরশ অট্টহাসি হেসে দিলো।

এদিকে অবনি রান্নাঘরে স্যুপ রান্না করছে আর বলছে-
” তোর খুব শখ ওই ডাইনির হাতের স্যুপ খাওয়ার তাইনা। এমন স্যুপ খাওয়াবো না জীবনে আর পরনারীর নামও মুখে আনবি না। ”

কথাটা বলে অবনি স্যুপ নিয়ে রুমের দিকে গেলো। তারপর আরশকে স্যুপের বাটি দিয়ে বলল-
” নিন আমি নিজের হাতে বানিয়েছি। ”
আরশ নেওয়ার জন্য হাত বাড়ালে স্যুপের বাটি সরিয়ে অবনি বলল-
” তবে একটা শর্ত আছে, পুরো বাটি শেষ করতে হবে। খাবার যেমনই হোক যেহেতু আমি কষ্ট করে রেঁধেছি তাই একটুও ফেলতে পারবেন না। ”

” ওকে ফাইন। ”
কথাটা বলে আরশ খাওয়া শুরু করলো। আরশ কিছুটা স্যুপ খাওয়ার পর কেমন জানি করছে দেখে অবনি স্যুপের বাটি নিয়ে নিলো। আরশের সারা শরীর জ্বালা করছে ঝালেও মরছে। অবনি দ্রুত আরশকে পানি এগিয়ে দিলো। কিন্তু আরশ কেমন যেনো করছে। ফর্সা ত্বকের মধ্যে লাল লাল দাগ পড়তে দেখে অবনি ভয় পেয়ে গেলো। অবনি কাঁদতে কাঁদতে আরশকে বলল-
” আপনার কোথায় কষ্ট হচ্ছে বলুন প্লিজ? বিশ্বাস করুন আমি ভেবেছিলাম ঝাল দেখে আপনি খাবারটা পেলে দিবেন। আমি আপনাকে কষ্ট দিতে চাইনি। ”

আরশ কোনো কথা না বলে হাঁপাতে দেখে অবনি দ্রুত পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে নিচের দিকে ছুটলো। অবনিকে এরকম হন্তদন্ত হয়ে নামতে দেখে প্রিয়া খান বলল-
” এই কি হয়েছে তোমার? এরকম হন্তদন্ত হয়ে ছুটছো কেনো? ”

” উনি উনি…”
অবনি ইশারা করে বলছে কিন্তু ভয়ের ছোটে মুখ থেকে কথা বেরোচ্ছে না।
ছেলের কথা শুনে প্রিয়ার খানের বুকে ধক করে উঠলো। তিনি বুঝতে পারলেন আরশের খারাপ কিছু হয়েছে তাই দ্রুত পায়ে রুমের দিকে গেলো। রুমে গিয়ে আরশের দিকে তাকিয়ে তিনি ঘাবড়ে গেলেন।
” একিইইই! বাবুন তোর এই অবস্থা কি করে হলো। ”
প্রিয়া খান দ্রুত ড্রয়ার থেকে ঔষধ নিয়ে ছেলেকে খাইয়ে দিলেন। ঔষধ খাওয়ার কিছুক্ষণ পর আরশ স্বাভাবিক হলো। প্রিয়া খান বলল-
” তোর এরকম অবস্থা কি করে হলো বাবুন? কেমন লাগছে এখন বাবা? ”

” আ’ম ফাইন মম। ”

” হ্যাঁ বুঝতেই পারছি কতোটা ফাইন। তুই এমন কেনো বাবুন? সব সময় নিজের কষ্টটা আড়াল করে রাখিস? আচ্ছা তোর তো ঝালে এলার্জি আছে। আবার ভুল করে ঝাল খেয়েছিস নাকি?”

অবনি অবাক হয়ে বলল –
” উনার ঝালে এলার্জি আছে! ”

অবনিকে এরকম অবাক হতে দেখে প্রিয়া খান বলল-
” হ্যাঁ কিন্তু তুমি এতো অবাক হলে কেনো? এই মেয়ে তুমি আবার আমার ছেলের খাবারে ঝাল মিশিয়ে দাওনি তো!”

অবনি অনুতপ্ত এবং অপরাধী ভঙ্গিতে মাথা নুয়ে রাখলো।
অবনিকে মাথা নিচু করে রাখতে দেখে প্রিয়া খান স্যুপের বাটি নিয়ে বলল-
” আমি নিজেই চেক করে নিচ্ছি। ”
অবনি স্যুপের বাটিটা টেনে নিয়ে বলল-
” এগুলো খাবেন না মা । এতে অসম্ভব ঝাল রয়েছে। ”

কথাটা শুনে প্রিয়া খান তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। তিনি অবনির দিকে এগিয়ে গিয়ে শরীরের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে থাপ্পড় মারলো৷ অবনি ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো কিন্তু কোনো কারনে থাপ্পড়টি অবনির গালে পড়লোনা। অবনি চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলো আরশ প্রিয়া খানের হাত ধরে ফেলেছে।

” মম তুমি পাগল হয়ে গেছো? আমি বলছিতো আমি ঠিক আছি। ওতোটাও ঝাল ছিলো না। অবনি হয়তো ভুল করে দিয়ে ফেলেছে। সামান্য একটু ঝালের জন্য তুমি ওর গায়ে হাত তুলছো! ওকি জানতো আমার ঝালে এলার্জি আছে? আর আমি তো বার বার বলছি আমি এখন বেটার ফিল করছি তারপরও এতো হাইপার হচ্ছো কেনো? ”

প্রিয়া খান ছেলের গালে হাত রেখে বলল-
” এটা কি বললি বাবুন? আমি তোর মা। তোর যদি আজ কিছু হয়ে যেতো আমার কি হতো বল। সন্তান কষ্ট পাবে আর আমি মা হয়ে দাঁড়িয়ে দেখবো? তোর ডক্টর আঙ্কেল তো কিছুদিনের জন্য বিদেশ গিয়েছেন। আজ যদি ঘরে মেডিসিন না থাকতো তখন কি হতো? ”

প্রিয়া খান অবনির দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল –
” শোনো মেয়ে। শুধুমাত্র আমার ছেলের জন্য তোমার গায়ে হাত তুললাম না। তুমি খুব ভালো করেই জানো আমি তোমাকে ওতোটা পছন্দ করিনা। তোমাকে সাবধান করছি খবরদার ভবিষ্যতে কখনো আমার ছেলের জন্য কিছু করতে আসবেনা। কখন আবার সম্পত্তির লোভে আমার ছেলের খাবারে বিষ মিশিয়ে দিবে কে জানে। ”

অবনি এতোক্ষণ মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলছিলো। প্রিয়া খানের শেষের কথাটা শুনে চমকে তাকালো।

আরশ মায়ের কথা শুনে শক্ত কন্ঠে বলল-
” মম! তুমি কিন্তু এবার বেশি বেশি করছো। ”

” হ্যাঁ হ্যাঁ আমি উচিত কথা বলি তো তাই কারো সেটা সহ্য হয়না। আরো বেশি করে মাথায় নিয়ে নাচ এই মেয়েকে। এই মেয়ের জন্য যদি তোর কোনো ক্ষতি হয় আমি কিন্তু ওকে ছেড়ে কথা বলবোনা এই বলে দিলাম। ”
কথাটা বলে প্রিয়া খান গটগট করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।

#চলবে

( ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। গঠন মূলক মন্তব্য চাই। কেউ অবনির উপর রাগ কইরোনা। খুব শীঘ্রই তাদের প্রনয় হবে। গল্পটা যেহেতু থ্রিলার & মাফিয়া রিলেটেড তাই সেসবও জানতে পারবে। ধৈর্য্য নিয়ে পড়তে থাকো ধন্যবাদ 🥹💞)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here