প্রেম_হয়ে_এলি_তুই #লেখিকা : #ohona_akther #পর্ব : ২৫

0
90

#প্রেম_হয়ে_এলি_তুই
#লেখিকা : #ohona_akther
#পর্ব : ২৫

🚫 কপি করা সম্পুর্ণ নিষেধ ~

বিদ্যুৎ হঠাৎ পেছন থেকে শুনতে ফেলো-

” সবাইকে নিজের মতো বিশ্বাসঘাতক ভাবা বন্ধ কর। ”

কথাটা শুনে বিদ্যুৎ চমকে পেছনে তাকালো।
আরশকে এভাবে জীবিত দেখবে এটা বিদ্যুৎ স্বপ্নেও ভাবেনি।

” একি! তুই তো মরে যাওয়ার কথা। বেঁচে আছিস কিভাবে? জোভান তুমি এখনোও দাঁড়িয়ে কি দেখছো? গুলি চালাও ওর দিকে। সবাই দাঁড়িয়ে আছো কেনো? ”

জোভান বিদ্যুৎতের দিকে বন্ধুক তাক করতেই বিদ্যুৎতের চোখ চড়কগাছ। বিদ্যুৎ অবাক হয়ে বলল-
” তোমাকে বলেছি আরশকে গুলি চালাতে আমাকে নয়। তুমি কি ভুলে গেছো তোমার সাথে আমার কি চুক্তি হয়েছিল? ”

” নাহ। কিছুই ভুলিনি৷ বাংলাদেশ তো বাদই দিলাম সারা পৃথিবীর সব সম্পত্তি আমার নামে করে দিলেও ভাইয়ের ভালোবাসার এক ইঞ্চি সমানও হবে না। ভাই আমাকে রাস্তা থেকে তুলে এনেছে। যখন তোমার মতো বিদ্যুৎরা ভালো ভালো খাবার খেয়েছিলে তখন আমি কুকুরের মুখের খাবারও টেনে খেয়েছিলাম। কেউ ফিরে তাকায়নি। ভাই আমাকে আশ্রয় দিয়েছিলো। অন্যায় কারীদের শাস্তি দিতে শিখিয়েছে। তুমি ভাবলে কিভাবে তোমার সামান্য টাকা আর সম্পত্তির লোভে আমি ভাইয়ের বুকে গুলি চালাবো? ”

বিদ্যুৎ অবাক হয়ে বলল-

” মানে? মাত্রই তো তুমি ওকে গুলি করেছিলে। ”

আরশ নির্বিকার ভঙ্গিতে হেসে বলল-

” একটু বেশিই আশা করে ফেলেছিলি তুই। ওটা নকল বন্ধুক ছিলো। আর হসপিটাল থেকে কিনে আনা ব্লা’ড ছিলো। তুই কি ভেবেছিলি তোর প্ল্যান আমি বুঝতে পারবোনা? ”

” কিহ! তোরা দুজন মিলে আমার সাথে চিটিং করেছিস? ”

” আমি আরো আগেই তোর খোঁজ পেয়েছিলাম। ছদ্মবেশ ধরে ফাংশনে আমার সিকিউরিটি সাজা, কখনো ফুসকা ওয়ালা আবার কখনো আইসক্রিম ওয়ালা সেজে আমার আর রুপকথার ব্যাপারে জানার চেষ্টা! কি ভেবেছিলি ছদ্মবেশ নিলে আমি আর চিনতে পারবোনা? আমি চাইলে আরো আগেই তোকে ধরে ফেলতে পারতাম। কিন্তু তাতে করে আমার তোর মনের কথাটা জানা হতো না। তোর পেটের কথা জানার জন্যই এতো আয়োজন। সামান্য বোনের মৃত্যুর জন্য এতো ক্ষোভ তোর মনে? কেনো বিদ্যুৎ কেনো? সব ভুলে কি নতুন করে বাঁচা যায় না? আমি তোর বোনকে জীবনে নিজের বোন ছাড়া অন্য কিছুই ভাবিনি৷ হঠাৎ প্রপোজাল দেওয়াতে আমার মাথা ঠিক ছিলো না। আমি ওকে জাস্ট নিজের বোন ভেবেই শাসিয়েছি। কিন্তু ও যে এরকম কিছু করবে আমি তা কখনো ভাবিনি। তুই কেনো বুঝতে পারছিসনা বিদ্যুৎ বেলাকে আমি নিজের বোন মনে করতাম। ”

“ ব্যাস! অনেক বলেছিস তুই। এখন তোর জন্য মঙ্গল হবে আমাকে মেরে ফেলা। তোর সাথে আমার শত্রু শত্রু খেলা সেদিনই শুরু হয়েছিলো যেদিন আমার বোনু তোর জন্য আমায় ছেড়ে চলে গেছে। একটা কথা কি জানিস তো
” যুদ্ধ মানে তোমার আমার
শত্রু শত্রু খেলা
যুদ্ধ মানে তোমার প্রতি
আমার অবহেলা ”
তুই যদি আমাকে না মারিস তাহলে আমিই তোকে মারবো। কারন বন্ধুত্বের মাঝে যখন রাগ, ক্ষোভ তৈরী হয়ে যায় তখন বন্ধু শত্রুর চেয়ে বেশি ভয়ংকর হয়ে যায়। আজ এইখানে হয় তুই মরবি আর নয়তো আমি। একজনকে পৃথিবী ছাড়তেই হবে। আমি যদি আজ বেঁচে ফিরি তাহলে তোকে আমি শান্তিতে বাঁচতে দিবোনা আরশ। ওপেন চ্যালেঞ্জ করলাম। ”

আরশের চোখে পানি টলমল করছে। আরশ অবাক হয়ে বিদ্যুৎতের কথা শুনছে। আরশ কখনো ভাবেনি বিদ্যুৎ আর তার সম্পর্কটা একদিন এরকম পর্যায়ে এসে দাঁড়াবে। আরশ অস্ফুটস্বরে বলল-

” বিদ্যুৎ! ”

” আহ! বললাম না কোনো কথা নয়। শুট কর, চালা গুলি। ”

আরশ বিদ্যুৎতের দিকে বন্ধুক তাক করলো। কিন্তু শরীরে বিন্দু মাত্র জোর পাচ্ছে না আরশ। হাত যেনো অবশ হয়ে আসছে আরশের। কই আগে তো এখনো এমন হয়নি। নিমিষেই চোখ বন্ধ করে নিলো আরশ। কি করে গুলি করবে ও! যে হাতে হাত রেখে দুজন এতোটা বছর পাড়ি দিয়েছে সেই হাত দিয়ে কি করে গুলি করবে বিদ্যুৎকে। আরশের ভাবনার ছেদ ঘটে গুলির শব্দে।
.
আরশ চোখ মেলে দেখলো বিদ্যুৎতের বুক থেকে র’ক্ত ঝরছে। সারা শরীর র’ক্তে ভিজে গেছে। বিদ্যুৎ মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। বিদ্যুৎতের এই অবস্থা দেখে আরশের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। আরশ তো গুলি চালায়নি তাহলে কে গুলি চালিয়েছে? আরশ পাশে ফিরে দেখলো জোভান বিদ্যুৎতের দিকে গুলি তাক করে আছে। জোভান পর পর আরো দুটি গুলি চালিয়ে দিলো বিদ্যুৎতের বুকে।
.
আরশ বিদ্যুৎতের দিকে এক পলক তাকিয়ে জোভানের শার্টের কলার ধরে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল-

” এই কি করলি তুই এটা? গুলি কেনো চালিয়েছিস?আমি বলেছিলাম গুলি চালাতে? বল আমি কি বলেছিলাম গুলি চালাতে? কেনো গুলি চালিয়েছিস? তুই দেখছিসনা ওর কষ্ট হচ্ছে? কেনো মেরে দিলি ওকে?”

শেষের কথাগুলো চেঁচিয়েই বলল আরশ।
” শান্ত হও ভাই৷ ওকে না গুলি করলে ও তোমাকে গুলি করে দিতো। বাধ্য হয়েই গুলি চালিয়েছি। ওকে না মারলে তো তোমাকে মেরে ফেলতো। শান্ত হও নিজেকে কন্ট্রোল করো। ”

আরশ বিদ্যুৎতের ম’রা দেহের কাছে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে নিজের চুল খামচে ধরে। বিদ্যুৎতের ঘুমন্ত চেহারার দিকে এক পলক তাকিয়ে সেখান থেকে চলে এলো আরশ। গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। এখানে থাকলে আরও বেশি কষ্ট পাবে ও৷ গাড়িটি এসে থামলো সেই প্লেসের সামনে যেখানে আরশ মন খারাপের সময় আসে।

আরশ দীঘির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। চারপাশের ঠান্ডা হাওয়া আরশের শরীর স্পর্শ করছে। চোখ দুটো লাল বর্ন ধারন করছে৷ দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেক কান্না করেছে সে। আরশ দীঘির জলে ঢিল মারতে মারতে বলল-

” অসাধারণ বন্ধুর চেয়ে সাধারণ বন্ধু গুলোই ভালো।
দিন শেষে সাধারণ বন্ধুগুলোই রয়ে যায়,
হারিয়ে যায় অসাধারণ নামক বন্ধুগুলো।

সন্ধ্যা হয়ে গেছে অথচ বোঝার উপায় নেই। কারন চারপাশ বিকেল থেকেই অন্ধকার হয়ে আছে। যেনো খুব শীঘ্রই বৃষ্টি নামবে। হয়তো মেঘলা আকাশটাও আরশের কষ্ট অনুভব করছে। আরশ চোখে মুখে পানি দিয়ে সেখান থেকে গাড়ি দিয়ে চলে এলো।

__________________

অবনি রুমের ভেতর দরজা বন্ধ করে বসে আছে। বসে বসে আরশের কথাই ভাবছে। সারাটা দিন চলে গেলো অথচ আরশ একবারের জন্য একটা ফোনও করলোনা। অবনি নিজে নিজেই বলছে-

” আচ্ছা উনি কি আমাকে সত্যিই ভুলে গেছে? সত্যিই আমার সাথে আর কোনো যোগাযোগ রাখবেনা৷ উফফ আমি কেনো বারবার এসব ভাবছি। আমি নিজেই তো চেয়েছি উনি আর আমার সাথে সম্পর্ক না রাখুক যা হয়েছে আমার ইচ্ছেতেই হয়েছে। নাহ এটা নিয়ে আর ভাবতে পারছিনা আমি। সত্যিই সব মেয়েরা বাবার বাড়িতে রাজকন্যা হলেও শশুর বাড়িতে সবাই রাজরানী হতে পারেনা। ”

তখনই দরজায় ঠকঠক আওয়াজ এলো। অবনি কিছুটা অবাক হলো বাইরের আবহাওয়া তো ভালো নয়! এই সময় কে আসবে? দরজা খুলবে কি খুলবেনা ভাবতে ভাবতে খুলেই দিয়েছে।

দরজা খুলে অবনি কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে সামনে চেয়ে রইলো। কারন আরশ তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। পরক্ষণেই অবনি দরজাটা আরশের মুখের উপর বন্ধ করে দিলো।
.
আরশ নির্মল কন্ঠে বলল-
” অবনি দরজা খোলো। দরজা খোলো বলছি তো। ”

অবনি দরজার সাথে পিঠ ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে রইলো। আরশ পুনরায় বলল-
” আমি জানি তুমি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো। দরজাটা খোলো। ”

অবনি চোখের পানি মুছে নিয়ে ভেতর থেকেই বলল-
” আপনি প্লিজ চলে যান। আমি দরজা খুলবোনা। আপনি শুধু শুধু বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করবেন না। বাড়ি ফিরে যান। ”
কথা গুলো বলতে অবনিরও খুব কষ্ট হচ্ছে। কারন সে নিজে ওতো মন থেকে চায়নি তাদের মাথে দূরত্ব হোক। কিন্তু নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে ওই বাড়িতে কি করে থাকবে ও? হয়তো আরশ তাকে অন্য বাড়িতে রাখবে কিন্তু এতে করে তো পারিবারিক বন্ধন ন’ষ্ট হবে। হয়তো আবারও তার দিকেই আঙ্গুল তুলবে। তাই অবনি বাধ্য হয়েই আরশের কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করতে চাইছে।
.
আরশ দরজার অপর পাশ থেকেই বলল-
” অবনি আমি কিন্তু ফিরে যেতে আসিনি। তুমি দরজা না খুললে আমি বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকবো। বাইরের আবহাওয়া কিন্তু ভালো নেই। কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়তো বৃষ্টি শুরু হবে৷ দরজাটা খোলো অবনি। ”

” আমি যখন বলেছি আমি দরজা খুলবোনা তখন খুলবোনা। আপনি আমাকে ভুলে যান আর বাড়ি ফিরে যান। ”
কথাটা বলে অবনি নিঃশব্দে কান্না করে দিলো।
.
অনেকক্ষণ যাবৎ আরশের কোনো সাড়াশব্দ নেই। বাইরেও বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। অবনি ভাবছে আরশ হয়তো সত্যিই চলে গেছে৷ তবুও মনের কৌতূহলে দরজাটা খুললো। খুলে যা দেখলো তাতে অবনি নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছেনা। আরশ তাদের বাসার সামনে উঠোনে মধ্যে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে। অবনি আর নিজের মনকে আটকে রাখতে পারলোনা। দ্রুত ছাতাটা নিয়ে আরশের মাথার উপর রাখলো। তীব্র বাতাসে ছাতাটি উল্টে শিক ভেঙে গেছে। দুজনই বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে আছে।

আরশ নির্বিকার কন্ঠে বলল-
” কেনো এসেছো? এতোক্ষণ তো এতো করে ডাকলাম তবুও দরজা খোলোনি। এখন কেনো এসেছো? ”

” আপনি কেনো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছেন? আমি আপনাকে বলেছিনা বাড়ি ফিরে যেতে? বৃষ্টিতে ভিজলে শরীর খারাপ হবে জানেন না আপনি? ”

” হোক! তাতে তোমার কি? ”

” আমার কি সেটা আপনাকে জানতে হবেনা৷ আপনি কেনো এসেছেন বলেন? আমি আপনাকে আমার দিব্যি দিয়েছিলাম কিনা? তারপরও কেনো এসেছেন? ”

আরশ অবনির বাহু দুটি শক্ত করে ধরে করুন কন্ঠে বলল-

” মানি না আমি ওসব দিব্যি। এসবে আমি বিশ্বাস করিনা। আর যদি সত্যি হয়ও হোক। মরলেও তোমাকে আমার বুকেই মরতে হবে। আমি এসব দিব্যি টিব্যি বুঝিনা আমি শুধু এটুকুই বুঝি আমার তোমাকে লাগবে। তোমার ওই বাড়িতে ফিরতে সমস্যা তাই তো? তুমি এখানেই থাকতে চাও তাইতো? বেশ তাই আমিও তোমার সাথেই থাকতে চাই। অবনি আমি তোমাকে নিয়ে কুঁড়ে ঘরেও থাকতে রাজী আছি৷ তুমি আমার হ্যাপিনেস। আমি এতো স্ট্রাগল করে ফিরে এসেছি শুধু তোমারই জন্য। সেই তুমি ছাড়া আমি নতুন করে জীবন শুরু করবো এটা তুমি ভাবলে কিভাবে? ”

আরশের কথা শুনে অবনির চোখে পানি টলমল করছে। অবনি আবেগাপ্লুত হয়ে আরশকে জড়িয়ে ধরে বলল-
” কেনো এতো ভালোবাসেন আমায়? ”

” জানি না৷ শুধু এটুকু জানি আমার শুধু তোমাকেই লাগবে। জীবনের শেষ নিঃশ্বাস অবধি আমার তোমাকে চাই। ”

#চলবে….

( ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। আমি মেয়ে পাঠিকাদের জন্য একটা মেসেঞ্জার গ্রুপ খুলেছি। কেউ এড হতে চাইলে ইনবক্সে জানাবেন৷ আমার গল্প গ্রুপে চাইলে জয়েন হয়ে আপনার মতামত প্রকাশ করতে পারেন।
আমার গ্রুপ : https://facebook.com/groups/834251051795835/💞)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here