#প্রেম_হয়ে_এলি_তুই
#লেখিকা : #ohona_akther
#পর্ব : ১৭
🚫 কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ
পেইন্টিং এর মধ্যে নিজের জোকারের মতো পিকটি দেখে অবনি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো৷ অবনির কপালে ভাজঁ পড়লো। আরশ অট্টহাসি দিলো। অবনি কোমড়ে দুহাত রেখে ভ্রু কুঁচকে বলল-
” এটা কিইই! আপনি না বললেন আপনি ছবি তোলেননি? ”
” যদি তুলেছি বলতাম তাহলে তো তুমি ডিলিট করিয়ে দিতে। হয়েছে হয়েছে রাগ করো না। এটা জাস্ট ফান। তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো। ”
অবনি আশ্চর্য হয়ে বলল-
” কি?”
” যদি বলি তোমার সাথেই আমার বিয়ে হচ্ছে এটা আমি আগে থেকেই
জানতাম । ”
আরশের কথা শুনে অবনি ভরকে গেলো।
” মানে! ”
আরশ অবনির হাতে একটা ডায়রি দিয়ে বলল-
” এটা নাও। আমি ছাদে অপেক্ষা করছি। ”
অবনি আরশের যাওয়ার পানে বিস্মিত হয়ে চেয়ে রইলো।
অবনি কৌতুহল হয়ে ডায়রিটি দেখতে শুরু করলো। প্রথম পৃষ্ঠাতে ডিজাইন করে লেখা রয়েছে –
❝ আমার মনের শহরে তোমায়
স্বাগতম ❞
দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় লেখা –
❝ রাজার যেমন রাজ্য আছে,
আমার আছো তুমি~
তুমি ছাড়া জীবন আমার
শুধুই মরুভূমি। ❞
তৃতীয় পৃষ্ঠা থেকে লেখা-
” তোমার প্রতি আমার প্রথম অনুভূতি জন্ম হয় সেদিন থেকে যেদিন তুমি আমার দাদুকে বাঁচিয়েছিলে। হসপিটালের সিসি টিভি ফুটেজে যখন তোমার মুখখানি দেখেছিলাম সেই থেকে কেনো জানি আমার মনের আনাচে কানাচে তোমার নাম তোমার ছবি ঘুরপাক খাচ্ছিলো। আমি চোখ বন্ধ করলেও তোমার মুখ ভেসে উঠতো। এই অনুভূতির নাম কি তা আমার জানা নেই। আমি তোমার অনেক খোঁজ করেছিলাম। কিন্তু তোমাকে পাইনি৷ এদিকে যখন জানতে পারলাম দাদু শিলার সাথে বিয়ে ঠিক করেছে তখন আমার মনে হয়েছিলো আমি হয়তো তোমাকে চিরতরে হারিয়ে ফেললাম৷ আর আমি তোমার কথা কি’বা বলবো দাদুকে৷ আমি তো তোমার খোঁজই পাইনি। এরপর আবারও তোমাকে দেখতে পাই চৌধুরী গ্রুপ অব কোম্পানিতে। আমি হাসান আঙ্কেল থেকে তোমার ব্যাপারে জানতে পারি৷ তারপর প্ল্যান অনুযায়ী শিলা পালিয়ে যায়। আর শিলার জায়গায় তুমি। ”
কয়েক পৃষ্ঠা পর আরেকটি পৃষ্ঠায় লেখা-
অবশ্য আমি জানতাম স্বাভাবিকভাবে বিয়ে হলে তুমি কখনোই বিয়েটা করতে চাইতে না৷ বাট আমার ভালো থাকার কারন তুমি। আমার হাসিখুশি জীবনের জন্য হলেও আমার তোমাকে প্রয়োজন৷
আরো কিছু পৃষ্ঠা পর অবনির চোখ স্থির হলো ২৫তম পৃষ্ঠায় –
অবনি তোমার চোখের পানি আমি সহ্য করতে পারিনা৷ কেউ তোমাকে ছোট করে কথা বলুক তা আমি চাইনা। যতোদিন আমার দেহে প্রান আছে আই প্রমিস আমি তোমার চোখ থেকে এক ফোঁটা পানিও ঝরতে দিবোনা। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভালোবাসা টুকু আমি তোমাকে দিবো। যা দেখে গাছপালা পশু পাখিরও হিংসা হবে। আমি কারো কাছে তোমাকে ছোট হতে দিবো না। যেকোনো সমস্যা হোক যেকোনো বিপদ হোক আমি তোমাকে ছায়ার মতো আগলে রাখবো। কখনো তোমার হাত ছেড়ে যাবোনা। মেডাম কি আমাকে সেই সুযোগ দিবে?
পরবর্তী পৃষ্ঠায় লেখা-
” আমি জানি তুমি যতোই বলো আমাকে ভালোবাসো না। কিন্তু তুমি আমাকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসো। ভালোবাসা কাছ থেকে উপলব্ধি করা যায় না। যখন ভালোবাসার মানুষটি আমাদের পাশে থাকেনা তখনই আমার তার ভালোবাসা উপলব্ধি করি।
লাইনি পড়ে অবনির বুক ধক করে উঠলো। অবনির চোখ ভিজে গেলো।
ডায়েরির শেষ পাতায় লেখা-
যেদিন আমি তোমার চোখে নিজের জন্য ভালোবাসা দেখবো সেদিনই বলবো ভালোবাসি অবনিকা। সেদিন নিরিবিলি পরিবেশে খোলা আকাশের নিচে ছাদের মধ্যে থাকবো তুমি আর আমি। জোৎস্না চাঁদের আলোয় দুজন একসাথে গল্প করবো।
অবনি একটা চিরকুট দেখতে ফেলো। তাতে লেখা আছে-
” বিছানার উপর শাড়ি রাখা আছে তৈরি হয়ে উপরে এসো। ”
অবনি চিরকুটটি বুকের সাথে জড়িয়ে দ্রুত তৈরি হতে গেলো। মেরুন কালার শাড়ি, কাঁচের চুরি, ফুলের গজরা, আর পায়েল রাখা আছে। অবনি দ্রুত তৈরি হয়ে নিলো। অবনিকে ছাদের দরজার সামনে উপলব্ধি করে আরশ গিটার নিয়ে গান গাইতে গাইতে পেছন ফিরলো। আরশ অবনির চারপাশে ঘুরে গিটার হাতে নিয়ে গান গাইলো-
Hai khoobsurat yeh pal
Sab kuch raha hai badal
Sapne haqeeqat mein
Jo dhal rahe hain
Kya sadiyon se purana
Hai rishta yeh hamara
Ke jis tarah tum se
Hum mil rahe hai
Yunhi rahe har dam
Pyaar ka mausam
Yunhi milo hum se
Tum janam janam
…………………….
……………………….
Main thehra raha
Zameen chalne lagi
Dhadka yeh dil
Saas thamne lagi
Kya yeh mera pehla
Pehla pyaar hai
Sajna kya yeh mera
Pehla pehla pyaar hai
Ho ho ho, ho ho ho ho ho
Suraj hua maddham
Chand jaine laga
Aasmaan yeh haay
Kyon pighaine laga
Main thehra raha
Zameen chalne lagi
Dhadka yeh dil
Saas thamne lagi
Oh kya yeh mera
Pehla pehla pyaar hai
Sajna kya yeh mera
Pehla pehla pyaar hai
অবনি আরশকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল-
” আপনি যে ভালোবাসতেও জানেন এটা জানা ছিলো না। সব সময় তো রাগী মুডি ভাব নিয়ে থাকতেন। ”
আরশ অবনির হাত ছাড়িয়ে অবনির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল-
” ওটা তো অফিসিয়াল। অফিসে আ’ম ভেরি মাচ অফিসিয়াল আর পার্সোনাল লাইফে আ’ম ভেরি মাচ পার্সোনাল। তোমাকে এখন বুঝতে হবে তুমি আমার সাথে কিভাবে কানেক্টেড। অফিসিয়ালি নাকি পার্সোনালি? ”
অবনি মৃদু হেসে বলল –
” হুমম বুজলাম। চলুন গল্প করি। ”
”তার আগে খাবার খেয়ে নিবে চলো।
সারাদিন তো কিছুই খাওনি। ভেবেছিলে তোমার বরকে কেউ নিয়ে যাচ্ছে।” আরশ অবনির হাতে হাত রেখে বলল-
” সম্পর্কের মূল ভিত্তি হলো বিশ্বাস। বিশ্বাসটা যদি নড়বড়ে হয় তাহলে যে কেউ তার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে। ভালোবাসার আগে তোমার আমাকে বিশ্বাস করতে হবে। আমার তোমাকে বিশ্বাস করতে হবে। তবেই তো আমাদের সম্পর্কটি মজবুত হবে। ”
অবনি মুগ্ধতার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আরশের কথাগুলো শুনছিলো।
” আপনি খেয়েছেন? ”
” নাহ। ”
” কেনো? ”
” দুজন একসাথে খাবো বলে। আজ থেকে আমরা দুজন একসাথে দুজনের সুখ দুঃখগুলো ভাগ করে নিবো। ”
দুজন একসাথে খাবার খেয়ে নিলো।
ছাদে দুজন দাঁড়িয়ে আছে। অবনি দূর আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে। এদিকে আরশ যে মুগ্ধতার দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে আছে অবনির সেদিকে খেয়ালই নেই। অবনি দৃষ্টি চাঁদের দিকে স্থির রেখে আরশকে বলল-
” আজকের চাঁদটা একটু বেশিই সুন্দর লাগছে তাইনা৷ ”
” উহুম। আমার চোখে চাঁদের চেয়েও বেশি সুন্দর তুমি। ”
অবনি বিস্মিত হয়ে তাকালো আরশের দিকে সেই সাথে লজ্জাও পেলো। অবনি কথা ঘুরানোর জন্য বলল-
” আচ্ছা আপনি যদি জেনেই থাকেন পাত্রি আমি ছিলাম তাহলে বিয়েতে আপত্তি করছিলেন কেনো? আর আমার সাথেই বা না জানার ভান করলেন কেনো? ”
আরশ এবার অবনির দিক থেকে চোখ সরিয়ে আকাশের দিকে দৃষ্টি রেখে বলল-
” যেহেতু শিলার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল তাই দাদু তো তাই জানতো। আমি দাদুকে বুঝতে দিতে চাইনি আমি তোমাকে পছন্দ করি। আর তোমাকেও না কারন তুমি হচ্ছো ভাবের রানী। যদি আমি তোমাকে বলতাম আমি তোমাকে ভালোবাসি অহংকারে তোমার তো মাটিতে পা-ই পড়তোনা। ”
অবনি আরশের দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল-
” একদম বাজে কথা বলবেন না। ভাব তো আপনার ছিলো। সারাক্ষণ কেমন অ্যাটিটিউড নিয়ে ছিলেন। যেনো আমাকে সহ্যই করতে পারেননা। ”
” একদম মিথ্যে বলবেনা। অ্যাটিটিউড আমার ছিলোনা ছিল তোমার। সারাক্ষণ আমার সাথে ঝগড়া করতে। ”
” ঝগড়া আমি একা করেছি? আপনি করেননি? সব সময় আমার পেছনে লেগে থাকতেন। সবসময় অত্যধিক ভাব নিয়ে চলতেন৷ ”
” ভাব তোমার বেশি আমার না কারন ভালোবাসি কথাটা আমি আগে বলেছি তুমি তো বলোনি। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম তারপরও বলছিলে উহুম। ”
” ওমা তো আমি কি এখনো বলেছি নাকি যে আমি আপনাকে ভালোবাসি! কে বললো যে আমি আপনাকে ভালোবাসি? আমি আপনাকে ভালোবাসি না বুঝেছেন আপনি? আর একটু সুন্দর করে কথা বলছি বলে ভাববেন না আমি আর আপনার সাথে ঝগড়া করবোনা। আপনার সাথে কথা বলবো আমি, ঝাগড়া করবো আমি আর আপনাকে ভা………”
” আর আমাকে কি? ”
” কিছু না। ”
” দ্যাটস নট ফেয়ার অবনি। আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসার কথাই বলতে চেয়েছিলে। একটু ভালোবাসি বললে কি হয়! আমি তোমার থেকে ভালোবাসি শব্দটা শোনার জন্য অধীর আগ্রহে বসে আছি। প্লিজ টেল মি আই লাভ ইউ । ”
” যদি না বলি। ”
” আমি জানতাম তুমি বলবেনা। এবার দেখলে তো কার অ্যাটিটিউড বেশি। এখন ভালোবাসি বলছোনা ঠিকই যখন আমি হারিয়ে যাবো তখন ঠিকই এই ভালোবাসি কথাটা বলার জন্য উতলা হয়ে যাবে তুমি। ”
” ওকে ওকে বলছি। ”
অবনি টেনে টেনে বলল-
” আই লাভ মি। ”
অবনির ভালোবাসি কথাটা আরশ খুব এক্সাইটেড হয়ে শুনছিলো। শেষের শব্দটি শুনে আরশ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। অবনি আরশকে বলল-
” মিস্টার আরশ খান। আপনি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকেন আপনাকে আমার কাছেই ফিরতে হবে। যেখানেই হারিয়ে যান না কেনো আমি আপনাকে খুঁজে বের করবো। “
” তারপরও আই লাভ ইউ বলবে না তাই তো! ”
” হ্যাঁ তাই। ”
কথাটা বলে অবনি আরশকে চোখ মেরে নিচে চলে গেলো। আরশ অবনির যাওয়ার পানে তাকিয়ে ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে নিজেও নিচে নেমে এলো।
_____________________
অবনি প্রিয়া খান কে রেডি করিয়ে দিলো। যদিও তিনি চাইছিলেন না কিন্তু অবনির জোরের সাথে পেরে উঠলোনা।
অবনি প্রিয়া খান কে খুব সুন্দর করে তৈরি করে দিলেন।
প্রিয়া খানকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে কি হচ্ছে তিনি কিছুই বুঝতে পারছেনা। প্রিয়া খানের রাগ নেই তা তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। তবুও নিজের মুখে রাগী রাগী ভাব এনে বলল-
” এই মেয়ে আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ হুমম? আবার মেরে ফেলতে নিয়ে যাচ্ছ নাকি? দেখো আমি কিন্তু তোমাকে মোটেও বিশ্বাস করিনা। ”
আরশ তার মায়ের রুমে ঢুকে শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে সামনের দিকে এগিয়ে বলল-
” ওকে নাহয় বিশ্বাস করোনা। আমার প্রতিও কি বিশ্বাস নেই তোমার মম? ”
প্রিয়া খান ছেলের দিকে এগিয়ে গিয়ে আরশের গালে হাত রেখে বলল-
” এটা আবার কেমন কথা বাবুন। আমি তোকে অনেক ভালোবাসি। নিজের চেয়েও বেশি ভরসা করি। ”
” তাহলে তো আমাদের সাথে যেতে তোমার আপত্তি থাকার কথা নয়। ”
” ঠিক আছে। তুই যখন বলছিস তোর মা তোর কথা রাখবে। ”
গাড়িটি এসে তাদের বনানীর বাড়িটির সামনে দাঁড়ালো। তারপর তারা গাড়ি থেকে নামলো। প্রিয়া খান আরশকে বলল-
” কি ব্যাপার বাবুন! তুই হঠাৎ আমাকে এই বাড়িতে নিয়ে এলি কেনো? ”
” আহ মম! এতো প্রশ্ন কেনো করছো। গেলে তো নিজেই সবটা জানতে পারবে। ”
তারা সামনের দিকে পা বাড়ালো। ভেতরে প্রবেশ করতেই প্রিয়া খান বিস্মিত হয়ে গেলেন। আনন্দে তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরলো। এরকম একটা মুহূর্তের জন্য তিনি কতোদিনই তো অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু একটা সময় আশাহত হয়ে স্বপ্নগুলো ধুলোর নিচে চাপা পরে রইলো। চারিপাশে বেলুন দিয়ে সাজানো। সামনে কতো সুন্দর ইংরেজি বড় বড় অক্ষর হ্যাপি বার্থডে প্রিয়া লেখা। পুরো রুম খুব সুন্দর করে ডেকোরেশন করা হয়েছে।
জাহানারা খান, আকবর খান, চৈতী, বিদ্যুৎ সহ গেস্টরাও সেখানে উপস্থিত রয়েছে। সকলে একসাথে প্রিয়া খানে উইশ করলো। আরশ প্রিয়া খানের সামনে দাঁড়িয়ে বলল-
” হ্যাপি বার্থডে মম। ”
প্রিয়া খান ছলছল চোখে ছেলের দিকে তাকিয়ে মাথায় হাত রাখলো।
প্রিয়া খান অবনির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। কিছু বলার চেষ্টা করছে কিন্তু আবেগে তার গলায় কথা গুলো আঁটকে আসছে। তবুও তিনি কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বললেন-
” এসব তুমিই করেছো তাইনা? ”
অবনি একটু হকচকিত হয়ে বলল-
” না মা আমরা সবাই……”
প্রিয়া খান অবনিকে কিছু বলতে না দিয়ে নিজের বুকে জড়িয়ে নিলেন।
” আমার চোখ কে ফাঁকি দিতে চাইছো? আমি তো মা। মায়ের চোখ কে কি ফাঁকি দেওয়া যায়? এতোটা বছর খান বাড়িতে ছিলাম৷ কেউ কোনোদিন আমার জন্মদিন মনে রাখেনি। অবশ্য আমিও কখনো কাউকে আপন করে নিইনি। সবসময় নিজেকে নিয়েই ভেবে গেছি। কখনো পরিবারকে নিয়ে ভাবিনি। কিন্তু সবাই আমাকে যতোটা স্বার্থপর ভাবে আমি ওতোটা স্বার্থপর নই। ”
প্রিয়া খান অবনিকে নিজের সামনে দাঁড় করিয়ে চোখের পানি মুছে বলল-
” আসলে আমি তো গরিব ঘরের মেয়ে ছিলাম। এতো বিলাসবহুল জিনিস কখনো দেখিনি। তাই ধীরে ধীরে লোভ জিনিসটা আমার মাঝে গড়ে উঠেছিলো। সেই সাথে নিজের একমাত্র বোনের একমাত্র মেয়েকে কিভাবে ভালো রাখবো সব সময় সেটাই ভেবে এসেছি। সব সময় চেয়েছিলাম মা মরা মেয়েটা যাতে একটা নতুন পরিবার পায়। আমার কাছে থেকে মায়ের অভাবটুকু বুঝতে পারে। কিন্তু সেসব ভাবতে ভাবতে কখন যে অন্য একটা মা মরা মেয়েকে আমি দিনের পর দিন মায়ের স্নেহ থেকে বঞ্চিত করে ফেলেছি। নিজেও বুঝতে পারিনি। আমায় তুই মাপ করে দে মা। তুই সেদিন ঠিকই বলেছিলি আমি তোর শাশুড়ি মা’ই রয়ে গেলাম। মা আর হতে পারলাম না। ”
” ছি ছি! মা এসব আপনি কি বলছেন। আমি আপনাকে সব সময়ই নিজের মা ভেবে এসেছি। কখনো শাশুড়ির চোখে দেখিনি। ”
প্রিয়া খান অবনির কপালে চুমু দিলেন।
ওদের মিল দেখে সবার চোখে পানি চলে এলো। শুধুমাত্র চৈতী হিংসায় জ্বলে পুড়ে মরছে। শুধুমাত্র সমাজ রক্ষার্থে দাঁড়িয়ে আছে।
প্রিয়া খান জাহানারা খানের কাছে এগিয়ে এসে বলল-
” মা আজ আপনার কাছে একটা আবদার করবো রাখবেন? ”
প্রিয়া খানের মুখে মা ডাক শুনে ডাক শুনে জাহানারা খান চমকে উঠলো। কারন এই প্রথম প্রিয়া খান তাকে মা বলে ডেকেছে৷ জাহানারা খান অবাক হয়ে বললেন-
” ককি বলে ডাকলে তুমি? ”
” মা। আমাকে ক্ষমা করবেন মা। আমি কখনো আপনাকে সম্মান করিনি। অবনি আমার চোখ খুলে দিয়েছে। প্রতিটি শাশুড়িই তো তার ছেলের বউ এর মুখ থেকে মা ডাক শুনতে চায়। কিন্তু আমি কখনো আপনাকে নিজের মা ভাবতে পারিনি৷ আমাকে আপনি মাপ করে দিন মা। ”
জাহানারা খান আবেগে আপ্লূত হয়ে প্রিয়া খান কে বুকে জড়িয়ে নিলেন।
প্রিয়া খানের এরকম রাতারাতি পরিবর্তন কিছুতেই মানতে পারছেনা চৈতী৷ চৈতী নিজে নিজেই বলছে-
” কি ব্যাপার! এই মেয়ে সবাইকে কি যাদু ছোঁয়াল যে সবাই এরকম বশীভূত হয়ে গেলো! এমনকি খালামনি কেও পাল্টে দিলো। না না না! এটা আমি কিছুতেই হতে দিবো না। খালামনি যেভাবে তোমার বুকে টেনে নিয়েছে সেভাবেই তোমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিবে। আর সেই ব্যবস্থা করবো আমি৷ আর আমাকে সঙ্গ দেওয়ার লোক তো আমি পেয়েই গেছি। যতো আনন্দ করার করে নাও অবনি। দিনটা তোমার আর বছরটা আমার৷ এমন ব্যবস্থা করবো তোমার এ বাড়িতে মাথা গোঁজার ঠাঁই টুকুও পাবেনা তুমি৷ এমনকি তোমার আদরের দাদুও তোমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে।
এতে আমার পথে কাঁটাও দূর হবে আর আমার হেল্পিং হ্যান্ডেরও প্রতিশোধ পূর্ন হবে। ”
কথাটা ভেবে চৈতী সয়তানি হাসি দিলো। বলে রাখা ভালো চৈতী বাড়ির সকলের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলো। বলেছে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। ভবিষ্যতে আর কোনো ভুল ধরা পড়লে যা শাস্তি দিবে মাথা পেতে নিবে। চৈতী ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এলো প্রিয়া খানের কথায়।
প্রিয়া খান জাহানারা খান কে বলল-
” মা আরশ আর অবনির বিয়েটা তো ঠিকমতো হয়নি আর আমিও মন থেকে মানতে পারিনি। আপনি যদি অনুমতি দিতেন তাহলে আমি চাই ওদের আবার পরিপূর্ণ আনুষ্ঠানিক ভাবে বিয়েটা
দিতে। ”
জাহানারা খান বলল-
” আরে এতে আবার অনুমতির কি আছে! এটা তো খুশির খবর। ”
জাহানারা খান নিজের কোমড় থেকে চাবির গোছা নিয়ে প্রিয়া খানের হাতে দিয়ে বলল-
” এই নাও এটা আমার তরফ থেকে তোমার জন্য ছোট উপহার৷ ”
প্রিয়া খান চাবির গোছা জাহানারা খানের হাতে দিয়ে বলল-
” এভাবে লজ্জা দিচ্ছেন মা? ”
জাহানারা খান প্রিয়া খানের গালে হাত রেখে বলল-
” দূরর বোকা মেয়ে। মায়েরা সন্তানদের কিছু দিলে সেটা ভালোবেসে দেয়। লজ্জা দেওয়ার জন্য নয়। ”
আকবর খান এসে বলল-
” তাহলে এটাই কথা রইলো আমরা অবনিকে নতুন করে বরন করবো৷ ”
চৈতী এসে জোরপূর্বক হাসি মুখে বলল-
” তবে অবনিকে কিন্তু আরশের থেকে আলাদা থাকতে হবে এই ক’দিন। তারা দুজন দুই জায়গায় থাকবে। কারো সাথে কিন্তু কারো সাক্ষাৎ হওয়া যাবেনা। আর আমি কিন্তু কনে পক্ষ এই বলে দিলাম। ”
আরশ এসে বলল-
” এই এটা আবার কেমন কথা আমাদের তো বিয়ে হয়েছে নাকি! তাহলে আমরা আবার কেনো আলাদা থাকবো। ”
বিদ্যুৎ বলল –
” আমার বোনু আমার বাড়িতেই থাকবে বুঝেছো দুলাভাই। আর ততোদিন তোমার আমার বাড়িতে প্রবেশ
নিষিদ্ধ। ”
সবাই তাদের দুষ্টুমি দেখে হেসে দিলো।
বিয়েতে কি হবে না হবে এসব নিয়ে সবাই হই হুল্লোড়ে মেতে উঠলো। আরশ অবনির কপালে চুমু দিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো। আরশ যাওয়ার সময় বলে গেছে মোবাইল যেনো নিজের কাছেই রাখে। আর কোনো সমস্যা হলে যেনো জানায় তাকে। বিদ্যুৎ তো আছেই। তারপর দুজন দুই গন্তব্যে পা বাড়ালো। দুজনেরই কেনো জানি মনটা খারাপ হয়ে গেলো। অবনি বিদ্যুৎতের বাসায় পৌঁছানোর পর বিদ্যুৎ তাকে রুম দেখিয়ে দিলো। চৈতী অবনির রুমে থাকতে চাইলে বিদ্যুৎ না করে দিলো। বিদ্যুৎ চৈতীকে পুরোপুরি বিশ্বাস করছেনা। তাই চৈতীকে আলাদা রুম দেখিয়ে দিলো৷ এদিকে অবনির মন খারাপ। কয়েকবার আরশকে কল দিয়েছে কিন্তু আরশ কল ধরেনি। অবনি গাল ফুলিয়ে নিজে নিজেই বলল-
” আমাকে বলে ফোন কাছে রাখতে অথচ নিজেরই খবর নেই হুহ। ”
অবনি রুপা আর জিসানকে কল দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে যাতে কাল সকালে চলে আসে৷ অবনির চোখ পড়লো একটি ফটো ফ্রেমের দিকে। ছবিতে ওর বয়সি একটি মেয়ে। সাথে বিদ্যুৎও আছে। অবনি বুঝতে পারলো এটাই বিদ্যুৎতের বোনু৷ যার কথা বলেছিলো বিদ্যুৎ। অবনি ফটো ফ্রেমটি হাতে নিয়ে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল-
” পৃথিবীতে ভালো মানুষদের সাথেই কেনো সব খারাপ হয়! ”
#চলবে……
( ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। গঠনমূলক মন্তব্য চাই কিন্তু 🥹🤌)