প্রেম_হয়ে_এলি_তুই #লেখিকা : #ohona_akther #পর্ব : ২০

0
78

#প্রেম_হয়ে_এলি_তুই
#লেখিকা : #ohona_akther
#পর্ব : ২০

🚫 কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ

প্রিয়া খান আরশকে কলে না পেয়ে অবনিকে কল দিলো। ওপর পাশ থেকে যা শুনলো তাতে তিনিও সেন্স লেস হয়ে গেছেন৷ জাহানারা খান ফোন ধরে কথা বলল। তিনিও ধপ করে সোফায় বসে পড়লেন৷ ওদের এরকম করতে দেখে আকবর খান বলল-

” কি হয়েছে মা? কিছু তো বলবে? ”

জাহানারা খান কোনোমতে জবাব দিলো-
” আমাদের বেরোতে হবে। ”
কথাটা শুনে আকবর খান অবাক হয়ে বলল-
” যেতে যেতে বলছি এখন সময় নেই তাড়াতাড়ি চল। ”

তারা দ্রুত রওনা হলো৷ ৩ ঘন্টা পর তারা হসপিটালে গিয়ে পৌঁছালো। এদিকে অবনির কিছুক্ষণ পর পর জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে। জ্ঞান ফিরলেই ডুকরে কেঁদে উঠে বলে ওরা উনাকে মেরে ফেলছে। আমিও উনার সাথে মরে যেতে চাই৷ যেতে দাও আমাকে।

অবশেষে জাহানারা খান আর আকবর খান অবনির কাছে পৌঁছালো। জ্ঞান ফিরতেই জাহানারা খান কে চোখের সামনে দেখে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করে দিলো।
” কি হয়েছে মিষ্টি কথা বলো? দাদুভাই কোথায়? দাদুভাইয়ের কি হয়েছে? ”

” দাদু ওই কালো ছায়া উনাকে মেরে ফেলেছে৷ তুমি উনাকে এনে দাওনা দাদু। তুমি বলোনা আমার কি এখন বিধবা হওয়ার বয়স হয়েছে? দাদু তুমি উনাকে এনে দাওনা। তুমি উনাকে বলোনা দাদু আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। দাদু উনি তো বলেছিলো আমার স্বপ্ন মিথ্যে ছিলো। তাহলে এখন আমায় কেনো ছেড়ে গেলো। দাদু তুমি তোমার দাদু ভাইকে বলোনা আমি তাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। আমি উনাকে অনেক ভালোবাসি, অনেককক বেশি। ”
কথাটা বলে অবনি আবারও সেন্স হারিয়ে ফেললো।

তখন প্রিয়া খান সাইড থেকে অবনির কান্না শুনছিলো। অবনি যে বার বার বলছিলো উনাকে মেরে ফেলেছে। আরশের মৃত্যুর কথাটা শোনার সাথে সাথেই প্রিয়া খান সেন্স লেস হয়ে যায়। তবে জাহানারা খান সেটা জানতোনা। জাহানারা খান ভেবেছিলো হয়তো সামান্য কিছু৷ কিন্তু অবনির মুখে আরশের মৃত্যুর কথা শুনে আকবর খান আর জাহানারা খান পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে রইলো। অবনি কি বলছে যেনো সব তাদের মাথার উপর দিয়ে গেলো। বাড়ির একমাত্র ছেলের এরকম আকস্মিক মৃত্যু যেনো কেউ মানতে পারছেনা। অবনির যতোবারই সেন্স আসছে ততোবারই আরশের জন্য হাউমাউ করে কান্না করছে। জাহানারা খান বুঝতে পারছেনা অবনিকে সান্ত্বনা দিবে নাকি আদরের নাতির জন্য শোক পালন করবে। পুরো খান ভবন জুড়ে থমথমে পরিবেশ। মুহূর্তেই নেমে এলো শোকের ছায়া।

~

কেটে গেছে দুই দুইটি মাস। এ দুই মাসে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে গেছে। হাসি আনন্দে ঘিরে থাকা বাড়িটি কেমন মরুভূমিতে পরিনত হয়ে গেছে। দুই মাসে এখন অবনি কোনোরকমে সুস্থ হয়েছে। শারীরিক ভাবে সুস্থ হলেও মনের কষ্টটা মুছে যায়নি। সবসময় আরশের ছবি হাতে নিয়ে কান্না করে আর ছবিটির দিকে তাকিয়ে নিজে নিজে কথা বলে।

প্রিয়া খান আর আকবর খান তো অবনিকে সহ্যই করেনা। এই কয়েকমাসে প্রিয়া খান একবারও অবনির মুখ দেখেনি। তার ধারণা অবনির জন্যই নিজের একমাত্র ছেলেকে হারিয়েছে। তাদের মনে জন্মে রয়েছে অবনির একরাশ বিরক্তি, রাগ, ক্ষোভ। জাহানারা খানও যে অবনির থেকে অনেকটা দূরত্ব বজায় রেখেছে সেটাও এরাইনি অবনির চোখে। অবনির আজ নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে। সবাই তার সাথে এমন ভাবে চলছে যেনো অবনির কারনেই আরশ মরে গেছে। কিন্তু আরশের মৃত্যু সবাই মেনে নিলেও অবনি মানতে পারছেনা। অবনির বিশ্বাস আরশ ফিরে আসবেই। মেয়ের জীবনে এরকম নির্মম অবস্থা দেখে আমজাদ আলমও হার্ট অ্যাটাক করে মারা যায়। পৃথিবীতে অবনির ভালোবাসার মানুষ বলতে আর কেউ রইলো না। পুরো ছন্নছাড়া জীবন হয়ে গেছে অবনির। রুপা অবিকে দেখতে এসেছে।তাই জাহানারা খানের কাছে গেছে। প্রিয়া খানের কাছে যাওয়ার সাহস হয়নি তার। কারন প্রিয়া খান এখন আর অবনির নামটাও শুনতে পারেনা। অবনির নাম শুনলেই তার ছেলে হারানোর শোকটা তাজা হয়ে ওঠে। রুপা জাহানারা খানের দরজার চৌকাঠে দাঁড়িয়ে বলল-
” দাদু আসবো? ”

জাহানারা খান এক পলক সেদিকে চেয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলল-
” এসো! কি বলবে বলো? ”

” অবনি কোথায় দাদু? ”

” কোথায় আর থাকবে৷ রুমেই আছে৷ রুমে গেলেই পাবে। ”
মুখ ভার করেই কথাটা বললো জাহানারা খান । রুপা এই দুই মাসে প্রায় সময়ই এসে দেখে গেছে অবনিকে। সবার এরকম পরিবর্তন রুপার বুকে বাঁধলো। ফোঁস করে একটা বিষন্নতার শ্বাস নিয়ে বলল-
” মানুষ সত্যি স্বার্থের জন্য ভালোবাসা দেখায়। একটা সময় এরা সবাই কেমন ভালোবাসা দেখিয়েছিলো। আর আজ! এদের ব্যবহার আমারই এতোটা কষ্ট হচ্ছে আর অবনির জানি কিভাবে নিচ্ছে এদের এসব আচরন! আজ যদি স্যার বেঁচে থাকতো তাহলে তো এদের গিরগিটির মতো রঙ বদলানোট চেহারাটা দেখাই যেতো না। ”

রুপা অবনির দরজার চৌকাঠে দাঁড়াতেই দেখলো অবনি বিছানার এককোণে বসে আরশের ছবি নিয়ে কথা বলছে। অবনির চেহারাটা আগের মতো সৌন্দর্যতা নেই। চোখের নিচে কেমন কালো দাগ পড়ে গেছে। অবনি আরশের ছবিটি নিয়ে বলছে-

” আপনি একটা মিথ্যে বাধী। আমাকে কথা দিয়েছিলেন আমায় ছেড়ে যাবেন না। তাহলে কেনো গেছেন আপনি। জানেন আমি প্রতিদিন স্বপ্নে দেখি আপনি এসেছেন। আমার পাশে ঘুমিয়ে আছেন। কিন্তু ঘুম ভাঙ্গলেই দেখি আপনি নন আপনার ছবি৷ আমি সবাইকে কতো বললাম আমি পাহাড় থেকে ঝাপ দিলেই আপনাকে খুঁজে পাবো। কিন্তু কেউ আমাকে যেতে দেয়নি। আমি তো সেই কবেই মরে যেতাম কিন্তু আপনিই তো বললেন আপনার ভালোবাসা সারা জীবন আমার মাঝে বেঁচে থাকবে। আমি জানি আপনি আমার উপর অভিমান করেই দূরে সরে আছেন। আমি ভালোবাসি বলিনি বলেই আপনি চলে গেছেন তাইনা? আপনি এতো বোকা কেনো বলেন? আপনি জানেন না আমি আপনাকে কতোটা ভালোবাসি? প্লিজ আমার উপর আর রেগে থাকবেন না। প্লিজ আপনি ফিরে আসুন। বাবাও আমায় ছেড়ে গেছেন আর আপনিও। বাড়ির সকলে আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে৷ এতো কষ্ট আমি কি করে সহ্য করবো বলুন? প্লিজ ফিরে আসুন আমি আপনাকে বলতে চাই আমি আপনাকে কতোটা ভালোবাসি। আমার মুখ থেকে ভালোবাসি শব্দটা শোনার জন্য হলেও আপনি ফিরে আসুন। আমি কথা দিচ্ছি আমি আর কখনোও আপনার সাথে ঝগড়া করবোনা। আপনি যা বলবেন তাই হবে। প্লিজ ফিরে আসুন না প্লিজ। ”
কথাটা বলে অবনি আরশের ছবিতে কপাল ঠেকিয়ে কান্না করে দিলো। এদিকে অবনির এসব কথা শুনে রুপার বুক ফেটে কান্না আসছে। রুপা চোখের পানি মুছে ধীর পায়ে অবনির কাছে এগিয়ে গেলো।

অবনি আরশের ছবিটি সামনে রেখে গান গাইছে –
❝ বেঁচে থেকে মরার মতো বন্ধু তোরে ছাড়া, বন্ধু তোরে ছাড়া।
ছন্নছাড়া জীবন আমার তোরে ভালোবাইসা, তোরে ভালোবাইসা৷ ❞

তখনই কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে অবনি পাশ ফিরতেই রুপাকে দেখলো। অবনি আবারও আরশের ছবির দিকে চোখ স্থির রেখে বলল-
” তুইও বিশ্বাস করিস আমিই সব কিছুর জন্য দায়ী তাই নারে? ”
রুপা অবনির পাশে বলল-
” যদি বিশ্বাস করতাম তাহলে শত ব্যস্ততার মাঝেও তোকে দেখতে আসতাম না। অবনি কতোদিন তোর মুখে হাসি নেই৷ কতোদিন তোকে হাসতে দেখিনা। ”

” কিভাবে হাসবো বল? যার বিয়ের মেহেদীর রঙ শুকানোর আগেই স্বামী হারিয়ে যায় তার মুখে হাসি কি করে থাকবে। ”

” কিন্তু এভাবে দিনরাত কেঁদে কেঁদে তো তুই নিজেকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছিস। ”

” হা হা। হাসালি তুই। আমার জীবনটা এখন পুরো আবর্জনার মতো। আবর্জনা ডাস্টবিনে ফেলে দিলে সবাই যেমন শান্তিতে থাকে আমি মরে গেলেও সবাই শান্তিতে থাকবে। যেদিন উনি আমাকে ছেড়ে চলে গেছে সেদিন থেকেই আমার জীবনের মূল্য সবার কাছে তুচ্ছ হয়ে গেছে। মৃত্যুকে আমি ভয় পাইনা। ”

” পা’গ’লা’মি করিসনা অবনি৷ দুঃখ মানুষের জীবনে আসে তাই বলে তো জীবন থেমে থাকেনা। শোন জিসান গাড়ি নিয়ে নিচে অপেক্ষা করছে। আজকে বিকেলে ৪ টার সময় বিখ্যাত গায়ক মীর মুগ্ধ গান গাইবে। শুনেছি উনার গান অনেক জনপ্রিয়। চল আমি তোকে রেডি করিয়ে দিই। ওখানে গেলে তোর মন ভালো লাগবে। ”

” নারে। তোরা যা আমি যাবোনা। ”

” তুই এবার বারাবারি করছিস। তুই যদি আমাদের সাথে না যাস তাহলে আমি বা জিসান কেউ তোর সাথে সম্পর্ক রাখবো না। ”

অবনি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল-
” দূরে সরে যেতে চাইছিস? ”

রুপা করুন সুরে বলল-
” তুই আমাকে ভুল বুজছিস অবনি। যতোদিন বেঁচে আছি ততোদিন আমাদের তোর পাশে পাবি। আমরা তোর সেরকম বন্ধু নই যে তোর দুঃসময়ে তোর পাশ ছেড়ে সরে যাবো। শুধু একটু রিকোয়েস্ট করছি প্লিজ। দেখ, তোকে এরকম দেখতে আমাদের একটুও ভালো লাগছেনারে। এটাকে জীবন বলে না। এভাবে বেঁচে থাকা যায় না। তোকে কষ্ট পেতে দেখলে তো স্যারের আত্মাও কষ্ট পাবে। প্লিজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড। ”

রুপা অনেক কষ্টে অবনিকে রাজি করিয়েছে। রুপা জাহানারা খান কে বলেছে অবনিকে একটু তাদের বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে। জাহানারা খান গম্ভীর কণ্ঠেই তাদের অনুমতি দিলো।

গাড়িতে বসে আছে জিসান, রুপা অবনি। অবনি রুপাকে বলল-
” মিথ্যে বললি কেনো? ”

” আরে বাবা আমি যদি বলতাম তোকে গান শোনাতে নিয়ে যাচ্ছি। নিঃসন্দেহে তারা হাজারটা কথা বলতো। তোকে আসতেও দিতো না। ”

” আমি কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো বাসায়। তুই তো জানিস আমি মন থেকে আসিনি। জাস্ট তোদের ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলের কারনেই এসেছি। ”

” হ্যাঁ বাবা জানিতো। মীর মুগ্ধের গান এতো সুন্দর যে তুই একবার শুনলে একেবারে ফিদা হয়ে যাবি৷ শুনেছি সব মেয়েরা তার জন্য পা’গ’ল। উনি নাকি একেবারে ইয়ং আইকন, সব মেয়েদের ক্রাশ। তাকে এক নজর দেখলে তুই তো একেবারে….. ”

রুপা অবনির চোখের দিকে তাকাতেই দেখলো অবনি রাগী দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। রুপা বোকা হেসে বলল-
” ননা ততুই যা ভাবছিস আমি সেরকম কিছু বোঝাতে চাইনি। ”
তারপর সবাই চুপ হয়ে গেলো।

অবশেষে আধঘন্টার মধ্যে তারা কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে এসে পৌঁছালো। একটি মেয়ে একটা মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বলল-
” দীর্ঘ সময় অপেক্ষার প্রহর পেরিয়ে মঞ্চে গান গাইতে আসছে আপনাদের সবার প্রিয় সঙ্গীত শিল্পী মীর মুগ্ধ। যার গান শুনতে আপনারা এতো দূর অব্দি এসেছেন কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি মঞ্চে উপস্থিত হবেন। সবাই নিজ নিজ সিটে বসে পড়ুন। ”
মীর মুগ্ধের কথা শুনে সব মেয়ে হৈ হুল্লোড় করতে লাগলো। শুধু অবনি ছাড়া৷

কিছুক্ষণ পরই পুরুষালী কন্ঠে গানের সূর ভেসে এলো-

Hum tere bin ab reh nahi sakte~
Tere bina kya wajood mera…(2)
Tujhse juda agar ho jayen ~
Tod khud se hi ho jayenge juda…💔

Kyun ki tum hi ho~
Ab tum hi ho
Zindagi ab tum hi ho…
Chain bhi
Mera dard bhi
Meri aashiqui ab tum hi ho….🦋

Tera mera rishta hai kaisa
Ek pal door gawara nahi
Tere liye har roz hain jeete
Tujhko diya mera waqt sabhi
Koi lamha mera na ho tere bina
Har saans pe naam tera 💖

সামনে থাকা পুরুষটির দিকে চেয়ে অবনি স্তব্ধ হয়ে গেলো। সে যেনো কথা বলার ভাষাই হারিয়ে ফেলছে৷ অবনির খুশিতে চোখের কার্নিশ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরলো। গান চলা অবস্থায় অবনি দৌড়ে গিয়ে মীর মুগ্ধকে জড়িয়ে ধরলো।
আকস্মিক ঘটনায় সকলেই হতভম্ব হয়ে গেলো। সবাই একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে কানাঘুঁষা করছে। কে এই মেয়ে সকলের মনে এই প্রশ্ন। মুগ্ধর গানটি লাইভ চলছিলো। তাই মুহুর্তের মধ্যেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে গেলো।
অবনি মীর মুগ্ধকে জড়িয়ে ধরে বলল-

” আপনি ফিরে এসেছেন৷ আমি জানতাম আপনি আমার থেকে দূরে সরে থাকতেই পারেন না। কিন্তু আমি আপনার উপর অনেক রেগে আছি। এবার কিন্তু সহজে আমার অভিমান ভাঙ্গবেনা। আমি তো ভেবেছিলাম আপনার সাথে আর কথাই বলবো না। কিন্তু কি করবো বলুন আমি যে আপনাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি। ”

অবনি মুগ্ধর গালে হাত দিয়ে বলল-
” চলুন আপনি আমার সাথে বাড়ি ফিরে যাবেন। সবাই খুব খুশি হয়ে যাবে আপনাকে দেখে। জানেন আমি আপনাকে কতোটা মিস করছিলাম। কোথায় ছিলেন আপনি এতোটা দিন কেনো নিজেকে আড়াল করে রেখেছেন? আমি কি কোনো ভুল করেছি? প্লিজ চুপ করে থাকবেন না। বলুন না। আমি যদি কোনো ভুল করি তার জন্য সরি তবুও আপনি এভাবে দূরে সরে থাকবেন না। ”

হঠাৎ একটি মেয়ে এসে অবনির গালে ঠাসস করে একটা চড় বসিয়ে দিলো। অবনি ছিটকে নিচে পড়ে গেলো৷ অবনির ঠোঁট কিছুটা কেটে গেছে। মেয়েটি অবনির চুলের মুঠি ধরে দাঁড় করিয়ে বলল –

” দেখে তো ভদ্র ঘরের মেয়েই মনে হয়। এভাবে ছেলেদের গায়ে পড়তে লজ্জা করেনা৷ কোন সাহসে তুমি আমার ফিওনসে কে জড়িয়ে ধরো? ”

” ফিওনসে! ”

” হ্যাঁ। ও আমার ফিওনসে। আমাদের বিয়ে আগামী মাসে। সেই উপলক্ষে এই ফাংশন রেখেছি আমরা। আই নো সব মেয়েরাই মুগ্ধর মুগ্ধতায় আঁটকে আছে। বাট তোমার মতো ছ্যাচড়ামি করার সাহস কারো হয়নি। ”

অবনির চোখ দিয়ে টপটপ করে বৃষ্টির মতো পানি গড়িয়ে পড়ছে। থাপ্পড় খেয়েও অবনির এতো কষ্ট হয়নি যতোটা কষ্ট হচ্ছে ফিওনসে কথাটা শুনে। অবনি মুগ্ধর কাছে গিয়ে বলল-

” ননা! এটা হতে পারেনা তাইনা? কি হলো বলুন? কথা বলছেন না কেনো আপনি? এই মেয়েটা আমার গায়ে হাত তুললো আর আপনি চুপচাপ দেখছেন। আপনি আমাকে ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসতে পারেন না। বলেন কেনো আমায় ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করছেন। আমি আপনাকে ভালোবাসি বলিনি বলে? ”

অবনি মুগ্ধকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে বলল-
” আমি আপনাকে ভালোবাসি। আই লাভ ইউ। আই লাভ ইউ ভেরী মাচ৷ আমার বেঁচে থাকার জন্য আপনাকে প্রয়োজন৷ আমি আপনাকে ছাড়া বাঁচতে পারবোনা৷ ”
মুগ্ধ এক ঝটকায় অবনিকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে সিকিউরিটিকে ডাক দিলো। সিকিউরিটি আসতেই মুগ্ধ চেঁচিয়ে বলল-
” কোথায় থাকেন আপনারা? আপনারা থাকতে একটা পাগল কিভাবে স্টেজে উঠে? একটা কাজও আপনারা ঠিক মতো করেননা সমস্যা কি আপনাদের? ”

সবাই মাথা নিচু করে বলল-
” সরি স্যার। ”

রুপা আর জিসান এসে বলল-
” সরি সরি সরি! আপনারা প্লিজ মাইন্ড করবেন না। আসলে আপনি দেখতে পুরো আমাদের জিজুর মতো। তাই ও এরকম করেছে। ”

মুগ্ধর সাথের মেয়েটি বলল-
” হোয়াট? একই রকম দেখতে বলে আরেকজনের ফিওনসে কে এভাবে জড়িয়ে ধরবে? আমার তো ইচ্ছে করছে এই মেয়েকে….. ”

আর কিছু বলার আগে মুগ্ধ বলল-
” রূপকথা! শুনেছো তো মেয়েটা সিক! এতো বারাবারি করার কি আছে। ”
মুগ্ধ রুপা আর জিসানকে উদ্দেশ্য করে বলল-
” উনি মানসিকভাবে সুস্থ নয় তাই ছেড়ে দিলাম। তবে ভালো একটা ডক্টর দেখিয়ে নিবেন। আবার কখন কার গায়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে। আমার জায়গা অন্য কেউ হলে হয়তো এতোক্ষণে গন পিটুনি দিয়ে মেরে ফেলতো। ”

জিসান আর রুপা অবনিকে নিয়ে যাচ্ছে। অবনি তাদের হাত ছাড়িয়ে আবারও মুগ্ধকে জড়িয়ে ধরলো।

” আপনি বলেছিলেন না আমি পা’গ’ল হ্যাঁ আমি সত্যিই পা’গ’ল। আপনার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য পা’গ’ল।”

অবনি মুগ্ধর গালে হাত রেখে বলল-
” আপনি তো বলেছিলেন আমার চোখে কখনো পানি আসতে দিবেননা৷ দেখুননা আমার চোখের নিচে কেমন কালো দাগ পড়ে গেছে। এমন কোনো মুহূর্ত নেই যখন আমি আপনার জন্য কাঁদিনা। জানেন আপনি আমাকে ছেড়ে যাওয়ার পর বা….”
আর কিছু বলার আগেই মুগ্ধ অবনির গালে চর বসিয়ে দিলো। অবনি মুগ্ধর হাতে থাপ্পড় সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। জিসান আর রুপা দৌড়ে অবনির কাছে আসলো। রুপা মুগ্ধর দিকে আঙ্গুল তুলে বলল-

” আপনি কি মানুষ? একটা অসুস্থ মেয়ের গায়ে হাত তুলতে আপনার বিবেকে বাঁধলো না? ”

” প্রশ্রয় পেলে পাগলও মাথায় ছড়ে বসে। উনি অসুস্থ হলে ঘরের মধ্যে বন্ধ করে রাখুন। এসব মানসিক ভারসাম্যহীন পা’গ’লকে নিয়ে ফাংশনে আসেন কেনো? ”

জিসান আর রুপা অবনিকে গাড়িতে নিয়ে গেলো। মুখের মধ্যে পানি চিটিয়ে দিতেই অবনির জ্ঞান ফিরে এলো। অবনি পিটপিট করে চোখ খুলতে খুলতে বলল-
” আআপনি আমায় মারলেন? এই আপনার আমার প্রতি ভালোবাসা? আপনি খুব খারাপ। একটুও ভালোবাসেন না আমায় ভালোবাসলে এভাবে তাড়িয়ে দিতেন না আমাকে। ”

_____________

চৈতী ফেসবুকে অবনির ভিডিওটি দেখেছে। চৈতীর মনে সয়তানি বুদ্ধি এলো। সোফায় বসে চা খাচ্ছিলো সকলে মিলে। চৈতী প্রিয়া খানের কাছে গিয়ে বলল-
” খালা মনি ভিডিওটা দেখো। ”

মোবাইল হাতে নিয়ে নিজের আদরের সন্তানকে দেখে প্রিয়া খান হকচকিত হয়ে বলল-
” বাবুন! ”

প্রিয়া খানের কথায় সবাই এগিয়ে এলো দেখার জন্য। রীতিমতো সকলে পুরো শকট। চৈতী বুঝতে পারলো ওরা মুগ্ধকে আরশ ভেবেছে। চৈতী কপালে হাত দিয়ে বলল-
” উফফ খালা মনি! এ তোমার ছেলে নয়। ও বিখ্যাত গায়ক মীর মুগ্ধ। আকাশকুসুম ভাবনা বাদ দিয়ে পুরো ভিডিওটা দেখো। ”

পুরো ভিডিও দেখে বাড়ির সকলের মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। তারা ভিডিওতে স্পষ্ট অবনির ছ্যাচড়ামি গুলো দেখেছে৷ লজ্জায় সকলের মাথা নুয়ে গেছে। অবনির উপর সকলের রাগ যেনো দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। খান ভবনের মান সম্মান সব ধুলোয় মিশিয়ে দিলো! তার উপর মিথ্যে বলে বেরিয়েছে। এখন তো পাড়া প্রতিবেশী সকলে মিলে তাদের ছোট করবে। এসব ভেবে প্রিয়া খান আরোও চওড়া হলো। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে অবনিকে এ বাড়ি থেকে বের করে দিবে।
প্রিয়া খানের কথাটা শুনে চৈতীর মনটা খুশিতে নেচে উঠলো। চৈতী মনে মনে বলল-
” দেখ অবনি! তোকে আমি কিভাবে অপদস্ত করি। রাতারাতি তোর ভাগ্যের চাকা কি করে পাল্টে গেলো। কিন্তু…
একটা ব্যাপার বুঝতে পারছিনা! আরশ আর মুগ্ধ! দুটো মানুষ কি করে একই রকম দেখতে হতে পারে। নাহ নিশ্চিন্তে থাকলে চলবেনা। আমি ওকে বলবো এই মুগ্ধর পেছনে যেনো কড়া নজর লাগায়৷ ”

এদিকে আরশের মৃত্যুর খবর পেয়ে মেঘনা একটা রাবার স্পঞ্জ বল হাতে নিয়ে ডিভানে বসে বলটি দিয়ে খেলতে খেলতে বলল-
” দেখলে তো মিস্টার আরশ খান! অকালে তোমার তাজা প্রানটি ঝড়ে গেলো। কই তোমার বউ তো তোমায় বাঁচাতে পারেনি? আমায় যদি একটু চান্স দিতে তাহলে আমি কখনো তোমাকে মরতে দিতাম না। এজন্যই লোকে বলে কোনো কিছু নিয়ে বেশি ভরাই করতে নেই৷ ”

#চলবে…

( সবাই বেশি বেশি সাপোর্ট করবে কেমন। 🥹🤌)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here